স্বাধীন বাংলা রিপোর্ট : বাবা মানে নির্ভরতা। বাবা নিখাদ আশ্রয়। উত্তপ্ত সূর্যের তলে সন্তানের শীতল ছায়া। বাবা মানে ভরসা। আবার বাবা শাশ্বত, বাবা চির আপন। বাবার প্রতি সন্তানের চিরন্তন ভালোবাসার প্রকাশ প্রতিদিনই ঘটে। তারপরও বাবার জন্য বিশেষ দিন হিসেবে প্রতি বছর ‘বিশ্ব বাবা দিবস’ পালিত হয়ে আসছে।
বছর ঘুরে আজ রোববার আবারও এলো বাবা দিবস। প্রতিবছর জুন মাসের তৃতীয় রোববার পৃথিবীজুড়ে পালন করা হয় ‘বিশ্ব বাবা দিবস’। এ বছর তৃতীয় রোববার হিসেবে আজ ২১ জুন পালিত হচ্ছে দিবসটি।
এ বছর দুনিয়াজুড়ে মহামারি আকারে জুড়ে বসেছে কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাস। এ ভাইরাসের কারণে অনেক সন্তান হারিয়েছেন প্রিয় জন্মদাতাকে। আর বেঁচে থাকা বাবারা আপ্রাণ লড়ছেন নিজ সন্তান ও পরিবারকে এর কবল থেকে রক্ষা করতে। আকালের এই কালে এবারের বাবা দিবস তাই পালিত হবে ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে। বাবাকে ঘরোয়াভাবে শুভেচ্ছার ডালিতে সিক্ত করবেন সন্তানরা।
হাদীসে আছে- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টি পিতার সন্তুষ্টিতে এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টি পিতার অসন্তুষ্টিতে নিহিত, (তিরমিযি-১৮৯৯) ।’
এছাড়া সনাতন ধর্মমতে, ‘পিতা স্বর্গ, পিতা ধর্ম, পিতাহী পরমং তপঃ, পিতরী প্রিতিমাপন্নে প্রিয়ন্তে সর্বদেবতা’। এর অর্থ হচ্ছে- পিতা স্বর্গ, পিতাই ধর্ম, পিতাই পরম তপস্যা। পিতাকে খুশি করলে সব দেবতা খুশি হন।
আসলে আদর-শাসন আর বিশ্বস্ততার জায়গা হলো বাবা। বাবার মাধ্যমেই সন্তানের জীবনের শুরু। সন্তান বাবার ঋণ কখনো পরিমাপ করতেও পারে না।
কীভাবে বাবা দিবসটির প্রচলন? আসলে মায়েদের পাশাপাশি বাবারাও যে তাদের সন্তানের প্রতি দায়িত্বশীল- এটা বোঝানোর জন্যই এই দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। পৃথিবীর সব বাবার প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা প্রকাশের ইচ্ছা থেকে যার শুরু।
এই নিয়ে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়- মা দিবস কয়েকশো বছর ধরে পালন করা হচ্ছে, কিন্তু সেই তুলনায় বাবা দিবসটি অনেক নতুন। দিবসটি সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম চালু হয়েছে এবং এর শুরু নিয়ে বেশ কয়েকটি গল্প আছে।
সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সম্ভবত গ্রহণযোগ্য গল্পটি হলো, ওয়াশিংটনের সোনোরা লুইস স্মার্ট নামের একজন নারী এই দিন উদযাপন শুরু করেন। ষষ্ঠ সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে তার মা মারা গেলে তার বাবা পরিবারটিকে বড় করে তোলেন।
১৯০৯ সালে সোনোরা গির্জার একটি বক্তব্যে মা দিবসের কথা জানতে পারেন। তখন তার মনে হলো, বাবার জন্যেও এরকম একটি দিবস থাকা উচিত।
স্থানীয় বেশ কয়েকজন ধর্মযাজক তার এই আইডিয়াটি গ্রহণ করেন। ধারণা করা হয়, ১৯১০ সালের ১৯ জুন প্রথমবারের মতো বাবা দিবসটি পালন করা হয়, যদিও তা আনুষ্ঠানিক ছিল না।
১৯৬৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি. জনসন সিদ্ধান্ত নেন যে, প্রতি বছর জুনের তৃতীয় রবিবার বাবা দিবস হিসাবে পালন করা হবে। ছয় বছর পর প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন এটিকে আইনে পরিণত করেন।
প্রতিটি দিনই ভালোবাসার, স্নেহময়তার,- তার পরও বিশেষ এই দিনটিতে বাবাকে বিশেষভাবে স্মরণ করবে আজ সব সন্তান। বলবে, `বাবা, তোমার প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই, এই পৃথিবীর আলোছায়ায় দুলে ওঠা, আকাশকে ছুঁতে চাওয়া, বুকের ভেতর নিশ্চিন্তে ঘুমানো আর পথে পথে চলতে শেখা- সব তোমার জন্যই সম্ভব হয়েছে, বাবা।` আর যাদের বাবা বেঁচে নেই, তারা কিছুক্ষণের জন্যে হলেও গিয়ে দাঁড়াবে তার সমাধির পাশে। বাবা অনন্তলোক থেকে সন্তানের ডাক ঠিকই শুনতে পাবেন।