সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত ভাল ছাত্র এবং খারাপ ছাত্র শব্দগুলো সমাজে বেশ জনপ্রিয়তার সাথেই চলছে। ভাল ছাত্ররা হয় তুমুল মেধাবি আর খারাপ ছাত্ররা আমড়া কাঠের ঢেঁকি এমনটাই বিশ্বাস করেন সমাজের সিংহভাগ মানুষ। কিন্তু এ শব্দদ্বয়ের উৎপত্তির কারণ আমার কৌতুহলী মন আজও জানতে পারেনি যদিও জানার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। তবে এতটুকু নিশ্চিত হতে পেরেছি যে ভাল ছাত্র খারাপ ছাত্র বলতে কোনো শ্রেণি বিন্যাস নেই। ছাত্রদের যদি শ্রেণি বিন্যাস করতেই হয় তবে পরিশ্রমি এবং অলস এ দুই শ্রেণিতে ভাগ করা যুক্তিসঙ্গত।
ইতিহাসের পাতা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় পরিশ্রমি ছাত্ররাই সাফল্যের নতুন নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে হোক সে অন্যদের তুলনায় কম মেধাবি। কি বিশ্বাস হচ্ছে না তো??
আমি প্রথমেই আপনাদেরকে আইনস্টাইনের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছি যিনি শৈশবে পড়াশোনায় ছিলেন মারাত্মক দুর্বল। কোনো কিছুই মনে রাখতে পারতেন না। ক্লাসের শেষ বেঞ্চে বসতেন। অহেতুক কথা বলায় ছিলেন পটু। ফেল করেছেন বারবার। কিন্তু! পরবর্তীতে স্কুলের সেই আত্মভোলা ছেলেটিই পৃথিবীকে অবাক করেন থিওরি অব রিলেটিভিটি দিয়ে। সবশেষে নোবেলও জেতেন তিনি।
সমাজ স্বীকৃত ভাল ছাত্ররা পড়ার সময় হঠাৎ বৈদ্যুতিক বাতি বন্ধ হয়ে গেলে রাগে মাথা খারাপ হয়ে যায় আর এমন ভাল ছাত্রদের ভালভাবে পড়ার জন্য যে বাতি আলো বিলায় তা ইতিহাসের এক খারাপ ছাত্রেরই আবিষ্কারের ফল। হ্যাঁ, আপনারা ঠিক ধরেছেন আমি টমাস এডিসনের কথাই বলছি। তিনি ছিলেন ক্লাসের সবচেয়ে দূর্বল ছাত্র। এ জন্য অবশ্য স্কুল থেকে বহিষ্কৃতও হন। আবার এই বহিষ্কৃৃত ছেলেটিই মাত্র ১১ বছর বয়সে জ্ঞান-বিজ্ঞানে পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। তিনি বৈদ্যুতিক বাতি ছাড়াও কিন্টোগ্রাফ ও ফোনোগ্রাফ আবিষ্কার করেছেন। এরকম অসংখ্য দৃষ্টান্ত রয়েছে আমি সেগুলো উল্লেখ করে বর্ণনা দীর্ঘ করতে চাচ্ছি না তবে যে বিষয়টি এখানে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরতে চাই তা হলো পরিশ্রমের কাছে মেধা চির অসহায় অর্থাৎ নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যকে যেকোনো সময় সাফল্যকে জব্দ করা যায় আর এজন্য সমাজ স্বীকৃত ভাল ছাত্র হতে হয়না।
সর্বশেষ, আরেকটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি প্রতীয়মান করা যাক। জনৈক পণ্ডিতের স্কুল জীবনের গল্পই বলছি যিনি ক্লাসে কখনোই পড়া পারতেন না। একদিন তার শিক্ষক তাকে চরম অপমান করে ক্লাস থেকে বের করে দেন। তিনি নদীর পাড় দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বাড়ি ফিরছিলেন। স্কুল থেকে বাড়ি বেশ দূরে ছিল তাই ক্লান্ত হয়ে পাথরের একটি ঘাটে খানিকটা বসে বিশ্রাম নেন। হঠাৎ তিনি দেখতে পেলেন গ্রামের মহিলারা মাটির কলস দিয়ে পানি নেওয়ার সময় যেখানে কলস রাখেন সে স্থানটি ক্ষয় হয়ে গর্তে রূপ ধারণ করেছে যা তাকে ভীষণ ভাবায়। তখন তিনি ভাবতে লাগলেন মাটির কলসের ঘষায় যদি পাথর ক্ষয় হতে পারে তাহলে আমি চেষ্টা করলে আমার ব্রেন কেন ধারালো হবেনা? তারপর তিনি নিরলস পরিশ্রম করে এক মাস পর ক্লাসে যান তখন তার সেই শিক্ষক তাকে আবারো পড়া জিজ্ঞেস করে অবাক হন। তাকে বইয়ের যেখান থেকেই প্রশ্ন করা হয় তিনি সেখানে থেকেই নির্বিঘ্নে জবাব দিতে থাকেন। তারপর সময়ের সাথে সাথে তিনি হয়ে ওঠেন সে সময়ের প্রথিতযশা পণ্ডিত। বস্তুত, সফলতার পথে মেধা কখনো থেমে থাকার কারণ হতে পারেনা। তাই ভাল ছাত্র, খারাপ ছাত্র কথাগুলো এখনই দাফন করুন এবং স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দান করতে ছুটে চলুন দূর্বার গতিতে।
রচনায়ঃ মুহম্মদ সজীব প্রধান প্রতিনিধি- দৈনিক স্বাধীন বাংলা।