রবিবার, ৮ ডিসেম্বর 2024 বাংলার জন্য ক্লিক করুন
  
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|

   এক্সক্লুসিভ -
                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                 
ঝুঁকি নিয়ে প্রতিমিনিটে অর্ধশতাধিক মানুষের পারাপার

বগুড়া প্রতিনিধি:

মহাসড়কের উন্নয়নে ঢাকা পড়ছে হাসপতালের জরুরী বিভাগের প্রবেশ পথ। রোগীবাহী এ্যম্বুলেন্স ঘুড়ে আসতে হবে প্রায় এক কিলোমিটার। হাসপতালে ভর্তি রোগীদের স্বজনদের বাইরে যাতায়াত করতেও শরীরের ঘাম ঝরাতে হয়। সড়ক বিভাগের এমন সিদ্ধান্তে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন বগুড়াবাসী। স্থানীয় ব্যক্তিবর্গসহ বিভিন্ন শেণীপেশার মানুষ ইতোমধ্যেই হাসপাতালের জরুরী গেটে আন্ডারপাস রাখার দাবীতে ফুঁসে উঠেছেন। প্রতিনিয়তই চলছে তাদের মানববন্ধ ও বিক্ষোভ। ইতিমধ্যে লিখিতভাবে বিষয়টি জানিয়েছেন সাউথ এশিয়ান সাব রিজিওনাল কো-অপারেশন বা সাসেক-২ প্রকল্পের কর্তৃপক্ষকে।

ঘটনা উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড়, বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ঢাকা থেকে রংপুর পর্যন্ত মহাসড় ফোরলেনে উন্নতি করার কাজ চলমান। সেই কাজের অংশ হিসেবে ওই মেডিকেলের জরুরী বিভাগের সামনে একটি আন্ডার পাস রাখা হয়েছিলো। হঠাৎ সড়কের সেই নকশা থেকে আন্ডার পাস উধাও হয়ে গেছে। জরুরী বিভাগের সামনে রাখা আন্ডার পাস করা হচ্ছে মেডিকেল কলেজ গেটের সামনে। বিষয়টি জানাজানি হলে বাঁধসাধে এলাকাবাসী। তাদের যৌক্তিক দাবী আদায়ে ইতিমত আন্দোলনে নেমেছে। তারা কলেজ এবং জরুরী বিভাগের দুই গেটেই আন্ডার পাস নির্মানের দাবী করছেন। একই দাবী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরও। তবে বিষয়টি সামাধানের আশ্বাস দিয়েছেন সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (সাসেক প্রকল্প-০২ এর ব্যবস্থাপক) আহসান হাবীব।

বগুড়া তথা উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক। এই মহাসড়কের সাথেই হাসপাতলাটির জরুরী বিভাগের গেইট। এখানে প্রতি মিনিটে গড়ে প্রায় অর্ধশতাধিক অসুস্থ, সুস্থ, শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ পারাপার হয়। এছাড়া রোগিদের সুবিধার্থে প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যায়ে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মোহাম্মাদ আলী হাসপাতাল থেকে অত্র মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গেইট পর্যন্ত তৈরি করা হয়েছে রাস্তা। গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তাটির সংযোগস্থল শেষ হয়েছে মেডিকেল কলেজের গেটে। কিন্তু জরুরী বিভাগের গেটে আন্ডারপাস না রাখার কারণে এসব নানাবিধ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে মেডিকেলমুখি মানুষেরা।

বিশেষ সূত্রে জানা যায়, প্রথমের দিকে সাসেক প্রকল্প-২ এর জরিপে ঢাকা-রংপুর এক্সপ্রেসওয়ের নকশাটিতে অত্র মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগের সামনে আন্ডারপাসের নকশা ছিলো। তা পরবর্তীতে করা হচ্ছে কলেজ গেটের সামনে। কিন্তু অপরিকল্পিতিভাবে জরুরী বিভাগকে বাদ দিয়ে অন্য জায়গায় আন্ডারপাসটি মেনে নিচ্ছেনা স্থানীয়রাসহ বিভিন্ন মহল। এই বিষয়ে তারা বিভিন্ন সময় বিক্ষোভ, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি অব্যহত রেখেছেন। বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপিও প্রদান করেছেন।
স্থানীয়দের দাবি একটি স্বার্থান্বেষী মহলের চক্রান্তে মেডিকেলের জরুরী বিভাগের সামনের আন্ডারপাসটি কলেজ গেটের সামনে নেয়া হয়েছে। তারা আরো বলেন কলেজের গেটটি সন্ধ্যার আগেই বন্ধ করে দো হয়। এতে করে মহাসড়কের উপর দিয়ে হাজার হাজার মানুষ ও রোগীরা বাধ্য হয়ে যাতায়াত করবে। এছাড়া জরুরী বিভাগের গেইটের সামনে ডায়াগনোষ্টিক সেন্টার, অসুধের দোকান ও হোটেলসহ প্রায় ৩শতাধিক দোকান রয়েছে। অর্থাৎ আন্ডারপাসটি কলেজ গেইটে হওয়ায় কোন সুবিধাই পাওয়া যাওয়া যাবেনা। তাই আমাদের দাবি জরুরী বিভাগের সামনে আরো একটি আন্ডারপাস করতে হবে।

উল্লেখ্য বিগত দিনে এখানে রাস্তা পারাপার করতে গিয়ে নানা ধরনের দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া প্রায়ই দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে রোগী-স্বজন ও হাসপাতালে কর্মরতরা।

উল্লেখ্য ২০২২ সালের ১১ই নভেম্বর রাতে খবর সংগ্রহ শেষে বগুড়ার সবথেকে পরিচিত মুখ ও প্রবীন সাংবাদিক কমলেশ মহন্ত শানু এখানে রাস্তা পার হতে নিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়। পরে এক সপ্তাহ আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকার পর তার মৃত্যু হয়। এসব দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হল, ব্যস্ততম মহাসড়কটি হাসপাতালের সামনে হলেও যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ বা সড়ক নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা ছিলনা।

শজিমেক হাসপাতাল সূত্র জানায়, হাসপাতালটিতে প্রতিদিন রোগী থাকেন দেড় হাজারের ওপরে। এ ছাড়া বহির্বিভাগে প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার রোগী চিকিৎসা নেন। তাঁদের সঙ্গে থাকেন স্বজনরা।

এদিকে মহাসড়কের পাশে হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বাজার থাকলে সেখানে সড়ক নির্দেশিকাসহ সাইন সিগন্যাল থাকার কথা। কিন্তু বগুড়ার এই বৃহৎ হাসপাতালের সামনে তার কোনো চিহ্ন নেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একাধিকবার সড়কে গতিরোধক নির্মাণের তাগাদা দিলেও তা করা হয়নি।

বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ জানান, আমরা লিখিতভাবে ও মৌখিকভাবে সড়ক কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এখানে কলেজ গেট এবং মেডিকেলের জরুরী গেটে আন্ডারপাস রাখতে হবে। এখানে দুই গেটেই মানুষ পারাপারের জন্য নিরাপদ রাস্তা প্রয়োজন। আশাকরি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি শুরাহা করবেন।

মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণে চলমান সাসেক-২ প্রকল্পের বনানী থেকে মোকামতলা অংশের প্রকল্প ব্যবস্থাপক আহসান হাবিব জানান, তাঁদের প্রকল্পে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে এমভিটি আন্ডারপাস রয়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে দুর্ঘটনা কমবে। এই কর্মকর্তা আরো বলেন জরুরী বিভাগের সামনে একটি এমভিটি আন্ডারপাস করার জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে ইতিমধ্যে জানানো হয়েছে। নকশার কাজ চলছে। আশাকরি অতি দ্রুত সময়ের মধ্যেই এটির অনুমোদন হয়ে যাবে।

ঝুঁকি নিয়ে প্রতিমিনিটে অর্ধশতাধিক মানুষের পারাপার
                                  

বগুড়া প্রতিনিধি:

মহাসড়কের উন্নয়নে ঢাকা পড়ছে হাসপতালের জরুরী বিভাগের প্রবেশ পথ। রোগীবাহী এ্যম্বুলেন্স ঘুড়ে আসতে হবে প্রায় এক কিলোমিটার। হাসপতালে ভর্তি রোগীদের স্বজনদের বাইরে যাতায়াত করতেও শরীরের ঘাম ঝরাতে হয়। সড়ক বিভাগের এমন সিদ্ধান্তে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন বগুড়াবাসী। স্থানীয় ব্যক্তিবর্গসহ বিভিন্ন শেণীপেশার মানুষ ইতোমধ্যেই হাসপাতালের জরুরী গেটে আন্ডারপাস রাখার দাবীতে ফুঁসে উঠেছেন। প্রতিনিয়তই চলছে তাদের মানববন্ধ ও বিক্ষোভ। ইতিমধ্যে লিখিতভাবে বিষয়টি জানিয়েছেন সাউথ এশিয়ান সাব রিজিওনাল কো-অপারেশন বা সাসেক-২ প্রকল্পের কর্তৃপক্ষকে।

ঘটনা উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড়, বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ঢাকা থেকে রংপুর পর্যন্ত মহাসড় ফোরলেনে উন্নতি করার কাজ চলমান। সেই কাজের অংশ হিসেবে ওই মেডিকেলের জরুরী বিভাগের সামনে একটি আন্ডার পাস রাখা হয়েছিলো। হঠাৎ সড়কের সেই নকশা থেকে আন্ডার পাস উধাও হয়ে গেছে। জরুরী বিভাগের সামনে রাখা আন্ডার পাস করা হচ্ছে মেডিকেল কলেজ গেটের সামনে। বিষয়টি জানাজানি হলে বাঁধসাধে এলাকাবাসী। তাদের যৌক্তিক দাবী আদায়ে ইতিমত আন্দোলনে নেমেছে। তারা কলেজ এবং জরুরী বিভাগের দুই গেটেই আন্ডার পাস নির্মানের দাবী করছেন। একই দাবী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরও। তবে বিষয়টি সামাধানের আশ্বাস দিয়েছেন সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (সাসেক প্রকল্প-০২ এর ব্যবস্থাপক) আহসান হাবীব।

বগুড়া তথা উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক। এই মহাসড়কের সাথেই হাসপাতলাটির জরুরী বিভাগের গেইট। এখানে প্রতি মিনিটে গড়ে প্রায় অর্ধশতাধিক অসুস্থ, সুস্থ, শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ পারাপার হয়। এছাড়া রোগিদের সুবিধার্থে প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যায়ে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মোহাম্মাদ আলী হাসপাতাল থেকে অত্র মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গেইট পর্যন্ত তৈরি করা হয়েছে রাস্তা। গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তাটির সংযোগস্থল শেষ হয়েছে মেডিকেল কলেজের গেটে। কিন্তু জরুরী বিভাগের গেটে আন্ডারপাস না রাখার কারণে এসব নানাবিধ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে মেডিকেলমুখি মানুষেরা।

বিশেষ সূত্রে জানা যায়, প্রথমের দিকে সাসেক প্রকল্প-২ এর জরিপে ঢাকা-রংপুর এক্সপ্রেসওয়ের নকশাটিতে অত্র মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগের সামনে আন্ডারপাসের নকশা ছিলো। তা পরবর্তীতে করা হচ্ছে কলেজ গেটের সামনে। কিন্তু অপরিকল্পিতিভাবে জরুরী বিভাগকে বাদ দিয়ে অন্য জায়গায় আন্ডারপাসটি মেনে নিচ্ছেনা স্থানীয়রাসহ বিভিন্ন মহল। এই বিষয়ে তারা বিভিন্ন সময় বিক্ষোভ, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি অব্যহত রেখেছেন। বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপিও প্রদান করেছেন।
স্থানীয়দের দাবি একটি স্বার্থান্বেষী মহলের চক্রান্তে মেডিকেলের জরুরী বিভাগের সামনের আন্ডারপাসটি কলেজ গেটের সামনে নেয়া হয়েছে। তারা আরো বলেন কলেজের গেটটি সন্ধ্যার আগেই বন্ধ করে দো হয়। এতে করে মহাসড়কের উপর দিয়ে হাজার হাজার মানুষ ও রোগীরা বাধ্য হয়ে যাতায়াত করবে। এছাড়া জরুরী বিভাগের গেইটের সামনে ডায়াগনোষ্টিক সেন্টার, অসুধের দোকান ও হোটেলসহ প্রায় ৩শতাধিক দোকান রয়েছে। অর্থাৎ আন্ডারপাসটি কলেজ গেইটে হওয়ায় কোন সুবিধাই পাওয়া যাওয়া যাবেনা। তাই আমাদের দাবি জরুরী বিভাগের সামনে আরো একটি আন্ডারপাস করতে হবে।

উল্লেখ্য বিগত দিনে এখানে রাস্তা পারাপার করতে গিয়ে নানা ধরনের দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া প্রায়ই দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে রোগী-স্বজন ও হাসপাতালে কর্মরতরা।

উল্লেখ্য ২০২২ সালের ১১ই নভেম্বর রাতে খবর সংগ্রহ শেষে বগুড়ার সবথেকে পরিচিত মুখ ও প্রবীন সাংবাদিক কমলেশ মহন্ত শানু এখানে রাস্তা পার হতে নিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়। পরে এক সপ্তাহ আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকার পর তার মৃত্যু হয়। এসব দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হল, ব্যস্ততম মহাসড়কটি হাসপাতালের সামনে হলেও যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ বা সড়ক নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা ছিলনা।

শজিমেক হাসপাতাল সূত্র জানায়, হাসপাতালটিতে প্রতিদিন রোগী থাকেন দেড় হাজারের ওপরে। এ ছাড়া বহির্বিভাগে প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার রোগী চিকিৎসা নেন। তাঁদের সঙ্গে থাকেন স্বজনরা।

এদিকে মহাসড়কের পাশে হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বাজার থাকলে সেখানে সড়ক নির্দেশিকাসহ সাইন সিগন্যাল থাকার কথা। কিন্তু বগুড়ার এই বৃহৎ হাসপাতালের সামনে তার কোনো চিহ্ন নেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একাধিকবার সড়কে গতিরোধক নির্মাণের তাগাদা দিলেও তা করা হয়নি।

বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ জানান, আমরা লিখিতভাবে ও মৌখিকভাবে সড়ক কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এখানে কলেজ গেট এবং মেডিকেলের জরুরী গেটে আন্ডারপাস রাখতে হবে। এখানে দুই গেটেই মানুষ পারাপারের জন্য নিরাপদ রাস্তা প্রয়োজন। আশাকরি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি শুরাহা করবেন।

মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণে চলমান সাসেক-২ প্রকল্পের বনানী থেকে মোকামতলা অংশের প্রকল্প ব্যবস্থাপক আহসান হাবিব জানান, তাঁদের প্রকল্পে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে এমভিটি আন্ডারপাস রয়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে দুর্ঘটনা কমবে। এই কর্মকর্তা আরো বলেন জরুরী বিভাগের সামনে একটি এমভিটি আন্ডারপাস করার জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে ইতিমধ্যে জানানো হয়েছে। নকশার কাজ চলছে। আশাকরি অতি দ্রুত সময়ের মধ্যেই এটির অনুমোদন হয়ে যাবে।

বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের প্রভাব নিয়ে যা বলছে পাকিস্তান টুডে
                                  

স্বাধীন বাংলা ডেস্ক:

বরাবরই শিক্ষার্থীরা ঐতিহাসিকভাবে বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক ল্যান্ডস্কেপ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। রাজনীতির কঠিন সন্ধিক্ষণে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততা প্রায়শই সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের তৎপর্যপূর্ণ অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। বৃহৎ রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে ছাত্র আন্দোলনই সবসময় কোনো অঞ্চলের জন্য মূল চালিকা শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। রাজনীতিতে বিশ্বব্যাপী তাদের প্রভাব অস্বীকার করার সুযোগ নেই।

২৫ আগস্ট ‘স্টুডেন্টস ইম্প্যাক্টস অন পলিটিকস’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে পাকিস্তান টুডে। যেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। দেশটির স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতিতে বিশাল আলোড়ন তুলেছিল শিক্ষার্থীরা। সেসময় তারা মাতৃভাষার পক্ষে দুর্বার আন্দোলন তৈরি করেছিল। যার প্রভাব পরবর্তীতে ১৯৭১ সালের মুক্তি যুদ্ধেও ছিল।

বাংলাদেশের ছাত্ররা সবসময়ই দেশের রাজনীতিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। তারা দেশের যে কোনো সংকটে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তুলেছে এবং সফল হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলন নতুন এক গতি হাজির করেছে। বিশেষ করে দেশের বিভিন্ন খাতে দুর্নীতি, অসমতা এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে নতুন শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনীতিতে তরুণদের ধারাবাহিক প্রভাব গোটা জাতিকে নতুন লক্ষ্যে অর্জনের পথ প্রসস্ত করে দিয়েছে।

বাংলাদেশের অন্তর্র্বতী সরকারে দুই ছাত্রের দায়িত্বপালন একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত, যা রাজনীতিতে ছাত্রদের আওয়াজকে বুলন্দ করেছে। এই পদক্ষেপটি দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে নজিরবিহীন এবং ছাত্র আন্দোলনের জাতীয় চেতনায় যে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে তা প্রতিফলিত করে। এই ছাত্র নেতারা অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের কাছে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে পেরেছে। শিক্ষাগত সংস্কার, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপে তরুণ প্রজন্মের সাথে যুক্ত বিষয়গুলোর উপর দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়েছে। তাদের সম্পৃক্ততা আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনের দিকে একটি পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়, যেখানে তরুণদের উদ্বেগগুলিকে বেশি অগ্রাধিকার দেয়া হবে।

অন্তর্র্বতী সরকারে ছাত্রদের দায়িত্বপালন ঐতিহ্যগত রাজনীতিতে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে সহায়ক। কেননা ছাত্র আন্দোলনের মূল চাবি হচ্ছে, ন্যায্যতা, ন্যায়বিচার এবং স্বচ্ছতা। এক্ষেত্রে অনেক সময় প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলো দলীয়করণের মাধ্যমে সামাজিক ন্যায়বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং অন্তর্র্বতী সরকারে তাদের অন্তর্ভুক্ত পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলোকে ন্যায্য ও ন্যায়সঙ্গত সমাজের পথে চলার ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিএনপির মতো বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলোর চাপ সত্ত্বেও শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দ্রুত রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনার আইনি প্রক্রিয়া মানতে বাধ্য করা হচ্ছে যা সুশাসন প্রতিষ্ঠারই ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে।

ছাত্র আন্দোলনের প্রভাব অন্তর্র্বতী সরকারের ক্ষমতার উঠোন ছাড়িয়ে গেছে। এই আন্দোলন নীতি পরিবর্তনের পক্ষে তরুণ ভোটারদের সংঘবদ্ধ করেছে। রাজনৈতিক নেতাদের জবাবদিহি করার মাধ্যমে রাজনৈতিক দৃশ্যপটকে পুনর্র্নিমাণ করার সম্ভাবনাও তৈরি করেছে এই ছাত্র আন্দোলন। বিভিন্ন উপায়ে, ছাত্ররা জাতির জন্য একটি নৈতিক মানদণ্ড হিসাবে কাজ করছে, তারা এমন পরিবর্তনের ধারা সৃষ্টি করতে চায় যা ন্যায্যতা, সমতা এবং ন্যায়বিচারের মূল্যবোধকে প্রতিফলিত করবে।

বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলন দেখিয়ে দিয়েছে, রাজনীতিতে ছাত্রদের সক্রিয়তা কীভাবে বৃহত্তর সামাজিক পরিবর্তনকে অনুপ্রাণিত করে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাজের সকল স্তরে ছড়িয়ে দিতে পেরেছে। দেশের সর্বস্তরের নাগরিকরা আন্দোলনে অংশ নিয়েছে। মূলত এই গণজোয়ার ইতিবাচক সমাজগঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালনে সক্ষম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামো মৌলিকভাবে অগণতান্ত্রিক হওয়ায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রকৃত সংস্কার জরুরি বলে মনে করেন তরুণরা।

দেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল বংশবাদী নেতৃত্ব দ্বারা প্রভাবিত, যেখানে ক্ষমতা একক পরিবার বা অভিজাতদের একটি ছোট গোষ্ঠীর মধ্যে কেন্দ্রীভূত হয়। যা গণতন্ত্রের সম্পূর্ণ বিপরীত। তরুণদের প্রতিনিধিত্ব জবাবদিহিতার উপর জোর দেয়। এই জাতীয় ব্যবস্থায়, নেতৃত্ব প্রায়শই যোগ্যতা বা দলীয় সদস্যদের ইচ্ছার মাধ্যমে অর্জিত হওয়ার পরিবর্তে পারিবারিক লাইনের মাধ্যমে চলে যায়। এই নিবিষ্ট বংশতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রকে ক্ষুন্ন করে এবং নতুন চিন্তা ও নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

সূত্র: মানবজমিন

সিলেটে আওয়ামী লীগের প্রমিথিউস সুলতান মনসুর
                                  

মাহবুবুল আম্বিয়া:

নীতির সেরা নীতি-রাজনীতির আদর্শবাদী কর্মী সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের রাজনৈতিক জীবন শুরু ও বিকাশ আওয়ামী লীগে। মাঝখানে ছন্দপতন ঘটলেও তিনি পথ হারাননি। সময়ের পালাবদলে তুমুল রাজনৈতিক চাপের মুখেও তাকে থামিয়ে রাখা যায়নি। অবশেষে সময়ই তাকে টেনে নিয়েছে আবার মূলধারায়। তিনি মন্ত্রী হয়ে কখনো কোন প্রকল্পের ফিতা কাটেন নি। ঝমকালো কোন সরকারী অনুষ্ঠানে মিডিয়ার সামনে তর্জন গর্জনের রেকর্ডও নেই। তথাপি দেশজোড়া পরিচিতি রয়েছে পোড় খাওয়া এই রাজনীতিকের। একজন পরিচ্ছন্ন চিন্তার রাজনীতিক হিসেবে, রাজনীতিতে নীতির প্রশ্নে আলোচনার ঝড় তুলে হয়েছেন গণমানুষের আপনজন।

বৃহত্তর সিলেটের হয়ে যারা একদা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়েছিলেন, পেয়েছিলেন দেশজোড়া খ্যাতি; সেই আব্দুস সামাদ আজাদ, দেওয়ান ফরিদ গাজী, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, এ.এস.এম কিবরিয়া, হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী, আবুল মাল আব্দুল মুহিত, সিলেট সিটির আলোচিত নেতা কামরান আহমেদ আর নেই। এখন সরকারে সিলেটের কয়েকজন মন্ত্রী রয়েছেন; আছেন এমপিবৃন্দ; জেলা ও মহানগরের নেতারা। কিন্তু দেশজোড়া পরিচিতি নিয়ে তারা কেউ আলোচিত হতে পারেননি। এদের মাঝে ব্যতিক্রম একমাত্র সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। তাঁর রয়েছে বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন এবং বিস্তৃত সুপরিচিতি।

আগামী নির্বাচন সামনে রেখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে বলে দিয়েছেন, গণমানুষের কাছে গ্রহনযোগ্যতা আর নেতৃত্বের গুণাবলিই হবে আগামীতে আওয়ামী লীগে পদ-পদবী পাওয়ার একমাত্র যোগ্যতা। এই ক্ষেত্রে প্রজ্ঞা, সততা ও রাজনৈতিক কর্মদক্ষতায় অল্প কিছু নামই জাতীয়ভাবে আলোচিত হতে দেখা যায়। আশ্চর্যের বিষয় হলো, জাতীয় পর্যায়ে উঠে আসবার মত রাজনীতিকের যেন চরম আকাল চলছে আওয়ামী লীগে। যদিও নেতায় ঠাসাঠাসি এক রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগ।

বঙ্গবন্ধুবিহীন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ নেতারা অধিকাংশ হয়েছিলেন কারাবন্দি। বাকী যারা ছিলেন, তারা কেউ হয়েছিলেন আপোষকামী, নিষ্ক্রিয় অথবা পলায়নপর। একমাত্র কাদের সিদ্দিকী প্রতিরোধের ডাক দিলে সেই কাফেলায় তখন আরও অনেকের মত যুক্ত হয়েছিলেন সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ। সেই চরম দুর্দিনে ১৯৮৯ সালে ডাকসু’র ভিপি পদে বিজয় ছিল পঁচাত্তর পরবর্তী আওয়ামী রাজনীতির কোন আনুষ্ঠানিক উঠে দাঁড়ানোর ঘটনা। ছাত্রলীগের তখনকার সভাপতি সুলতান মনসুরের হাতেই ডাকসু ভবনে ’৭৫ পরবর্তী প্রথমবারের মত টাঙ্গানো হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর ছবি। একজন মেধাবী, আদর্শবান ও পরীক্ষিত সংগঠক হিসেবে গোটা আশির দশক জুড়ে তিনি বাংলাদেশ কাঁপিয়েছেন। পরে নির্বাচিত হয়েছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। এ সবই ইতিহাস।

২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত সরকারের আমলে সংস্কারপন্থীর তকমা লাগে এই জনপ্রিয় আওয়ামী লীগ নেতার গায়ে। তখন একই তকমা লেগেছিল জননেতা তোফায়েল আহমেদ, আব্দুর রাজ্জাক, আমির হোসেন আমু, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তসহ আরও কতিপয় নেতার গায়ে। ফলে আওয়ামী রাজনীতিতে এক ধরণের ছন্দপতন ঘটে সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের। কিন্তু দমে যাননি আওয়ামী রাজনীতির এই প্রমিথিউস। তিনি অতীতের মতই সতীর্থদের নিয়ে সংগঠন গোছাতে লেগেই থাকেন। তার ফলও পেয়ে যান চরম বিরুদ্ধ স্রোতের মুখেও। পার্লামেন্ট মেম্বার নির্বাচিত হয়ে অবশেষে ফিরে যান আপন ডেরায়। এই হলেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক সুলতান মনসুর। সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ কেবলমাত্র বঙ্গবন্ধু ভক্ত নন; তিনি আপাদমস্তক রাজনীতিক এবং রাজনীতির শিক্ষাগুরুও বটে।

বর্তমানে সিলেট বিভাগ থেকে মন্ত্রীসভায় রয়েছেন ৫ জন মন্ত্রী। রাজনীতির সংগঠক হিসেবে জনগণের দোরগোড়ায় যাবার মত জনপ্রিয়তা নেই এদের কারও। ফলে রাজনীতির নতুন টার্ম হাইব্রিডে ভারাক্রান্ত হয়েছে গণমানুষের সংগঠন আওয়ামী লীগ। এমন পরিবেশে দেশব্যাপী দলের নিবেদিত, ত্যাগী নেতা-কর্মীরা একপ্রকার ঘরে উঠে গেছেন। আর দূর থেকে তাকিয়ে দেখছেন প্রিয় দলের রাজনৈতিক ধ্বংসযজ্ঞ। রাজনীতির মাঠে এদের ফিরিয়ে আনতে সুলতান মনসুরদের কোন বিকল্প নেই; থাকবেও না কোনদিন। তবে আওয়ামী রাজনীতির নীতি নির্ধারকরা সেটা দ্রুত বুঝলেই কেবল সকলের জন্যে মঙ্গল।


চাকরি না পেয়ে হতাশায় আত্মহত্যা জাবি শিক্ষার্থীর!
                                  

রোকনুজ্জামান, চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি:

চাকুরি না পেয়ে এবং শারিরিক অসুস্থতার কারনে হতাশাগ্রস্থ হয়ে গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান (২৭)। হাবিবুর যশোরের চৌগাছা উপজেলার স্বরুপদাহ ইউনিয়নের জলকার-মাধবপুর গ্রামের মৃত আয়নাল হকের ছেলে। সম্প্রতি রেজাল্ট হওয়া প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক পদে ভাইভা দিয়েছিলেন। তবে প্রতিবন্ধী কোটা থাকলেও চুড়ান্তভাবে নির্বাচিত হননি তিনি তবে বন্ধুদের চাকরি হয়েছে। এনিয়ে তার মধ্যে হতাশা ছিলো।

শুক্রবার (২০জানুয়ারী) দুপুর ১টা ২০মিনিটের দিকে গ্রামে নিজেদের দোতলা বসতবাড়ির শয়নকক্ষের পাশের রুমে ফ্যানের হুকের সাথে গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। পরে পরিবারের সদস্য এবং গ্রামবাসীর অনুরোধ ও আবেদনের প্রেক্ষিতে তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফনের অনুমতি দেয়া হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চৌগাছা থানার উপ-পরিদর্শক জয়নুল ইসলাম। নিহতের বড়ভাই আনিছুর রহমানের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘চাকরি না পাওয়ার হতাশা থেকেই তিনি আত্মহত্যা করেছেন। এছাড়া অন্য কোন কারন পাওয়া যায়নি।’’ পুলিশের সব রিপোর্টেও সেটাই লেখা হয়েছে বলে জানা গেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার দুপুর ১টা ১৫ থেকে ২০মিনিটের মধ্যে হাবিবুরদের গ্রামের দোতলা বাড়িতে শয়নকক্ষের পাশের কক্ষে বৈদ্যুতিক পাখার হুকের সাথে গলায় রশি দিয়ে ঝুলতে দেখে প্রথমে তার ভাতিজি চিৎকার-চেচামেচি শুরু করে। পরে পরিবারের সদস্যরা এসে রশি কেটে নামিয়ে দেখেন হাবিবুরের মৃত্যু হয়েছে। সংবাদ পেয়ে চৌগাছা থানার ওসি (তদন্ত) ইয়াসিন আলম চৌধুরী এবং পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) জয়নুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে যান। সেখানের পরিবারের সদস্যরা ও গ্রামের লোকজনের অনুরোধে এবং আবেদনের প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশটি দাফনের অনুমতি দেয়া হয়। পরে সন্ধ্যায় পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

তবে চাকুরি না পেয়েই সে আত্মহত্যা করেছে এটা অস্বীকার করে মোবাইল ফোনে হাবিবুরের বড় (পরিবারের ৪র্থ) ভাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) থেকে মাস্টার্স শেষ করা (এখনও চাকুরি পাননি) মাহবুব রহমান কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ‘ওর (হাবিবুর) একটা চোখ নষ্ট। ও সব সময় এজন্য মানুষ থেকে দুরে থাকতো। এরপরে পড়ালেখা করতে করতে আরেকটা চোখে মারাত্মক ব্যাথা শুরু হয়। ও বাড়িতে চিকিৎসার জন্য ভারতে নিয়ে যেতে বলেছিলো। সেখানে নিয়ে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট-ভিসা করার প্রক্রিয়াও চলছিলো। এরমধ্যে প্রাথমিকের রেজাল্ট দেয়ার পর চাকরি না হওয়ায় প্রচন্ড লেখাপড়া করতে শুরু করলে চোখের ব্যথা আরও বেড়ে যাওয়ায় সে ভয় পেয়ে যায় যে আরেকটা চোখও হয়তো নষ্ঠ হয়ে যাবে। তাছাড়া শহরে থাকা মানুষ করোনার জন্য গ্রামে আছে। সাইক্লোজিক্যাল একটা বিষয় আছে না? সবমিলিয়ে সে এ ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছে। তিনি বলেন, আমরা ৫ ভাই, ২ বোনের মধ্যে হাবিবুর সবার ছোট। সে ২০১২ সালে এসএসসি ২০১৪ সালে যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। বছরখানেক আগে তার লেখাপড়া শেষ হয়। তিনি আরও বলেন, ওর আরও সুযোগ ছিলো বয়সও ছিলো। আমি নিজেই এখনও চাকুরি পাইনি। আমি এসআইতে টিকেছি, সিটি কর্পোরেশনের ইন্সপেক্টরে টিকেছি। চাকুরি পাইনি। আমি তো ওর বড় ভাই। আমি বিশ্বাস করি আমি চাকুরি পাবো। ও তো প্রথমবার প্রাইমারিতে টিকেছিলো। ও আরও ভালো চাকুরি পেত। কারন ওর প্রতিবন্ধী সনদও রয়েছে। কাজেই গ্রামের লোক যে বলছে প্রাইমারীর চাকুরি না পেয়েই সে আত্মহত্যা করেছে এটা সঠিক নয়।

চৌগাছা থানার ওসি তদন্ত ইয়াসিন আলম চৌধুরী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, পরিবারের সদস্যদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি দেয়া হয়েছে।

শোকের নদী ‘বিত্তিপাড়া’, এখনও নাম ওঠেনি বধ্যভূমির তালিকায়
                                  

বশীর আহমেদ:

কুষ্টিয়া জেলা সদরের অনতি দূরে জাতীয় মহাসড়কের পাশে পুরনো বাস স্টপেজ ও বাজার বিত্তিপাড়া। একসময় কেবল স্থানীয় মানুষদের চাহিদা-নির্ভর বিত্তিপাড়া সময় বদলের সাথে এখন বহুমাত্রিক জমজমাট ব্যবসাকেন্দ্র। সাপ্তাহিক হাটবারে এলাকায় উৎপাদিত হরেক রকম কৃষিপণ্যের বিকিকিনিতে সরগরম হয় বাজারটি। আধুনিক জীবনের যাবতীয় উপকরণ জোগান দেবার অসংখ্য প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে বিত্তিপাড়ায়।

পঞ্চাশ বছর আগে পরিস্থিতি এমন ছিল না। হাতে গোনা কয়েকটি মুদি দোকান আর ঝুপড়ি ঘরের চা স্টলগুলো অনিয়মিত খদ্দের নিয়েই সন্তুষ্ট থেকেছে। তখন বাজার সংলগ্ন কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ সড়ক ছিল খুবই সংকীর্ণ; সিমেন্টের স্লাব ঢালাই এক চিলতে রাস্তা। যানবাহনের আনাগোনাও ছিল সীমিত। ওই সময় মানুষের আয়-রোজগারও ছিল অল্প; দিন এনে দিন খাওয়া মানুষের সংখ্যাই ছিল অগুণতি।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানী সেনারা তাদের এদেশীয় সহযোগীসহ বিত্তিপাড়ায় গড়ে তোলে গুরুত্বপূর্ণ টর্চার ক্যাম্প। বাজারের ইউনিয়ন পরিষদ অফিসটি হয়ে ওঠে শত্রুসেনাদের কৌশলগত সামরিক বিবর।

সেই সেনা-ছাউনির চৌহদ্দি ঘিরে শত রোমহষর্ক নৃশংসতা, হৃদয় মোচড়ানো কতো আর্তনাদ যে নিঃশব্দে আজও গুমরে কাঁদে, তার খতিয়ান আলোয় এসেছে সামান্যই। বিত্তিপাড়ার গণকবরে শায়িত শত মানুষের ক্ষয়িষ্ণু করোটিগুলো যেন মুক্তিযুদ্ধের অকথিত, অব্যক্ত উপাখ্যান হয়ে মাটি চাপা পড়ে আছে। ওই হতভাগ্যরা যেন আজও অভিযোগে অভিশাপে বিদ্ধ করছে অকৃতজ্ঞ স্বজনদের।

একাত্তরে বিত্তিপাড়ার পাকিস্তানি সেনা ছাউনিটি ছিল এই এলাকার জীবন্ত বিভীষিকা, গণহত্যাযজ্ঞের অন্যতম বধ্যভূমি। সড়ক এবং রেল পথে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গ সংযোগের কেন্দ্র হওয়াতে কুষ্টিয়ার বিত্তিপাড়া অতিক্রমকারী যানবাহন থামিয়ে হতভাগ্য নারী-পুরুষদের নামিয়ে নেয়া হতো। ক্যাম্পে নিয়ে চালানো হতো পাশবিক নির্যাতন; হত্যা করে লাশ পুতে রাখা হতো আশপাশে। কখনও বা ফেলে দেয়া হতো পুকুর অথবা ডোবা নালায়। এভাবে মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ নয় মাস বিত্তিপাড়ায় চলেছে নির্বিচার গণহত্যাযজ্ঞ; যার প্রকৃত সংখ্যা নিরুপণ অসম্ভব।

এই বাজারে সড়কের পাশে চা দোকানের পশরা সাজিয়েছেন প্রবীণ দোকানী আবজাল হোসেন। সড়ক বিভগের উচ্ছেদ আতঙ্কে কাস্টমারদের বসার জন্য লাগিয়েছেন অস্থায়ী ছোট্ট বাঁশের মাচান। চা দিতে বলে অতঃপর এখানকার গণকবর সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রথমে তিনি অবাক চোখে তাকালেন। পরে চা বানানোর সাথে স্বাভাবিক হলেন একসময়। কাজের ফাঁকে জানালেন, বিত্তিপাড়া বাজার এবং এর আশপাশের পুরো এলাকাই বলতে গেলে গণকবর। স্বাধীনতার পর এখানে একটা দু`টো করে বাড়ীঘর তৈরী হতে থাকে। যেখানেই খোঁড়াখুঁড়ি হয়েছে, সেখান থেকেই উঠে এসেছে মানুষের হাড়-গোড়, মাথার খুলি; পচে যাওয়া নানা ধরণের উপকরণ। বিত্তিপাড়া বাজারের গণহত্যা সম্পর্কে ওয়াকেবহাল সকলের জবাব প্রায় একই।

আবজাল জানান, এখানকার সব চাইতে বড় গণকবর- যেখানে শত শত মানুষকে মাটি-চাপা দেয়া হয়েছিল; তা ২-৩ বছর আগেও ঝোপঝাড় হয়ে পড়েছিল। দীর্ঘদিন কেউ খোঁজ-খবর না করায় গত কয়েক বছর থেকে সেখানে চাষবাস হচ্ছে। আবজালের মতে, ওই জায়গা খোঁড়া হলে কি পরিমাণ কঙ্কাল উঠবে তা আল্লাহই মালুম। এখানে একটি প্রায় শতবর্ষী গভীর পূকুর রয়েছে; যেখানে এখনও কেউ ভয়ে মাছ ধরতে উৎসাহী হন না। কারণ, একাত্তরে অগুনতি মানুষ হত্যার পর ফেলে দেয়া হতো ওই পুকুরে।

বিত্তিপাড়া বাজারের প্রবীণ বাসিন্দা সবদুল ইসলাম জানান, প্রায় ২৫ বছর আগে তাদের পৈতৃক বাড়ি সংস্কার করতে মাটি খুঁড়লে ২০-২৫টি মাথার খুলি, হাড়গোর উঠে এসেছিল। তিনি বলেন, খুলির সাথে লেগে থাকা দাঁতগুলো ছিল একেবারে অবিকৃত ও ঝকঝকে। এ থেকে ধারণা হয়, ওগুলো সবই ছিল তরুণ-যুবকদের কঙ্কাল। সবদুল আরও বলেন, বছর সতের আগে একইভাবে তাদের বসতবাড়ি থেকে আরও বেশ কয়েকটি মাথার খুলি, হাড়গোর উঠে এসেছিল।

সরেজমিন তথ্য সংগ্রহকালে কথা হয় বিত্তিপাড়ার পরিবহন মালিক মশিয়ার রহমান, সাংবাদিক রাজ্জাক মাহমুদ রাজসহ আরও অনেকের সাথে। এদের সকলের স্মৃতিচারণ প্রায় একই। রাজ এবং মশিয়ার বলেন, ‘বাপ-দাদা এবং গ্রামের মুরুব্বিদের কাছে একাত্তরের ভয়ঙ্কর দিনগুলোর কথা শুনেছি। বিত্তিপাড়ায় মানুষ হত্যা এবং নির্যাতনের বর্ণনা শুনে শিউরে উঠেছি। প্রতি রাতে দল বেঁধে হতভাগ্য মানুষদের মারতে মারতে নেয়া হতো আশপাশের ডোবা নালা, জলাশয় এবং হত্যা করার নির্দিষ্ট জায়গাগুলোতে। মানুষের করুণ কান্না আর মরণ চিৎকার শোনা যেতো বহুদূর থেকেও।’

‘কত নিষ্ঠুরভাবে যে মানুষ হত্যা করা হতো; গুলি করে, গলা কেটে, পেট ফেঁড়ে, গলায় রশি বেঁধে টেনে হিঁচড়ে, আধামরা জীবন্তদের মাটি চাপা দিয়ে; নারী-পুরুষ, কিশোর-যুবক, বয়স্ক- বাছবিচারহীন ভাবে। পরে মাটিচাপা দেওয়ার জায়গাও আর বাজারের আশপাশে ছিল না। অনেক লাশ ফেলে দেয়া হয়েছে এখানকার পুরাতন এক পুকুরেও।’

রাজ বলেন, ‘পুরো বিত্তিপাড়া বাজারটাই যেন এক সুবৃহৎ গণকবর। মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়ার অনেকদিন পরেও বিত্তিপাড়ার নানা স্থানে শিয়াল-কুকুর মাটি খুঁড়ে মানুষের হাড়গোর, কঙ্কাল মুখে নিয়ে টানাটানি করেছে।’

একাত্তরে লন্ডনে গঠিত বাংলাদেশ ফান্ডের প্রধান উদ্যোক্তা-ট্রেজারার, বৃটিশ এমপি জন ষ্টোনহাউজ একাত্তরের গণহত্যার পরিধি খতিয়ে দেখতে স্বাধীনতার পর পরই বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। জানা যায়, কুষ্টিয়ার তৎকালীন এমপি ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলামের সহায়তায় ষ্টোনহাউজ বিত্তিপাড়া বধ্যভূমি থেকে প্রায় দুই পিকআপ ভর্তি নরকঙ্কাল সংগ্রহ করেছিলেন। এই ঘটনা বিত্তিপাড়ায় পাকিস্তানি নরপশুদের বাছবিচারহীন গণহত্যাযজ্ঞ ও বীভৎসতার অকাট্য প্রমাণ বহন করে।

বিত্তিপাড়ার শহীদদের স্মরণে ২০১২ সালে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, কুষ্টিয়া জেলা ইউনিট কমান্ড একটি স্মৃতিসৌধ নির্মান করেছিল। কিন্তু উদ্যোক্তা বীর মুক্তিযোদ্ধারা এখন প্রায় সকলেই বয়সের ভারে ন্যূজ। ফলে ইচ্ছা থাকলেও সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ ও নজরদারী না থাকায় তা ক্রমেই তা বিনষ্টের পথে। লোহার রেলিংগুলো খুলে নিচ্ছে ছিঁচকে চোরের দল। আশপাশের মানুষেরা গরু-ছাগল বেঁধে রাখেন স্মৃতিসৌধের পিলারে। এখন ভেজা কাপড় শুকাতেও এটা ব্যবহার করেন কেউ কেউ।

অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনকভাবে, কুষ্টিয়া তথা দক্ষিণ বঙ্গের এত বড় একটি বধ্যভূমি ও গণকবর স্থান পায়নি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বধ্যভূমি বা গণকবর-এর তালিকায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ নিয়ে দেশের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মাধ্যমে অতীতে একাধিকবার রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং সূধীজন অনেক দাবী জানিয়েছেন। এমন কি, কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের অফিশিয়াল ফেসবুক পেইজেও এ সম্পর্কে তথ্য রয়েছে। অথচ মহান মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক গুরুত্বের নিরব সাক্ষী বিত্তিপাড়ার গণকবর ও বধ্যভূমিগুলো স্থায়ীভাবে সংরক্ষিত রাখার কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। যেটুকু হয়েছে তা যৎসামান্য বললে বোধ করি খুব অল্পই বলা হবে।

একাত্তরে পাকিস্তানী শত্রুবাহিনীর নির্মমতা প্রত্যক্ষকারীদের কাছ থেকে নিজের কানে শোনা বিত্তিপাড়ার শোকার্ত জনতা এবং কুষ্টিয়ার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দাবী, গণহত্যার নিদর্শনাদি এখনও যা রয়েছে তা উপযুক্ত মর্যাদায় সংরক্ষণের জন্য মন্ত্রণালয়ের বধ্যভুমি ও গণকবরের তালিকায় কুষ্টিয়ার বিত্তিপাড়ার নাম অন্তর্ভূক্ত করা হোক। একই সাথে এখানকার বধ্যভূমি ও গণকবরের স্থানগুলো সংরক্ষণসহ অজ্ঞাত শহীদদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ ও মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর কমপ্লেক্স নির্মানে উদ্যেগী হওয়া এখন সময়ের দাবী।

লেখক: বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক।

রাহু গ্রাসে সাংবাদিক সমাজ, বানানো হচ্ছে শ্রমদাস
                                  


লিখছি বটে, পড়ার নিশ্চয়তায়  আশহুত।তারপরও চেষ্টা অব্যহত ও অবারিত করছি। ধৈর্য ধরে লেখাটি পডার অনুরোধ রাখছি। নিজেদের রক্ষা করার স্বার্থে বিষয়টি জানার ও সহয়তার অনুরোধ রাখছি। দাবি করছি প্রতিবাদ করার, না হলে সকলকে চরম মূল্য দিয়েও বর্তমানকে ফিরিয়ে আনা হবে সুদুর পরাহত। সকল সক্ষমতা হবে পরাজিত। সাংবাদিকদের পরিণতি দড়িবিহীন বন্দিদশায় অপেক্ষমান। ঘর্মাক্ত ও ক্ষতবিক্ষত শরীরে অট্টহাসির সাথে লবণ মাখার প্রস্তুতি সম্পন্ন।কাজটি হচ্ছে নিজস্ব জাতপাত দিয়েই; এটা করতে যাদের যোগ্যতার ঘাটতি নেই। গরম কথামালা, মুখে জীবন দান, ভোটের হালখাতা ঠিক রাখতে সর্বস্ব দানের কপট প্রতিশ্রুতি; অবশেষে ফসল ঘরে তুলতে জী হুজুর জী হুজুর অবস্থান।
গত ২১ জুলাই বৃহস্পতিবার রাতে সময় টিভির সংবাদে বিএফইউজেসহ অন্যান্য সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ গণমাধ্যম আইনের সংশোধনী মাননীয় তথ্য মন্ত্রীর হাতে অর্পণ করেছে। নিউজটি দেখে বিচলিত হলাম। নিউজে দেখানো ছবিতে ২/১জন নেতার সঙ্গে আলাপচারিতায় রীতিমত হতভম্ভ, হতবিহবল, কিংকর্তব্যবিমূঢ়।
গত ২১ জুলাই বিকালে বিএফইজের নেতৃবৃন্দ ডিআরইউতে গণমাধ্যম আইনের সংশোধনী সভায় ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক আইনের সংশোধনী দিতে আরো সময়ের প্রয়োজন উল্লেখ করায় এক শীর্ষ নেতা রাগান্বিত হয়ে সভা ছেড়ে চলে যান। অপর শীর্ষ নেতা আরও দুইদিন পর সময় নির্ধারণ করেন। সবাই একত্রে মাননীয তথ্য মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সংশোধনী দেওয়ার সময় বাড়িয়ে নিয়ে আসার প্রস্তাবে সকল নেতৃবৃন্দসহ সচিবালয়ে মাননীয় তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান। এসময় নেতৃবৃন্দ জানতে পারেন মন্ত্রী রবিবার ঢাকায় থাকবেন না। তখন শীর্ষ নেতার কথামত পরবর্তী রোববার সংশোধনী দেওয়া ও সংবাদ প্রচারের সিদ্ধান্তে সেদিনই মন্ত্রীর হাতে সংশোধনী দেওয়ার একটি ডেমি ছবি তুলে রাখার প্রস্তাবে নেতৃবৃন্দ মন্ত্রীর সঙ্গে আইনের সংশোধনীটি হস্তান্তর করার ছবি তোলেন। উক্ত ডেমি ছবি দিয়ে ২১ জুলাই রাতেই মন্ত্রীর হতে নেতৃবৃন্দ সংশোধনী দিয়েছে শিরোনামে সংবাদ প্রচার করা হয় যা এক নিকৃষ্ট প্রতারণা।
প্রস্তাবিত গণমাধ্যম আইনটি সারা দেশের সাংবাদিক সমাজের ভবিষ্যত, নীতি নির্ধারণ, রুটি,রুজি ও সাংবিধানিক প্রশ্ন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এই প্রতারণামূলক কাজটি সম্পূর্ণ সংগঠনের গঠনতন্ত্র বিরোধী। সাধারণ সাংবাদিকদের প্রশ্ন কেন ২/৩ জন শীর্ষ নেতার এই ব্যস্ততা, কেন এই চতুরতা, কেন এই হটকারিতা? এটা কি কোন দায় বা দেনা পরিশোধ বা প্রাপ্তির নিশ্চয়তার বিষয়?
গত ২২ জুলাই বিএফইউজের গণমাধ্যম আইনের সংশোধনটি পড়ে হাসবো না চিল্লায়ে কান্না করবো; নাকি উন্মাদ হয়ে দৌড় দিব- তাই ভাবছি। তবে সাধারণ সাংবাদিকদের মানষপটে জন্ম দিয়েছে একাধিক প্রশ্নের। ভোটে নির্বাচিত নেতৃবৃন্দের কেন এমন আচারণ? কেন এই আইনটি নিয়ে এত লুকোচুরি, গোপনীয়তা, হঠকারিতা, ব্যস্ততা? কেন এই আইন নিয়ে নেতৃবৃন্দ অপপ্রচার ও ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছেন? কেন এই আইনের সঠিক ব্যাখ্যা বুঝতে সাধারণ সাংবাদিকদের দ্বিধাদ্বন্দ্বে ফেলছেন? কেন এই আইনের বর্তমান ভবিষ্যত বা সঠিক ব্যাখ্যা সাধারণ সাংবাদিকদের সামনে নেতৃবৃন্দ দিচ্ছেন না? কেন আইনগত উত্তর দিচ্ছেন না? সাধারন সদস্য বা সাংবাদিকদের উন্মুক্ত মতামত না নিয়ে বা চুলচেরা বিশ্লেষণ না করে সবাইকে আড়ালে রেখে এই আইন পাশ করার জন্য এত তৎপর হয়েছেন। সাংবাদিক সমাজের স্বার্থে প্রস্তাবিত এই আইন প্রত্যাহার দাবীতে আন্দোলন করলে কেন উনারা তাদের ভয়ভীতি দেওয়াসহ আন্দোলন থামানো বা ব্যাক্তিগত শত্রুতে পরিণত করছেন? কেন আন্দোলনকারীদের সাংগঠনিক প্রোগ্রামসহ সকল কিছু থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত হচ্ছেন? কেন উনারা বুঝতে চেষ্টা করছেন না যে বিরোধীতাকারীরা শত্রু নয় বরং পরম বন্ধু। উনারা কি জেগে ঘুমাচ্ছেন নাকি আমাদের বিক্রি করে দিচ্ছেন? কেন সাধারণ সাংবাদিকদের সর্বহারা করছেন? কেন সাধারণ সাংবাদিক ও সদস্যদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে স্থায়ী শ্রমদাস বানাচ্ছেন?
 জাতীয় সংসদে উপাস্থাপিত গণমাধ্যম চাকুরী বিধিমালা যেমন সংবাদিক বিরোধী কালা আইন, তেমনি এই আইনের উপর বিএফইজের সংশোধনী মালিকদের স্বার্থ রক্ষার ঐতিহাসিক সনদে পরিণত হয়েছে। তুলনামূলক উপাস্থাপিত গণমাধ্যম চাকরি বিধিমালা আইন-২০২২ যদি কালো আইন হয় তাহলে এই আইনে উপর বিএফইউজের সংশোধনী সংবাদিক ও সংবাদমাধ্যম কর্মী (চাকরির শর্তাবলি) আইন-২০২২ নিকৃষ্ট কালা আইনে পরিণত হয়েছে। হয়েছে মালিকের স্বার্থ রক্ষার সনদ ও সাংবাদিকদের আত্মহত্যার দলিল। বিএফইজের ২/৩ জন নেতার হাতে এই আইনের সংশোধনী কেন মালিকের স্বার্থ রক্ষার সনদ ও সাংবাদিকদের আত্মহত্যার দলিল সেটা বুঝতে প্রথমে আমরা স্বাধীনতা পরবর্তী এবং বর্তমানে সাংবাদিকদের জন্য বিদ্যমান আইনের প্রেক্ষাপট জানাসহ কেন এই আইনটি সংশোধনযোগ্য নয়, বরং বাতিলযোগ্য  সেটা নির্ধারিত  আইনের ব্যাখ্যায়  জানানোর চেষ্টা করবো।  
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রের শ্রমিকদের ভবিষ্যত নিরাপত্তার জন্য ১৯৭২ সালের ২২ জুন আমাদের সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশকে  আন্তর্জাতিক শ্রম  সংস্থা-আইএলও`তে সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে অন্তভুক্ত করেন। ১৯৭৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর `দি প্রিন্টিং প্রেস (ডিক্লারেশন এন্ড রেজিষ্ট্রেশন) অ্যাক্ট প্রণয়ন করে স্বাধীন বাংলাদেশে আইনগতভাবে সংবাদপত্র নামের প্রতিষ্ঠানের জন্ম দেন এবং সাংবাদিকদের কর্মক্ষেত্র নির্ধারণ করাসহ কর্মরতদের পদ পদবী পরিচয় সৃজন করেন। অতঃপর সংবাদপত্রের মান উন্নয়নের জন্য সাংবাদিক এবং তাদের সম্মান ও স্টাটাস এবং কর্মপরিধি নির্ধারণ করে ১৪ ফেব্রুয়ারী ১৯৭৪ প্রেস কাউন্সিল আইন প্রণয়ন করেন। একই সাথে সংবাদপত্রে কর্মরত সাংবাদিক এবং সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের চাকরির শর্ত আইনীভাবে নির্ধারিত করতে ১৯৭৪ সালে ১৯ ফ্রেব্রুয়ারী "দি নিউজপেপার এমপ্লয়ীজ (কন্ডিশন অব সার্ভিস) বা সাংবাদপত্র কর্মচারী (চাকরি শর্তাবলী) আইন প্রনয়ন করেন। ১৯৭৪ সালে "দি নিউজপেপার এমপ্লয়ীজ (কন্ডিশন অব সার্ভিস) বা চাকরি বিধিমালা আইনের ১৫ ধারায় সংবাদিকদের নিয়োগের বিধানে স্পষ্ট করেই লিপিবব্ধ হয় সাংবাদিকরা শ্রমিক। এই আইনে `১৯৬৫ সালের শ্রমিক নিয়োগ (স্থায়ী আদেশ) আইনের বিধান অনুযায়ী একজন শ্রমিক হিসেবে সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেকটি নিয়োগ গণ্য হবে।` বঙ্গবন্ধুর সময়ে প্রণয়ন করা সেই দি নিউজপেপার এমপ্লয়ীজ (কন্ডিশন অব সার্ভিস) চাকরির বিধিমালার আইনে ৩ নং ধারায় সাংবাদিকদের ইউনিয়ন করার অধিকার দিয়ে লিপিবব্ধ হয় যে, `১৯৬৯ সালের শিল্প সম্পর্ক অধ্যাদেশ অন্যান্য শ্রমিকদের ক্ষেত্রে যেভাবে প্রযোজ্য সংবাদপত্রের কর্মচারীদের জন্যও শ্রমিক হিসেবে তা একইভাবে প্রযোজ্য হবে।`
লক্ষ্য করুন, বঙ্গবন্ধু প্রথমে শ্রমিক ও সাংবাদিকদের প্রটেকশনের জন্য আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থায় রাষ্ট্রকে সদস্য করেন। দ্বিতীয়ত, আইন সম্মতভাবে সাংবাদিকদের কর্মক্ষেত্র তথা প্রতিষ্ঠান জন্ম দেন। তৃত্বীয়ত, সাংবাদিকদের  কর্মপরিধি সৃজনেও আইন করেন। চতুর্থত পূর্বের কৃত আইনের ধারাবাহিকতায় সাংবাদিকদের জন্য চাকরির শর্তাবলী প্রণয়ন করেন।  অথচ এখন `গণমাধ্যম কর্মী (চাকরির শর্তাবলী) আইন` যখন সংসদে উপাস্থাপন করা হয়েছে তখন দেশে "গণমাধ্যম" নামে প্রতিষ্ঠানেরই আইনী জন্ম বা অস্তিত্ব নাই। গণমাধ্যম শব্দটির অর্থ করতে গেলে বলতে হয় অনেকগুলো শ্রেণী পেশার মানুষ যেমন চলচ্চিত্রকার, নাট্যকার, অভিনেতা, অভিনেত্রী, গায়ক, বাওুল, বাদ্যকর, ঠুলি, কবি, লেখক, অনলাইন, টিভি, বেসরকারি রেডিও, সাংবাদিক ইত্যদি। অর্থাৎ কিভাবে, কোথা হতে, কারা গণমাধ্যমকর্মী তার কোন আইন বা প্রতিষ্ঠান, পদ,পদবীর জন্ম বা অস্তিত্ব নাই। তার উপর বেওয়ারিশ নাম সম্বলিত গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য আইনানূগভাবে কর্ম তথা পদসমূহ সৃজন না করেই তাদের চাকরির শর্তাবলী নির্ধারণ করা হচ্ছে। আপনারা ভাবুন কতটা বিকৃত মস্তিস্কের বা প্রতিহিংসা, লোভ এবং জিঘাংসার বশবর্তী হলে বা দায়-দেনা পরিশোধের গরজ বা প্রাপ্তির প্রত্যাশা থাকলে বা রাষ্ট্র ও সরকারকে বিপদে ফেলতে বা রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ যাদের আইন সম্মতভাবে প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিক পরিচয় আছে, সেই পরিচয় মুছে দিয়ে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে "গণমাধ্যম কর্মী" বানানো হছে। উপাস্থাপিত এই "গণমাধ্যম কর্মী (চাকরির শর্তাবলী) আইন" এর মাধ্যমে সাংবাদিকেরা তাদের বিশ্বজনীন স্বীকৃত সাংবাদিক পরিচয় হারাছে। হারাচ্ছে শ্রম ও শিল্প, সেহেতু আপনা আপনি বের হচ্ছে আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থা (আইএলও) এর আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বলয় হতে।
১৯৭৫ এর ১৫ই আগষ্টের পর সাংবাদিকদের ১৯৭৪ সালে "দি নিউজপেপার এমপ্লয়ীজ (কন্ডিশন অব সার্ভিস) বা চাকরি বিধিমালা আইন নিয়ে দেশে আর কোন অগ্রগতি না হলেও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)র ছায়ায় শ্রমিকদের নিরাপত্তা, উন্নতি সুযোগ সুবিধা প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯০ টি ঘোষণার মাধ্যমে স্ব-স্ব দেশে সমন্বিত শ্রম আইনের মাধ্যমে সারা বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাদের ১৮৭টি সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহবান জানায়। উল্লেখ্য বাংলাদেশে ৫০টি শ্রম আইনের মাধ্যমে শ্রম, শিল্প পরিচালিত করতে নানাবিধ অসুবিধায় পতিত  হতো যার কারণে  বাংলাদেশ (আইএলওর) সদস্য দেশ হওয়ায় বাংলাদেশও সমন্বিত শ্রম আইন করার অঙ্গীকারে এরশাদ শাসনামল থেকে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)সহ অনান্য শ্রমিক সংগঠন সমন্বিত শ্রম আইন প্রণয়নের দাবীতে আন্দোলন শুরু করে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চাপে পড়ে ২০০১ সালে বিএনপি সরকার জাতীয় সংসদে এই সমন্বিত শ্রম আইন প্রণয়নে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে সমম্বিত শ্রম আইন বস্তবায়নে কমিটি গঠন করে।উক্ত কমিটি শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)কে খসড়া প্রস্তুত ও প্রস্তাব করার দায়িত্ব দেয়।  শ্রম ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সকল আইন একত্রিত করে (স্কপ) এর প্রধান সমন্বয়ক তৎকালিন খুলনার ১ আসনের সংসদ সদস্য ও হুইপ ,খুলনা জেলা আওযামী লীগের সভাপতি জনাব হারুনর রশিদের ১৫ সদস্যের কমিটি দীর্ঘ তিন বছরের প্রচেষ্টায় পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে ২০০৩ সাল পর্যন্ত প্রচলিত সকল আইন ও বিভিন্ন আদালতের সিদ্ধান্ত, নজির, রেফারেন্স সমূহের ভিত্তিতে ২০০৫ সালে সমন্বিত শ্রম আইনের খসড়া তৈরী করে কমিটির কাছে জমা দেয়। বিএনপি সরকার আইনের এই খসড়া দীর্ঘদিন ফেলে রাখে। ২০০৬ সালে সরকারের মেয়াদ শেষ হবার আগে তাদের বিরুদ্ধে বিরোধীদলের আন্দোলন যখন তীব্র সেই সময় স্কপ নেতৃবৃন্দ তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করে সমন্বিত শ্রম আইন পাস করে দেয়ার দাবি জানান। অন্যথায় বিরোধীদল সমূহের শ্রমিক সংগঠনের সাথে (স্কপও) এই সময় আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে বলে জানিয়ে দেয়। এমন পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে বিএনপি সরকার সমন্বিত শ্রম আইন পাস করে দিয়ে যেতে বাধ্য হয়।  যেহেতু শ্রম ক্ষেত্রের জন্য প্রচলিত উল্লেখযোগ্য ২৫টি আইন একীভূত করে শ্রম আইনে অন্তর্ভূক্তি করে, সেহেতু সেগুলোর পৃথক অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়। উল্লেখ্য যেহেতু সাংবাদিকদের নিয়োগ ১৯৬৫ সালের শ্রমিক নিয়োগ (স্থায়ী আদেশ) আইন অনুযায়ী হয় এবং ১৯৭৪ এর `দি নিউজপেপার এমপ্লয়ীজ (কন্ডিশন অব সার্ভিস) আইন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা প্রদত্ত অধিকার সমূহ ভোগের অধিকার রাখার জন্য অতীতে আইনগুলোতে যেমন ছিল; ২০০৬ এর সমন্বিত শ্রম আইনে ১৯৬৫`র এবং বঙ্গবন্ধুর করা  ১৯৭৪ সালের "দি নিউজপেপার এমপ্লয়ীজ (কন্ডিশন অব সার্ভিস) বা চাকরি বিধিমালা আইনের হুবহু সেই বিধানগুলো সংরক্ষিত করা হয়। এরফলে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা ঘোষিত ১৯০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক ঘোষণার বিশাল নিরাপত্তা বলয়ের ভিতর আইনী ভাবেই সাংবাদিকরা সংরক্ষিত হয়েছেন। সাংবাদিক সমাজের পূর্ব পুরুষেরা সংবাদপত্রকে শিল্প হিসাবে ঘোষণা করার দীর্ঘদিনের দাবিটিও পূরণ হয়।
সমন্বিত ২০০৬ এর শ্রম আইনে  সাংবাদিকদের যে সকল উল্লেখযোগ্য সুফল প্রাপ্তি হচ্ছে তাহলো-  (১) পাওনা আদায়ের ক্ষেত্রে লেবার কোর্টের মামলা বা রায় মালিকপক্ষ হাইকোর্টে রিট করে বছরের পর বছর ফেলে রাখতো। ২০০৬ সালের পর থেকে আর মালিকপক্ষ হাইকোর্টে রিট করে সাংবাদিকদের পাওনা আদায়ের মামলা ফেলে রাখার সুযোগ পাচ্ছে না। (২) কর্ম-পরিবেশ রক্ষায়, নারীদের বাড়তি সুবিধাদি, ডিউটিরত অবস্থায় দূর্ঘটনায় মৃত্যুজনিত কারণে পরিবারের প্রাপ্যতা নির্ধারণেসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থা ঘোষিত সুবিধা ভোগের আইনি অধিকার পেয়েছেন সাংবাদিকরা। (৩) ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নে আইনি সহয়তা, (৪) ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দের প্রতি বেআইনী পদক্ষেপ নেওয়া বন্ধ (৫) ছাটাই, অব্যহতি, ছুটিসহ সকল ক্ষেত্রে আইনি সহয়তা (৬)  মালিক পক্ষ সাংবাদিকদের মামলায় বরাবর লেবার কোর্টে দাবি করে আসছে, সাংবাদিকরা শ্রমিক নয়; তারা শ্রমিকের সুবিধা পেতে পারে না। শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্তির পর তাদের এই দাবি একেবারেই অসাড়, অচল হয়েছে। (৭) যেহেতু এই আইন ২৫টি আইনের সমন্বয়ে গঠিত সেহেতু এই আইন একে অপরের সম্পূরকও বটে। এছাড়া শ্রম আইনে নতুন কিছু বাধ্যবাধকতা মানতে বাধ্য হবার কারণে মূলতঃ শ্রম আইন থেকে সংবাদ প্রতিষ্ঠান ও সাংবাদিকদের বের করার সুপ্ত জোরালো আশা দীর্ঘদিন পোষণ করে আসছে সংবাদপত্র মালিকরা।সুদুর প্রসারি সূক্ষ্ণ ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে মালিকদের সাথে কতিপয় নেতা যুক্ত হয়ে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে সাংবাদিকদের এই আইনের সুবিধা পেতে, জানতে ও ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করেছে।  ২/৪ জন অতি লোভী নেতা আইনটির প্রতি বিরুপ ধারণা প্রতিষ্ঠিত করতে এই দীর্ঘ সময় অপপ্রচার করেছেন; যেমন (১) বঙ্গবন্ধুর ৭৪ এর আইন বাতিল করেছে বিএনপি। (২) বিএনপি সাংবাদিকদের শ্রমিক বানিয়েছে (৩) এই আইনে তেমন সুযোগ সুবিধা নাই (৪) সাংবাদিকদের কোন ষ্ট্যাটাস নাই ইত্যাদি। এই সব অপপ্রচারের মাধ্যমে সাংবাদিকদের নিরুৎসাহিত করাসহ বিরুপ ধারণা প্রতিষ্ঠিত করেছে। মূলত সাংবাদিকদের শ্রম, শিল্প ও আইএলওর নিরাপত্তা বলয় হতে বের করার জন্য এসব অপপ্রচার করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, তথ্য মন্ত্রী ও স্বাধীনতার পক্ষের সাংবাদিকদের ভিতর বিরুপ ধারণার জন্ম দিয়ে মর্যাদা ও ইমোশনে আঘাত করে নতুন আইন তৈরির ক্ষেত্র এরাই তৈরি করেছে।
বর্তমান প্রেক্ষাপট শুরু হয় বিগত ২০১২ সালে। তৎকালীন বিএফইজে নেতা মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল ২০১২ সালে নতুন আইনের দরখাস্ত তথ্য মন্ত্রণলয় প্রদান করেন। দীর্ঘ ৫ বছর সুযোগের আপেক্ষায় চুপ করে থেকে আইনটি পাশ করার উপযুক্ত ক্ষেত্র তৈরীতে কৌশলী পন্থায় কাজ করতে থাকে। ২০১৭ সালে তথ্য মন্ত্রণালয় এই নতুন আইন পাশ করার জন্য সংশোধনী চেয়ে ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দদের চিঠি দেন।তৎকালীন নেতৃবৃন্দ এই আইন সংবাদিক সমাজের প্রতি ষড়যন্ত্র বুঝতে পেরে চুপচাপ থাকেন। ২০১৮ সালে তৎকালীন তথ্য মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এই নতুন আইন পাশের জন্য খসড়া তৈরী করলেও আইন পাশের আগেই মন্ত্রীত্ব ছেড়ে চলে যান। ২০২১ সালে সকারের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা স্বাধীনতা বিরোধী কিছু আমলা ও কিছু অতি লোভী সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের তোড়জোড়ে সাংবাদিক বিরোধী এই কালো আইন পাশের জন্য নতুন ভাবে খসড়া তৈরী করেন। একদিকে সাংবাদিকদের শ্রম, শিল্প ও আইএলওর আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বলয় হতে বের করা; অন্যদিকে ১৯৭৪ সালে ৪টি পত্রিকা খোলা রাখার সিদ্ধান্তকে গণতন্ত্র হত্যার অপবাদের তিলক লাগানোর মত আরেকটি অপবাদের তিলক লাগানোসহ সাংবাদিক সমাজের সাথে সরকারের বিরোধ বাধানোর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে এই গণমাধ্যম কর্মী (চাকরি বিধিমালা) আইন-২০২২ নামে এই কালো আইন তৈরির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে, যার ৫৭টি ধারার মধ্যে ৩২টি ধারাই সাংবাদিক বিরোধী হিসেবে সংযোজিত হয়েছে।
প্রিয় সাংবাদিক সমাজ এবার আমরা দেখি কেন এই আইন সংশোধনযোগ্য নয়? কেন বাতিলযোগ্য।
(১) জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত গণমাধ্যম কর্মি (চাকরি বিধিমালা) আইন-২০২২ তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন করা হচ্ছে। তথ্য মন্ত্রণালয় কোম্পানী আইন দ্বারা পরিচালিত। যখনই সাংবাদিকদের অন্তর্ভূক্তি করে এই আইন পাশ করা হবে তখনি সংবাদিকরা শ্রম, শিল্প হতে বের হয়ে যাবে এবং এই হেতু আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলওর নিরাপত্তা বলয় হতে আপনা আপনি সাংবাদিকরা বের হয়ে যাবে। প্রতিটি আইনের জন্ম, পরিধি, বিণ্যাস, কার্যক্রম, শ্রেণী, ধরণ আলাদা আলাদা; যেমন খুন, হত্যা, গুম, প্রতারণা, মারামারি, যখম, লাঠালাঠি, ইত্যাদির জন্য ফৌজদারী আইন ও ফৌজদারী আদালতের সৃষ্টি। জমি-জমা, দাবী-দাওয়া, অধিকারের জন্য দেওয়ানী আইন ও দেওয়ানী আদালতের সৃষ্টি। কোম্পানীর জন্য কোম্পানী আইন, চাকরিজীবীদের জন্য চাকুরি বিধিমালা আইন ও আদালত সৃষ্টি, শ্রম ও শিল্পের জন্য শ্রম আইন এবং শ্রম আদালত ইত্যাদি। খুন, গুম হলে আমরা শ্রম আইনে ও আদালতে যেমন প্রতিকার পাই না তেমনি তথ্য মন্ত্রণালয়ের আধীন কোম্পানী আইনে শ্রম, শিল্প বিষয়ের প্রতিকার নাই। সেহেতু তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন গণমাধ্যম কর্মী (চাকরি বিধিমালা) আইন-২০২২ বা বিএফইউজের সংশোধিত আকারে সংবাদিক ও সংবাদমাধ্যম (চাকরি বিধিমালা) আইন-২০২২ জোর করে শ্রম আদালতে বিচার ব্যবস্থা বা শ্রম আইনে মজুরি, ওয়েজবোড ইত্যাদি লিখে দিলেও তা আইনগত কোন বৈধতা পাবে না; যা কাঠালের আমসত্ত্বে পরিণত হবে।
(২) জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত গণমাধ্যম কর্মী (চাকরি বিধিমালা) আইন-২০২২ বা বিএফইউজের সংশোধিত ধারাগুলোর বিষয়ে পরে বলি। এই আইন বা সংশোধনী আকারে যাই থাকুক তা পাশ হওয়ার সাথে সাথে সাংবাদিকরা যেহেতু শ্রম, শিল্প হতে বের হয়ে যাবে সেহেতু ট্রেড ইউনিয়ন আর সাংবাদিকরা করতে পারবে না। জোর করে এই আইনে ট্রেড ইউনিয়ন করার কথা লিখে দিলেও ট্রেড ইউনিয়ন সাংবাদিকরা করতে পারবে না বা করলেও আইনে তা বৈধতা পাবে না। তবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীদের জন্য সকল প্রতিষ্ঠানে ট্রেড ইউনিয়ন করার বৈধতা আছে যেমনটি রাষ্ট্রয়াত্ব ব্যাংক গুলোতে পিয়ন চাপরাশি অর্থাৎ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীগণ ট্রেড ইউনিয়ন করে সেইরুপ সাংবাদিকদের পিয়ন ও চাপরাশিগণ টেড ইউনিয়ণ করতে পারবে কোন কর্মকর্তা বা সাংবাদিক এর সদস্য হতে পারবে না। তথ্য মন্ত্রনালয়ের অধীন গণমাধ্যমকর্মী আইন বা সংশোধীত আকারে পাশ হলেও এবং এই আইনে শ্রম, শিল্প ট্রেড ইউনিয়ন শ্রম আদালত লিখে দিলেও তা কোন কাজে আসবে না। কাকের বাসায় কোকিলের ডিম ফুটে বাচ্চা হলেও সেটা কেকিল হওয়ার মত বিষয়। তবে সাংবাদিকরা এই আইন অনুযায়ী সমবায় সমিতি করতে পারবে। বুঝতে সহজতর করার জন্য একটি ঘটনা ও আদালতের রায়ের রেফারেন্স সন্নিবেশিত করা হল। ১৯৮১ সালে বিভিন্ন ব্যাংকের ১৮ হাজার ট্রেড ইউনিয়ন নেতাকর্মীর চাকরি হারানোর ঘটনা। ব্যাংকের ক্ষেত্রে শিল্প সম্পর্ক অধ্যাদেশ কার্যকর না থাকায় ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রম পরিচালনায় যুক্ত থাকা প্রতিষ্ঠানের শৃংঙ্খলা ভংগ বলে বিবেচিত হয়। যে কারণে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান ট্রেড ইউনিয়নের সাথে যুক্ত থাকা ১৮ হাজার কর্মকর্তা, কর্মচারীদের এক চিঠিতে চাকরিচ্যুত করেছিল। পরবর্তীতে তাদের চাকুরী ফিরে পাবার কোন মামলা কোন আদালত গ্রহন করেনি এবং উচ আদালত পর্যন্ত তাদের রক্ষা করতে পারেননি।
(৩)  উপাস্থাপিত গণমাধ্যম কর্মী (চাকরি বিধিমালা) আইন-২০২২ এর আলোকে বিএফইউজে সংশোধন করে সংবাদিক ও সংবাদমাধ্যম কর্মী (চাকরির শর্তাবলি) আইন-২০২২ নামে একটি সংশোধনী প্রস্তুত করেছেন। এই আইনের সকল ধারাই ২০০৬ এর শ্রম আইনের ধারা হতে নিয়ে কাটশাট করে বসানো হয়েছে। শ্রম আইনের ধারাগুলো কাটশাট করে বসাতে গিয়ে উনারা স্ববিরোধী,আইন বর্হিভূত ও মালিকদের আইন তৈরী করে ফেলেছেন। তাহলে এই উপমহাদেশে সাংবাদিকদের উৎকৃষ্ট আইন হিসেবে খ্যাত চলমান ২০০৬ এর শ্রম আইন থাকতে অসুবিধা কোথায়? উনারা সংশোধন আইনের ২.৩/২.৭/২.৯ ও ২৭,২৮ শ্রম আইনের ধারা উল্লেখ করে ৩ ধারায় বিশেষায়িত ধারা উল্লেখ করে বলেছেন অন্য যাহা কিছু থাকুক না কেন এই সংবাদমাধ্যম কর্মী (চাকরির শর্তাবলি) আইন-২০২২ এর ধারা প্রাধান্য পাইবে। তাহলে ৩ ধারার উপরোক্ত কথায় উল্লেখিত শ্রম আইনের ধারাগুলো অকার্যকর হয়ে যায়। এমনিতেই কোম্পানী আইনে শ্রম আইনের ধারা অন্তভুক্ত আইন বর্হিভূত ও অকার্যকর তারপরও ৩ ধারায় বিশেষায়িত উল্লেখ করে সেগুলো পরিস্কার ভাবে অকার্যকর করেছেন অর্থাৎ শ্রম আইনের ধারাগুলো মজুরী, ওয়েজবোর্ড, বিরোধ নিস্পত্তি, শ্রম আদালতে, ট্রেড ইউনিয়ন ইত্যাদি আইনে লেখার জন্য লেখা হয়েই থাকবে। অর্থাৎ বলদের কাছে অচল পয়সা চালানোর চেষ্টা।
(৪) জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত গণমাধ্যম চাকরি বিধিমালা আইন ও এই আইনের বিএফইউজের সংশোধনীতে টিভি, রেডিও ও আনলাইনের কথা লেখা হলে এটা শুভংকরের ফাঁকি ছাড়া আর কিছুই নয়। টিভি, অনলাইন রেডিওর নাকের ডগায় মূলা ঝুলানো ছাড়া আর কিছু নয়। না বুঝে বা গায়ের জোরে আইনে টিডি, রেডিও, অনলাইন লিখে দিলেই তারা বেতন ভাতা মজুরী, আদালত বা ওয়েজবোর্ড ট্রেড ইউনিয়ন আইনিভাবে প্রাপ্ত হবে না বা গ্রহনযোগ্য হবে না। বিদ্যমান একটি উদাহরণ এখানে উল্লেখ করা হল।বর্তমানে ২০০৬ সালে সংবাদিকদের জন্য বিদ্যমান শ্রম অইনে টিভি অনলাইন উল্লেখ করা আছে তৎসত্ত্বেও টিভি অনলাইনে কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচারীগণ আইনে বিদ্যমান কোন সুযোগ সুবিধা ও ওয়েজবোর্ড পায় না।  টিভি, অনলাইন, রেডিওর আইনিসহ সার্বিকভাবে সুবিধার আওয়তায় আনতে হলে যেমন বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠানের আইনিভাবে জন্ম দিয়েছিলেন তেমনি ব্রডকাষ্ট বা অন্য যে কোন নামে টিভি আনলাইন ও রেডিওর প্রতিষ্ঠানের জন্ম দিতে হবে এবং উক্ত আইনে শ্রম, শিল্প না কোম্পানী শ্রেনী নির্ধারন করে পদ পদবী সৃষ্টি করতে হবে। এরপর টিভি রেডিও ও অনলাইনে কর্মরত সংবাদিক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারীদের চাকরি বিধিমালা আইন করতে হবে। যদি টিভি রেডিও আনলাইন কর্মকর্তা কর্মচারীগণ শিল্প, শ্রম ও ট্রেড ইউনিয়ন এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএলওভুক্ত থাকতে চায় তাহলে তাদের প্রতিষ্ঠানের জন্ম আইনে শ্রম শিল্প উল্লেখ করে তাদের চাকরি বিধিমালা আইন সংবাদিকদের বিদ্যমান সংবাদপত্র চাকরি বিধি আইন ২০০৬ সালের শ্রম আইন সংশোধনের মাধ্যমে যুক্ত হতে হবে। আর যদি তারা ট্রেড ইউনিয়ন ও আইএলওতে যুক্ত থাকতে না চায় তাহলে তারা অন্যকোন আইনে যুক্ত হতে পারে।
(৫) সাংবাদিকদের বিদ্যমান ২০০৬ সালের আইন যেহেতু ১৯৭৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর `দি প্রিন্টিং প্রেস (ডিক্লারেশন এন্ড রেজিষ্ট্রেশন) অ্যাক্ট ও ১৯৭৪ সালে "দি নিউজপেপার এমপ্লয়ীজ (কন্ডিশন অব সার্ভিস) বা চাকরি বিধিমালা আইনের ধারাবাহিকতায় করা হয়েছে সেকারনে আইনে সম্পাদকগণ সংবাদপত্রে প্রকাশিত বিষয় নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করিবেন বলিয়া বিদ্যমান রহিয়াছে। অন্যদিকে মালিক সুধুমাত্র প্রকাশক থাকিবেন। এখানে ক্ষমতা বিকেন্দ্রিকরণ করা আছে। অন্যদিকে জাতীয় সংসদে উপাস্থাপিত গণমাধ্যম চাকরি বিধিমালা আইন ও এই আইনের বিএফইউজের সংশোধনীতে কোন ভূমিকা নেই অর্থাৎ কোথা হতে বা কোন আইন হতে কিভাবে এই চাকরি বিধিমালা আইন সেহেতু এই আইনে মালিকই সর্বস্ব। সম্পাদকগণ নামে মাত্র সম্পাদক হবেন, যেমনটি দন্তবিহিন বাঘ হয়? সম্পাদকগণও শ্রমদাসে পরিনত হবেন। উল্লেখ্য পূর্বে যেমন পত্রিকার মালিক রাষ্ট্র বা সরকার বা কোন গোষ্টিকে বিপদে ফেলতে চাইলেও সংবাদ প্রকাশ ও নিয়ন্ত্রনের দায়িত্ব সম্পাদকগণের হাতে থাকায় সফলকাম হতে পারেনা তেমনী উপরোক্ত কর্ম সম্পাদকগণও সফলকাম হয় না। গণমাধ্যম আইনে যেহেতু মালিকই সর্বস্ব সেহেতু রাষ্ট্র,সরকার বা কোন গোষ্টিকে সহজে বিপদে ফেলার অশংকা থেকেই য়ায়।
          প্রিয় সাংবাদিক সমাজ উপরোক্ত  বিষয় আইনের বিষেøশনে প্রমানিত যে সাংবাদিক সমাজ শ্রম,শিল্প আইএলওর সুযোগ সুবিধা নিতে চাইলে এবং ট্রেড ইউনিয়ন করতে চাইলে শ্রম আইন হতে পরিবর্তিত হয়ে কোন ভাবেই তথ্য মন্ত্রনালয়ের অধীন কোম্পানী আইনে উপাস্থাপিত গণমাধ্যম কর্মি(চাকরি বিধিমালা) আইন,২০২২ বা এই আইন সংশোধীত আকারে করা সম্ভব নয়। সাংবাদিক সমাজকে বাচতে হলে এই আইন অবশ্যই বাতিল  বা প্রত্যাহার করতে হবে। যেহেতু ২৫টি আইনের সমন্বয়ে শ্রম আইন সেহেতু টিভি,রেডিও,অনলাইন সকলের চাকরি বিধিমালা সংযোজন সহ পেনশন,রেশনিং,ঝুঁকি ভাতা,চিত্রসাংবাদিকসহ সত্যিকারের যেসব প্রয়োজনে আইন দরকার তা সমন্বিত শ্রম আইন ২০০৬ সংশোধন করেই সমাধানের রাস্তা করা আছে। গণমাধ্যম কর্মি(চাকরি বিধিমালা) আইন,২০২২  সাংবাদিকদের জন্য একটি (মৃত্যু সনদ) এর পিছনে সময় না দিয়ে সাংবাদিকদের জন্য বঙ্গবন্ধুর করা আইনের কার্বন কপি সমন্বিত শ্রম আইন ২০০৬ সংশোধন করে টিভি,অনলাইন,রেডিওতে কর্মরত সাংবাদিক ও কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য আইন করাসহ সাংবাদিকদের জন্য বয়স্কভাতা,রেশনিং,আবাসন,পেনশনের জন্য আইন সংশোধন করত সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃত্বে উপরোক্ত সহজ  উদ্যোগ নেওয়া জরুরী।
সাধারনত সরকার তার ইচ্ছামাফিক বা প্রয়োজনে জাতীয় সংসদে আইন উপাস্থাপন করেন এবং পাশ করেন। আইন প্রযোগ করেন বিচার বিভাগ হেতু একবার আইন পাশ হলে তা ফেরত আনা দুরুহ কোন আন্দোলনে কাজ হবে না। গণমাধ্যম কর্মি(চাকরি বিধিমালা) আইন,২০২২  বা সংশোধীত আকারে যদি জাতীয় সংসদে পাশ হয় তাহলে কি হবে ফলাফল? এই আইন পাশ হলে শিল্প শ্রম ও আইএলওর প্রটেকশন থেকে বের হয়ে সাংবাদিকরা চরম অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে,সাংবাদিকরা ট্রেড ইউনিয়ন হারাবে,সাংবাদিকরা তাদের পরিচিতি হারাবে,বঞ্চিত ও লাঞ্চিত হবে পদে পদে,পরিনত হবে শ্রমদাসে। সাংবাদিকরা এর থেকে বাচঁতে এবং পূর্বের অবস্থায় ফিরতে যাবে আদালতে। মামালা চলবে যুগের পর যুগ। মামলা হওয়ার পর চলমান ২০০৬ এর শ্রম আইন ও বর্তমান গণমাধ্যম বা সংশোধীত আইন দুটোই অকার্যকর হয়ে যাবে। সাংবাদিকরা আদালতের দরজায় আর রাস্তায় রাস্তায় ঘুরবে। এটাই মালিক,আমলা আর অতি লোভী দালাল নেতাদের কাঙ্খিত চাওয়া। পূর্ন হবে তাদের ষোল কলা। মালিকরা এই সুযোগে তাদের পরিপূর্ন স্বার্থ চরিতার্থ করবে ইচ্ছা মাফিক। অন্যদিকে স্বাধীনতা বিরোধীরা রক্তাক্ত দাত বের করে খিলখিল করে হাসবে আর সরকারের কপালে কালিমার তিলক লেপন করবে, যা যুগে যুগে উচ্ছারিত হবে। সংবাদ প্রতিষ্ঠান মালিক সর্বস্ব হওয়ায় রাষ্ট্র,সরকার,গোষ্টিকে সহজে বিপদে ফেলতে পারবে,রাষ্ট্র নিরাপত্তহীনতার আংশঙ্খা থাকবে এবং সংবাদিক সমাজের সাথে সরকারের বিরোধ বাধিয়ে তাদেরও পূর্ণ হবে ষোল কলা যা একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও জন্মগত ভাবে স্বাধীনতার স্বপক্ষের আদর্শের হয়ে কোন ভাবেই মানতে পারছি না।

মুড়ি-মুড়কি এক হিসাব
এতক্ষণ সুদীর্ঘ বয়ানে সাংবাদিকদের জন্য বিদ্যমান আইন, এর উৎসকথা এবং প্রস্তাবিত নতুন ও সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য চালাকিপূর্ণ আইনের পোস্টমর্টেম উপস্থাপন করলাম। এই বিষয়টি আরেক দিক থেকেও দেখা যেতে পারে। এই জগতে মাত্র তিনটি মহৎ পেশা- নোবেল প্রফেশনের অন্যতম হলো সাংবাদিকতা। সাংবাদিকতা পেশাধারীগণ- সাংবাদিক (Journalist); আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এই পরিচয়। এখন সরকার আইন করে তাদের গণমাধ্যমকর্মী বানাতে চান। কেন?
গণমাধ্যমকর্মী (Media Worker); মিডিয়াতে নানা পদের কর্মী (Worker) থাকেন- কেউ প্রেসের জন্য প্লেট বানান, কেউ মেশিন চালান, কেউ পত্রিকা প্যাকেট করেন, কেউ ক্যামেরা বা লাইট ধরেন ইত্যাদি। কিন্তু মিডিয়ার প্রাণ যে রিপোর্ট; তা লেখেন, সম্পাদনা করেন এবং সেই রিপোর্টগুলোর সূত্র সন্ধানে জীবনের ঝুঁকি নেন, জেল খাটেন সাংবাদিক; কোন কর্মী নন। সাংবাদিকের মেধা-পরিশ্রমে পত্রিকা এবং টিভি অনুষ্ঠান, কর্মীর যোগ্যতায় নয়। কর্মী এতে সহায়ক মাত্র।
এখন, সরকার সাংবাদিক খেদিয়ে সবাইকে কর্মী পরিচয়ে এক খেদায় ভরতে চান? অর্থাৎ মুড়ি-মুড়কি এক হিসাব? এর নাম কি মর্যাদা বাড়ানো? কি অদ্ভূত!
এখন সাংবাদিক যদি গণমাধ্যমকর্মী হন তাতে মর্যাদা বাড়বে না কারো; না সাংবাদিকের, না দেশের। বরং গোটা বিশ্ব বলবে, সাংবাদিকবিহীন একটা দেশ, সেটা বাংলাদেশ। এটা যদি হয় মর্যাদা বাড়ানোর ফন্দি, তাহলে বলতেই হবে- এই দেশ বোকারামে ভরে গেছে।
আমাদের অগ্রজ ও বরেণ্য শহীদ সাংবাদিক সিরাজ উদ্দিন হোসেন, শহীদ সাবের, নিজাম উদ্দীন প্রমুখ এবং প্রয়াত তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, আব্দুল গনি হাজারী, জহুর আহমেদ চৌধুরী, আব্দুস সালাম, নুরুল ইসলাম পাটয়ারী, ওবায়দুল হক, নির্মল সেন, আহমেদ হুমায়ুন, আতাউস সামাদ, কামাল লোহানী, এবিএম মুসাসহ আরও অনেকে একদা সাংবাদিক পরিচয়েই দেশ কাঁপিয়ে প্রাতঃস্মরণীয় হয়েছেন। এখন তাদেরকেও গণমাধ্যমকর্মী পরিচয়ে তবে কি নতুন করে পরিচিতি পেতে হবে তাদের উত্তরসূরী এবং দেশবাসীর কাছে?
সুতরাং যে গণমাধ্যমকর্মী আইন তৈরীর তোড়জোর চলছে তা সাংবাদিক সমাজ তো বটেই, দেশ ও জাতির কোন কাজে লাগবার সুদূরতম সম্ভাবনা নেই, অযথা বিতর্ক বাড়ানোরই হলো এই আইনটির মূল উদ্দেশ্য। তবে সেটা যে কার স্বার্থে; কে জানে!

মধু সর্ব রোগের শেফা
                                  

স্বাধীন বাংলা ডেস্ক
আল্লাহর হুকুম, রহমত ও কুদরতে মধু প্রতিটি রোগের ওষুধ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন : “…তাতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিকার।…” (সুরা আন-নাহল, আয়াত : ৬৮ ও ৬৯)।

* রোগ প্রতিরোধশক্তি বাড়ায়
মধু শরীরের রোগ প্রতিরোধশক্তি বাড়ায় এবং শরীরের ভেতরে ও বাইরে যেকোনো ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ প্রতিহত করার ক্ষমতাও জোগান দেয়। মধুতে আছে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধকারী উপাদান, যা অনাকাঙ্ক্ষিত সংক্রমণ থেকে দেহকে রক্ষা করে। বিভিন্ন ভাইরাসের আক্রমণে বিভিন্ন রোগ প্রায়ই দেহকে দুর্বল করে দেয়। এসব ভাইরাস প্রতিরোধে মধু খুবই কার্যকর।

* হজমে সহায়তা
মধুতে যে পরিমাণ শর্করা থাকে তা হজমে সাহায্য করে। কারণ এতে যে ডেক্সট্রিন থাকে তা সরাসরি রক্তে প্রবেশ করে এবং তাত্ক্ষণিকভাবে কাজ করে।

* কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
মধুতে রয়েছে ভিটামিন ‘বি’ কমপ্লেক্স, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ভোরে ১ চা চামচ খাঁটি মধু খেলে কোষ্ঠবদ্ধতা ও অম্লত্ব দূর হয়।

* রক্তশূন্যতায়
মধু রক্তের হিমোগ্লোবিন গঠনে সহায়তা করে বলে এটি রক্তশূন্যতায় বেশ ফলদায়ক। কারণ এতে থাকে কপার, লৌহ ও ম্যাঙ্গানিজ।

* ফুসফুসের রোগ ও শ্বাসকষ্ট নিরাময়
বলা হয়, ফুসফুসের যাবতীয় রোগে মধু উপকারী। কেউ কেউ মনে করেন, এক বছরের পুরনো মধু শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য বেশ ভালো।

* গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তিতে
হজম সমস্যার সমাধানেও কাজ করে মধু। গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তি পেতে একজন ব্যক্তি দিনে তিন বেলা দুই চামচ করে মধু খেতে পারেন।

* প্রশান্তিদায়ক পানীয়
হালকা গরম দুধের সঙ্গে মিশ্রিত মধু একটি প্রশান্তিদায়ক পানীয় হিসেবে অসাধারণ।

* মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য রক্ষায়
মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য রক্ষায় মধু ব্যবহূত হয়। দাঁতে ব্যবহার করলে দাঁতের ক্ষয়রোধ হয়। দাঁতে পাথর জমাট বাঁধা রোধ করে এবং দাঁত পড়ে যাওয়াকে বিলম্বিত করে। মধু রক্তনালিকে সমপ্রসারিত করে দাঁতের মাড়ির স্বাস্থ্য রক্ষা করে। যদি মুখের ঘায়ের জন্য গর্ত হয়। এটি সেই গর্ত ভরাট করতে সাহায্য করে এবং সেখানে পুঁজ জমতে দেয় না। মধু মিশ্রিত কুসুম গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করলে মাড়ির প্রদাহ দূর হয়।

* পাকস্থলীর সুস্থতায়
মধু পাকস্থলীর কাজকে জোরালো করে এবং হজমের গোলমাল দূর করে। এর ব্যবহার হাইড্রোক্লোরিক এসিড ক্ষরণ কমিয়ে দেয় বলে অরুচি, বমিভাব, বুক জ্বালা এগুলো দূর করা সম্ভব হয়।

জেনে নিন

• মধু হিউম্যাকটেন্ট যৌগে সমৃদ্ধ। এই যৌগটি ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখার কাজ করে এবং ত্বকের উপরিভাগের ইলাস্টিসিটি বজায় রাখে। ফলে ত্বক থাকে দীর্ঘদিন বার্ধক্যের ছাপ মুক্ত। প্রতিদিন সকালে এক চামচ মধু রং চা কিংবা দুধের সঙ্গে খেতে পারেন। রূপচর্চায় রোজকার ফেসপ্যাকেও ব্যবহার করতে পারেন এক চামচ মধু। মধু ত্বকের উপরিভাগের মৃত কোষ দূর করে ও মুখের ত্বকে ভাঁজ পড়া রোধ করে।

• মধু শরীরের ক্ষত, পোড়া ও কাটা জায়গার চিকিত্সায় ব্যবহার করা হয়। মধুতে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান, যা ক্ষত, পোড়া ও কাটা জায়গায় ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে। কোথাও পুড়ে, কেটে গেলে ক্ষত স্থানে মধুর একটি পাতলা প্রলেপ দিয়ে দিন। ব্যথা কমবে ও দ্রুত নিরাময় হবে। মধুতে আছে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান, যা ক্ষত পরিষ্কার হতে সাহায্য করে ও ব্যথা, ঘ্রাণ, পুঁজ ইত্যাদি হ্রাস করে দ্রুত ক্ষত নিরাময় করে।

• মধুতে রয়েছে অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান, যা ছত্রাক ও অন্যান্য কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ত্বককে ঠিক করতে সাহায্য করে ও নতুন ত্বক গঠনে ভূমিকা রাখে। চর্মরোগ হলে নিয়মিত আক্রান্ত স্থানে মধু লাগান। ১ চামচ মধুর সঙ্গে অল্প পানি মিশিয়ে ব্যবহার করুন।

• মধুতে আছে প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমূহ, যা সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির বিরুদ্ধে কাজ করে শরীরের চামড়াকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। অনেকটা প্রাকৃতিক সানস্ক্রিনের কাজ করে মধু। রোদে পোড়া ত্বককে স্বাভাবিক করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ১ চামচ মধুর সঙ্গে পানি মিশিয়ে প্রতিদিন মুখে ফেসপ্যাকের মতো লাগান। রোদে পোড়াজনিত কালো দাগ দূর হয়ে উজ্জ্বল হবে মুখ।

• মধুতে বিদ্যমান গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ ও শর্করা শরীরে শক্তি সবরাহে কাজ করে। প্রতিদিন সকালে ১ চামচ মধু সারা দিনের জন্য দেহের পেশির ক্লান্তি দূর করতে সহায়তা করে ও আপনাকে রাখে এনার্জিতে ভরপুর।

• প্রতিদিন ১ গ্লাস পানিতে ১ চামচ মধু মিশিয়ে পান করলে মধুতে বিদ্যমান ক্যালসিয়াম রক্তে প্রবেশ করে এবং রক্তে হিমোগ্লোবিনের ভারসাম্য বজায় রাখে। এভাবে মধু রক্তস্বল্পতা রোগকে প্রতিরোধ করে।

• মধু ঠোঁটের ওপরের শুষ্ক ত্বক ও কালচে ভাব দূর করে ঠোঁটকে নরম ও গোলাপি করে তুলতে সহায়তা করে।

• প্রতিদিন মধু খাওয়া হলে দেহের ইমিউন সিস্টেমের উন্নতি হয়। দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

• মধু ওজন কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে ১ গ্লাস কুসুম গরম পানিতে ১ চামচ মধু মিশিয়ে পান করলে হজমশক্তি বাড়ে। ফলে খাবারের ক্যালোরি দ্রুত ক্ষয় হয়।

• যাদের খুসখুসে কাশির সমস্যা আছে, তারা প্রতিদিন ১ চামচ আদার রসের সঙ্গে ১ চামচ মধু মিশিয়ে খান। দ্রুত আরোগ্য হবে।

ইসলামের দৃষ্টিতে রাসূল (সা.)-
এর যুগ থেকেই মুসলমানগণ কালোজিরার ব্যাপারে গুরুত্ব প্রদান করে আসছেন। এ ব্যাপারে একটি হাদিস তাদেরকে উৎসাহিত করেছে। হাদিসে এসেছে রাসূল (সা.) বলেছেন, তোমরা কালোজিরার ব্যাপারে গুরুত্ব প্রদান করো। কেননা তাতে মৃত্যু ব্যতীত সব রোগের নিরাময় রয়েছে। সহি বুখারি। কালোজিরার ভেষজ ব্যবহার : * নিদ্রাহীনতায় : মধু মেশানো এক গ্লাস গরম দুধের সাথে এক চামচ কালোজিরা মিশিয়ে ঘুমের পূর্বে সেবন করতে হবে। এতে করে অনিদ্রা দূর হয়ে প্রচুর ঘুম হবে। * মাথা ব্যথায় : পরিমাণ মতো কালোজিরার চূর্ণ এবং তার অর্ধেক পরিমাণ গরম লবঙ্গ এবং অর্ধেক পরিমাণ মৌরিফল এক সাথে মিশিয়ে মাথা ব্যথার সময় ননিযুক্ত দুধের সাথে সেবন করতে হবে। আর কালোজিরার তৈল দ্বারা যন্ত্রণার স্থানে ডলে মালিশ করলে উপকার পাওয়া যায়। * যৌবন ধরে রাখতে ও লাবণ্যের জন্য : কোমল কালোজিরা পাতলা সিরকা এবং এক চামচ পরিমাণ গমের গুঁড়া মেশাতে হবে। এই মিশ্রণ সন্ধ্যা বেলায় মুখম-লে মালিশ করবে এবং সকালে গরম পানি ও সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলবে। এক সপ্তাহ প্রতিদিন একাধিকবার তা করবে। আরো ভালো ফল পাওয়া যাবে যদি উষ্ণ পানীয় সহযোগে কালোজিরার তেল সেবন করা যায়। মধু : কুরআনের আলোকে-‘আর মৌমাছির পেট থেকে বিভিন্ন রঙের পানি নির্গত হয়, যা মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিকার।’ সূরা নাহল : ৬৯। হাদিসের আলোকে-হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, কুরআন হলো যেকোনো আত্মিক রোগের জন্য আর মধু হলো দৈহিক রোগের জন্য। ইবনে মাজাহ। মধুর ব্যবহার : মিষ্টিস্বাদের জন্য বিভিন্ন খাবারের সাথে মধুর ব্যবহার রয়েছে। মধুর গুরুত্ব ও উপকারিতা সম্পর্কে আমরা সকলেই অবগত। সকালের নাশতা ও হালকা খাবারে মধু নেয়া যায়। মধুতে ক্যালরি থাকায় মধু খাওয়ার পর শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। এ প্রোটিন দেহের গঠন বৃদ্ধি সাধ্ম ও ক্ষয় পূরণে যথেষ্ট কার্যকর। মধুর ম্যাগনেশিয়া ও ফসফরাস শরীরের হাড় গঠনে সহায়ক। মধুর ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়াম হৃৎপি-কে সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং বিভিন্ন এসিড পাকস্থলির বিভিন্ন জৈবিকক্রিয়ার ফলে রোগ প্রতিরোধ করে। মধুতে শক্তিশালী জীবাণুনাশক ক্ষমতা রয়েছে, যার নাম ইনহিবিন। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা শাস্ত্রেও মধুর বহুল ব্যবহার হয়। যেকোনও ওষুধকে বেশি প্রভাবশালী ও কার্যকরী করার জন্য মধুর ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন রোগে মধু ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যেমন- *যৌনশক্তি বৃদ্ধিতে মধু : দৈহিক ও যৌনশক্তি বৃদ্ধির জন্য মধু গরম দুধের সাথে পান করলে খুবই ভালো ফল পাওয়া যায়। প্রতিদিন কালোজিরা মধু দিয়ে চিবিয়ে খেলে বা দৈনিক দুই চামচ আদার রস মধু দিয়ে খেলে প্রচুর পরিমাণে যৌনশক্তি বৃদ্ধি করে। * পোড়া : শরীরে কোথাও পুড়ে গেলে সামান্য মধু, মেহেদী পাতার সঙ্গে বেটে লাগালে এতে পোড়াজনিত জ্বালা ও কষ্ট লাগব হয়। * কোষ্ঠ কাঠিন্য : এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে এক চামচ লেবু ও এক চামচ আদার রস এবং দু’চামচ মধু মিশিয়ে খেলে অজীর্ণ রোগ দূর হয় ও কোষ্ঠ কাঠিন্য প্রশমিত হয়। * রক্তচাপ : দু’চামচ মধুতে এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে ও রাতে সেবন করলে রক্ত চাপ স্বাভাবিক হয়ে যায়। * কাশি : আদা, পান, তুলসীর রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে দিনে দু’তিন বার খেলে কাশি কমে যায়। *দাঁতের ব্যথা : হঠাৎ যদি দাঁতে ব্যথা অনুভূত হয় তাহলে মধুতে তুলা ভিজিয়ে ব্যথার স্থানে রাখলে ব্যথা কমে যাবে। রূপচর্চায় মধু ব্যবহার : দীর্ঘকালের মুখের দাগ তুলতে ও লাবণ্য মসৃণতায় মধু মেখে উপকার পাওয়া যায়। পরিশ্রম ও গরমে ক্লান্ত অবসন্ন হয়ে পড়লে ঠা-া পানির সাথে লেবুর রস মিশ্রিত মধুর শরবত পান করলে দেহে উদ্যম ও সজীবতা ফিরে আসে। বিভিন্ন ওষুধ প্রস্তুতে মধুর রয়েছে ব্যাপক ব্যবহার। মোট কথা কালোজিরা ও মধুর উপকারিতার শেষ বা সীমা নেই। কালোজিরা ও মধু আল্লাহ প্রদত্ত এক বিশেষ নিয়ামত।

পিছিয়ে পড়া নারী সমাজকে নিয়ে ‌`ভয়েস অব ওমেন`
                                  

স্বাধীন বাংলা প্রতিবেদক
ভয়েস অব ওমেন, ২০১৭ সালের ২৬ মার্চ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার নারীদের নিয়ে এদিন একটি অন লাইন গ্রুপ এর আত্মপ্রকাশ ঘটে। গ্রুপটি সৃষ্টি করেন ইসরাত ইভা, যিনি পেশায় একজন গৃহিণী।

ভয়েস অব ওমেন সম্পর্কে জানতে চাইলে ইসরাত ইভা বলেন, সমাজের সুবিধা বঞ্চিত নারী এবং এতিম অসহায় বাচ্চাদের নিয়ে ১৭ সাল থেকেই ভয়েস অব ওমেন এর মাধ্যমে কাজ করে আসছি। সাড়াও পেয়েছি অনেক। বর্তমানে আমাদের সদস্য সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এবার বড় পরিধি নিয়ে কাজ করাই আমাদের লক্ষ্য। এ ছাড়াও আমরা বৃহৎ পরিসরে কিছু পরিকল্পনা করেছি, এর মধ্যে অনলাইন সেলারদের জন্য একটা প্লাটফর্ম তৈরি করা,
এতিম শিশুদের বৃত্তি প্রদান ও লেখাপড়ার দায়িত্ব গ্রহণ, অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত নারীদের স্বাবলম্বী করতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা ও আশ্রয়হীন নারীদের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থাসহ একটা বৃদ্ধাশ্রম করা।

ইসরাত ইভা আরো বলেন, আমরা চাই আমাদের গ্রুপটিকে সাংগঠনিক রূপরেখায় নিয়ে আসতে। যাতে করে সারা বাংলাদেশব্যাপী আমরা কাজ করতে পারি। এ জন্য চাই সকলের আন্তরিক সহোযোগিতা।

গ্রুপের কার্যক্রমের সাথে শুরুতে যারা জড়িত আছেন তাদের মধ্যে গ্রুপ এডমিন
রহিমা আক্তার বলেন, আমি একজন গৃহিণী। ক্ষুদ্র পরিসরে ভয়েস অব ওমেন গ্রুপ`কে নিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু হয়। সামাজিক এবং জনকল্যাণমূলক অনেক কর্মকাণ্ডই আমরা করেছি বিগত দিনগুলোতে। এতিম ও অসহায় বাচ্চাদের পাশে দাঁড়িয়েছি, করোনাকালীন সময়ে ১`শ পরিবারকে ত্রাণ দেয়া হয়েছে। ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ কিছু করার পরিকল্পনা আমাদের এর জন্য চাই সকলের আন্তরিক সহযোগিতা। আমরা আরো ভালো কিছু করবো ইনশাআল্লাহ।

গ্রুপের মডারেটর মৌসুমী ইসলাম বলেন, আমিও পেশায় একজন গৃহিনী। বিগত ৪ বছর ধরে আমি ভয়েস অব ওমেন গ্রুপ পরিবারের সদস্য। এই গ্রুপটি শুরু থেকে বিভিন্ন মানবিক কাজে সহযোগিতা করে আসছে, ভবিষ্যতে নারীদের নিয়ে অনেক অনেক ভালো কিছু করার ইচ্ছে আছে আমরা নারী আমরা ইচ্ছে করলে সব করতে পারি এ লক্ষ্যে সামনে এগিয়ে যেতে চাই।

গ্রুপের আরেক মডারেটর
রোজী আহসান বলেন, আমি পেশায় একজন শিক্ষিকা, কুমিল্লা শহরে বসবাস করি। ভয়েস অব ওমেনের সাথে অনলাইনের মাধ্যমে আছি ২০১৭ সাল থেকে। ভয়েস অব ওমেনের মুল স্লোগান " আমরা নারী, আমরা সব পারি" তারই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বিভিন্ন স্তরে মানবিক কাজের সাথে যুক্ত আছি আমরা। আগামীতে স্বপ্ন দেখি বৃহৎ পরিসরে কাজ করার। সকলের সহযোগিতা পেলে আমরা এগিয়ে যেতো পারবো ইনশাআল্লাহ।

যুক্তরাজ্যের অবৈধ নাগরিকদের ঠাঁই হবে রুয়ান্ডায়
                                  

আতিকুল ইসলাম আতিক:
রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে নানান পর্যালোচনা করছেন যুক্তরাজ্যের নাগরিকরা। কেউ যুদ্ধের পক্ষে কথা বলছেন। আবার কেউ যুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। শান্তি প্রিয়রা কোনোভাবেই যুদ্ধকে সমর্থন করছেন না। এই যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ পরিণাম ডেকে আনবে বলে দেশটির অনেক নাগরিকই মনে করছেন। আলোনচায় জোরালো হচ্ছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ জন্ম নিতে পারে রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ থেকে। যা বিশ্ববাসীর জন্যে কোনোভাবেই কল্যাণকর নয়।
যুক্তরাজ্যের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সিলেটের সাবেক প্রথম সারির ছাত্রনেতা আবদুর রকিব চৌধুরী ওইসব তথ্য জানিয়েছেন। রোববার বিকেল সাড়ে চারটায় তিনি কথা বলেন। জানান রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে যুক্তরাজ্যের বাজার টালমাটাল।
আবদুর রকিব চৌধুরী জানান, রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরপরই তার বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করে লন্ডনে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ক্রাইসিস দেখা দেয় বাজারে। আমদানিকৃত জিনিসপত্র রাস্তায় আটকে পড়ায় ওই সংকট সৃষ্টি হয়। শপগুলোতে জিনিসপত্র সরবরাহ অনেক কমে যায়। যার প্রভাব পড়েছে যুক্তরাজ্যের বাজারে। প্রতিটি নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিপত্রের দাম এখন প্রায় দ্বিগুন। শিশু খাদ্যের অবস্থাও প্রায় একই ধরণের আবদুর রকিব চৌধুরী জানাচ্ছিলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থী যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেছেন উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্যে। এসব শিক্ষার্থীর অনেকেই বিপর্যস্ত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। কঠিন অবস্থার মধ্যে তাদের দিন কাটাতে হচ্ছে।
তিনি জানান, দেশটির সরকার ইতোমধ্যে কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যারা অবৈধভাবে প্রবেশ করবে তাদের ঠাঁই হবে না যুক্তরাজ্যে। বিশেষ করে রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের অনেক নাগরিক অবৈধভাবে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন। এদেরকে পাঠিয়ে দেয়া হবে আফ্রিকার রুয়ান্ডায়। অবৈধ নাগরিকদের ঠাঁই হবে রুয়ান্ডায়। যুক্তরাজ্যের সরকার এই বিষয়ে রুয়ান্ডা সরকারের সাথে চুক্তিও সম্পন্ন করেছে।

করোনাকালে ভোলায় ২২ হাজার শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার
                                  

মো: আফজাল হোসেন, ভোলা: করোনার ভয়াবহতা ফুটে উঠেছে ভোলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর চিত্র দেখে। এই সময় অন্তত ২২ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছে। ভূয়া জন্ম নিবন্ধন, কাজীদের অর্থলোভী মনোভাব, ইভটিজিংয়ের ফলে নিরাপত্তার অভাব, প্রশাসনের উদাসীনতা আর সামাজিক অবক্ষয় এর অন্যতম কারণ বলে ধারণা গবেষকদের। করোনাকালিন বাল্যবিয়েকে মহামারির সাথেও তুলনা করেছেন শিক্ষকরা।

কাজীরা কতটা যে অর্থলোভী আর অনিয়ম করে তার প্রমাণ পাওয়া যায় ভোলার দৌলতখান উপজেলার ২নং মেদুয়া ইউনিয়নের কাজী একভোকেট মো: মহিউদ্দিন এর আচরণে। তার বক্তব্য নিতে নিজস্ব চেম্বারে গেলে ম্যানেজ করার চেষ্টা করে ক্যামেরার লেন্সে হাত দিয়ে বলেন, এটা রাখেন আপনার সাথে কথা বলি। তিনি জেলার তজুমদ্দিন উপজেলার ৩নং ওয়ার্ডের ৮ম শ্রেনীতে পড়ুয়া শিক্ষার্থীর বিয়ে পড়ান মার্চ মাসের ৮তারিখ। ওই মেয়েটির প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার প্রশংসা পত্র অনুযায়ী ২০০৯ সালের ৫ জানুযারী তার জন্ম তারিখ। অথচ কাবিন নামায় বয়স দেখানো হয়েছে ২০০৪ সালের ৫জানুয়ারী। ৩ লাখ টাকা টাকা কাবিন করা হয়। তবে তার পরের দিন ৯মার্চ একটি নোটারী করা হয়। যেখানে কাজী অফিস মেদুয়ার কথা উল্লেখ না করে ভোলা সদরের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া ৩লাখ টাকার স্থলে ৫লাখ টাকা উল্লেখ করা হয়। নিকাহনামার রেজিস্টেশন নাম্বার হচ্ছে ৩২/২০২২ইং। এটাই শেষ নয়। এভাবেই কাজীরা অর্থের লোভে হাজারো বিয়ে পড়িয়ে যাচ্ছেন। এই বিয়েটি এলাকায় বেশ ধুমধাম করে প্রকাশ্যে বিয়ের অনুষ্ঠান করা হয়। যে অনুষ্ঠানে অনেক জনপ্রতিনিধিরা পর্যন্ত অংশগ্রহন করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

বিষয়টি তজুমদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মরিয়ম বেগম, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. রাসেল ও ইউনিয়ন পরিষদ সচিব মো: মেজবাউদ্দিনসহ অনেক জনপ্রতিনিধিরাই জানতেন। তবে কেউ বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে যে যার মত করেই এড়িয়ে গেছেন। আর এভাবেই একের পর এক বাল্য বিয়ের কাজ হচ্ছে। যে কাজী মো: মহিউদ্দিন। যিনি আইনজীবী ও কাজী হিসেবে বিয়ের কাজ করে থাকেন। দৌলতখান উপজেলার ২নং মেদুয়া ইউনিয়নের কাজী হলেও বিয়ে করিয়ে থাকেন যে কোন স্থানের। শহরের উকিলপাড়ায় তার বসার বাসস্থান।

তজুমদ্দিন উপজেলার ৮ম শ্রেনীতে পড়ুয়া নুপুর এর গোপনে বিয়ে পড়ান এই কাজীই। তিনি বিভিন্ন আইনজীবীদের অনুরোধে বিয়ে পড়িয়ে থাকেন বলেও জানান। বাল্যা বিয়ে পড়ানোর কথা শিকার করে বলেন, আমার এই ক্ষতি করা আপনার ঠিক হবে না। এক পর্যায় তিনি চেম্বার ছেড়ে দ্রুত চলে যান।

ভোলার শিক্ষা ব্যবস্থায় মেয়েরা বেশ এগিয়ে থাকলেও করোনাকালীন পরিস্থিতি এবং বাল্যবিয়ের ফলে এখন অনেকটা পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে ৭ম থেকে ১০ম শ্রেনীর মেয়েরা বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে সব চেয়ে বেশি। ১১ বছর থেকে শুরু করে কেউ বাদ যাচ্ছে না বাল্য বিয়ে থেকে। জেলার তজুমদ্দিন উপজেলার চাচরা ইউনিয়নের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেনীর শিক্ষার্থী মোসা: লামিয়া ও মোসা: আরিফা আক্তার বলেন, আমাদের অনেকেই বাল্যবিয়ের কারনে চলে গেছে। আমারা তাদেরকে হারিয়েছি। আমরা তাদের হারাতে চাই না। বাল্যবিয়ে মুক্ত দেশ গড়তে চাই। অভিযোগ করে বলেন, বাল্য বিয়ে প্রতিরোধে শিক্ষার্থীরা জন্ম নিবন্ধন কার্ডে বয়স বৃদ্ধির মাধ্যমে বিয়ে হচ্ছে বলেও দাবী করেন। ইউনিয়ন পরিষদ সচিবরা জন্মনিবন্ধন কার্ডে বয়স বৃদ্ধি করে প্রিন্ট বের করে দিচ্ছে। যা দিয়ে বাল্য বিয়ে হচ্ছে। এছাড়া অর্থলোভী কাজীরা কোন কিছুর তোয়াক্কা না করেই বাল্যবিয়ে পড়াচ্ছে।

একই ইউনিয়নের একটি ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী মোসা: কারিমা আক্তার ও নুসরাত সুলতানা রিমা অভিযোগ করে বলেন, আমরা  বাল্যবিয়ে মুক্ত দেশ গড়তে চাই। এটা সম্ভব হচ্ছে না কিছু অসৎ লোকের জন্য। টাকার বিনিময় পুলিশ প্রশাসনসহ সবাই ম্যানেজ হয়ে চলে যায়। ফলে বিল্যবিয়ে আরো বৃদ্ধি পায়। এছাড়া শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসা যাওয়ার পথে ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছে উল্লেখ করে বলেন, মান সম্মান রক্ষায় বাবা-মা সন্তানকে বাল্য বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। তবে প্রশাসনকে অবহিত করা হলে টাকা নিয়ে চলে যায় বলেও অভিযোগ তুলেন এসব শিক্ষার্থীরা। একই সাথে মেয়েরা নেট দুনিয়ায় প্রবেশের ফলে অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ার কথাও শিকার করেন।

এদিকে তজুমদ্দিন উপজেলার শম্ভুপুর ইউনিয়ন পরিষদে গেলে সচিবের রুমে দেখা হয় মোসা: আসমা বেগম এর সাথে। এক সন্তানের জননী আসমার বিয়ে হয় ২০২০ সালের ১৯ মে। দুই বছর আগে হুজুর ডেকে বিয়ে হলেও হয়নি কোন কাবিন। দুই বছর পর এক সন্তানের জননী মোসা: আসমা আক্তার ইউনিয়ন পরিষদে আসেন জন্ম নিবন্ধনকার্ড করতে। সব কিছু বলেন, আলী আহম্মদের মেয়ে ও মো: হেলালের স্ত্রী আসমা। বাল্যবিয়ে নিয়ে কাজ করে এমন সংস্থার একজন কর্মী ফারজানা জাহান বলেন, বাল্যবিয়ে হলে আমাদের কিছু করার নেই। আমরা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধি এবং প্রতিষ্ঠান প্রধানকে অবহিত করি। ক’টা বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে পেরেছেন জানতে চাইলে চুপ থেকে বলেন, এটা আমাদের কাজ নয়। আমরা মেয়েদের সচেতন করি।

সাচড়া আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষীকা মোসা:  ইতি বেগম বলেন, বাল্যবিয়ে সমাজ উন্নয়নে বাধা হয়ে দাড়িয়েছে। যে বাল্যবিয়ের শিকার সে তার সন্তানদেরকেও বাল্যবিয়ে দিবে বলে আশংকা করছেন। সচেতন করছেন, তার পরেও নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করে বলেন, না জানিয়ে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে, সেক্ষেত্রে কিছু করার থাকে না।

উত্তর চাচড়া মোহাম্মদীয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার উপাধক্ষ মো: নুরউদ্দিন, শম্ভুপুর মাধ্যমিক দ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: জামাল উদ্দিন, কোড়ালমারা বাংলাবাজার মাধ্যমিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: কামরুল ইসলাম এবং ভোলা সদর উপজেলার বন্ধুজন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: হারুন বাল্যবিয়েকে একটি মহামারীর সাথে তুলনা করেন। চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে এসব প্রধান শিক্ষকরা বলেন, প্রশাসনকে অবহিত করি। তারা আসেন টাকা নিয়ে আবার চলে যান। পরে বুক ফুলিয়ে সামনে দিয়ে হেটে যায়। ইউনিয়ন পরিষদ সচিবরা এর সাথে জড়িত। আমাদের স্বাক্ষর নেয়ার কথা থাকলেও তারা সেটা করছে না। অনিয়মটা পরিষদ ও কাজীরা মিলে করছেন। এভাবে চলতে থাকলে স্কুল শুন্য হয়ে যাবে। একই সাথে বাল্যবিয়ে এক সময় সরকারকে সামাজিক স্বীকৃতি দিতে হবে। আবার প্রতিষ্ঠান প্রধানরা মনে করছেন শিক্ষার্থীদের অনৈতিক একটা বিষয় থাকে। যে কারনে বাবা-মা দ্রুত বিয়ে দিয়ে চিন্তা মুক্ত হচ্ছে বলেও মনে করেন। রাজনৈতিক চাপের কথাও স্বীকার করে নিলেন প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ।

জনপ্রতিনিধি হিসেবে তজুমদ্দিন উপজেলার শম্ভুপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: রাসেল বলেন, যারা বাল্য বিয়ে দেবে এ ধরনের পরিবারকে আমরা বয়স্ক ভাতা, বিধভা ভাতা, ভিজিডি ও ভিজিএফসহ সরকারী সকল ধরেনর সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করার পাশাপাশি নাগরিক সনদ বন্ধ করা যায় বলে মন্তব্য করেন। তবে আদালতের বয়স নির্ধারণের কাগজ দেখিয়ে বাল্য বিয়ে হয় থাকে বলেও মন্তব্য করেন এই চেয়ারম্যান।

জেলার সাত উপজেলার ৫৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২ লাখের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। যার মধ্যে অন্তত ২২ হাজার এর বেশি শিক্ষার্থী বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছে বলে স্বীকার করে নিলেন জেলা শিক্ষা গবেষণা কর্মকর্তা মো: নুরে আলম সিদ্দিকী। তিনি বলেন, বাল্যা বিয়ে রোধ করতে পারলে শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়তো না। সামাজিক অবক্ষয়, বিদ্যালয় নিরাপদে আসা যাওয়া করতে না পারাকে দায়ী করে অভিবাবকদের সচেতন এবং মেয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতি জোর দিয়েছেন জেলা শিক্ষা গবেষণা বিষয়ক এই কর্মকর্তা।

অপরদিকে তজুমদ্দিন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মরিয়ম বেগম বাল্য বিয়ের ক্ষেত্রে জাল সার্টিফিকেট তৈরির কথা স্বীকার করে শুধু মাত্র বাবা-মা ও পরিবার এর মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির প্রতি জোর দেন। বলেন, এর ফলেই বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ করা সম্ভব। তিনি সম্প্রতি নুপুর নামের ৮ম শ্রেনীর শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ের কথা স্বীকার করে বলেন, এটা খোঁজ নিতে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও সচিবকে বলেছিলাম।

নিরাপত্তা ঝুঁকিতে অস্ট্রেলিয়া
                                  

স্টাফ রিপোর্টার:
রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে আছে অস্ট্রেলিয়া। দেশ দুইটির যুদ্ধ ভয়াবহ রূপ নিলে বা পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার হলে ওই নিরাপত্তা ঝুঁকি দেখা দিতে পারে অস্ট্রেলিয়ায়। তারপরও পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দেশটির সরকার সার্বক্ষণিক সতর্ক রয়েছে। নজরদারি রাখছে যুদ্ধের গতিবিধির উপর।

ওইসব তথ্য জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহরে বসবাসরত সিলেটের প্রবাসী সাংবাদিক শাহাব উদ্দিন সিহাব। ১২ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেল সোয়া পাঁচটায় সাক্ষাতকার দেন সিহাব।

সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক কোষাধক্ষ্য শাহাব উদ্দিন সিহাব জানাচ্ছিলেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ার সরকার সংসদ অধিবেশন আহ্বান করে। ওই অধিবেশনে দেশের সার্বিক অবস্থা স্বাভাবিক রাখতে বিস্তারিত আলোচনা হয়। আলোচনার ভিত্তিতে দেশের সার্বিক অবস্থা স্বাভাবিক রাখতে পরিকল্পনা নেয়া হয়। এই পরিকল্পনার কারণে অস্ট্রেলিয়ায় এখনো পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম স্বাভাবিক রয়েছে। তবে মাঝে মধ্যে কিছুটা উঠানামা করে। পরক্ষণেই তা আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়।
 
সিলেট ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহাব উদ্দিন সিহাব জানান জ্বালানী তেলের উপর কিছুটা প্রভাব পড়েছে। আগে প্রতি লিটার পেট্রল ও অকটেনের মূল্য ছিল এক ডলার ২০ সেন্ট। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পেট্রল ও অকটেনের মূল্য হয়েছে  দুই ডলার। বাংলাদেশি মূদ্রায় প্রতি লিটার জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায ৭০ টাকা। জ্বালানী তেলের মূল্য স্বাভাবিক রাখতে সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, দুই বছরের করোনার কারণে অর্থনৈতিক অবস্থা কিছুটা দুর্বল। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার সাথে চীনের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। চীনের শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার দ্বার বন্ধ করে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। উচ্চ শিক্ষা অর্জনে চীনের শিক্ষার্থীরা অস্ট্রেলিয়ায় যেতে পারছে না। এছাড়া চীন থেকে কিছু পণ্য আমদানী বন্ধ করে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ বন্ধু চীনের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে সচেষ্ট হয়েছে অস্ট্রেলিয়া সরকার। তবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায় যুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার হলে বেকায়দায় পড়বে অস্ট্রেলিয়া। অন্যথায় অস্ট্রেলিয়ার অবস্থা স্বাভাবিক আছে, স্বাভাবিক থাকবে জানালেন সাংবাদিক সিহাব।  


যুদ্ধের প্রভাব: লন্ডনে ডিজেলের লিটার ২০০ টাকা
                                  

আতিকুল ইসলাম আতিক, সিলেট:
রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে যুক্তরাজ্যে। দেশটিতে হু হু করে বাড়ছে নিত্যসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রতিদিনই সেখানে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশটির নাগরিকরা অনেকটা বিপাকে পড়েছেন। জ্বালানী তেলের মূল্য এখন আকাশচুম্বি। অনেক পাম্পে জ্বালানী তেল পাওয়াও যাচ্ছে না। দেশটির সর্বশেষ পরিস্থিতির বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছেন লন্ডনের কিংসটন শহরের ব্যবসায়ী সৈয়দ সাজিদ উদ্দিন কামরান। সিলেটের শেরপুরের আল-সৈয়দ শপিং কমপ্লেক্সের মালিক সৈয়দ কামরান আরও জানালেন রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব যুক্তরাজ্যকে বেকায়দা ফেলতে পারে। রোববার গভীর রাতে যুক্তরাজ্যের নাজুক পরিস্থিতির কারণে গভীর উদ্বেগও প্রকাশ করেন তিনি।
 
সৈয়দ কামরান জানাচ্ছিলেন, জ্বালানী তেলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। অনেক পাম্পে জ্বালানী তেল পাওয়া যাচ্ছে না। এই তেলের দামও বেড়ে গেছে। ১০ এপ্রিল প্রতি লিটার ডিজেল এক পাউন্ড ৮০ পেনিতে কিনতে হয়েছে। বাংলাদেশি টাকায় ২০০ টাকার উপরে। প্রতি লিটার পেট্্রল এক পাউন্ড ৬৫ পেনিতে কিনতে হয়েছে। জ্বালানী তেল কিনতে গিয়ে এক পাম্প থেকে আরেক পাম্পে ছুটতে হয়েছে।
 
তিনি জানান, প্রতিটি নিত্য প্রয়াজনীয় জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বাড়ছে। খাবার তেল, চাল, ডাল, আটা, ময়দাসহ শিশু খাদ্যের দাম দ্বিগুন হয়ে গেছে। প্রতিদিনই বাড়ছে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম। সকালে  দোকানে পণ্য তোলার পর বিকেলের আগেই তা শেষ হয়ে যায়। ফলে অনেক ক্রেতা সন্ধার পর জিনিসপত্র কিনতে গেলে চাহিদা অনুযায়ী পান না।  

সৈয়দ কামরান জানান, ইতোমধ্যে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লোকজন বেকার হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে অনেক সিলেটিও আছেন। ফলে পরিস্থিতি দিনদিন খারাপের দিকে যাচ্ছে।  তিনি বলেন, গত কয়েক মাসে বাংলাদেশ তথা সিলেট থেকে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী লন্ডনে গেছেন। তারা কোনো ধরণের কাজ পাচ্ছেন না। এতে ওইসব শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিপর্যয় নেমে এসেছে।
 
সৈয়দ কামরান বলেন, যুক্তরাজ্যে গত ৪০ বছরেও এ ধরণের ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি দেখেননি তিনি। ইরাক যুদ্ধের সময় কোনো প্রভাব পড়েনি। ২০০৮ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত অর্থনৈতিক সংকট ছিল দেশটিতে। তখনও এমন অবস্থা হয়নি। সর্বশেষ করোনাকালেও কোনো সংকট সৃষ্টি হয়নি। কিন্তু রাশিয়া ও ইউক্রেনের কয়েকদিনের যুদ্ধে বিপর্যয় নেমে এসেছে দেশটিতে। যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে পরিস্থিতি নাজুক পর্যায়ে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানালেন তিনি।   

তনু হত্যার ৬ বছর: চোরাবালিতে আটকে আছে তদন্ত, শনাক্ত হয়নি আসামি
                                  


কুমিল্লা প্রতিনিধি :

 কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকান্ডের ছয় বছর পূর্ণ হবে চলতি বছরের মার্চ মাসে। প্রায় ছয় বছরেও আলোচিত এ হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয়েছেন পাঁচবার। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও কোনো আসামি শনাক্ত হয়নি। এখন পর্যন্ত তদন্তেই আটকে আছে মামলার কার্যক্রম।
এদিকে দীর্ঘ সময়েও তদন্তে কোন অগ্রগতি না হওয়ায় ক্ষুব্ধ তনুর পরিবার। তাদের অভিযোগ, টাকা ও ক্ষমতা না থাকার কারণে তারা বিচার পাচ্ছে না। পরিবারের ছোট সদস্যকে হারানোর বেদনায় এখনো কাতর তনুর মা– বাবা, দুই ভাইসহ স্বজনেরা।

২০১৬ সালের ২০ মার্চ রাতে কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর লাশ কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসের পাওয়ার হাউসের অদূরের কালভার্টের ২০ থেকে ৩০ গজ পশ্চিমে ঝোপ থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ২০১৬ সালের ২১ মার্চ বিকেলে তনুর বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহকারী ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

ছয় বছরে আগের অবস্থানেই তদন্ত :

২০১৬ সালের ২১ মার্চ সোহাগী জাহান তনু হত্যা মামলার প্রথম তদন্তের দায়িত্ব পান কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সাইফুল ইসলাম। চার দিন পরে ২৫ মার্চ মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মনজুর আলমকে। পরে ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কুমিল্লার পরিদর্শক গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম তদন্ত করেন। চতুর্থ দফায় ২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট তদন্ত কর্মকর্তা বদল করে সিআইডির নোয়াখালী ও ফেনী অঞ্চলের তত্কালীন সহকারী পুলিশ সুপার (বর্তমানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার) জালাল উদ্দিন আহম্মদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

চার বছর পর গত বছরের ২১ অক্টোবর হত্যা মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) থেকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঢাকার সদর দপ্তরে স্থানান্তর করা হয়। এরপর পিবিআই তিনবার কুমিল্লা সেনানিবাসে এসে মামলার বাদী তনুর বাবা ইয়ার হোসেন, মা আনোয়ারা বেগম ও তাঁদের ছোট ছেলে আনোয়ার হোসেন ওরফে রুবেলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।

সোমবার সকালে তনুর মা আনোয়ারা বেগম  বলেন, ‘সিআইডির মতো পিবিআইও জিজ্ঞাসাবাদে পুরোনো বিষয়ে ঘুরেফিরে প্রশ্ন করে। কখন তনু ঘর থেকে বের হলো। কোথায় কোথায় পড়াতে যেত। কার বাসায় যেত। এখনো ওরা পাঁচ বছর আগের অবস্থানে আছে।’

মামলার বাদী ইয়ার হোসেন বলেন, ‘গত বছরের নভেম্বরে পিবিআই আমাকে দুবার জিজ্ঞাসাবাদ করে। আমি প্রশ্নের জবাব দিই। এর বাইরে আর কী বলার আছে?’


পিবিআইয়ের প্রধান পুলিশের উপমহাপরিদর্শক ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, সিআইডির কাছ থেকে মামলার পুরো ডকেটটি নিয়ে তাঁরা খতিয়ে দেখছেন। তাঁরা ঘটনাটি অনুসন্ধানের এমন কোনো বিষয় আছে কি না, যা সিআইডি অ্যাড্রেস করেনি, তা যাচাই করছেন।

অসহায় মা–বাবা বিচার চান

মেয়ে তনুর ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী পালনে গত শনিবার কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার পশ্চিম বাঙ্গরা ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামে যান বাবা ইয়ার হোসেন ও মা আনোয়ারা বেগম।

তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বলেন, ‘গরিব মানুষের টাকা নাই, পয়সা নাই। এই মামলার ভবিষ্যৎ অন্ধকার। পাঁচ বছর পেরিয়ে ছয় বছল অই গেল, কই বিচার তো পাইলাম না।’

তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আর কত জবানবন্দি দিতাম আমরা। বিচার নিয়া কী কইতাম? উপরওয়ালা বিচার করবে।’

সৌন্দর্যের লীলাভূমি ‘আশুরার বিল’
                                  

মাসুদ রানা :
দিনাজপুর জেলার বিরামপুর ও নবাবগঞ্জের আশুরার বিল প্রকৃতির একটি অপার দান, সৌন্দর্যের লীলাভূমি। বিলটির মোট আয়তন ৮৫৭ একরেরও বেশি, যার প্রায় ৫৯০ একর পড়েছে নবাবগঞ্জ উপজেলার মধ্যে, বাকিটা বিরামপুর উপজেলায়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা আশুরার বিলকে নিয়ে রয়েছে নানান পৌরাণিক কাহিনী। কথিত কাহিনিগুলোর একটি হলো, অতি প্রাচীনকালে আধিপত্য বিস্তারে লড়াই শুরু হয় দেবতা এবং অসুরদের মধ্যে। সেই লড়াইয়ে পরাজিত হয় অসুরেরা। দেবতাদের খঞ্জরের আঘাতে অসুরদের শরীর থেকে ঝরা রক্তে ভরে গিয়েছিল তাদেরই পায়ে দেবে যাওয়া গর্ত। অসুরদের সেই কাহিনী থেকে লোকমুখের মাধ্যমে ধীরে ধীরে এটির নাম হয়ে ওঠে আশুরার বিল।

শালবনের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর আশুরার বিল হয়ে উঠেছে আরো বেশি মোহময়। উদ্ভিদ, বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ এবং পর্যটন সুবিধাদির উন্নয়নের লক্ষ্যে সেই শালবনকে ২০১০ সালে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার, যা স্থানীয়ভাবে শেখ রাসেল জাতীয় উদ্যান নামে পরিচিত। আগে এটি শুধু শালবন হিসেবে থাকলেও এখন সেখানে রয়েছে ২০-৩০ প্রজাতির গাছ। আর ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সমগ্র উত্তরবঙ্গের বৃহত্তম বিল আশুরাতে রয়েছে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন ধরনের মাছ। শাপলা আর পদ্মফুলের সমারোহে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কলতানে মায়াবী আবেদনে হাতছানি দিয়ে ডেকে যায় আশুরার বিল। ঐতিহ্যবাহী বিলটি এক সময় উত্তরাঞ্চলের ভ্রমণপিপাসুদের কাছে হয়ে ওঠে অন্যতম দর্শনীয় স্থান। কিন্তু অবৈধ দখলদারদের কারণে অচিরেই বিলটি হারাতে বসে তার ঐতিহ্য। স্থানীয় প্রভাবশালী কিছু মানুষের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে অপার সম্ভাবনার এই জলাশয়। বাঁশের বেড়া আর মাচা দিয়ে শত ভাগে ভাগ করে ফেলে তারা। শীতে ধান চাষ করে তাতে কীটনাশক ব্যবহার করায় হারিয়ে যেতে থাকে দেশি প্রজাতির বহু মাছ। কচুরিপানা আর বিভিন্ন ধরনের আবর্জনায় জরাজীর্ণ রূপ নেয় আশুরা। সুষ্ঠু পরিকল্পনা আর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে একশ্রেণীর স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী বিলটিকে কৃষি জমি হিসেবে ব্যবহার শুরু করায় এর পানি কমতে থাকে আশঙ্কাজনকভাবে। বিলের অধিকাংশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় হারিয়ে যেতে থাকে এর সৌন্দর্য। অথচ আইনগতভাবে বিলের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের সুযোগ নেই।

একটা সময় আর চুপ করে বসে না থেকে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ দখলে থাকা দর্শনীয় এই স্থান নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন আশুরা বিলের হারানো জৌলুস ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করে কয়েক জন জনপ্রতিনিধির সহায়তায়। আগের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে বিলের পূর্ব অংশে পানি ধরে রাখার জন্য বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের অর্থায়নে নির্মাণ করা হয় একটি ক্রস ড্রাম। ফলস্বরূপ বিলটিতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পদ্ম আর শাপলা ফুটতে থাকে যেন প্রতিযোগিতা করে। বৃদ্ধি পেতে থাকে লাল খলশে, কাকিলা, ধেধলসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। দীর্ঘ দুই দশক পর শীতের ঠিকানা খুঁজে নিতে আবারো আশুরায় ছুটে আসতে থাকে বালিহাঁস, গিরিয়াহাঁস, শামুকখোল, হট্টিটি, সাদা মানিকজোড়, রাঙ্গামুডিসহ অন্যান্য প্রজাতির হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি। বিল আর বনের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের জন্য গড়ে তোলা হয় দেশের বৃহত্তম আঁকাবাঁকা কাঠের সেতু। বন আর বিলকে একই সুতোয় গেঁথে দেওয়া ইংরেজি জেড আকৃতির এই সেতুর নামকরণ করা হয় ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা কাঠের সেতু’। আশুরার বিল আর শেখ রাসেল জাতীয় উদ্যান অন্যতম গন্তব্যে পরিণত হয় ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে। আশুরার বিলকে কেন্দ্র করে এলাকার আর্থ-সামাজিক এবং প্রাকৃতিক গুরুত্ব অনুধাবন করে স্থানীয় প্রশাসন হাতে নেয় উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড

আতঙ্ক বাড়াচ্ছে করোনা
                                  

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে করোনা পরিস্থিতি দিনে দিনে ভয়াবহ হয়ে উঠতে শুরু করেছে। চলতি মাসের শুরুর দিন রাজধানীসহ সারাদেশে ৫৮৫ জন নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। একই সময়ে মৃত্যু হয় আটজনের। সেদিন করোনা শনাক্তের হার ছিল ৪ দশমিক ৩১ শতাংশ। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে গতকাল মঙ্গলবার সারাদেশে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এক লাফে সাড়ে তিন হাজার ছাড়িয়ে গেছে, যা আট মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। গতকাল সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৩ হাজার ৫৫৪ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে; মৃত্যু হয়েছে আরও ১৮ জনের। গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল ১৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ।

করোনা রোগী এভাবে বাড়তে থাকলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, গত ১০ দিন যাবত যে হারে রোগী বেড়েছে সেটা আগামী কয়েকদিন অব্যাহত থাকলে রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা দিতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে যে অবকাঠামো রয়েছে তা ভেঙে পড়তে পারে।  তারা আরও বলেন, ইতোমধ্যেই রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি করা কঠিন হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে আইসিইউতে বেড একেবারেই ফাঁকা পাওয়া যাচ্ছে না। করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারলে গত বছরের মতো রোগী নিয়ে হাসপাতাল হাসপাতাল ঘুরতে হতে পারে বলে মন্তব্য করেন বিশেষজ্ঞরা।

ঢাকা মহানগরীর ১০টি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে আইসিইউতে শয্যা সংখ্যা ৯৫টি। হাসপাতালগুলো হলো- উত্তরার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, কুর্মিটোলা হাসপাতাল, ২৫০ শয্যার শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল, সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ৫০০ শয্যা মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতাল, সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়-বিএসএমএমইউ। গত সোমবার পর্যন্ত আইসিইউতে রোগী ভর্তি ছিল ৯০ জন। সেই হিসাবে আইসিইউ বেড ফাঁকা ছিল মাত্র ৫টি। বেসরকারি পর্যায়ের করোনা হাসপাতালের ২৬৩টি আইসিইউ বেডের মধ্যে সোমবার পর্যন্ত রোগী ভর্তি ছিল ২১১ জন।

এদিকে কোভিড সংক্রমণ পরিস্থিতির সম্ভাব্য সংকট মোকাবিলায় ২২ মার্চ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপসচিব ড. বিলকিস বেগম রাজধানীর পাঁচটি সরকারি হাসপাতালকে সার্বিকভাবে নতুন করে প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে চিঠি দেন। হাসপাতাল পাঁচটি হলো- মিরপুরের লালকুঠি হাসপাতাল, বাবুবাজারের ঢাকা মহানগর হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মহাখালীর ডিএনসিসি করোনা আইসোলেশন সেন্টার এবং ফুলবাড়িয়ার সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল।

বিএসএমএমইউ’র ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে করোনা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে আশঙ্কা করে বলেন , গত কয়েকদিন যাবত ক্রমাগতভাবে শনাক্তকৃত রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। ফলে গত বছরের মার্চের চেয়ে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি এবার আরও ভয়াবহতার দিকে চলে যাচ্ছে। করোনার এ গতিকে দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে স্বাস্থ্যসেবা কাঠামো যেটা আছে সেটা ভেঙ্গে পড়বে। তিনি বলেন, সব দেশেরই করোনা রোগীদের চিকিৎসা দানের নির্ধারিত সামর্থ্য রয়েছে। তার বাইরে চলে গেলেই শনাক্তকৃত রোগী ও মৃত্যু বাড়ে। ফলে সামাজিকভাবেও তখন নৈরাজ্য, অস্থিরতা ও অসহায়ত্ব চলে আসে।

সরকারি হিসাবে হাসপাতালে বেড এখনও অনেক ফাঁকা রয়েছে এমন তথ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারিভাবে সারাদেশের বেড সংখ্যার কথা বলা হয় কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। আজও যদি রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি ও বেড সংখ্যা হিসাব করা হয় তখন দেখা যাবে, হাসপাতালগুলোর সামর্থ্যরে শেষ দিকে চলে এসেছে। যেসব এলাকায় রোগী বেশি যেমন- ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে হাসপাতালগুলোর সামর্থ্য প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তিনি বলেন, ভ্যাকসিন কোনো সমাধান নয়, এটি সহায়ক মাত্র। মুখে মাস্ক পরিধান করা, ঘর থেকে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়া এবং জনসমাগম এড়িয়ে চলাটাই এখন করোনা সংক্রমণ রোধের উপায় বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৩ হাজার ৫৫৪ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে; মৃত্যু হয়েছে আরও ১৮ জনের। এর আগে গতবছরের ১৬ জুলাই এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্তের খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেদিন মোট ৩ হাজার ৭৩৩ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার বেড়ে ১৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ হয়েছে, যা ৫ ডিসেম্বরের পর সবচেয়ে বেশি। নতুন শনাক্ত ৩ হাজার ৫৫৪ জনকে নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৫ লাখ ৭৭ হাজার ২৪১ জনে। আর গত এক দিনে মারা যাওয়া ১৮ জনকে নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে মোট ৮ হাজার ৭৩৮ জনের মৃত্যু হল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ১ হাজার ৮৩৫ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন গত এক দিনে। তাতে এ পর্যন্ত সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা বেড়ে ৫ লাখ ২৫ হাজার ৯৯৪ জন হয়েছে।

বাংলাদেশে গত বছর ৮ মার্চ করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ার এক বছর পর গত ৭ মার্চ শনাক্ত রোগীর সংখ্যা সাড়ে ৫ লাখ ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে গত বছরের ২ জুলাই ৪ হাজার ১৯ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়, যা এক দিনের সর্বোচ্চ শনাক্ত।

প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ বছর ১১ মার্চ তা সাড়ে আট হাজার ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে গত বছরের ৩০ জুন এক দিনেই ৬৪ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়, যা এক দিনের সর্বোচ্চ মৃত্যু।

জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বিশ্বে শনাক্তের দিক থেকে ৩৪তম স্থানে আছে বাংলাদেশ, আর মৃতের সংখ্যায় রয়েছে ৪১তম অবস্থানে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ২১৯টি ল্যাবে ২৫ হাজার ৯৫৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৪৪ লাখ ৬০ হাজার ১৮৪টি নমুনা।

২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ, এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯১ দশমিক ১২ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫১ শতাংশ। সরকারি ব্যবস্থাপনায় এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৩৩ লাখ ৯৬ হাজার ৯২৩টি। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হয়েছে ১০ লাখ ৬৩ হাজার ২৬১টি।

গত এক দিনে যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ১২ জন পুরুষ আর নারী ৬ জন। তাদের ১৭ জন হাসপাতালে ১ জন বাড়িতে মারা গেছেন। তাদের মধ্যে ১০ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি, ৬ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছর, ২ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ছিল। মৃতদের মধ্যে ২৪ জন ঢাকা বিভাগের, ৪ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ১ জন খুলনা বিভাগের এবং ১ জন সিলেট বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।

দেশে এ পর্যন্ত মারা যাওয়া ৮ হাজার ৭২০ জনের মধ্যে ৬ হাজার ৫৯৫ জনই পুরুষ এবং ২ হাজার ১২৫ জন নারী। তাদের মধ্যে ৪ হাজার ৮৮৫ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। এছাড়াও ২ হাজার ১৬২ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ৯৮৬ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ৪২৯ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, ১৭৩ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে, ৬৬ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে এবং ৩৭ জনের বয়স ছিল ১০ বছরের কম।

এর মধ্যে ৪ হাজার ৯২৯ জন ঢাকা বিভাগের, ১ হাজার ৬০৩ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ৪৮৮ জন রাজশাহী বিভাগের, ৫৭০ জন খুলনা বিভাগের, ২৬৫ জন বরিশাল বিভাগের, ৩১৫ জন সিলেট বিভাগের, ৩৬৯ জন রংপুর বিভাগের এবং ১৯৯ জন ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।

বাংলাদেশে কী ধরণের সমরাস্ত্র বিক্রি করতে চায় তুরস্ক
                                  

স্বাধীন বাংলা ডেস্ক:
মাত্র দু’দশক আগে ১৯৯৯ সালেও তুরস্ক ছিলো বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অস্ত্র আমদানীকারক দেশ, আর সেই দেশটিই ২০১৮ সালে এসে বিশ্বের ১৪তম বৃহত্তম অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি ঢাকায় এসে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলিত শাভিসলু বলেছেন, যে তাদের অস্ত্র আমদানিকারকদের তালিকায় এখন বাংলাদেশকেও পেতে চাইছেন তারা।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের সাথে সাক্ষাতের পর তিনি জানান, তুরস্কের প্রতিরক্ষা পণ্যের গুনগত মান ভালো, দামে সুলভ এবং বিক্রির ক্ষেত্রে কোন আগাম শর্ত তারা দেন না। অতীতে বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর কাছ থেকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কিনতে গিয়ে সমস্যা পড়ে তুরস্ক নিজেই অস্ত্র উৎপাদন শুরু করে, এ কথা জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন যে তুরস্ক প্রযুক্তি হস্তান্তর ও বাংলাদেশের সাথে যৌথ উৎপাদনে যেতেও রাজি আছে।

বাংলাদেশের দিক থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রস্তাবে রাজি হওয়ার বিষয়ে সরাসরি কোন ঘোষণা না আসলেও বিশ্লেষকেরা মনে করছেন যে প্রস্তাবটি বাংলাদেশ বিবেচনা করতে পারে। তবে তুরস্ক ঠিক কী ধরণের অস্ত্র উৎপাদন করে এবং বাংলাদেশে কোন ধরণের অস্ত্র তারা রপ্তানি করতে চাইছে, তার বিস্তারিত তথ্য কোন পক্ষ থেকেই প্রকাশ করা হয়নি।

তুরস্কের সরকারি তথ্য বলছে, ২০১৮ সালে তারা ছিলো বিশ্বের ১৪তম বৃহত্তম অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশ। তবে রপ্তানি বিষয়ে তুরস্কের সরকারি সংস্থা টার্কিশ এক্সপোর্টার্স অ্যাসেম্বলির প্রকাশ করা তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে অগাস্ট সময়কালে তুরস্কের প্রতিরক্ষা রপ্তানি উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে গেছে। গত বছর একই সময়ের তুলনায় এবার এই সময়ে রপ্তানি কমেছে প্রায় ২৬ শতাংশ। তবে এটিও ঠিক যে একদিকে করোনাভাইরাস মহামারি, অন্যদিকে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে তুরস্কের মুদ্রার অবনমন হয়েছে, পাশাপাশি দেশটিতে বেড়েছে মুদ্রাস্ফীতি এবং বেকারত্বের হার।

এর আগের বছরগুলোতে অবশ্য ক্রমশই বাড়ছিল তুরস্কের প্রতিরক্ষাসামগ্রী রপ্তানি। গত বছরের অক্টোবরে সিরিয়ায় কুর্দি মিলিশিয়াদের ওপর হামলার পর থেকে ফ্রান্স, ফিনল্যান্ড, সুইডেন, চেক প্রজাতন্ত্র, নেদারল্যান্ড, স্পেন এবং জার্মানি-সহ অনেক দেশ তুরস্কের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলো।ম২০১৮ সালে দেশটির সব রফতানি খাতের মধ্যে প্রতিরক্ষাসামগ্রীর রপ্তানির প্রবৃদ্ধিই ছিলো সবচেয়ে বেশি। ওই বছরই প্রথমবারের দেশটি ২০০ কোটি মার্কিন ডলারের প্রতিরক্ষাসামগ্রী রপ্তানি করতে সক্ষম হয়।

এরপর তুরস্ক ২০১৯-২৩ সাল সময়ের জন্য কৌশলগত পরিকল্পনা করে, যাতে ২০২৩ সাল নাগাদ প্রতিরক্ষাসামগ্রীর রপ্তানি ১,০০০ কোটি ডলারে উন্নীত করার কথা বলা হয়। একই সাথে, চাহিদার ৭৫ ভাগ দেশেই উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। গত অগাস্টে যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক ডিফেন্স নিউজ ম্যাগাজিন তাদের টপ গ্লোবাল ফার্মের তালিকায় স্থান দিয়েছিলো তুরস্কের সাতটি প্রতিরক্ষাসামগ্রী উৎপাদক প্রতিষ্ঠানকে।

আবার সুইডেন-ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউট বা সিপরির তথ্য অনুযায়ী, সামরিক খাতে তুরস্ক গত বছর ব্যয় করেছে ২,০০০ কোটি ডলারের বেশি। তুরস্কের প্রতিরক্ষা খাত নিয়ন্ত্রণ করে মূলত টার্কিশ আর্মড ফোর্সেস ফাউন্ডেশন, যার মূল কর্তৃত্ব প্রেসিডেন্ট রেজেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের হাতে।

সামরিক বিষয়ের একজন বিশ্লেষক এবং বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট ফর পিস অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আ ন ম মুনীরুজ্জামান জানান যে তুরস্কের ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রি একটি পূর্ণাঙ্গ শিল্পখাত। ‘সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর দরকার এমন সব কিছুই তারা এখন তৈরি করে। বাংলাদেশ আগেও সমরাস্ত্র আমদানি করেছে তাদের কাছ থেকে। তাদের প্রযুক্তিও আধুনিক বলেন তিনি।

তিনি আরো জানান, স্থল বাহিনীর জন্য ট্যাংক, কামান-সহ যুদ্ধাস্ত্র, আর্টিলারি ইকুইপমেন্ট, গোয়েন্দা কার্যক্রম বা নজরদারিতে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান থেকে শুরু করে সব কিছু এবং নৌ বাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে সব কিছুই এখন তুরস্ক তৈরি করছে।

কোন কোন ক্ষেত্রে কেবল অস্ত্র নয়, বরং অস্ত্র কেনার পর দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষুদ্রাংশ সরবরাহ এবং ব্যাকআপ সার্ভিস দিতে পারে তুরস্ক। এছাড়া, সামরিক কোন বিষয়ে প্রশিক্ষণের দরকার হলে, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া ক্ষেত্রেও তুরস্কের সক্ষমতা তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ওদিকে প্রতিরক্ষা বিষয় বিভিন্ন জার্নাল কিংবা তুরস্কের প্রতিরক্ষা বিষয়ক বিভিন্ন রিপোর্ট থেকে যে ধারণা পাওয়া যায়, তাহলো দেশটি শটগান, রাইফেল, স্নাইপার রাইফেল, লাইট মেশিন গান, হেভি মেশিনগান, ল্যান্ডমাইন, হ্যান্ড গ্রেনেড, রকেট, সেল্ফ প্রপেল্ড গ্রেনেড, অ্যান্টি এয়ারক্রাফট গান-সহ নানা ধরণের অস্ত্র ও সেন্সর তৈরি করে।

আবার নিজেদের তৈরি করা ল্যান্ডমাইন ডিটেক্টর ব্যবহার করে সিরিয়ায় সাফল্য পাওয়ার দাবি করেন দেশটির সামরিক বিশ্লেষকরা। তাছাড়া তুরস্কের একটি কোম্পানি এন্টি ড্রোন ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক গান তৈরি করেছে, যা কম উচ্চতায় থাকা ড্রোনকে ভূপাতিত করতে সক্ষম বলে জানানো হয়েছে। তবে যেটি নিয়ে এখন সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে, সেটি হলো তুরস্কে বানানো ড্রোন। দেশটির চারটি কোম্পানি ড্রোন উৎপাদন করে থাকে। এগুলোর মধ্যে মেশিনগান এবং গ্রেনেড বহনকারী ড্রোনও রয়েছে।

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে যে আজারবাইজান সাম্প্রতিক যুদ্ধে আরমেনিয়ার বিরুদ্ধে তুরস্কের তৈরি ড্রোন ব্যবহার করে ব্যাপক সাফল্য পায়। নিজস্ব স্যাটেলাইট এবং ভালো মানের রাডার আছে তুরস্কের। এখন তারা ক্রুজ মিসাইল তৈরির কাজ করছে বলে জানা যাচ্ছে।

এর পাশাপাশি নৌ বাহিনীর জন্য তারা যেসব যুদ্ধ সরঞ্জাম তৈরি করছে, তার মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি শিপ মিসাইল, লাইটওয়েট টর্পেডো এবং সোনার সিস্টেম। তারা আন্ডারওয়াটার অ্যাটাক ড্রোন তৈরি নিয়েও কাজ করছে। একই সাথে যুদ্ধজাহাজের ইঞ্জিন তৈরি করা শুরু করেছে দু`বছর আগে।

সুইডেন-ভিত্তিক সিপরির দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ এখনই তুরস্ক থেকে কিছু সামরিক সরঞ্জাম আমদানি করছে। এর বাইরে বাংলাদেশ যেসব দেশ থেকে অস্ত্র এবং সামরিক সরঞ্জাম আমদানি করে, সেব দেশের তালিকায় রয়েছে চীন, ইতালি, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, সার্বিয়া, ইউক্রেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং জার্মানি। তবে তুরস্ক এখন চাইছে বাংলাদেশ আরও বেশি পরিমাণ সামরিক সরঞ্জাম তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করুক এবং দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার সাম্প্রতিক সফরে সেই প্রস্তাবই দিয়েছেন। সূত্র: বিবিসি


   Page 1 of 2
     এক্সক্লুসিভ
ঝুঁকি নিয়ে প্রতিমিনিটে অর্ধশতাধিক মানুষের পারাপার
.............................................................................................
বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের প্রভাব নিয়ে যা বলছে পাকিস্তান টুডে
.............................................................................................
সিলেটে আওয়ামী লীগের প্রমিথিউস সুলতান মনসুর
.............................................................................................
চাকরি না পেয়ে হতাশায় আত্মহত্যা জাবি শিক্ষার্থীর!
.............................................................................................
শোকের নদী ‘বিত্তিপাড়া’, এখনও নাম ওঠেনি বধ্যভূমির তালিকায়
.............................................................................................
রাহু গ্রাসে সাংবাদিক সমাজ, বানানো হচ্ছে শ্রমদাস
.............................................................................................
মধু সর্ব রোগের শেফা
.............................................................................................
পিছিয়ে পড়া নারী সমাজকে নিয়ে ‌`ভয়েস অব ওমেন`
.............................................................................................
যুক্তরাজ্যের অবৈধ নাগরিকদের ঠাঁই হবে রুয়ান্ডায়
.............................................................................................
করোনাকালে ভোলায় ২২ হাজার শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার
.............................................................................................
নিরাপত্তা ঝুঁকিতে অস্ট্রেলিয়া
.............................................................................................
যুদ্ধের প্রভাব: লন্ডনে ডিজেলের লিটার ২০০ টাকা
.............................................................................................
তনু হত্যার ৬ বছর: চোরাবালিতে আটকে আছে তদন্ত, শনাক্ত হয়নি আসামি
.............................................................................................
সৌন্দর্যের লীলাভূমি ‘আশুরার বিল’
.............................................................................................
আতঙ্ক বাড়াচ্ছে করোনা
.............................................................................................
বাংলাদেশে কী ধরণের সমরাস্ত্র বিক্রি করতে চায় তুরস্ক
.............................................................................................
কুষ্টিয়ার যতীন্দ্রনাথ যেভাবে হলেন ‘বাঘা যতীন’
.............................................................................................
বেকার যুবকদের ভাগ্য বদলে বিশেষ ঋণ
.............................................................................................
খাদ্য নিরাপত্তায় এখনও অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশ
.............................................................................................
খুলনায় মাদক সম্রাট শাহজাহান আটক
.............................................................................................
স্থানীয় নির্বাচন: ক্ষমতাসীন দলে তীব্র অভ্যন্তরীণ কোন্দলের আশঙ্কা
.............................................................................................
নাশকতার আশঙ্কায় দেশে সর্বোচ্চ সতর্কতা
.............................................................................................
গম উঠাচ্ছে না মিলাররা
.............................................................................................
বর্জ্য পরিশোধনের নামে বিদেশী প্রতিষ্ঠানের প্রতারণা
.............................................................................................
নিষিদ্ধ ঘোষিত ওষুধ অবাধে বিক্রি হচ্ছে বাজারে
.............................................................................................
কোরবানির গরু ফুলানো হচ্ছে ভিটামিন দিয়ে
.............................................................................................
‘ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে স্ত্রীর উদ্দেশে যা বলেছিলেন এরশাদ শিকদার’
.............................................................................................

|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
    2015 @ All Right Reserved By dailyswadhinbangla.com

Developed By: Dynamic Solution IT