রাফসান সাইফ সন্ধি, ঘাটাইল: পুরো নাম ইসরাত জাহান ইকরা। বাবার নাম ওসমান গণি তালুকদার ও মায়ের নাম সাহিদা খাতুন। তারা পেশায় দুইজনই শিক্ষক। ইকরার বেড়ে উঠা টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায়। স্কুলজীবন থেকেই ছবি আঁকা, নাচ কিংবা গান সবকিছুতেই পারদর্শী ছিলেন ইশরাত জাহান (ইকরা)। ২০১৭ সালে ঘাটাইল এস ই পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ২০১৯ সালে ঘাটাইল ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইশরাত জাহান(ইকরা)। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কিংবা ক্যাম্পাসে তিনি পরিচিত ইকরা নামে।
ছোটবেলা থেকেই সাহিত্য, সংস্কৃতিচর্চা করে বেড়ে ওঠা ইকরা ২০২০ সালের শুরুতে ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে। বিশ্বব্যাপী দেখা দিল করোনা মহামারি, বন্ধ হয়ে যায় ক্যাম্পাস। তিনি বিধিনিষেধে ঘরে অলস বসে না থেকে সময়টাকে কাজে লাগাতে ফেসবুকে IQRA - A Storyteller নামে একটি পেজ খুলে ফেলেন। এই পেজে আবৃত্তির পাশাপাশি জীবনঘনিষ্ঠ গল্প বা নিবন্ধ পড়া শুরু করেন। আর তাতেই পাওয়া গেল অবিশ্বাস্য সাড়া! ইকরার পেজটিতে বর্তমানে অনুসারীর সংখ্যা ১ লক্ষ ৩৬ হাজার।
ইকরা জানান, ‘প্রথম-দ্বিতীয় শ্রেণির স্কুলের প্রতিযোগিতাগুলো থেকেই আবৃত্তি শুরু, আম্মুই দেখিয়ে দিতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের পরপরই শুরু হয় করোনা। বন্দী জীবনে মুক্তির পথ খুঁজলাম শব্দের কাছে। ছোটবেলা থেকে বই পড়তে ভীষণ ভালোবাসি, বইপোকা নামে স্কুল কলেজে কিংবা বন্ধুমহলে সবাই ডাকতো, ইংরেজি সাহিত্যে পড়শুনার সুযোগটা তাই বিরাট একটা আনন্দের ব্যাপার ছিলো। যদিও বাংলা সাহিত্যের সাথেই আমার বেড়ে উঠা। সাহিত্য পড়া দারুণ উপভোগ করছি। পড়াশুনা শেষে যদি আমার এই উপভোগ্য বিষয়গুলো পরবর্তী প্রজন্মের সাথে ভাগ করে নিতে পারি তবে বেশ হয়। ২০২১ এর ১৫ই আগস্ট আমার পড়া একটা গল্প (বুয়েট পড়ুয়া ভাইয়ের টিউশনির গল্প) প্রচুর মানুষ পছন্দ করা শুরু করেন, গল্পটা এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষ শুনেছেন। এরপর সবাই আমাকে চিনতে শুরু করেন ‘IQRA - A Storyteller’ হিসেবে। শুরুর দিকে কন্টেন্ট বানাতে সত্যি ভীষণ স্ট্রাগল গিয়েছে। শুরু থেকেই বন্ধুদের সাপোর্ট পেয়েছি ভীষণ। ইউনিভার্সিটিতে এসে সমমনা চমৎকার একটা ফ্রেন্ড সার্কেল পেয়েছি। ওদের যতটুকু সম্ভব সাহায্য করার চেষ্টা করেছে। এরপর আমার পরবর্তী কাজগুলো মানুষ সাদরে গ্রহণ করেছেন। কখনো ভাবিনি কবিতা বা গল্প পাঠের জন্য মানুষ আমাকে চিনতে শুরু করবে পত্রিকায় বা ফেসবুকের পাতায় বা ট্রেনে, বাসে, রাস্তাঘাটে শুধুমাত্র কবিতার জন্য।
তিনি আরও বলেন, কবিতা এবং শব্দকে অনুভব করা শিখতে চাই আরও ভালোভাবে যাতে সমস্ত বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছে পৌছে যায় আমার উচ্চারণ। লেখালেখি করি মাঝে মাঝে ইচ্ছে আছে নিজের অনুভবগুলিকে নিয়ে সত্যি সত্যি একদিন বই লিখে ফেলবো।
ফেসবুক পেজের নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি জানান, নিরাপত্তা নিয়ে এখনও তেমন সমস্যা হয়নি তবে স্পাম মেইল পাই প্রতি সপ্তাহেই, আসলে একটু ভয়ে ভয়ে থস্কা লাগে। এর থেকেও বেশি ভয় পাই হয়তো নেগেটিভিটি। মানুষজন কখন ভুল বুঝা শুরু করবেন বা আমি কখন একটা ভুল করে বসবো এই ভয়টা এখন নিত্যদিনের। আর যাই হোক বাজে মন্তব্য শুনতে চাই না।
ইনকামের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বলতে তেমন কিছুনা, আসলে সবাই যা মনে করেন ফেসবুক ইউটিউবের ইনকামটা অতো বেশি না। এক্সাক্ট এমাউন্টটা বলতে চাচ্ছি না এমনিতেই স্পাম মেইল প্রচুর আসে, তবে সেটা তেমন নয়। আমি এখনও ছাত্র পড়াই রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে- বুঝতেই পারছেন। মনে হয় বেশিসময় দিলে ব্যাপারটা অন্যরকম হতো, আসলে আমি একটু নিরিবিলি পড়াশুনা করতে ভালোবাসি,তাই পেজটা আসল মনোযোগের জায়গায় নিয়ে আসতে পারছি না।