সাতক্ষীরায় এবার হলুদের বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। গত বছরের চেয়ে এবার ২ হাজার ২৫৬ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ বৃদ্ধি পেয়ে জেলার ১১ হাজার ৪৮১ হেক্টর জমিতে। হলুদের সমারোহে সজ্জিত সরিষার ফুলে দুলছে জেলার প্রয় এক লাখ ৯০ হাজার কৃষকের স্বপ্ন। জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় দিগন্তজোড়া মাঠ এখন হলুদ আর হলুদ। জেলায় প্রকৃতি সেজেছে হলুদ বরণ সাজে’।
সাতক্ষীরা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর (খামারবাড়ি) সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর হেক্টর প্রতি গড় ১৪০ মেট্রিক টন ফলনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে জেলার সাত উপজেলার ১২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সরিষা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন।
সাতক্ষীরা সদরে ৩ হাজার ৬৪০ হেক্টর জমিতে ৫ হাজার ৯৬ মেট্রিক টন, কলারোয়ায় ৬ হাজার ৬২০ হেক্টর জমিতে ৯ হাজার ২৬৮ মেট্রিক টন, তালায় ৫০০ হেক্টর জমিতে ৭০০ মেট্রিক টন, দেবহাটায় ৯৭০ হেক্টর জমিতে এক হাজার ৩৫৮ মেট্রিক টন, কালিগঞ্জে ৪৯০ হেক্টর জমিতে ৬৮৬ মেট্রিক টন, আশাশুনিতে ২১০ হেক্টর জমিতে ২৯৪ মেট্রিক টন ও শ্যামনগরে ৭০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষে ফলনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৮ মেট্রিক টন। নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এবার জেলার এক হাজার ১৯ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ কম হয়েছে।
এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদরে ২২০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ কমে যেয়ে ৩ হাজার ৪২০ হেক্টর, কলারোয়ায় ৬১৪ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ কমে ৬হাজার ৬হেক্টর, দেবহাটায় ১০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ কমে ৯৬০ হেক্টর, কালিগঞ্জে ১৯৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ কমে ২৯৫ হেক্টর, আশাশুনিতে ২০হেক্টর জমিতে চাষাবাদ কমে যেয়ে ১৯০ হেক্টর ও শ্যামনগরে কৃষিবিভাগের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ২০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ কমে ৫০ হেক্টর জমিতে এবার সরিষার চাষ হয়েছে। তবে, জেলার সাত উপজেলার ভিতরে ছয় উপজেলা সরিষা চাষে কৃষিবিভাগের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রায় পিছিয়ে থাকলেও বাকি একটি উপজেলা তালায় কৃষিবিভাগের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছরের মতো এবারও সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়ার কারণ হিসেবে অসময়ের বৃষ্টি, জলাবদ্ধতাসহ বিভিন্ন কারণকে দায়ী করছে কৃষি বিভাগ।
তালার কৃষক রহিম বক্স জানান, তিনি এবার তিন বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। আশা করছেন ভালো ফলন পাবেন। কলারোয়ার কৃষক রবিউল হাসান ও আরশাদ আলী জানান তারা দুইজন পাশপাশি সাড়ে ছয় বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। তারা এবারও আশানুরূপ ফলন পাওয়ার আশা করছেন।
সরজমিনে জেলার কলারোয়া, সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে দেখা যায়, কৃষকদের আবাদকৃত জাতের মধ্যে রয়েছে বারি-৯, ১৪, ১৫ ও ৪, টরি-৭ ও স্থানীয় জাত। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি আবাদ হচ্ছে বারি-১৪ ও ১৫ জাতের সরিষার চাষ। সরিষার জমিতে ফুলে ফুলে মৌমাছি মধু আহরণ করছে। চারিদিকে প্রকৃতির বুকে সুন্দরের আগুন। প্রকৃতি সেজেছে অপরূপ সৌন্দর্যের নান্দনিক রূপে। রাস্তার দুই পাশে সরিষার হলুদ ফুলে ভরা দিগন্তজাড়া মাঠ। দেখলেই চোখ জুড়িয়ে আসে। মন চায় সে হলুদের মাঝে হারিয়ে যেতে। মাঠ ভরা সরিষা ক্ষেতের হলুদ মাঠে এক ফুল থেকে অন্য ফুলে মৌমাছিরা মনের আনন্দে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত। যেন হলুদের মাঠে কৃষকের স্বপ্ন খেলা করে। তবে আবহাওয়া অনূকুলে থাকলে ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান কৃষকরা।