ফরিদপুর প্রতিনিধি : তিল একটি এক বর্ষজীবী উদ্ভিদ। এটি প্রধানত তেল জাতীয় উদ্ভিদ। এর বীজ থেকে তেল তৈরী করা হয়ে থাকে। খাবার তেল হিসেবে এটি স্বাস্থ্যকর। তিল থেকে খাজা তৈরী হয় যা খুবই মুখোরচক ও সুস্বাদু একটি খাবার। এছাড়া তিল থেকে নাড়ু তৈরী করা হয়ে থাকে। প্রসাধনী শিল্পেও এখন তিল তেলের ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তিল চাষের জন্য জমি একটু উঁচু হতে হবে। তিল গাছ জলাবদ্ধতা একদম সহ্য করতে পারে না। তাই জমিতে নে জল জমে না থাকে এমন জমি বাছাই করতে হবে। সাধারণত বেলে দোআঁশ বা দোআঁশ মাটি তিল চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। সময় নির্ধরণ তিল চাষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
সব মৌসুমেই তিল চাষ করা যেতে পারে। তবে মাঘ মাসের মাঝামাঝি থেকে ফাল্গুন মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত তিল বপন করা উত্তম। তিল বীজ বপন করার আগে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। জমিতে পর্যাপ্ত রস থাকতে হবে তাহলে বীজ বপন করার পর বীজ পচে যাবে না। বীজ দুই ভাবে বপন করা যায় ছিটিয়ে বা সারিতে বপন করে। ছিটিয়ে বপন করলে বীজ ও শুকনো বালু একত্রে মিছিয়ে নিতে হবে তাহলে বীজ ফেললে সমান দূরত্বে বীজ পরে। সারিতে বপন করলে এক সারি থেকে অন্য সারির দূরত্ব হবে ২০ থেকে ২৫ সেঃমিঃ, এক গাছ থেকে আরেক গাছের দূরত্ব হবে ৫ থেকে ১০ সেঃমিঃ। বীজ ছিটিয়ে বপন করার ক্ষেত্রে প্রতি হেক্টরে ৭/৮ কেজি বপন করা যাবে। আর সারিতে বপন করার ক্ষেত্রে ৬/৭ কেজি বপন করা যাবে। উন্নত ফলন পেতে হলে জমিতে একটি সেচ ও আগাছা নিধন করতে হবে। প্রতি একরে সাধারণত ৪০/৫০ কেজি ইউরিয়া, ৩০/৪০ কেজি টিএসপি, ২৫/৩০ কেজি এমপি ও ৩০/৪০ কেজি জিপসাম প্রয়োগ করতে হবে। সাধারণত তিল গাছের সবশুটি একত্রে পাকে না নিচ থেকে পাকা শুরু হয়ে থাকে। তারপর আস্তে আস্তে উপরের দিকে পাঁকা শুরু করে। তাই সব শুটি একত্রে পাঁকার জন্য অপেক্ষা করা যাবে না। যখন শুটি পাকা শুরু হবে তখন থেকেই সংগ্রহ শুরু করতে হবে।
বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চলের তিল বীজ সংরক্ষণ ও বিপনন প্রতিষ্ঠানের মালিক সুকুমার সাহা বলেন, বৃষ্টির আগেই যদি তিল সংরক্ষণ করা হয় এবং মাটির উপর দিয়ে তিল স্তুপ করা যায় ও বৃষ্টির সময় তিলের স্তুপ পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা যায় এছাড়া নেট/ ত্রিপল বা পলিথিনের উপর তিল মারাই করা যায় তাহলে কৃষক অধিক মুনাফা ঘরে তুলতে পারবে। তিল সাধারণত ৩ প্রকার হয়ে থাকে লাল তিল, কালো তিল, হলুদ বা বাদামি তিল। লাল তিল প্রতি মন ২৫০০ টাকা, কালো তিল প্রতি মন ৩০০০ টাকা এবং হলুদ বা বাদামি তিল প্রতি মন ২৫০০ টাকা দরে বিক্রি হয়ে থাকে। চাষাবাদ খরচ অতি নগন্য।
বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চলের কৃষকদের অল্প খরচে অধিক মুনাফা ঘরে তোলার লক্ষ্যে ভালো বীজ সংগ্রহ করে সঠিক নিয়মে তিল সংরক্ষণ করা হলে একটি কৃষি অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটানো সম্ভব। ফরিদপুর সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মোঃ আবুল হোসেন মিয়া বলেন, ফরিদপুর সদর উপজেলার সকল ইউনিয়নেই তিল চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা বিরাজমান। সঠিক সময়ে ভালো তিল বীজ বপন ও সঠিক পদ্ধতিতে পাকা তিল সংগ্রহের মাধ্যমে কৃষক অধিক মুনাফা লাভ করতে পারবেন।