শাহজাদপুরে রোপা আমনের বাম্পার ফলন, দামেও খুশি চাষিরা
শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি:
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে চলতি রোপা আমন মৌসুমে ধান কাটা শুরু করেছে স্থানীয় কৃষকরা। মাঠে মাঠে সোনালি পাকা রোপা আমন ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় এবং ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসির ঝিলিক।
চলতি মৌসুমে প্রাকৃতিক দুর্যোগ কম, রোগ ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণও কম হয়। সাড়ে তিন মাসেই এ ফসল কৃষক ঘরে তুলতে পারে। এতে করে খরচ কম, লাভজনক হওয়ায় এবং রোপা আমন ধানের খর গো খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করতে পারায় ও বাজার মূল্য ভালো থাকায় রোপা আমন চাষাবাদে ব্যাপক আগ্রহ বেড়ে গেছে এ উপজেলার রোপা আমন চাষিদের।
রোপা আমন মৌসুমে একটি জনপ্রিয় জাত হলো অ্যারাইজ এ জেড (হাইব্রিড) ৭০০৬। এ জাতের রোপা আমন ধান চাষে বিঘাপ্রতি গড় ফলন হয় ১৮ মণ। সাড়ে তিন মাসেই এ ফসল কৃষক ঘরে তুলতে পারে। ফলে ধান কাটার পরেই সরিষা চাষাবাদ করতে পারে কৃষক। চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় প্রায় ২৯০ হেক্টর জমিতে আবাদকৃত রোপা আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।
উপজেলার গাড়াদহ ইউনিয়নের গাড়াদহ গ্রামের কৃষক মো. হুমায়ন কবির বলেন, এ বছর আমি ৩০ শতক জমিতে রোপা আমন ধানের আবাদ করেছি। ধানের ফলন ভালো হয়েছে, বাজার দরও ভালো।
উপজেলার গাড়াদহ ইউনিয়নের গাড়াদহ গ্রামের মাঠ পরিদর্শনের সময় শাহজাদপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ জেরিন আহমেদ বলেন, অল্প দিনে রোপা আমন ধান ঘরে উঠার ফলে কৃষকরা সহজেই সরিষা চাষে যেতে পারবে। কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে আধুনিক জাতের রোপা আমন ধান এবং সার বিতরণ করেছি। আগামীতে এ উপজেলায় রোপা আমন ধানের আবাদ আরো বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
|
শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি:
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে চলতি রোপা আমন মৌসুমে ধান কাটা শুরু করেছে স্থানীয় কৃষকরা। মাঠে মাঠে সোনালি পাকা রোপা আমন ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় এবং ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসির ঝিলিক।
চলতি মৌসুমে প্রাকৃতিক দুর্যোগ কম, রোগ ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণও কম হয়। সাড়ে তিন মাসেই এ ফসল কৃষক ঘরে তুলতে পারে। এতে করে খরচ কম, লাভজনক হওয়ায় এবং রোপা আমন ধানের খর গো খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করতে পারায় ও বাজার মূল্য ভালো থাকায় রোপা আমন চাষাবাদে ব্যাপক আগ্রহ বেড়ে গেছে এ উপজেলার রোপা আমন চাষিদের।
রোপা আমন মৌসুমে একটি জনপ্রিয় জাত হলো অ্যারাইজ এ জেড (হাইব্রিড) ৭০০৬। এ জাতের রোপা আমন ধান চাষে বিঘাপ্রতি গড় ফলন হয় ১৮ মণ। সাড়ে তিন মাসেই এ ফসল কৃষক ঘরে তুলতে পারে। ফলে ধান কাটার পরেই সরিষা চাষাবাদ করতে পারে কৃষক। চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় প্রায় ২৯০ হেক্টর জমিতে আবাদকৃত রোপা আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।
উপজেলার গাড়াদহ ইউনিয়নের গাড়াদহ গ্রামের কৃষক মো. হুমায়ন কবির বলেন, এ বছর আমি ৩০ শতক জমিতে রোপা আমন ধানের আবাদ করেছি। ধানের ফলন ভালো হয়েছে, বাজার দরও ভালো।
উপজেলার গাড়াদহ ইউনিয়নের গাড়াদহ গ্রামের মাঠ পরিদর্শনের সময় শাহজাদপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ জেরিন আহমেদ বলেন, অল্প দিনে রোপা আমন ধান ঘরে উঠার ফলে কৃষকরা সহজেই সরিষা চাষে যেতে পারবে। কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে আধুনিক জাতের রোপা আমন ধান এবং সার বিতরণ করেছি। আগামীতে এ উপজেলায় রোপা আমন ধানের আবাদ আরো বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
|
|
|
|
আকরামুজ্জামান আরিফ, কুষ্টিয়া:
কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় তুলা চাষে আগ্রহ বাড়ছে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের চাষিদের। দেশের তৈরি পোশাকশিল্পে ভালো মানের সুতা উৎপাদনে বড় ভূমিকা রাখছে এ উপজেলার তুলা। তবে চলতি মৌসুমে কয়েক দিনের টানা বর্ষণে ক্ষতি হওয়ায় দুশ্চিন্তায় আছেন তুলাচাষিরা। এদিকে জানুয়ারি মাস থেকে উপজেলার দুটি তুলা বিক্রয়কেন্দ্র থেকে সপ্তাহে তিন দিন করে তুলা কেনা শুরু করেছে বিভিন্ন সুতা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। এটা চলবে মার্চ পর্যন্ত। এবারের তুলার নির্ধারিত দাম ও আনুমানিক উৎপাদন হিসাব করে ধারণা করা হচ্ছে, এই মৌসুমে উপজেলায় ৭০ কোটি টাকার বেশি তুলা বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে।
কুষ্টিয়া তুলা উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য বলছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর উপজেলার ৭টি ইউনিটে ১৫০ হেক্টর বেশি জমিতে তুলা চাষ হয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রকারভেদে মণপ্রতি ৩ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজার ৮০০ টাকা। এ বছর এই উপজেলায় ৬ হাজার ৯১০ জন তুলাচাষি ২ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে তুলা চাষ করেছেন। টানা কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণে ক্ষতি হওয়ায় বিঘাপ্রতি ১৩ মণ করে ফলন ধরা হচ্ছে এবার। এদিকে তুলা উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুসারে, দেশের সবচেয়ে বেশি তুলা উৎপাদন হয় কুষ্টিয়া জেলায়। আর জেলায় সবচেয়ে বেশি তুলা হয় দৌলতপুর উপজেলায়।
তুলার সঙ্গে থাকা বীজ থেকেও তৈরি হচ্ছে স্বাস্থ্যকর ভোজ্য তেল ও খৈল। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে ভারসাম্য রেখে এখানকার তুলার বাজারদর প্রতিবছর নির্ধারণ করেন মিলমালিকেরা।
উপজেলার প্রাগপুর ইউনিয়ন পরিষদে শনিবার এই মৌসুমে ৪র্থ দিনের মতো বসেছিল তুলার হাট। এখানে তুলা কিনতে এসেছেন কয়েকটি সুতা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা।
আল মদিনা ইন্ডাস্ট্রির মালিক গোলাম সাবির জানান, তাঁরা ৩০ বছর ধরে এ উপজেলা থেকে তুলা কিনছেন। এখানকার তুলা দুই অংশে ভাগ করে সুতা প্রস্তুত করেন তাঁরা। আর বীজ থেকে তৈরি হয় তেল ও খৈল। এই তুলা দিয়ে তৈরি সুতা দেশের পোশাকশিল্পে কাজে লাগে।
উপজেলার বিলগাতুয়া এলাকার তুলাচাষি হাবিল বলেন, ‘এবার টানা বর্ষণের কারণে তুলা নষ্ট হয়েছে। তাই ফলন কমেছে। বাজারে সার ও কীটনাশকের দাম বাড়ায় আবাদের ব্যয়ও বেড়েছে। তাই এবার লাভের মুখ দেখছি না।’ সাহিদুল বলেন, তুলার বাজারদর মিলমালিকেরা নির্ধারণ করেন। এটি সরকার ঠিক করলে চাষিরা লাভবান হবেন।
মাহাবুল হসেন নামের এক চাষি জানালেন, ফলন ভালো না হওয়ায় উৎপাদন খরচ তুলতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে চাষিদের। ৯ মাসের মতো লাগে তুলার ফলন পেতে। তাই দাম বাড়ানোর দাবি এই চাষির।
কুষ্টিয়ার প্রধান তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা শেখ আল মামুন বলেন, ‘গত মৌসুমের তুলনায় এবার তুলার চাষ বেড়েছে। আমরা চাষিদের চাষে আগ্রহ বাড়াতে পরামর্শ দিচ্ছি। তুলা থেকে কম খরচে ভালো লাভ করা সম্ভব। আমরা আগামী মৌসুমে কিছু প্রণোদনার ব্যবস্থা করব চাষিদের জন্য। প্রতিনিয়ত চাষিদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
|
|
|
|
হালিমা খানম, স্টাফ রিপোর্টার:
শীত মানেই নানা রকম মুখরোচক খাবারের স্বাদ। আর এই মৌসুমকে ঘিরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় উৎপাদিত হচ্ছে সুস্বাদু রসালো গুড় ‘লালী’। লালী গুড়ের জন্য প্রসিদ্ধ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্তবর্তী বিজয়নগর উপজেলা। শীত মৌসুমে উপজেলার বিষ্ণুপুর, দুলালপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে কৃষকরা ব্যস্ত বিশেষ এই রসালো গুড় উৎপাদনে।
মহিষ দিয়ে চলছে আখ মাড়াইয়ের কাজ। মাড়াই শেষে যে রস মিলবে তা দিয়ে তৈরি হবে সুস্বাদু রসালো গুড়। আখের রস চুলায় ৩/৪ ঘণ্টা জ্বাল দিয়ে তৈরি করা হয় লালী গুড়। যা লালী নামে পরিচিত। সুমিষ্ট এই লালী ছাড়া পিঠা, পুলির স্বাদ যেন অনেকটাই ফিকে ভোজন বিলাসীরদের জন্য।
এক কানি জমির আখ দিয়ে ১৭/১৮ মন লালী তৈরি হয়। মৌসুমি এই পেশার সাথে উপজেলার ১০/১২ জন উদ্যোক্তা জড়িত রয়েছে। আর তাদের সাথে কাজ করেন শতাধিক কৃষক। স্বাদে ও গুণে অনন্য হওয়ায় প্রতিদিন ভোজন বিলাসীরা ছুটে আসছেন লালী গুড় কিনতে। প্রতিকেজি লালী বিক্রি হচ্ছে ১৪০/১৫০ টাকা দরে। সে সাথে আখের রসের স্বাদ গ্রহণ করতে ভিড় করছে ভ্রমণ পিপাসুরা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাসহ আশপাশ জেলা ও উপজেলাতেও রয়েছে এর চাহিদা।
এ পেশার সাথে জড়িতরা জানান, বাব-দাদার ঐতিহ্যকে ধরে রাখতেই যুগ যুগ ধরে আমরা আখের লালি তৈরি করে আসছি। তবে দিন দিন আমাদের গ্রামে আখ চাষ কমে যাওয়ায় লালীর চাহিদা থাকলেও উৎপাদন কারীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। তাই আগের মত তেমন তৈরি করা যাচ্ছে না। তবে অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি বাড়তি আয়ের জন্য বছরে ৪ মাস এই লালী তৈরির কাজ করে থাকি। প্রতিদিন ৭০-৮০ লিটার লালী উৎপাদন করা হয়। আমাদের বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। এখান থেকেই পাইকার ও বিভিন্ন দূর দূরান্তের লোকজন কিনে নিয়ে যায়। প্রতি মৌসুমে তাদের পাঁচ লক্ষ টাকা খরচ হলেও এতে লাভ হয় দেড় লক্ষ টাকা।
লালী কিনতে আসা কয়েকজন ক্রেতা বলেন, বাজারের লালীতে প্রায় সময়ই ভেজাল মেশানো থাকে। যা ক্ষতিকারক কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তবে এখানকার লালী নির্ভেজাল এবং প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদিত হয়। ফলে এর চাহিদা অনেক বেশি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুশান্ত সাহা জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলা আখ থেকে তৈরি লালির জন্য বিখ্যাত। অনেকটা সুস্বাদু ও নিরাপদ বিধায় জেলা ছাড়াও বাহিরে থেকে মানুষ এসে ক্রয় করে নিয়ে যায়। কৃষকরা এখানে বেশিরভাগ স্থানীয় জাতের আবাদ করে যার ফলে আখের রসের পরিমাণ কম হয়। আমরা বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইন্সটিটিউটের সাথে যোগাযোগ করেছি, যাতে নতুন জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণের জন্য যেন কৃষকরা লাভবান হয়। আমরা আশা করছি আগামী বছর থেকে সে সহযোগিতা পাবো। সহযোগিতা পেলে রসের পরিমাণ বাড়বে, কৃষকরা অধিক লাভবান হবে। আমরা আশা করছি এবছর প্রায় ২ কোটি টাকার মত লালি বিক্রি হবে।
|
|
|
|
সিলেট ব্যুরো:
বোরো ধান আবাদে চরম ব্যস্ত দিন কাটাচ্ছেন সিলেটের কৃষকরা। সিলেটে বিভাগের মধ্যে সুনামগঞ্জে সবচেয়ে বেশি বোরা ধানের আবাদ করা হয়।
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে গত বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় এবার জমি আবাদে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন কৃষকরা। গত প্রায় এক মাস ধরে জমি পরিচর্জা, জমিতে হাল দেয়া ও জমি রোপনসহ নানা কাজে ব্যস্ত সময় পার কৃষক, শ্রমিক ও জমির মালিকরা।
তবে গত বছর বড় জাতের ধান সহ অন্যান্য ধানের বাম্পার ফলন হলেও ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ জাতের ছোট ধানের ফলন ভালো হয়নি। সে কারণে এবার কৃষকরা ব্রি-২৮ ও ২৯ জাতের ধান আবাদ না করে ভালো জাতের ধান আবাদ করছেন। সেই সঙ্গে গত বছর থেকে এবার আবাদি জমির পরিমাণও বেড়েছে। ফলে প্রকৃতি অনুকুলে থাকলে আগামী বৈশাখ মৌসুমে শতভাগ বাম্পার ফলন উঠবে কৃষকদের গোলায়। এমন লক্ষ্য বাস্তবায়নে জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাওসার আহমেদ সহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মাঠে-ময়দানে কাজ করছেন।
জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর জগন্নাথপুর উপজেলার সবচেয়ে বড় নলুয়ার হাওর সহ সকল হাওর ও নন হাওর রকম ২০ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমি আবাদ হয়েছিল। এবার নতুন করে আরো ৪৫ হেক্টর পতিত জমি আবাদের আওতায় এসেছে। ফলে নতুন করে সরকারি ভাবে জমি আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমি। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ১০ হাজার ৫০২ মেট্রিকটন ধান।
|
|
|
|
রোকুনুজ্জামান খান, গাজীপুর :
গাজীপুর সদর উপজেলার ভাওয়াল মির্জাপুর ব্রাঞ্চ আশা-এনজিও থেকে জাইকা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত ইমপ্রুভমেন্ট এন্ড ডাইভারসিফিকেশন ফাইন্যান্সিং প্রজেক্ট (এসএমএপি) এর প্রকল্প থেকে ঋণ গ্রহণ করে হোসনা বেগম এখন স্বাবলম্বী।
বুধবার (২৭ই ডিসেম্বর) সকালে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের বাঁশ তলা গ্রামের কৃষক ফারুকের স্ত্রী হোসনা বেগম প্রতিবেদককে জানান, আমি একজন সাধারণ কৃষক। ভীষণ কষ্টে চলছিল সংসার। টাকার অভাবে জমি চাষ করার জন্য আমার পুজি ছিলনা। ফলে স্থানীয় লোকজনের নিকট থেকে চড়া সুদে ঋণ গ্রহণ করতে হতো। ফলে ফসলের উৎপাদন খরচ বেশী, হতো লাভ হতো কম। যে ফসল উৎপাদন হত তাতে আমার সংসার চালানো সম্ভব হতো না। সংসারে অভাব অনটন লেগে থাকতো।
একদিন আশা- ভাওয়াল মির্জাপুর ব্রাঞ্চে ঋণের জন্য গেলে ব্রাঞ্চ ম্যানেজার স্যারের নিকট থেকে আশার ঋণের সুবিধা সম্পর্কে জানতে পারি। আশা ভাওয়াল মির্জাপুর ব্রাঞ্চ থেকে ২০০৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর ঋণ গ্রহণ করি। এভাবে পর পর ঋণ গ্রহণ করে সবজি চাষ করে আয় বৃদ্ধি করে সংসার পরিচালনা করে আসছি। পরে ব্রাঞ্চ ম্যানেজার স্যার আমাকে জাইকা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত এসএমএপি ঋণ সম্পর্কে বলেন, এসএমএপি প্রকল্পের ঋণের খুবই সুবিধা। এই ঋণের সার্ভিসচার্জ খুব কম, তাছাড়া মাসিক কিস্তিতে পরিশোধ যোগ্য। আশা অফিসের কর্মকর্তাগণ নিয়মিত আমার প্রকল্প পরিদর্শন করে কারিগরি সহায়তা সেবা প্রদান করেন।
আমি গত দুই বছর যাবত আশা ভাওয়াল মির্জাপুর ব্রাঞ্চ থেকে এসএমএপি প্রকল্পের ঋণ গ্রহণ করছি। ১ম দফা গত ২০১৫ সালের ৫ ডিসেম্বর ৫০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করে সিম চাষ করি। তার পর এসএমএপি প্রকল্পে ২০১৯ সালের ১৭ জানুয়ারি ৮০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করি, সর্বশেষ এসএমএপি প্রকল্পে চলতি বছরের ২০ জুন ১ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করে সিম চাষ করে আসছি। আমি এবং আমার পরিবার পুরোপুরি স্বাবলম্বী। তাছাড়া আশা অফিস থেকে নিয়মিত কারিগরী সহায়তা সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন। এসএমএপি ঋণের পুরো টাকা প্রকল্পে বিনিয়োগ করে উপার্জন বৃদ্দি করে কিস্তি চালাতে আমার কোন কষ্ট হয়না। কারিগরী সহায়তা কাজে লাগিয়ে ফসল উৎপাদন বৃদ্দি পাওয়ায় সংসার স্বচ্ছলভাবে চালানো সম্ভব হচ্ছে।
ঋণ গ্রহণের পর থেকে আশা-অফিসের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাগণ আমার ফসলের মাঠ পরিদর্শন করে আমাকে সুষম সারের ব্যবহার, ফসলের বীজ, ফসলের মৌসুম, পোকামাকড় দমনের পদ্ধতি, বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করায় আমি আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছি। ফলে আমার উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে আমি পরিবার নিয়ে সুখে আছি।
|
|
|
|
জগন্নাথপুর, প্রতিনিধি :
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে এবার বাম্পার বোরো ধান পেয়ে কৃষক-কৃষাণীর মুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের হাসি। উপজেলাজুড়ে চলছে ধান উৎসব। চারদিকে শুধু ধান আর ধান। লক্ষ্যমাত্রার অধিক ফসল পেয়ে কৃষককূলে রীতিমতো আনন্দের বন্যা বইছে। তবে হাইব্রিড ধান বাম্পার হলেও আগাম জাতের উপসী ধান ভাল হয়নি। এতে অধিকাংশ কৃষকরা আনন্দিত হলেও কিছু কৃষকের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। জানাগেছে, এবার জগন্নাথপুর উপজেলার সবচেয়ে বড় নলুয়ার হাওর সহ সকল হাওর-বাওরের ২০ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়। এতে সরকারি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা এক লাখ টনের কম হলেও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এবার শুরু থেকে সকল প্রস্তুতি সন্তোষজনক ছিল। যে কারণে ফলাফল আশা থেকে অনেক বেশি হয়েছে। ধান রোপন থেকে কাটা পর্যন্ত জগন্নাথপুর কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের সব ধরণের পরামর্শ সহ সার্বিক সহযোগিতা করেন। এছাড়া আগাম বন্যা থেকে বোরো ফসল রক্ষায় মানসম্মত বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। অন্য বছরের তুলনায় এবার বাঁধের কাজ ভালো হওয়ায় কৃষকরা সন্তোষ ছিলেন। ধানকাটা শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় ২০০টি ধানকাটার মেশিন হাওরে ছিল। যে কারণে কোন প্রকার শ্রমিক সংকট হয়নি। মেশিন ও শ্রমিক মিলে দ্রুত ধানকাটা শেষ করেন। বৈশাখের শুরুতে ধানকাটার ধুম পড়ে হাওরে। তখন ছিল কাঠফাটা রোদ। ধান কাটা শেষ হলেই রোদে শুকিয়ে দ্রুত গোলায় তোলা সম্ভব হয়েছে। যে কারণে এবার অল্প সময়ের মধ্যেই কৃষকরা তাদের কষ্টার্জিত সোনালি ধান সহজে গোলায় তুলতে পেরেছেন।
সোমবার (১ মে) সরেজমিনে দেখা যায়, নলুয়ার হাওরজুড়ে সব ধান কাটা হয়ে গেছে। হাওরে পড়ে থাকা কাটা ধানের ডগা থেকে ডেমি ধান কুড়িয়ে নিচ্ছেন দরিদ্র পরিবারের মানুষজন। হাওর পারের গ্রাম ভূরাখালি ও দাসনোয়াগাঁও গ্রামের পাশে থাকা খলায় শুধু ধান আর ধান। কৃষক-কৃষাণীরা ধান শুকাতে ও বস্তাবন্দি করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। খলার আশপাশে দেখা যায়, ধান কিনতে আসা ব্যাপারিদের আনাগোনা। তারা কৃষকদের কাছ থেকে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা মণ দরে শুকনো ধান কিনে নিচ্ছেন। কৃষকরা আর্থিক অভাবে পরে ও এবার বেশি ধান পাওয়ায় মনের আনন্দে কিছু ধান বিক্রি করছেন। এর আগে মাড়াই করা কাঁচা ধান ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে হাওরে। যদিও এসব ধান উপজেলা সদরে থাকা ব্যবসায়ীরা কিনছেন ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকা মণ দরে। তাছাড়া সরকার কিনবে ১২০০ টাকায়।
এ সময় দাসনোয়াগাঁও গ্রামের কৃষক সাবেক ইউপি সদস্য রণধীর কান্তি দাস রান্টু বলেন, দরিদ্র কৃষকরা টাকার অভাবে খলা থেকে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা মণ দরে ধান বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীদের কাছে। যদিও পরে বিক্রি করলে বাড়তি দাম পাওয়া যেত। এখন কিছু ধান বিক্রি করে তারা বাজার খরচের টাকা জোগার করছেন। তিনি বলেন, এবার হাইব্রিড ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষককূলে আনন্দের বন্যা বইছে। তাই অল্প ধান বিক্রি করলে কোন সমস্যা হবে না। ভূরাখালি গ্রামের কৃষকনেতা সাইদুর রহমান বলেন, এবার হাইব্রিড ধানের বাম্পার ফলন হলেও আগাম জাতের ধান নষ্ট হয়ে যায়। এতে অধিকাংশ কৃষকরা আনন্দিত হলেও কিছু কুষক হতাশায় ভূগছেন।
জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাওসার আহমেদ বলেন, জগন্নাথপুর উপজেলায় ইতোমধ্যে ৯৩ ভাগ ধানকাটা শেষ হয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে পুরো ধানকাটা শেষ হয়ে যাবে। এবার সবকিছু ভালো হওয়ায় কৃষকদের গোলায় বাম্পার ফলন উঠেছে। এবার ধানের ফলনে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে। ধানের দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। সব মিলিয়ে কৃষকরা খুব খুশি হয়েছেন। এটাই আমাদের স্বার্থকতা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হাইব্রিড ধান বাম্পার হলেও উপসী জাতের ধানে কিছু সমস্যা হয়েছে। যদিও হাইব্রিডের ধানে উপসীর ক্ষতি অনেকটা পূরণ হওয়ায় কৃষকরা সন্তোষ প্রকাশ করছেন।
জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাজেদুল ইসলাম বলেন, এবার সরকারি নির্দেশনা মেনে চলায় কৃষকরাই লাভবান হয়েছেন। এবার শুরু থেকে সকল প্রস্তুতি ছিল ভালো। ধান রোপন থেকে কাটা পর্যন্ত প্রকৃতি অনুকুলে ছিল। অন্য বছরের তুলনায় হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ ছিল সন্তোষজনক। হাওরে ধান কাটার যন্ত্র ও শ্রমিক ছিল পর্যাপ্ত। যে কারণে দ্রুত সময়ের মধ্যেই জমির ধান গোলায় তুলতে পেরেছেন কৃষকরা।
সব মিলিয়ে সরকার সহ সকলের প্রচেষ্টায় এবার রেকর্ড পরিমাণ ফলন কৃষকদের গোলায় উঠেছে। এতে কৃষকদের সাথে আমরাও আনন্দিত।
|
|
|
|
স্বাধীন বাংলা রিপোর্ট : আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির ফলে আট মাসের মাথায় ফের সারের দাম বাড়িয়েছে সরকার। দেশে ইউরিয়া, ডিএপি, টিএসপি ও এমওপি সারের দাম কেজিতে ৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। আজ সোমবার থেকেই এ দাম কার্যকর হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব হোসেন আহমেদ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে সোমবার এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক বাজারে সারের মূল্য বৃদ্ধিজনিত কারণে সারের আমদানি যৌক্তিক পর্যায়ে রাখা এবং এর সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সারের মূল্য পুনর্নির্ধারণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ডিলার পর্যায়ে ইউরিয়া কেজিপ্রতি ২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ টাকা এবং কৃষক পর্যায়ে ২২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৭ টাকা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি ডিলার পর্যায়ে ১৪ টাকা থেকে ডিএপি সারের দাম ১৯ টাকা এবং কৃষক পর্যায়ে ১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে কেজিপ্রতি টিএসপি ডিলার পর্যায়ে ২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ টাকা এবং কৃষক পর্যায়ে ২২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৭ টাকা করা হয়েছে।
এছাড়া ডিলার পর্যায়ে প্রতিকেজি এমওপি ১৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫ টাকা এবং কৃষক পর্যায়ে ১৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে ৩ এপ্রিল সার বিষয়ক জাতীয় সমন্বয় ও পরামর্শক কমিটির সভা শেষে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছিলেন, এ বছর সারের দাম বাড়ানো হবে না।
তিনি বলেছিলেন, গত চার বছরে প্রধানমন্ত্রী সারের দাম এক টাকাও বাড়াননি। অর্থ মন্ত্রণালয় বারবার আমাদের ওপর চাপ দিচ্ছে যে, সারের দাম বাড়ান, আমরা অর্থ যোগাড় করতে পারছি না, আমরা অর্থ আপনাদের দিতে পারছি না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনড়, কিছুতেই তিনি সারের দাম বাড়াবেন না।
সভা শেষে মন্ত্রী আরও বলেন, কৃষক যাতে পর্যাপ্ত সার পায়, সে লক্ষ্যেই আমরা চাহিদা নির্ধারণ করেছি। মার্চে ইউরিয়া সারের চাহিদা বেশি ছিল, তবুও আমরা একটু কমিয়ে চাহিদা নির্ধারণ করেছি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ইউরিয়া সারের চাহিদা ২৭ লাখ টন, টিএসপি সার সাড়ে ৭ লাখ টন ও এমওপি সারের চাহিদা ধরা হয়েছে ৯ লাখ টন। এছাড়া আমাদের ডিএপি সার প্রয়োজন হয় ৫ থেকে ৬ লাখ টন। কিন্তু এ সারের দাম কমানোর জন্য ১৬ লাখ টন চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে।
|
|
|
|
মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : সোনালি হলুদ রঙের মুকুলের মনকাড়া ঘ্রাণ। মৌমাছির দল ঘুরে বেড়াচ্ছে গুনগুন শব্দে। ছোট পাখিরাও মুকুলে বসেছে মনের আনন্দে। এমন দৃশ্যের দেখা মিলেছে মির্জাগঞ্জ মরহুম হযরত ইয়ার উদ্দিন খলিফা (র.) দরবার শরীফের আম বাগানের ছোট বড় গাছে। দৃশ্যটি যে কাউকেই কাছে টানবে।
প্রকৃতিতে শীতের প্রকোপ এবার কিছুটা কম থাকায় বেশ আগেভাগেই মুকুলে মুকুলে ছেয়ে গেছে মির্জাগঞ্জ উপজেলা শহর থেকে শুরু করে গ্রামের ব্যক্তি উদ্যোগে লাগানো আম গাছগুলোতে। মুকুলেরভারে ঝুলে পড়েছে আম গাছের ডালপালা। সেই মুকুলের ম ম গন্ধে বাগান মালিকদের চোখে ভাসছে সফলতার স্বপ্ন। দেশি আমের পাশাপাশি আম্রুপালি, গোপালভোগ, ল্যাংড়া, ফজলি জাতের আম অন্যতম।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, আম বাগানের সারি সারি আম গাছে শোভা পাচ্ছে কেবলই মুকুল। এ যেন হলুদ আর সবুজের মহামিলন। মুকুলে ছেয়ে আছে গাছের প্রতিটি ডালপালা। কোনো কোনো গাছে আমের মুকুল থেকে বেরিয়েছে ছোট ছোট গুটি।
মির্জাগঞ্জ মাজার অকফ এস্টেটের সাধারণ সম্পাদক মো. শহীদুল ইসলাম মল্লিক বলেন, আমাদের এখানে ১০০ টির বেশি আমগাছ আছে, এবার কুয়াশা ও শীত কম থাকায় সবগুলো গাছে মুকুল ভালোভাবে প্রস্ফুটিত হয়েছে। এখন আমের ভালো ফলন পেতে ছত্রাকনাশক প্রয়োগসহ বাগান পরিচর্যা করা হচ্ছে।
উপজেলার ঘটকের আন্দুয়া গ্রামের আব্দুল হানিফসহ আরো কয়েকজন আম চাষি জানান, এবার আগেভাগে মুকুল এসেছে। এখন আমের ভালো ফলন পেতে ছত্রাকনাশক প্রয়োগসহ আম বাগানে পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। আমাদের বাগানের অধিকাংশ গাছ-ই এরইমধ্যে মুকুলে ছেয়ে গেছে। এবার কুয়াশা কম থাকায় মুকুল ভালোভাবে ফুটছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর তারা আমের বাম্পার ফলন পাবেন বলে তারা আশা করছেন।
মির্জাগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আরাফাত রহমান জানিয়েছেন, মির্জাগঞ্জে গাছে গাছে এখন প্রচুর আমের মুকুল। অজস্র মুকুল দেখে বাম্পার ফলনের আশা করা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ডিসেম্বরের শেষ থেকে মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আম গাছে মুকুল আসার আদর্শ সময়। আমের মুকুলের মধ্যে শতকরা ৭০ ভাগ হচ্ছে পুরুষ, ৩০ ভাগ হচ্ছে স্ত্রী, পুরুষ মুকুল ঝড়ে যাবে, আর স্ত্রী মুকুল থেকে আমের গুটি বের হবে এবং প্রতি মুকুলে দুইটি করে আম হলে সেটাই বাম্পার ফলন।
তিনি আরো বলেন, মির্জাগঞ্জে কৃষি বিভাগের মাধ্যমে ১০টি বাগান রয়েছে, আর প্রতিটি বাগানে ৫০-১০০ টির বেশি গাছ রয়েছে। তবে মুকুলের প্রধান শত্রু হচ্ছে কুয়াশা। এখন পর্যন্ত এই অঞ্চলে কুয়াশা কম এবং আকাশে উজ্জ্বল রোদ থাকায় আমের মুকুল সম্পূর্ণ প্রস্ফুটিত হচ্ছে। তবে বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর আমের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।
|
|
|
|
শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি:
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার খুকনি নতুন পাড়া গ্রামের শিক্ষিত বেকার তরুণ আব্দুল আলিম গত বছর তার বাড়ির উঠানে প্রায় ১৫ শতাংশ জায়গায় ৭০ টি বলসুন্দরী জাতের বাই চারা লাগান। এ বছর তার প্রতিটি গাছে গড়ে ১৫ থেকে ২০ কেজি করে বরই ধরেছে। তার গাছ থেকে বিক্রেতারা ৬০ টাকা কেজি ধরে বরই কিনে নিয়ে যাচ্ছে। কৃষক আব্দুল আলিম জানান, তার বাড়ির ঐ জায়গাটুকু পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। একদিন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম তাকে সেই জায়গায় বরই চারা লাগানোর পরামর্শ দেন। পরামর্শ অনুযায়ী তিনি এই বাগান করেছেন। বরই বিক্রি করে তিনি এখন ভালো অবস্থায় আছেন। বরই চাষ শেষ হয়ে গেলে ডাল কেটে দিয়ে সেখানে শাকসবজির চাষ করবেন তিনি।
জমি পরিদর্শনে গিয়ে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার কৃষিবিদ মোঃ এহসানুল হক বলেন, কৃষিতে সবচেয়ে লাভজনক চাষাবাদ হলো ফল বাগান করা। কিন্তু এই এলাকা তুলনামূলক নিচু হওয়ায় সেভাবে ফল বাগান করা যায় না। তবে এই তরুণ কৃষকের বাড়িটি তুলনামূলক বড় হওয়ায় তাকে এই ফল বাগান করার পরামর্শ দেন তিনি। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোহাম্মদ আব্দুস ছালাম বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী তারা প্রতি ইঞ্চি জমিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করার জন্য কৃষকদের কে পরামর্শ দিচ্ছেন। সেই পরামর্শ ও কাজের ফল হচ্ছে এই কুল বাগান।
|
|
|
|
ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:
আম চাষের জন্য আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে এক মাস আগেই গাছে গাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে। এতে চাষিরা কিছুটা আশাবাদী হলেও পরিচর্যা খরচ দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তা কাটছে না তাদের। এ সময় কনকনে ঠান্ডা থাকলেও কৃষি বিভাগের দাবি, একের পর এক শৈত্যপ্রবাহ, দিনব্যাপী ঘন কুয়াশা ও বৃষ্টি না হলে ক্ষতির আশঙ্কা নেই বরং এমন আবহাওয়া আম চাষিদের জন্য আশীর্বাদ।
আম চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর বিলম্বে শীত আসায় এক মাস আগেই মুকুল আসতে আরম্ভ করেছে। মুকুল ফুলে রুপান্তর হওয়ার আগ পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় তেমন একটা ক্ষতি হবে না। অসময়ে বৃষ্টিসহ দুর্যোগ না হলে ভালো ফলন হবে। তবে এ বছর পরিচর্যা খরচ বেড়ে যাওয়ায় আমের নায্য মূল্য না পেলে লোকসানে পড়তে হবে তাদের।
উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বাগান ঘুরে জানা গেছে, সারের উচ্চমূল্য সত্ত্বেয় চাষিরা মাস তিনেক আগেই গাছে সার দেওয়া ও চারপাশের মাটি আলগা করার মাধ্যমে প্রথম দফা পরিচর্যা করেছেন। যেসব বাগানে আগাম মুকুল এসেছে, সেগুলোতে চাষিরা বালাইনাশক এক দফা স্প্রে করেছেন।
আম চাষিরা বলছেন, এ বছর সার ৫০ কেজির বস্তায় ১০০ টাকা, শ্রমিক মজুরি গড়ে ১০০ টাকা, সেচ খরচ গড়ে ২০০ টাকা করে বেড়ে গেছে। সারাদেশে আমের উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন বছর আমের দাম না পেয়ে লোকসানে পড়েছেন চাষিরা। তাঁদের দাবি, গত বছরের মতো আমের দাম পেলে, এ বছর অন্তত লোকসানের হাত থেকে বাঁচবেন তারা।
আমের মুকুল দেখা দিলে সালফার, ৫৫ ইসি এবং মুকুল ফুলে রুপান্তর হলে মেনকোজেন বালাইনাশক দিতে হয়। তবে সালফারের দাম প্রতি ৩০০ গ্রাম প্যাকেট ১৫০ থেকে বেড়ে ১৭০ টাকা, ৫৫ মিলি. বোতলের ৫৫ ইসি ৪৫০ থেকে বেড়ে ৫৫০ টাকা এবং মেনকোজেনের দাম ৫০০ থেকে বেড়ে ৫৮০ টাকা হয়েছে। এদিকে ৫০ কেজি বস্তার ডিএপি সারের দাম ৮০০ থেকে বেড়ে ৯০০ টাকা ও পটাশ সারের দাম প্রতিবস্তা ৭৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৮৫০ টাকা হয়েছে। এক বিঘার একটি বাগানে একবার বালাইনাশক দেওয়ার জন্য শ্রমিক ও মেশিন ভাড়া এক হাজার ৭০০ টাকা থেকে বেড়ে দুই হাজার ৫০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। ঘণ্টায় সেচ খরচ ১২০ টাকা থেকে বেড়ে ১৮০ টাকা হয়েছে।
উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামের আম চাষি রহমত আলী বলেন, গত বছর নিরাপদ আম উৎপাদন কওে দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি করতে ব্যর্থ হওয়ায় স্থানীয় বাজারগুলোতে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিলেন। তবে গত বছর তুলনামূলক দাম বেশি থাকায় লোকসান থেকে বেঁচে যান। শিবনগর গ্রামের আমচাষি মেহেদী হাসান বলেন, পরিচর্যা খরচ দ্বিগুণ হওয়ায় মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ে পরিণত হয়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রুম্মান আক্তার বলেন, উপজেলায় ৪৬০ জমিতে আম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচ হাজার ৫৭৬ মেট্রিক টন। প্রতি হেক্টরে গড় উৎপাদন ধরা হয়েছে এক হাজার ২১২ মেট্রিক টন। চলতি শৈত্যপ্রবাহে আমের ক্ষতি না হয়ে আরও উপকার হচ্ছে। ঘন কুয়াশার পর সূর্যের আলো পড়লে মুকুলের কোনো ক্ষতি হবে না। গত বছর বৃষ্টিসহ দুর্যোগ এসেছিল। এ বছর কোনো দুর্যোগ না এলে আগাম মুকুলের কারণে কোন ক্ষতি হবে না। আম বিদেশে রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হলে চাষিরা আমের ন্যায্য দাম পাবেন।
|
|
|
|
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি:
সুস্বাদু একটি ফসলের নাম কাউন। যা গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। একসময় মুন্সীগঞ্জে ব্যাপকভাবে চাষ হলেও বর্তমানে উন্নত জাত ফসলের প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে হারিয়ে যেতে বসেছে কাউন।
স্বল্প খরচ, পরিবেশবান্ধব, সহজ চাষ পদ্ধতি ও পানি সাশ্রয়ী হওয়ার পরও শুধুমাত্র মানুষের অবহেলা-অনাদরে কাউনের চাষ আর নেই। ফসলটি যেন কালের গর্ভে বিলীন হতে চলেছে। কাউনের বৈজ্ঞানিক নাম ছিটারিয়া ইটালিকা গোত্র-গ্রামিনি। একমাস ধরে অনেক খোঁজাখুঁজির পর কাউন চাষের দেখা মেলে টঙ্গীবাড়ী উপজেলার হাসাইল বানাড়ী ইউনিয়নের পদ্মা নদীর চরাঞ্চলে। কাছে গিয়ে দেখা যায়, বিলুপ্ত প্রায় কাউন ফসলটি তার অস্তিত্ব জানান দিয়ে বলছে, ‘এখনো আমার অস্তিত্ব শেষ হয়ে যায়নি। তবে আমি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে, পারলে আমাকে রক্ষা কর।’
কথা হয় টঙ্গীবাড়ী উপজেলার হাসাইল বানাড়ী ইউপির সম্ভ্রান্ত কৃষক রিয়াজল বেপাড়ী (৫৫) সঙ্গে। তিনি জানান, আগে আমাদের এ অঞ্চলে অনেক জমিতেই কাউন চাষ হতো। এখন আর চোখে পড়ে না। ফসলটির চাষ পদ্ধতি সহজ, স্বল্প খরচ, পানি সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব। শুকনো জমিতে ঝুরঝুরে চাষের পর চৈত্র (এপ্রিল) মাসে বীজ ছিটিয়ে বপন করতে হয়। আষাঢ় (জুলাই) মাসে ফসল ঘরে ওঠে। তিনি আরও জানান, মাঝে একবার নিড়ানি দিলেই হয়, সেচের প্রয়োজন হয় না। ফলন হয় বিঘা প্রতি ১০-১৫ মণ। বাজারে চাহিদা রয়েছে প্রচুর। তাছাড়া কাউনের শীষ ছিঁড়ে নিয়ে অবশিষ্ট গাছ মাটির সঙ্গে মিশিয়ে জৈব সারের ঘাটতি মেটানো সম্ভব। আবার কেউ কেউ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করে। কাউনের ভাত অত্যন্ত সুস্বাদু ও মুখরোচক। জন্ডিস রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। পিঠা-পায়েস তৈরিতে এর কোনো জুড়ি নেই।
হাসাইল বানাড়ী ইউপি সদস্য মোঃ বাবু হাওলাদর জানান, লাভজনক, সুস্বাদু, পরিবেশবান্ধব, স্বল্প খরচে আবাদযোগ্য ও পানি সাশ্রয়ী কাউন নামের দেশি এ ফসলটি যাতে বিলুপ্ত হয়ে না যায় এজন্য সবার এগিয়ে আসা উচিত। দেশীয় জাতের এ ফসলটিকে আমাদের স্বার্থেই সংরক্ষণ করতে হবে। তা না হলে পরবর্তী প্রজন্ম জানতেই পারবে না কাউন নামটি। ছোট দানা বিশিষ্ট শস্যটি এ দেশে গরীবদের খাদ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। প্রায় সব ধরনের মাটিতে কাউনের চাষ করা যায়। তবে পানি দাঁড়ায় না এমন বেলে দোঁআশ মাটিতে এর ফলন ভাল হয়। কাউনের স্থানীয় জাত ছাড়া বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কর্তৃক উদ্ভাবিত ‘তিতাস’ নামের একটি জাত আছে। তিতাস জাত উচ্চ ফলনশীল, আগাম রোগ ও পোকা প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন। তিতাস জাতের গাছ মাঝারি লম্বা, পাতা সবুজ, কান্ড শক্ত। গাছ সহজে নুয়ে পড়ে না। শীষ বেশ লম্বা, মোটা এবং রেশমী। বীজ মাঝারি আকারের। হাজার বীজের ওজন ২.৩-২.৫ গ্রাম। স্থানীয় জাতের চেয়ে ফলন প্রায় ৩০-৩৫% বেশী। জাতটি রবি মৌসুমে ১০৫-১১৫ দিনে এবং খরিফ মৌসুমে ৮৫-৯৫ দিনে পাকে। তিতাস জাতটি গোড়া পচা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন। রবি মৌসুমে তিতাসের ফলন হেক্টর প্রতি ২.০-২.৫ টন। খরিফ মৌসুমে এর ফলন একটু কম হয়। দেশের উত্তরাঞ্চলে অগ্রহায়ণ থেকে মাঘ মাস (মধ্য নভেম্বর থেকে মধ্য ফেব্রুয়ারী) পর্যন্ত বীজ বোনা যায়। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসে বীজ বোনা হয়। কাউনের বীজ ছিটিয়ে ও সারিতে বোনা যায়। ছিটিয়ে বুনলে হেক্টর প্রতি ১০ কেজি এবং সারিতে বুনলে ৮ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। বীজ সারিতে বুনলে সারি থেকে সারির দূরত্ব ২৫-৩০ সে.মি. রাখতে হবে। চারা গজানোর পর ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে সারিতে চারার দূরত্ব ৬-৮ সে.মি. রেখে বাকি চারা তুলে ফেলতে হবে। কাউন চাষে সচরাচর রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা হয় না। তবে অনুর্বর জমিতে হেক্টর প্রতি নিম্নরূপ সার প্রয়োগ করলে ফলন বেশী হয়।
|
|
|
|
শাহরিয়ার কবির, পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধিঃ খুলনার পাইকগাছায় সরিষার আবাদ ভালো হয়েছে। বৃস্টি আর ঘন কূয়াশার সৃস্টি না হওয়ায় সরিষার জন্য অনুকূল পরিবেশ।হলুদ ফুলে ভরে গেছে সরিষা ক্ষেত। ক্ষেতের পর ক্ষেত হলুদের সমারোহ।
সরিষার ফুলে ফুলে মৌমাছির গুঞ্জনে কৃষকের মন আলোড়িত হচ্ছে। মধু আহরনে মৌমাছিরা মেতে উঠেছে। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে হলুদের সমারোহ দেখে চোখ জুড়ে যায়। উপকূলীয় উর্বর জমিতে এ বছর আশানারুপ সরিষা উৎপাদন হবে বলে কৃষকরা আশা করছে।প্রতি ক্ষেতে তরতাজা সবুজ সরিষা গাছগুলোতে হলুদ ফুলে ফুলে ভরে উঠায় কৃষককের মুখে হাসি ফুটেছে।পাইকগাছা উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানাগেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ২৬০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে কৃষকদের সরিষার বীজ ও সার দেওয়ায় এবছর সরিষার আবাদ বেড়েছে।তবে সময় মত মাটিতে জো না আসায় সরিষার আবাদ কিছুটা দেরি হয়েছে।
উপকূলের লবনাক্ত এলাকা চাষাবাদ অনেকটা প্রকৃতি ও আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে। অন্য এলাকায় আগাম মাটিতে জো আসলেও উপকূল এলাকার নিঁচু মাটিতে জো আসতে দেরি হয়। উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪টি ইউনিয়নে সরিষার আবাদ হয়ে থাকে। তাছাড়া চাঁদখালী, গড়ইখালী ও দেলুটিতে সামান্য জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। কৃষকরা বারি সরিষা ১৪,১৫,১৭,১৮ বিনা-৯ ও ৪ জাতের সরিষা আবাদ করেছে।
সরেজমিনে এসব ক্ষেত পরিদর্শন করে দেখা গেছে, ইতিমধ্যে সরিষার ফুল ঝরতে শুর“ করে সরিষার দানা বাধতে শুর“ করেছে।উপজেলার গোপালপুর গ্রামে সরিষা চাষী আব্দুস সামাদ ও সলুয়ার শহিদ জানান, তাদের ক্ষেতের আবাদকৃত সরিষা ভালো হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান, ধান কাটতে দেরি হওয়ায় সরিষা আবাদ করতে কিছুটা দেরি হয়েছে। কৃষকরা যদি আগাম জাতের ধান চাষ করে তাহলে ধান কাঁটার পর সময়মত সরিষা চাষে পূরা সময় পাবে। এ ব্যাপারে কৃষকদের আগাম জাতের ধান চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। তাছাড়া উপকূল এলাকার নিচু জমিতে জো আসে দেরিতে সে জন্য ফসল লাগাতেও দেরি হয়। এবছর উপজেলায় সরিষার আবাদ ভালো হয়েছে।প্রাকৃতিক কোন বিপর্যয়ের সৃষ্টি না হলে সরিষার আশানুর“প ফলন পাওয়া যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
|
|
|
|
দৌলতপুর, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি:
মানিকগঞ্জের চরের জমিতে ফসলের সমাহার, কৃষকের বুকে স্বপ্ন বেধেছে ঘর। দৌলতপুর উপজেলার যমুনা নদীর মাঝখানে চরকাটারী ইউনিয়ন, যে ইউনিয়নের অধিকাংশ লোক কৃষির উপর নির্ভরশীল। দীর্ঘদিন পর নদীর বুকচিরে উঠেছে নতুন চর, চরের নতুন মাটিতে ভালো ফসল ফলানোর আশায় কৃষক তড়িঘড়ি করে চাষাবাদ শুরু করে। এবারের মৌসুমে তারা বোরো ধান, গম, ও সরিষার আবাদ করেছ। সরজমিনে গিয়ে এবারে বোরো ধান ও সরিষা, গম খেত দেখে মনে হচ্ছে কৃষকের দুঃখ কিছুটা হলেও দূর হবে।
এ বিষয়ে চরকাটারীর কৃষক আয়নাল ফকিরের সাথে আলাপ করে যানা যায়, তারা সঠিক সময়ে সরিষা বিজ বুনেছেন, আশা করছেন ভালো ফলন হবে। প্রতি বিঘায় মোটামোটি ৬/৭ মণ সরিষা পাওয়া যাবে। তিনি আরো জানান, এবার চরে রোরো ধানের জমি বেশ ভালো হয়েছে, সবাই বোরো ধান লাগাতে বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন। ভালো ফলনের আশাবাদি সবাই।
আবার গম চাষেও বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছেন এলাকার কৃষকরা। তবে চড়া দামে গম বিজ কিনতে হিমসিম খাওয়ার কথা বলেছেন। প্রতি কেজি গমের বিজ ৯০টাকা থেকে ১০০ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে তাদের। দৌলতপুর উপজেলায় বিজ না পাওয়ায় অসন্তোসও প্রকাশ করেছেন অনেকে।
এ দিকে চরের অনেক জমিতে বোরো ধান চাষে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে অনেক কৃষক, কর্দমাক্ত পলিমাটিতে বোরো ধানের চাষ খুব সুন্দর হয়। বিঘায় বিঘায় চরের জমিতে বোরো ধানের চারা রোপন করতে কুয়াশা ঢাকা ভোরে নদীপার হয়ে ছুটে যায় কৃষক। শীতের সকালে সবাই দলবেধে চলে যায় জমিতে, যেন শীতকে পাত্তাই দিচ্ছেন না তারা। সব কৃষক পাল্লা পাল্লি করে বোরো ধান রোপন করে যাচ্ছে। উৎসবের আমেজে বোরো ধান রোপন করছেন। তাদের চোখে-মুখে কেবলই স্বপ্ন, নেই কোন ক্লান্তি-অবসাদ।
|
|
|
|
ফারুক রহমান, সাতক্ষীরা:
সাতক্ষীরায় এবার সরিষা চাষে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে দিগন্ত জুড়ে মাঠের পর মাঠ এখন হলুদ রঙের সরষে ফুলের ডগায় ফোঁটা ফোঁটা শিশির বিন্দু। হলুদের চাদরে ঢাকা বিস্তৃত ফসলের মাঠ।
হেমন্তের ফসল তুলতে না তুলতেই শীতের আগমনে সরিষার হলুদ ফুলে ভরে গেছে সাতক্ষীরার সব উপজেলার মাঠ। সবুজ বাংলাদেশ। সরষের হলুদ ফুলে ফুলে ভরে গেছে মাঠের পর মাঠ। যেদিকে চোখ মেলানো হয় শুধু হলুদ আর হলুদ। মাঠ ভরা সরিষা ক্ষেতের হলুদ মাঠে এক ফুল থেকে অন্য ফুলে মৌমাছিরা মনের আনন্দে মধু সংগ্রহে ব্যাস্ত। মৌমাছি মধু আহরনে যত ব্যাস্ত সময় পার করবে তত বেশি লাভবান হবে কৃষকরা।
চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরা জেলায় ১৩ হাজার ৭১৬ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর (খামারবাড়ি) থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, চলতি রবি মৌসুমে হেক্টর প্রতি ১.৩৩ মেট্রিক টন ফলনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে জেলার সাত উপজেলায় ১৩ হাজার ৭১৬ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ৪ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে ৫ হাজার ১২০ মেট্রিক টন, কলারোয়ায় ৬ হাজার ৬৫০ মেট্রিক টন জমিতে ৮ হাজার ৭৭৮ মেট্রিক টন, তালায় ৮৯৬ হেক্টর জমিতে ৯৯৭.৫ মেট্রিক টন, দেবহাটায় ১ হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে ১ হাজার ৩৩০ মেট্রিক টন, কালিগঞ্জে ৪৫০ হেক্টর জমিতে ৪৬৫.৫ মেঃটন , আশাশুনি ৩৫৫ হেক্টর জমিতে ৩৩২.৫ মেঃটন ও শ্যামনগর ২৭০ হেঃ জমিতে ২৬৬.৫ মেট্রিক টন। জেলায় ১৩ হাজার ৭১৬ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ হাজার ২৯০ মেট্রিক টন ।
জেলার সাত উপজেলার মধ্যে সাতক্ষীরা সদর, কলারোয়া ও তালা উপজেলার কৃষকরা কম সময়ে অধিক লাভবান ও উচ্ছ ফলনশীল বীজ পাওয়ায় সরিষা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
সরজমিনে সাতক্ষীরা সদর উপজেলাসহ, কলারোয়া, তালা ও দেবহাটা উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে দেখা যায়, কৃষকদের আবাদকৃত জাতের মধ্যে বারি-১৪, ৯, ১৭, ১৮ বিনা- ৪, ৯ ও স্থানীয় জাত উল্লেখ যোগ্য। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি আবাদ হচ্ছে বারি-১৪, ১৭ জাতের সরিষার।
কলারোয়ায উপজেলার গোপিনাথপুর গ্রামের সরিষা চাষি আজিজুর রহমান, আবদস সামাদ, রফিকুল ইসলাম, তালা উপজেলার কৃষক হাফিজুল ইসলাম ও রেজাউল করিম বলেন, চলতি মৌসুমে যদি কোন দূর্যোগ না হয়,ফলন ভাল আসলে, বিঘা প্রতি ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা খরচে ৭ থেকে ৮ মন সরিষা ঘরে তুলতে পারবো। যার বাজার মুল্য ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা। তারা আরো বলেন, আমাদের সাতক্ষীরার মাটি অনেক উর্বর। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে নিয়মিত সাহায্য করলে সরিষা চাষে আমরা অনেক ভাল করবো।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (খামারবাড়ি) সাতক্ষীরা’র উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. মোঃ জামাল উদ্দীন বলেন, এ বছর জেলায় সরিষা আবাদে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছিল ১৩ হাজার ৭১৬ হেক্টর জমি। তবে অল্প সময়ে উচ্চ ফলনশীল সরিষা চাষে অধিক ফলন পাওয়ায় কৃষকরা সরিষা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। ফলে দিন দিন লাভজনক ফসল হিসেবে সরিষার কদর বেড়েছে জেলার কৃষকদের কাছে। অধিক আগ্রহে সরিষা আবাদের ফলে, আশা করছি আমাদের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করবে ।
তিনি বলেন, ফুলের পরাগায়ন বৃদ্ধিতে এ মৌসুমে ৭ হাজার হেক্টর জমিতে মধু সংগ্রহের জন্য ৬ থেকে ৭ হাজার বক্র বসানো হয়েছে। যার ফলে কৃষকরা ১৫ থেকে ২০ ভাগ বেশী ফলন পাবে ।
|
|
|
|
পটুয়াখালী প্রতিনিধি:
সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা এই সোনার বাংলায় দিনদিন কৃষিক্ষেত্র পরিণত হচ্ছে বিপ্লবের কেন্দ্র বিন্দুতে। পাশাপাশি কৃষি কর্মকর্তাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা ও পরামর্শে বদলে যাচ্ছে চাষিদের জীবনমান, বাড়ছে আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন আর কমছে বেকার সমস্যা।
এরই ধারাবাহিকতায় পেঁপে চাষ করে সাবলম্বী এবং আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন একজন শিক্ষিত বেকার, কৃষি উদ্যোক্তা ও কৃষক কাজী সরোয়ার। তিনি পেঁপে চাষের পাশাপাশি একই জায়গায় আম বাগান, মাছ চাষ ও বিভিন্ন প্রকারের শাক-শবজির চাষসহ তৈরি করেছেছেন সমন্বিত খামার। এতে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছেন দশমিনা কৃষি কর্মকর্তা।
পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের গছানী গ্রামের কৃষক কাজী সরোয়ার সরকারিভাবে পেঁপে চারা, সার, কীটনাশক ও সঠিক পরামর্শে দুই একর জমিতে ৫৫০টি পেঁপে গাছ দিয়ে তৈরি করেছেন তার বাগান।
এ বিষয়ে কৃষি উদ্যোক্তা ও কৃষক কাজী সরোয়ার বলেন, যে দেশের মাটিতে মাটিফুড়ে গাছ হয় সেই দেশের মানুষ বেকার বা গরিব থাকতে পারে না। আমার বাড়িতে বা বাগান দেখতে যারাই আসে তাদেরকে আমার বাগান থেকে ফল খাওয়াই এবং আমার মতো এ ধরণের বাগান করতে পরামর্শ দেই। এবছর ফলন অনুযায়ী পেঁপে বিক্রি করতে পারতাম কমপক্ষে ৭০ টন। কিন্তু ঘুর্ণিঝড় সিত্রাং এ কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে, পেঁপের সাথে সাথে ফসল সহ ৮০-৯০ হাজার টাকা খরচ করলেও প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকা বিক্রি করা যাবে।
কৃষি উদ্যোক্তা কাজী সরোয়ারের সফলতা দেখতে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসছে তার বাড়িতে এবং উৎসাহিত হয়ে অনেকেই খামার করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
কাজী আনোয়ার, আরিফ হোসেন, মিরাজ হোসেন ও রফিক হোসেনসহ একাধিক ব্যক্তিরা জানান, সরোয়ার কাজীর কৃষি বাগান দেখে আমরা মুগ্ধ হয়েছি। এখানকার পেঁপে, আমগুলোও অনেক মিষ্টি। আমাদেরও ইচ্ছে আছে এধরণের বাগান করার।
এ বিষয়ে দশমিনা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাফর আহমেদ বলেন, সরোয়ার কাজী একজন ভালো কৃষক। আমি তার বাগান ভিজিট করেছি, ক্ষেতের প্রদর্শনীটা সে ভালোভাবেই করেছে। আমাদের সাপোর্টের পাশাপাশি সে নিজেও কিছু বীজ কিনে বড় আকারের প্রদর্শনী করেছে। আশা করা যায় সে বেশ লাভবান হবে। তিনি আরও জানান, অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হওয়া যায় এমন ফসল চাষাবাদের জন্য কৃষকদের উদ্ধুদ্ধ করার পাশাপাশি আর্থিকভাবে তাদেরকে সহযোগীতা করছি।
|
|
|
|
স্বাধীন বাংলা রিপোর্ট : বোরো ধানের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য প্রায় ১৭০ কোটি টাকার প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। সারা দেশের ২৭ লাখ কৃষক এ প্রণোদনার আওতায় বিনামূল্যে বীজ ও সার পাচ্ছেন।
মঙ্গলবার কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, তিনটি ধাপে বা ক্যাটাগরিতে দেওয়া হচ্ছে এসব প্রণোদনা। হাইব্রিড ধানের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য প্রায় ৮২ কোটি টাকার প্রণোদনার আওতায় ১৫ লাখ কৃষকের প্রত্যেককে দেওয়া হচ্ছে বিনামূল্যে ২ কেজি ধানবীজ।
উচ্চফলনশীল জাতের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য প্রায় ৭৩ কোটি টাকার প্রণোদনার আওতায় উপকারভোগী কৃষক ১২ লাখ। এতে একজন কৃষক এক বিঘা জমিতে চাষের জন্য প্রয়োজনীয় ৫ কেজি বীজ, ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার বিনামূল্যে পাচ্ছেন।
এছাড়া সমলয়ে বা কৃষিযন্ত্র ব্যবহারের সুবিধার্থে একটি মাঠে একই সময়ে ধান লাগানো ও কাটার জন্য ১৫ কোটি টাকার প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এর আওতায় ৬১টি জেলায় ১১০টি ব্লক বা প্রদর্শনী স্থাপিত হবে। প্রতিটি প্রদর্শনী হবে ৫০ একর জমিতে, খরচ হবে ১৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
এতে আরও বলা হয়, কৃষি মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত বাজেট কৃষি পুনর্বাসন সহায়তা খাত থেকে এ প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে এসব প্রণোদনা বিতরণ কার্যক্রম চলমান আছে। এরইমধ্যে গড়ে প্রায় ৫০ শতাংশ প্রণোদনা বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে।
|
|
|
|
|
|
|