কাতার থেকে তাইফুর রহমান তুষার: ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। কে না জানে এ কথা, কিন্তু প্রবাসীদের জীবনে এ বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। প্রবাসীদের ঈদ উৎযাপন যেন মন খারাপের এক মহোৎসব। অনেক প্রবাসীই আছেন যাদের জন্য ঈদের দিনটা যেনো আরো বেশি কষ্টকর।
মুসলিমদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদকে কেন্দ্র করে মানুষের প্রত্যাশা আর প্রস্তুতির কমতি থাকে না। কিন্তু একের পর এক ঈদ আসে ঈদ যায়, প্রবাসীদের ঈদ কেটে যায় শুধুই নিঃসঙ্গতায়।
সকাল সকাল দল বেঁধে ছোটাছুটি করে গোসল সেরে মিষ্টি মুখে নতুন জামা-কাপড় পরে ঈদগাহে যাওয়া প্রবাসীদের জন্য যেন শুধুই স্মৃতি। প্রবাসীদের কাছে শত কর্মব্যস্ততার মাঝে ঈদের ছুটিতে লম্বা ঘুমই যেনো তাদের ঈদের দিনের মূল কর্মসূচি।
ঈদের নামাজ শেষে দেশে ফোন করার পর বুকের ভেতর কষ্টের তীব্রতা যেন তাদের আরও বেড়ে যায়। বুক ফাটা যন্ত্রণাকে নিয়ে বিছানায় গিয়ে চোখের পানিতে বালিশ ভিজিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করেন অনেকে। এভাবেই কাটে প্রবাসীদের ঈদ নামের নিঃসঙ্গ বেদনার এই দিনটি।
কয়েকজন প্রবাসীর সঙ্গে তাদের ঈদ উদজাপন নিয়ে কথা হয় এ প্রতিবেদকের সাথে। আলাপকালে তারা জানান, ঈদ নিয়ে তাদের অনুভূতির কথা। আর তাতে উঠে এসেছে কষ্ট আর যন্ত্রণার নির্মম প্রতিচ্ছবি।
কাতারের আল মনসুরায় অবস্থানরত রাজবাড়ী জেলার এক প্রবাসী সুমন হোসেন বলেন, জীবনের প্রয়োজনে প্রিয়জনদের ছাড়া একা একা ঈদ করতে হয়। সবসময়ই তো পরিবার বন্ধু বান্ধবকে মিস করি, কিন্তু ঈদের সময় সেই কষ্টটা আরো বেড়ে যায়।
ঈদের নামাজ পড়ে এসে একটা ঘুম দেই, ফোনে দেশের সবার খোঁজ নেই বুকের চাপাকান্না তো থাকেই! এই হলো প্রবাসীদের ঈদ, বললেন সম্রাট হোসেন নামে অপর এক প্রবাসী।
কাতারের দোহায় প্রবাসী ব্যবসায়ী হাসানুজ্জামান বলেন, ১৩ বছরের প্রবাস জীবনে প্রতিটি কুরবানীর ঈদ দেশে পরিবারের সঙ্গে কাটানোর চেষ্টা করেছি। এবার করোনা ভাইরাসের কারণে দেশে যাওয়া হয়নি, তারপর আবার করোনা ভাইরাসের কারণে লকডাউনে ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ তাই এমনিতেই খুব খারাপ লাগছে। কি আর করা! ফোনেই সবার খোজ খবর নেয়া ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই।
কাতারের দোহায় রন্ধনশিল্পী প্রবাসী আসাদুজ্জামান হেলাল স্বাধীন বাংলা’র প্রতিবেদককে বলেন, পৃথিবীতে প্রবাসের কষ্টটা একেবারেই ভিন্ন মাত্রার। এখানে সব আছে, তবুও যেন কিছুই নেই। একমাত্র প্রবাসীরাই তাদের কষ্ট অনুভব করতে পারবে।
এদিকে প্রবাসীদের কষ্টে বাড়তি মাত্রা যোগ করে দিয়েছে করোনা ভাইরাসের এই অদৃশ্য শক্তি। দীর্ঘদিন লকডাউনে কাজ না থাকায় বেতন ভাতা নিয়ে নানাবিধ সমস্যায় রয়েছেন। যার কারণে এবারের ঈদ যেন তাদের কাছে দ্বিগুন কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।