মিলন শেখ, সিরাজগঞ্জঃ সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠ সরিষা ফুলের হলুদ পশরা সাজিয়ে প্রকৃতিকে অপরূপ সৌন্দর্যে আচ্ছাদিত করে রেখেছে। সরিষা ফুলের মৌ মৌ গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। প্রকৃতি সেজেছে হলুদ রঙের সমারোহে। মৌমাছি, প্রজাপতির অবিরাম খেলায় গ্রামীণ জনপদকে আরো মনোমুগ্ধকর করেছে। এই অপরূপ দৃশ্য যেকোনো প্রকৃতিপ্রেমী মানুষকে আকৃষ্ট করে তোলে।
চাষের সময় ও খরচ দুটোই কম হওয়ায় কৃষকের কাছে বেশ জনপ্রিয় সরিষা চাষ। গত কয়েক বছরে নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনের ফলে এ শস্যটির ফলনও আগের চেয়ে বেড়েছে। এ কারণে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে দিনে দিনে বাড়ছে সরিষার চাষ। এ বছর সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১১ হাজার হেক্টর জমিতে। ১৩টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ১২ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হচ্ছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে বেশী সরিষা চাষ হচ্ছে। এসব জমিতে সরিষার ফুল ফুটেতে শুরু করেছে এক সপ্তাহ আগেই।
ঠিক সেই সময় মেতে উঠেছে মধু সংগ্রহে মৌয়ালরা। সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে এসব জমির পাশে পোষা মৌমাছির শত শত বাক্স নিয়ে হাজির হয়েছেন পেশাদার মৌয়ালরা। ওইসব বাক্স থেকে হাজার হাজার মৌমাছি বের হয়ে মধু সংগ্রহে ঘুরে বেড়াচ্ছে সরিষা ফুলের মাঠে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখন পর্যন্ত মধু সংগ্রহে শাহজাদপুরে এসেছে ৫টি মৌ-খামারী। ৫ টি মৌ খামারে ৭৫১ টি মৌ-বাক্স থেকে মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে।
শাহজাদপুরের টেটিয়ার কান্দা মাঠে পোষা মৌমাছি দিয়ে মধু সংগ্রহকারী মো. ইমরান সরকার মৌয়াল জানান, তিনি প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও পোষা মৌমাছির ১০০টি বাক্স নিয়ে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ করছেন। তিনি এ বছর প্রতি সপ্তাহে গড়ে ২৭০ থেকে ৩১০ কেজি মধু সংগ্রহ করতে পারছেন। এখানে সরিষার ফুল থেকে মৌমাছি দিয়ে মধু সংগ্রহ করে তিনি অধিক লাভবান হয়েছেন।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, প্রচলিত দেশি সরিষার চেয়ে বারি, টরি, ও বিনার উদ্ভাবিত সরিষার জাতগুলোর ফলন বেশি। এ কারণে চাষিরাও আগ্রহী হচ্ছেন সরিষা চাষে। অনেকেই আমন ধান সংগ্রহের পর জমি ফেলে না রেখে সরিষা চাষ করছেন।
শাহজাদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আব্দস ছালাম বলেন, বোরো ধান রোপণের আগে একটি বাড়তি অর্থকরি ফসল হিসেবে সরিষার আবাদ করে শাহজাদপুরের কৃষকরা বেশ লাভবান হচ্ছেন। আবার ওইসব সরিষার ফুল থেকে পোষা মৌমাছি দিয়ে মধু সংগ্রহে লাভবান হচ্ছন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা পেশাদার মৌয়ালরা। অন্য অঞ্চল থেকে আসা মৌ চাষিদের আমরা নিরাপত্তা সহ সকল প্রকার সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি।