|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
প্রস্তুত শোলাকিয়া ঈদগাহ; ৪ স্থরের নিরাপত্তা
এ. এম উবায়েদ : গত দুটি বছর করোনার কারণে ঈদ জামাত হতে পারেনি শোলাকিয়ায়, শত বছরের ঈদ জামাতে ঘটে ছন্দপতন। ঐতিহাসিক শোলাকিয়ার ঈদ মানেই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় লাখো মুসল্লির জামাত। এবার ১৯৫ এবার ঈদে লাখো মুসল্লির নামাজ আদায়ের মাধ্যমে মুখরিত হতে যাচ্ছে শোলাকিয়ার মাঠ। ইতিমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। প্রায় দুইশত বছরের ইতিহাসে কখনও বন্ধ থাকেনি শোলাকিয়ার ঈদ জামাত। তবে, করোনার কারণে একটানা দু’বছর জামাত অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, দূর-দূরান্তের মুসল্লিদের যাতায়াতের জন্য এবারও শোলাকিয়া স্পেশাল দু’টি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থাও করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। জামাত শুরু প্রতিবছরের ন্যায় সকাল ১০টায়। এতে ইমামতি করবেন বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলেমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ।
শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটি জানিয়েছে, এবার দেওয়া হচ্ছে চার স্থরের নিরাপত্তা। নিরাপত্তার বিষয়গুলো দেখতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্টরা বারবার পরিদর্শন করছেন এবং বসছেন দফায় দফায় বৈঠকে। ২০১৬ সালে শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার কথা মাথায় রেখে নেওয়া হয়েছে চার স্থরের নিরাপত্তাব্যবস্থা। প্রত্যেক মুসল্লিকে বেশ কয়েকবার হতে হবে তল্লাশির সম্মুখীন। নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হবে মাঠসহ পুরো এলাকা। পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, এবার অনেক বেশি লোক হবে শোলাকিয়ায়। তাই সব বিষয় মাথায় রেখে এবার আমরা বাড়তি নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। নামাজের সময় পাঁচ প্লাটুন বিজিবি, বিপুলসংখ্যক পুলিশ, র্যাব, আনসার সদস্যের সমন্বয়ে নিরাপত্তা বলয়ের পাশাপাশি মাঠে সাদা পোশাকে নজরদারি করবে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। থাকবে ফায়ার ব্রিগেড, ছয়টি অ্যাম্বুল্যান্সসহ মেডিক্যাল টিম, পুলিশের কুইক রেসপন্স টিম তৈরি থাকবে, পুরো মাঠ বেশ কয়েকবার মাইন ডিটেক্টর দিয়ে সুইপিং করা হবে, ঢাকা থেকে বম্ব ডিসপোজাল টিম আসবে, এ ছাড়া মাঠসহ প্রবেশপথগুলোতে থাকছে সিসি ক্যামেরা ও ওয়াচ টাওয়ার। আর আকাশে উড়বে পুলিশের ড্রোন ক্যামেরা। অতিরিক্ত নিরাপত্তাব্যবস্থায় বিরক্ত না হয়ে সবাইকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান পুলিশ সুপার। কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, শোলাকিয়ায় উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। করোনা পরিস্থিতির কারণে গত দুই বছর জামাত না হলেও এবার জামাত হবে। মাঠে থাকবে কঠোর নিরাপত্তা বলয়। তাই টুপি, জায়নামাজ ও মাস্ক ছাড়া আর কিছুই মাঠে নেওয়া যাবে না। ব্যাগ, মোবাইল ফোন ও ছাতাও বাড়িতে রেখে যেতে হবে। এ সময় তিনি নিরাপদ ও উৎসবমুখর পরিবেশে নামাজ আয়োজনে সবার সহযোগিতা চান। জনশ্রতি আছে, ১৮২৮ সালে এই মাঠে ঈদের জামাতে সোয়া লাখ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করেছিলেন। সেই থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখিয়া’। যা এখন শোলাকিয়া নামেই পরিচিত। রেওয়াজ মোতাবেক, জামাত শুরুর আগে ছোড়া হয় বন্দুকের ৬টি ফাঁকা গুলি। নামাজের ৫ মিনিট আগে ৩টি, ৩ মিনিট আগে ২টি এবং ১ মিনিট আগে ১টি গুলি ছুড়ে নামাজ শুরুর সংকেত দেওয়া হয়।
|
এ. এম উবায়েদ : গত দুটি বছর করোনার কারণে ঈদ জামাত হতে পারেনি শোলাকিয়ায়, শত বছরের ঈদ জামাতে ঘটে ছন্দপতন। ঐতিহাসিক শোলাকিয়ার ঈদ মানেই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় লাখো মুসল্লির জামাত। এবার ১৯৫ এবার ঈদে লাখো মুসল্লির নামাজ আদায়ের মাধ্যমে মুখরিত হতে যাচ্ছে শোলাকিয়ার মাঠ। ইতিমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। প্রায় দুইশত বছরের ইতিহাসে কখনও বন্ধ থাকেনি শোলাকিয়ার ঈদ জামাত। তবে, করোনার কারণে একটানা দু’বছর জামাত অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, দূর-দূরান্তের মুসল্লিদের যাতায়াতের জন্য এবারও শোলাকিয়া স্পেশাল দু’টি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থাও করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। জামাত শুরু প্রতিবছরের ন্যায় সকাল ১০টায়। এতে ইমামতি করবেন বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলেমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ।
শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটি জানিয়েছে, এবার দেওয়া হচ্ছে চার স্থরের নিরাপত্তা। নিরাপত্তার বিষয়গুলো দেখতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্টরা বারবার পরিদর্শন করছেন এবং বসছেন দফায় দফায় বৈঠকে। ২০১৬ সালে শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার কথা মাথায় রেখে নেওয়া হয়েছে চার স্থরের নিরাপত্তাব্যবস্থা। প্রত্যেক মুসল্লিকে বেশ কয়েকবার হতে হবে তল্লাশির সম্মুখীন। নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হবে মাঠসহ পুরো এলাকা। পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, এবার অনেক বেশি লোক হবে শোলাকিয়ায়। তাই সব বিষয় মাথায় রেখে এবার আমরা বাড়তি নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। নামাজের সময় পাঁচ প্লাটুন বিজিবি, বিপুলসংখ্যক পুলিশ, র্যাব, আনসার সদস্যের সমন্বয়ে নিরাপত্তা বলয়ের পাশাপাশি মাঠে সাদা পোশাকে নজরদারি করবে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। থাকবে ফায়ার ব্রিগেড, ছয়টি অ্যাম্বুল্যান্সসহ মেডিক্যাল টিম, পুলিশের কুইক রেসপন্স টিম তৈরি থাকবে, পুরো মাঠ বেশ কয়েকবার মাইন ডিটেক্টর দিয়ে সুইপিং করা হবে, ঢাকা থেকে বম্ব ডিসপোজাল টিম আসবে, এ ছাড়া মাঠসহ প্রবেশপথগুলোতে থাকছে সিসি ক্যামেরা ও ওয়াচ টাওয়ার। আর আকাশে উড়বে পুলিশের ড্রোন ক্যামেরা। অতিরিক্ত নিরাপত্তাব্যবস্থায় বিরক্ত না হয়ে সবাইকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান পুলিশ সুপার। কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, শোলাকিয়ায় উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। করোনা পরিস্থিতির কারণে গত দুই বছর জামাত না হলেও এবার জামাত হবে। মাঠে থাকবে কঠোর নিরাপত্তা বলয়। তাই টুপি, জায়নামাজ ও মাস্ক ছাড়া আর কিছুই মাঠে নেওয়া যাবে না। ব্যাগ, মোবাইল ফোন ও ছাতাও বাড়িতে রেখে যেতে হবে। এ সময় তিনি নিরাপদ ও উৎসবমুখর পরিবেশে নামাজ আয়োজনে সবার সহযোগিতা চান। জনশ্রতি আছে, ১৮২৮ সালে এই মাঠে ঈদের জামাতে সোয়া লাখ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করেছিলেন। সেই থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখিয়া’। যা এখন শোলাকিয়া নামেই পরিচিত। রেওয়াজ মোতাবেক, জামাত শুরুর আগে ছোড়া হয় বন্দুকের ৬টি ফাঁকা গুলি। নামাজের ৫ মিনিট আগে ৩টি, ৩ মিনিট আগে ২টি এবং ১ মিনিট আগে ১টি গুলি ছুড়ে নামাজ শুরুর সংকেত দেওয়া হয়।
|
|
|
|
মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ ইখতিয়ার আরিফী
সদাকায়ে ফিতর সম্পর্কিত হাদীসগুলো পর্যালোচনা করলে এ বিষয়ে মোট পাঁচ প্রকার খাদ্যের বর্ণনা পাওয়া যায়। সেগুলো হলো- যব, খেজুর, পনির, কিসমিস ও গম। এ পাঁচ প্রকারের মধ্যে যব, খেজুর, পনির ও কিসমিস দ্বারা সদকায়ে ফিতর আদায় করতে চাইলে প্রত্যেকের জন্য এক ‘সা’ দিতে হবে। আর গম দ্বারা আদায় করতে চাইলে আধা ‘সা’ দিতে হবে। এটা হল ওজনের দিক দিয়ে তফাত।
আর মূল্যের দিক থেকে তো পার্থক্য রয়েছে। যেমন- (ক) আজওয়া (উন্নতমানের) খেজুরের মূল্য প্রতি কেজি এক হাজার টাকা হলে একজনের সদকায়ে ফিতর দাঁড়ায় ৩ হাজার ২ শত ছাপ্পান্ন টাকা। (খ) মধ্যম ধরণের খেজুর যার মূল্য প্রতি কেজি ৩শ’ টাকা হলে একজনের সদকায়ে ফিতর দাঁড়ায় ৯৭৭ টাকা। (গ) কিসমিস প্রতি কেজি ২৩০ টাকা করে হলে একজনের সদকায়ে ফিতর দাঁড়ায় ৭৪৮ টাকা। (ঘ) পনির প্রতি কেজি ৫শ’ টাকা করে ধরা হলে একজনের সদকায়ে ফিতর দাঁড়ায় ১৬২৮ টাকা। (ঙ) গম প্রতি কেজি ৩৫ টাকা হিসাবে ধরা হলে একজনের সদকায়ে ফিতর দাঁয়ায় ৫৭ টাকা।
হাদীসে এ ৫টি দ্রব্যের যেকোনোটি দ্বারা ফিতরা আদায়ের সুযোগ দেওয়া হয়েছে যেন মুসলমানগণ নিজ নিজ সামর্থ ও সুবিধা অনুযায়ী এর যেকোনো একটি দ্বারা তা আদায় করতে পারে। এখন লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, সকল শ্রেণীর লোক যদি সবচেয়ে নিম্ন মূল্য-মানের দ্রব্য দিয়েই নিয়মিত সদকা ফিতর আদায় করে তবে হাদীসে বর্ণিত অন্য চারটি দ্রব্যের হিসেবে ফিতরা আদায়ের উপর আমল করবে কে? আসলে এক্ষেত্রে হওয়া উচিত ছিল এমন যে, যে ব্যক্তি উন্নতমানের আজওয়া খেজুরের হিসাবে সদকা ফিতর আদায় করার সামর্থ রাখে সে তা দিয়েই আদায় করবে। যার সাধ্য পনিরের হিসাবে দেওয়ার সে তাই দেবে। এর চেয়ে কম আয়ের লোকেরা খেজুর বা কিসমিসের হিসাব গ্রহণ করতে পারে। আর যার জন্য এগুলোর হিসাবে দেওয়া কঠিন সে আদায় করবে গম দ্বারা। এটিই উত্তম নিয়ম। এ নিয়মই ছিল নবী, সাহাবা-তাবেঈন ও তবে তাবেঈনের স্বর্ণযুগে। এ পর্যন্ত কোথাও দুর্বল সূত্রে একটি প্রমাণ মেলেনি যে, স্বর্ণযুগের কোনো সময়ে সব শ্রেণীর সম্পদশালী সর্বনিম্ন মূল্যের দ্রব্য দ্বারা সদকা ফিতর আদায় করেছেন। এখানে এ সংক্রান্ত কিছু বরাত পেশ করা হচ্ছে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বোত্তম দান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি ইরশাদ করেন- ‘দাতার নিকট যা সর্বোৎকৃষ্ট এবং যার মূল্যমান সবচেয়ে বেশি’। -সহীহ বুখারী, কিতাবুল ইতক ৩/১৮৮; সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান বাব আফযালুল আমল ১/৬৯ সাহাবায়ে কেরাম-এর আমল (ক) হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. বলেন, আমরা সদকা ফিতর আদায় করতাম এক ‘সা’ খাদ্য দ্বারা অথবা এক ‘সা’ যব অথবা এক ‘সা’ খেজুর, কিংবা এক ‘সা’ পনির বা এক ‘সা’ কিসমিস দ্বারা। আর এক ‘সা’-এর ওজন ছিল নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ‘সা’ অনুযায়ী। -মুয়াত্তা মালেক পৃ.১২৪; আল ইসতিযকার, হাদীস ৫৮৯, ৯/৩৪৮। এ হাদীসে রাসূলের যুগে এবং সাহাবাদের আমলে সদকা ফিতর কোন কোন বস্তু দ্বারা আদায় করা হত তার সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে।
(খ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. সারা জীবন খেজুর দ্বারাই সদকা ফিতর আদায় করেছেন। তিনি একবার মাত্র যব দ্বারা আদায় করেছেন। -আলইসতিযকার, হাদীস নং ৫৯০,৯/৩৫৪ ইবনে কুদামা রা.আবু মিজলাযের বর্ণনা উল্লেখ করে বলেন, এ বর্ণনা দ্বারা বোঝা যায় যে, সাহাবায়ে কেরাম অধিকাংশই যেহেতু খেজুর দ্বারা ফিতরা আদায় করতেন তাই ইবনে ওমর রা. সাহাবাদের তরীকা অবলম্বন করতে সারা জীবন খেজুর দ্বারাই আদায় করেছেন। এ প্রসঙ্গে ইবনে ওমরের ভাষ্য হল- ‘সাহাবীগণ যে পথে চলেছেন আমিও সে পথেই চলতে আগ্রহী।’
এবার দেখা যাক মাযহাবের ইমামগণ উত্তম সদকা ফিতর হিসেবে কোনটিকে গ্রহণ করেছেন:
উত্তম সদকা ফিতর: ইমাম শাফেয়ীর মতে উত্তম হল হাদীসে বর্ণিত বস্তুর মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট ও সর্বোচ্চ মূল্যের দ্রব্য দ্বারা সদক দেওয়া। অন্য সকল ইমামের মতও এমনই। ইমাম মালিক রাহ. এর নিকট খেজুরের মধ্যে সবচেয়ে উন্নত খেজুর ‘আজওয়া’ খেজুর দেওয়া উত্তম। আজওয়া খেজুরের ন্যূনতম মূল্য ১০০০-১২০০ টাকা প্রতি কেজি। ইমাম আহমদ রাহ. এর নিকট সাহাবায়ে কেরামের অনুসরণে খেজুর দ্বারা ফিতরা আদায় করা ভালো। -আলমুগনী ৪/২১৯; আওজাযুল মাসালিক ৬/১২৮
ইমাম আবু হানীফা রাহ. এর নিকটেও অধিক মূল্যের দ্রব্যের দ্বারা ফিতরা আদায় করা ভালো। অর্থাৎ যা দ্বারা আদায় করলে গরীবের বেশি উপকার হয় সেটাই উত্তম ফিতরা। সাহাবায়ে কেরামের যুগে আধা ‘সা’ গমের মূল্য এক সা খেজুরের সমপরিমাণ ছিল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে মদীনাতে গমের ফলন ছিল না বললেই চলে। পরবর্তীতে হযরত মুআবিয়া রা. এর যুগে ফলন বৃদ্ধি পেলেও মূল্য ছিল সবচেয়ে বেশি। একাধিক বর্ণনায় এসেছে যে, সেকালে আধা ‘সা’ গমের মূল্য এক সা খেজুরের সমপরিমাণ ছিল। হযরত মুআবিয়া রা. এর যুগে গমের ফলন বৃদ্ধি পেলে আধা ‘সা’ গমকে সদকা ফিতরের অন্যন্য খাদ্যদ্রব্যের এক ‘সা’র মতো গণ্য করা হত। -আলইসতিযকার ৯/৩৫৫
ইবনুল মুনযির বলেন- সাহাবীদের যুগে যখন গম সহজলভ্য হল তখন তারা আধা ‘সা’ গমকে এক ‘সা’ যবের সমতুল্য গণ্য করতেন। -ফাতহুল মুলহিম ৩/১৫; আওজাযুল মাসালিক ৬/১৩ তাহলে বুঝা যায়, হযরত মুআবিয়া রা. এর যুগে গম দ্বারা সদকা ফিতর আদায়ের প্রচলন বেড়েছিল। এর কারণ হল যে, তখন গমই ছিল সর্বোৎকৃষ্ট ও সর্বোচ্চ মূল্যমানের খাদ্য। এ সময় হযরত ইবনে ওমর সাহাবাদের অনুকরণে খেজুর দ্বারাই সদকা ফিতর আদায় করতেন। তখন তাঁকে আবু মিজলায রাহ. বললেন- ‘আল্লাহ তাআলা তো এখন সামর্থ্য দিয়েছেন। আর গম খেজুরের চেয়ে অধিক উত্তম। অর্থাৎ আপনার সামর্থ রয়েছে বেশি মূল্যের বস্তু সদকা করার। তবুও কেন খেজুর দ্বারা তা আদায় করছেন। উত্তরে তিনি বলেছিলেন, আমি সাহাবাদের অনুকরণে এমন করছি।
যাক আমাদের কথা ছিল, সাহাবায়ে কেরাম গম দ্বারা এজন্যই সদকা ফিতর আদায় করতেন যে, এর মূল্য সবচেয়ে বেশি ছিল। হাদীসে পাঁচ প্রকারের খাদ্য দ্রব্যের মধ্যে বর্তমানে গমের মূল্য সবচেয়ে কম। তাহলে এ যুগে সকল শ্রেণীর জন্য এমনকি সম্পদশালীদের জন্যও শুধুই গম বা তার মূল্য দ্বারা সদকা ফিতর আদায় করা কী করে সমীচীন হতে পারে? বড়ই আশ্চর্য! পুরো দেশের সকল শ্রেণীর লোক বছর বছর ধরে সর্বনিম্ন মূল্যের হিসেবে ফিতরা আদায় করে আসছে। মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত সকলেই ফিতরা দিচ্ছে একই হিসাবে জনপ্রতি ৫৫/৬০ টাকা করে। মনে হয় সকলে ভুলেই গেছে যে, গম হচ্ছে ফিতরার ৫টি দ্রব্যের একটি (যা বর্তমানে সর্বনিম্ন মূল্যের)। সুতরাং আমরা এদেশের ফিতরা আদায়কারী ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রতি আহবান জানাচ্ছি তারা যেন যার যার সামর্থ অনুযায়ী হাদীসে বর্ণিত দ্রব্যগুলোর মধ্যে তুলনামূলক উচ্চমূল্যের দ্রব্যটির হিসাবে ফিতরা আদায় করেন। পনির, কিসমিস, খেজুর কোনোটির হিসাব যেন বাদ না পড়ে। ধনীশ্রেণীর মুসলিম ভাইদের জন্য পনির বা কিসমিসের হিসাবে ফিতরা আদায় করা কোনো সমস্যাই নয়। যেখানে রমযানে ইফতার পার্টির নামে লক্ষ লক্ষ টাকা বয় করা য়, ঈদ শপিং করা হয় অঢেল টাকার, সেখানে কয়েক হাজার টাকার ফিতরা তো কোনো হিসাবেই পড়ে না। যদি এমনটি করা হয় তবে যেমনিভাবে পুরো হাদীসের উপর মুসলমানদের আমল প্রতিষ্ঠিত হবে এবং একটি হারিয়ে যাওয় সুন্নত যিন্দা করা হবে, তেমনি এ পদ্ধতি দারিদ্র্যবিমোচনে অনেক অবদান রাখবে। গরীব-দুঃখীগণের মুখেও হাসি ফুটে উঠবে ঈদের পবিত্র দিনে। আরেকটি আবেদন ইসলামিক ফাউন্ডেশন, দেশের সম্মানিত মুফতীগণ, মাশায়েখ হযরাত ও দারুল ইফতাগুলোর কাছে, তারা যেন সদকাতুল ফিতর এর পরিমাণ ঘোষণা দেওয়ার সময় হাদীসে বর্ণিত সকল দ্রব্যের হিসাবেই পৃথক পৃথকভাবে বলে দেন এবং মানুষকে যথাসম্ভব উচ্চমূল্যের ফেতরা আদায়ে উৎসাহিত করেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফীক দিন।
- ইমাম ও খতীব, নারিন্দা, ওয়ারী, ঢাকা
|
|
|
|
জামিল আহমেদ : আজ পবিত্র শবে কদর বা লাইলাতুল কদর । বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হবে শবে কদরের রজনী। যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশে সারা দেশে পবিত্র শবে কদর পালিত হবে।
মহান আল্লাহ তায়ালা লাইলাতুল কদরের রাতকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন। হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও এ রাতের ইবাদত উত্তম। এই রাতে আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষিত হয়। পবিত্র এই রাতে ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে আমরা মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি। অর্জন করতে পারি তার অসীম রহমত, নাজাত, বরকত ও মাগফেরাত। পবিত্র শবেকদরের রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আল্লাহর নৈকট্য ও রহমত লাভের আশায় ইবাদত বন্দেগি করবেন।
পবিত্র রমজান মাসে লাইলাতুল কদরে পবিত্র আল কোরআন নাজিল হয়েছিল। তাই মহান আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া আদায়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মসজিদসহ বাসা-বাড়িতে এবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন। এ রাতে মুসলমানরা নফল নামাজ আদায়, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আসকার, দোয়া, মিলাদ মাহফিল ও আখেরি মোনাজাত করবেন।
পবিত্র লাইলাতুল কদর উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ দেশবাসীসহ সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে আন্তরিক মোবারকবাদ ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, পবিত্র লাইলাতুল কদর মানবজাতির জন্য অত্যন্ত বরকত ও পুণ্যময় রজনী। এ রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ আল কুরআন লাইলাতুল কদরে নাযিল হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি কদর রাতে কুরআন নাযিল করেছি। তাই মুসলিম উম্মাহর নিকট শবে কদরের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফজিলত অত্যধিক। আমাদের ক্ষণস্থায়ী জীবনে হাজার মাসের চেয়েও বেশি ইবাদতের নেকি লাভের সুযোগ এনে দেয় এই রাত। এই মহিমান্বিত রজনী সকলের জন্য ক্ষমা, বরকত, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ বয়ে আনুক মহান আল্লাহর দরবারে এ মোনাজাত করি।
মো. আবদুল হামিদ বলেন, ইসলাম শান্তি ও কল্যাণের ধর্ম। মানুষের ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির জন্য ইসলামের সুমহান আদর্শ মানুষের পাথেয়। এমন একটি সময়ে পবিত্র রমজান মাস পালন করা হচ্ছে, যখন বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে করোনা মহামারি, সংঘাত, যুদ্ধবিগ্রহ, অভাব-অনটনসহ বিভিন্ন কারণে হাজার হাজার মানুষ দুর্বিসহ দিন অতিবাহিত করছে।
পবিত্র শবে কদরের রজনীতে দেশের অব্যাহত অগ্রগতি ও কল্যাণ কামনা করে পরম করুণাময় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণীতে বলেন, লাইলাতুল কদর এক মহিমান্বিত রজনী। সিয়াম সাধনার মাসের এই রাতে মানবজাতির পথ নির্দেশক পবিত্র আল কোরআন পৃথিবীতে নাযিল হয়। পবিত্র কোরআনের শিক্ষা আমাদের পার্থিব সুখ-শান্তির পাশাপাশি আখিরাতের মুক্তির পথ দেখায়।
তিনি বলেন, মহান আল্লাহ তায়ালা লাইলাতুল কদরের রাতকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন। হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও এ রাতের ইবাদত উত্তম। এই রাতে আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষিত হয়। পবিত্র এই রাতে ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে আমরা মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি। অর্জন করতে পারি তাঁর অসীম রহমত, নাজাত, বরকত ও মাগফেরাত।
সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসুন আমরা সকলে এই মহিমান্বিত রজনীতে মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে বিশেষভাবে ইবাদত ও দোয়া প্রার্থনা করি; যেন আল্লাহ বাংলাদেশের জনগণসহ বিশ্ববাসীকে করোনা সংক্রমণ থেকে মুক্তি দেন।
পবিত্র এই রজনীতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ও মুসলিম জাহানের উত্তরোত্তর উন্নতি, শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করেন তিনি।
পবিত্র শবে কদর উপলক্ষে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ উপলক্ষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে রাতব্যাপী ওয়াজ মাহফিল, ধর্মীয় বয়ান ও আখেরি মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন সহকারী জনসংযোগ কর্মকর্তা শায়লা শারমীন জানান, পবিত্র শবে কদর উদযাপন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বাদ যোহর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে ‘পবিত্র শবে কদরের ফজিলত ও তাৎপর্য শীর্ষক আলোচনা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা এহসানুল হক।
জাতীয় মসজিদসহ দেশের সব মসজিদেই তারাবির নামাজের পর থেকে ওয়াজ মাহফিল, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন থাকবে।
পবিত্র শবে কদর উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি রেডিওগুলোতে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে। এ ছাড়া সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করা হবে।
|
|
|
|
স্বাধীন বাংলা প্রতিবেদক : রমজান মাস হিজরি ক্যালেন্ডারের নবম মাস। এই মাসে রোজা রাখা ঈমানদারদের জন্য বাধ্যতামূলক। লাইলাতুল কদর রমজান মাসের শেষ দশ দিনের বেজোড় রজনীর একটিতে সংঘটিত হয়।
শবে কদরকে কুরআনে লাইলাতুল কদর বলা হয়েছে। এই লাইলাতুল কদর সাধারণ দিনের হাজার রজনীর চেয়ে উত্তম। কুরআনের সূরা আল কদরে শবে কদরের উল্লেখ রয়েছে।
এই সূরার অনুবাদ হলো: “নিশ্চয়ই আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি কদরের রজনীতে এবং আপনি কদরের রজনী সম্পর্কে কি জানেন? কদরের হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। ফেরেশতারা এবং রূহ (জিবরাঈল) তাদের পালনকর্তার অনুমতিক্রমে সকল নির্দেশ নিয়ে নেমে আসে। এই রজনী শান্তির রজনী, ঊষার আবির্ভাব পর্যন্ত অব্যাহত থাকে” (৯৭ : ১-৫)।
কুরআন অনুসারে, আল্লাহর ফেরেশতারা লাইলাতুল কদরে খুব বেশি অবতরণ করে। এর মানে কদরের রজনীতে আল্লাহ প্রত্যেক নর-নারীকে ফেরেশতাদের সঙ্গী হওয়ার সুযোগ দেন। তার উচিত ফেরেশতাদের কাছ থেকে এমন আধ্যাত্মিক গুণ লাভ করা যার ফলে তার হৃদয় ফেরেশতাসুলভ অনুভূতিতে পরিপূর্ণ হবে, যেমন, খোদাভীতি এবং মানুষের কল্যাণের অনুভূতি। তাকে নেতিবাচক আবেগ ও জাগতিকতার উর্ধ্বে উঠে আল্লাহর প্রকৃত সন্ধানী হতে হবে। শবে কদর উপলক্ষে এই ধরনের হৃদয় ও মনের মানুষ আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহের হকদার হবে।
হাদিস থেকে জানা যায়, হজরত আয়েশা (রা.) রাসুলুল্লাহকে (সা.) জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘শবে কদর পেলে আমি কী দোয়া করব?’ তিনি বলেছিলেন যে, ‘তুমি বল, “আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফু’উন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি” (সুনান আত তিরমিযী, হাদীস নং ৩৫১৩) অর্থাৎ আল্লাহ, ‘আমাকে ক্ষমা করুন, আপনি ক্ষমাকে ভালবাসেন, সুতরাং আমাকে ক্ষমা করুন।’
এই হাদিসটি বলে যে, শবে কদরে একজন ব্যক্তির সবচেয়ে বেশি যে জিনিসটি চাওয়া উচিত তা হলো মানুষের মৃত্যুর পরে অনন্ত জীবনের সাফল্যের জন্য আগ্রহী হওয়া, সে যেন আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, ‘হে আল্লাহ, আমার ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দিন, আমাকে চিরস্থায়ী জীবনে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করুন, জান্নাতের বাগানে স্থান দান করুন।’
সুরা কদরের শেষ আয়াত অনুযায়ী শবে কদর শান্তির রজনী। যে পুরুষ বা মহিলা শবে কদরের বরকত পাবেন, তার হৃদয় শান্তি ও নিরাপত্তার অনুভূতিতে ভরে উঠবে, তার চিন্তা হবে শান্তির চিন্তা, তার কথাবার্তা হবে শান্তিপূর্ণ, তার চরিত্র হবে শান্তিপূর্ণ, তার চলার পথ শান্তিপূর্ণ হবে। তার সমগ্র ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠবে শান্তিপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। এর মাধ্যমে অন্যরা যা তার থেকে পাবে তা হল শান্তি ও নিরাপত্তা।
হাদিসে বর্ণিত আছে যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘আমি রমজানের শেষ রাতে ইতিকাফে ছিলাম, যখন আমার উপর লাইলাতুল কদরের জ্ঞান অবতীর্ণ হয়। লাইলাতুল কদরের সময় সম্পর্কে জানাতে আমি মসজিদ থেকে বের হয়েছিলাম, কিন্তু সেই সময় মদীনার দুই মুসলমান পরস্পরের সাথে ঝগড়া করছিল, যার পর লাইলাতুল কদরের জ্ঞান উঠিয়ে নেওয়া হয়’ (فتلاحی رجلان من المسلمین، فرفعت) (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ১৯১৯)।
শবে কদরের বিশেষ বরকতে শরিক হওয়ার জন্য কী কী প্রয়োজন তা এই হাদিস থেকে বোঝা যায়। ব্যাপারটা হলো একজন মানুষের মধ্যে লড়াই ঝগড়ার মনোভাব যেন না থাকে, তার হৃদয় ঘৃণার মতো নেতিবাচক আবেগ থেকে মুক্ত হয়, তার মন সম্পূর্ণ ইতিবাচক চিন্তায় মগ্ন হয়। যেসব পুরুষ ও নারীর ভেতরে এই ধরনের ইতিবাচক ব্যক্তিত্ব রয়েছে তারা শবে কদরের বরকতে অংশ পাবে।
ধৈর্য ইসলামী জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ। ধৈর্য ব্যতীত কেউ ইসলামের উপর চলতে পারে না— আত্মার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধৈর্য, শয়তানের প্রলোভনের বিরুদ্ধে ধৈর্য, মানুষের অত্যাচারের বিরুদ্ধে ধৈর্য, জান-মালের ক্ষতির বিরুদ্ধে ধৈর্য, অসুখের বিরুদ্ধে ধৈর্য, বঞ্চনা, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধারণ করা ইত্যাদি। রোজাদার, যে লাইলাতুল কদরের বিশেষ নিয়ামতের অংশ পেতে চায়, তার উচিত নিজের মধ্যে ধৈর্যের গুণাবলি গড়ে তোলা।
লাইলাতুল কদর উপলক্ষে আল্লাহ তার বার্ষিক সিদ্ধান্ত নেন। তাই এই রাতকে জিকির ও দোয়া, ইবাদত ও তেলাওয়াতের রাত হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
এর অর্থ এই যে এই উপলক্ষে প্রত্যেক পুরুষ ও মহিলার যতটা সম্ভব আল্লাহর দিকে ফিরে আসা উচিত এবং যথাসম্ভব প্রার্থনা করা উচিত, যাতে সে আল্লাহর বার্ষিক সিদ্ধান্তগুলোতে, তার রহমতে, বেশি বেশি অংশ পেতে পারে। সে আল্লাহর দৃষ্টিতে সর্বোচ্চ পুরস্কারের যোগ্য হতে পারে।
লেখক : মওলানা ওয়াহিদুদ্দিন খান, অনুবাদ: মহিউদ্দিন মণ্ডল ।
|
|
|
|
স্বাধীন বাংলা ডেস্ক : হাজারো ব্যস্ততায় কাটে আমাদের প্রতিদিন প্রতিক্ষণ। অন্দরমহল কিংবা বাইরের দুনিয়া, সব দিকেই রাখতে হয় সমান নজরদারি। আর এ ক্ষেত্রে যখন ঘরনির কথা আসে তখন তা যেন আরও কয়েকগুণ দায়িত্বের সঙ্গে যুক্ত হয় সব কাজের সঙ্গে। পরিবারের সবার স্বাস্থ্যের প্রতি তাকেই রাখতে হয় সব সময় সজাগ দৃষ্টি। তবে এত কিছুর মাঝে নিজের প্রতি যত্ন নিতেই যেন সব কার্পণ্য। অন্যদিকে আর কিছু দিনের মধ্যে শুরু হতে যাচ্ছে সিয়াম সাধনার পবিত্র মাস মাহে রমজান। তাই এ সময় খাবার-দাবারের প্রতি যেমন খেয়াল রাখা জরুরি তেমনি নিজের ক্ষেত্রেও যত্ন আবশ্যক। এ ক্ষেত্রে অনেকেই বাইরে যাওয়ার সময়টুকুও পান না। তারা খুব সহজেই হাতের কাছের কিছু টুকিটাকি জিনিস দিয়ে কীভাবে নিজের যত্ন রাখতে পারবেন পুরো রমজান মাসজুড়ে তাই জানিয়েছেন হার্বস আয়ুর্বেদিক স্কিনিকের স্বত্বাধিকারী শাহিনা আফরিন মৌসুমী।
রোজার এ সময়ে আমাদের শরীরে সবচেয়ে বেশি পানি শূন্যতা দেখা দেয়। যার ফলে ত্বকে র্যাশ, লালচে ভাব কিংবা ব্রণের মতো নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাই এ সময় ত্বকের যত্ন আবশ্যক। অন্যদিকে রোজার সময় গরমের কারণেও ত্বকে র্যাশ কিংবা ব্রণের সমস্যা দেখা দেয়। তাই ত্বক বুঝে নিতে হবে তার সঠিক যত্ন। এ ক্ষেত্রে যাদের ত্বক রুক্ষ তাদের ত্বকের রুক্ষতার মাত্রা আরও বেড়ে যায়। নাকের পাশের চামড়া ওঠা, মুখের ত্বকে র্যাশ কিংবা লালচে ছোপ ছোপ ভাব দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে বুঝতে হবে ত্বক ডিহাইড্রেড হয়ে গিয়েছে। তাই ত্বককে হাইড্রেড করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে ত্বকের যত্নে বেসন খুব দ্রুত কাজ করে। যে কোনো ধরনের ত্বকের ক্ষেত্রেই বেসন ব্যবহার করা যায়। তবে যাদের ত্বক রুক্ষ তারা হাফ কাপ বেসন, হাফ কাপ চালের গুঁড়া আর এক চা চামচ কর্পূর মিশিয়ে কাচের বোতলে রেখে দিলে আর তা দিয়ে মুখ ধুয়ে নিলে মুখের লোমকূপে থাকা ময়লা যেমন পরিষ্কার হবে তেমনি ত্বক হাইড্রেড হতে শুরু করবে। এ মিশ্রণটি মুখে দুই থেকে তিন মিনিট রেখে ম্যাসাজ করে ধুয়ে নিলেই হবে। এতে ত্বক উজ্জ্বল হবে পাশাপাশি ত্বকের মলিনতা দূর হবে। অন্যদিকে মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার করে নেওয়ার পর প্যাক ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে তিন টেবিল চামচ কুসুম গরম দুধে দুই থেকে তিনটি খেজুর, বিচি ফেলে দিয়ে ভিজিয়ে রেখে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিয়ে তাতে ময়দা মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে নিতে হবে। এ প্যাকটি পনেরো থেকে বিশ মিনিট রেখে ধুয়ে নিতে হবে।
গরমের এ সময়ে যাদের ত্বক তৈলাক্ত তাদের ক্ষেত্রেও সমানভাবে ত্বকের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে ক্লিঞ্জার হিসাবে হাফ কাপ বেসন, হাফ কাপ চালের গুঁড়া আর এক চা চামচ কর্পূর মিশিয়ে অল্প অল্প করে পরিমাণে নিয়ে ব্যবহার করতে হবে। আর প্যাক হিসাবে পুদিনা পাতার রস সঙ্গে কয়েক ফোঁটা গ্লিসারিন আর মুলতানি মাটি একসঙ্গে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে নিতে হবে। এ গ্লিসারিন ত্বককে করবে নরম আর ফ্রেশ রাখবে লম্বা সময় পর্যন্ত।
অন্যদিকে যাদের ত্বক মিশ্র সঙ্গে ব্রণের সমস্যাও হচ্ছে তারা দুই চা চামচ গোলাপ জল, কয়েক ফোঁটা গ্লিসারিন আর এক কিংবা দুইটি লবঙ্গ, ময়দা মিশিয়ে ভালো করে পেস্ট করে নিতে হবে। এ মিশ্রণটি মূলত প্যাক হিসাবে ব্যবহার করতে হবে এতে ত্বক পর্যাপ্ত ময়েশ্চারাইজার পাবে। এর বাইরেও অনেকের ত্বকে ছোপ ছোপ আকারে লালচে ভাব দেখা দেয় তারা ত্বকে তিন কাপ পুদিনা পাতা, তিন কাপ তুলসী পাতা সঙ্গে ছয় কাপ পানি মিশিয়ে ভালো করে জাল দিয়ে নির্যাস বের করে নিতে হবে। এ মিশ্রণটি বরফ আকারে ত্বকে ব্যবহার করলে এ সমস্যা থেকে খুব সহজেই সমাধান পাওয়া সম্ভব হবে।
গরমের এ সময়ে ত্বকের পাশাপাশি চুলের রুক্ষতাও সমানভাবে বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে যাদের চুলের ত্বক কিংবা স্কাল্প অনেক বেশি ঘামে তারা দুটি লেবুর খোসা পেস্ট করে সঙ্গে হাফ ইঞ্চি আদা টুকরা মিশিয়ে পুরো চুলের স্কাল্পে অ্যাপ্লাই করতে হবে। এতে ঘাম কমে যাবে সঙ্গে ফাংগাল ইনফেকশন থেকেও সুরক্ষিত থাকবে স্কাল্প। এ মিশ্রণটি এক ঘণ্টা রেখে এর পরে শ্যাম্পু করে নিতে হবে। অন্যদিকে যাদের চুল অনেক বেশি রুক্ষ তাদের চুলে একটি পাকা কলা ভালো করে পেস্ট করে সঙ্গে একটি পেঁয়াজ, কয়েক ফোঁটা গ্লিসারিন ভালো করে মিশিয়ে স্কাল্প এবং চুলে অ্যাপ্লাই করতে হবে। ঘণ্টাখানেক রেখে শ্যাম্পুর সঙ্গে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে চুল ধুয়ে নিলেই সঙ্গে সঙ্গে পেয়ে যাবেন ঝরঝরে আর খুশকি মুক্ত স্বাস্থ্য উজ্জ্বল চুল।
|
|
|
|
স্বাধীন বাংলা প্রতিবেদক : ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান জানিয়েছেন, এ বছর বাংলাদেশ থেকে ৫৭ হাজার ৮৫৬ জন হজে যেতে পারবেন। ধর্ম প্রতিমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বুধবার এ তথ্য জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আনোয়ার হোসাইন। মহামারি করোনার কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো গত দুইবার বাংলাদেশ থেকে কেউ হজ করতে পারেননি।
এ বছর ১০ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লিকে হজের অনুমতি দিচ্ছে সৌদি আরব।তবে এ বছর ৬৫ বছরের কম বয়সী এবং করোনার পূর্ণ ডোজ টিকা নিয়েছেন এমন লোকজনই কেবল হজের সুযোগ পাবেন।
সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গত শনিবার এ ঘোষণা দিয়েছে। খবর আনাদোলুর।
একইসঙ্গে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করোনার টিকার ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করেছে। করোনার দুই ডোজ নেওয়ার পরও বিমানে উঠার ৭২ ঘণ্টা আগে আরটিপিসিআর টেস্ট করতে হবে। করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট সঙ্গে রাখতে হবে।
২০১৯ সালে সারা বিশ্ব থেকে ২৫ লাখ মানুষ পবিত্র হজ পালনের সুযোগ পেয়েছিলেন। করোনার কারণে ২০২০-২১ সালে সীমিত আকারে শুধুমাত্র সৌদিতে অবস্থানরত সীমিত সংখ্যক মানুষ হজ পালনের অনুমতি পান। আর গেল বছর ৬০ হাজার মানুষ পবিত্র পালন করার সুযোগ পান।
|
|
|
|
বগুড়া প্রতিনিধি:
তানযীমুল উম্মাহ ফাউন্ডেশন আয়োজিত বগুড়ায় অনুষ্ঠিত হলো ১১তম হিফযুল কুরআন অ্যাওয়ার্ড ও কুরআন উৎসব। বুধবার সকাল আটটা থেকে শুরু হয়ে দিনব্যাপি চলে ওই আয়োজন। অনুষ্ঠানে তানযীমুল উম্মাহ ফাউন্ডেশের পরিচালিত রাজশাহী, রংপুর ও বগুড়া অঞ্চলের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ১০০ জন হাফিজকে অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। সেই সাথে হাফেজ শিক্ষার্থীদের পিতা মাতাদেরও পুরস্কার প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন তানযীমুল উম্মাহ ফাউন্ডেশের চেয়ারম্যান হাবীবুল্লাহ মুহাম্মদ ইকবাল, প্রধান অতিথি ছিলেন, তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুহাম্মাদ আবু ইউসুফ, মহিমাগঞ্জ আলিয়া কামিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ড. মুহা. মোখলেছুর রহমান, অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, তানযীমুল উম্মাহ ফাউন্ডেশের সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, কুরআনের মাহফিল হচ্ছে দুনিয়ার সব চেয়ে দাবি মাহফিল। এই মাহফিলে হাফিযদের অংশগ্রহণ আরো প্রাণবন্ত করে তুলেছে। তানযীমুল উম্মাহ ফাউন্ডেশনের এমন মহৎ উদ্যোগ আলেম ওলামাদের উৎসাহ প্রদান করবে। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্যরাখেন, তানযীমুল উম্মা ফাউন্ডেশনের পরিচালক হাবীবুল্লাহ আল আমী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আতোয়ার রহমান, সরকারি মোস্তাফাবিয়া কামিল মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ মাও. নজরুল ইসলাম সিদ্দীকি, সরকারি আজিজুল হক কলেজের সহযোগী অধ্যপক আব্দুল লতিফ, নূর মসজিদের সাবেক খতিব মাও. আলমগীর হোসেন, শাহিদীয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা হাফিজুর রহমান, সুমী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর হোসেন আশরাফী, অনুষ্ঠানে তানযীমুল উম্মা শিল্পিগোষ্ঠির শিশু শিল্পিদের পরিবেশনায় ইসলামী সংগীত পরিবেশন করা হয়।
|
|
|
|
স্বাধীন বাংলা প্রতিবেদক : পবিত্র কাবার কিসওয়াহ (গিলাফ) তৈরিতে অংশ নেয়ার গৌরব অর্জন করেছেন পাকিস্তানি অভিনেত্রী ও টিভি উপস্থাপক শায়েস্তা লোধী। এরকম একটি পুণ্যের কাজ করতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করছেন তিনি।
সোমবার পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডন শায়েস্তা লোধীর ইউটিউবের এক ভিডিওর সূত্রে এ তথ্য জানায়।
ওই ভিডিওতে লোধী জানান, কাবার কিসওয়াহ তৈরিতে অংশ নেয়া এমন একটি উত্তম কাজ, যার সম্পর্ক আল্লাহ ও বান্দার সাথে। এখানে মানুষকে জানানো মুখ্য উদ্দেশ্য নয়, তবে আমি যে সৌভাগ্য অর্জন করলাম-তা থেকে আপনারা বঞ্চিত হন-আমি তা চাইনি। এজন্য আমার কিসওয়াহ তৈরিতে অংশ নেয়া আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম।
তিনি বলেন, ওমরাহ পালনের পর আমার কাছে ফোন আসলো যে, আমি কাবার কিসওয়াহ তৈরির কাজে অংশগ্রহণের জন্য নির্বাচিত হয়েছি। তখন আমি সীমাহীন পুলক অনুভব করলাম। আসলে গত ৫-৬ বছর যাবত আমি কাবার গিলাফ তৈরির স্বপ্ন দেখছিলাম। অবশেষে তা পূর্ণ হলো।
সংক্ষিপ্ত ওই ভিডিওতে শায়েস্তা লোধীকে দেখা যায়, তিনি কিসওয়াহ কারখানায় ঘুরে ঘুরে তা তৈরির প্রক্রিয়া দেখছেন। একইসাথে পুরনো দিনে কোন মেশিন দিয়ে গিলাফ তৈরি করা হতো, কাবা শরিফের পুরনো দরজা ও মসজিদে নববী মিউজিয়ামও তিনি দর্শকদের দেখান।
|
|
|
|
নিজস্ব প্রতিনিধি করোনার কারণে গত দুই বছর কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে এবার শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে ঈদুল ফিতরের ১৯৫তম জামাত অনুষ্ঠিত হবে। বুধবার কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
মাঠ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলমের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, উপ-সচিব ও স্থানয়ি সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (সদর) ও মাঠ কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, র্যাব-১৪ কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের কমান্ডার মেজর শাহরিয়ার মাহমুদ খান, পৌর মেয়র মাহমুদ পারভেজ প্রমুখ।
সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবার ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানে ঈদুল ফিতরের ১৯৫তম জামাত অনুষ্ঠিত হবে। জামাত শুরু হবে সকাল ১০টায়। জামাতে ইমামতি করবেন ইসলামিক চিন্তাবিদ বাংলাদেশে ইসলাহুল মুসলিহিন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ফাউন্ডেশনের সাবেক পরিচালক মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। তার বিকল্প হিসেবে বড় বাজার মসজিদের খতিব মাওলানা মো. সোয়েবকে নামাজ পড়ানোর জন্য মনোনীত করা হয়েছে।
১৮২৮ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম জামাতে সোয়া লাখ মুসল্লির সমাগম ঘটেছিল। সোয়া লাখ থেকেই এ মাঠের নাম শোলাকিয়া হয়েছে। দিন দিন এর প্রচারণা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতি বছরই মুসল্লির সমাগম বাড়ছে।
|
|
|
|
চাঁদপুর প্রতিনিধি :
সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে চাঁদপুরের ৪০টি গ্রামের মানুষ পবিত্র রমজানের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেছেন। আজ শনিবার (০২ এপ্রিল) ভোর রাতে সেহরি খেয়ে তারপর পবিত্র রোজা পালন শুরু করেছেন।
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের সাদ্রা দরবার শরীফের পীর মরহুম মাওলানা ইসহাক (রহ.) এর অনুসারীরা বিগত ১৯২৮ সাল থেকে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে এই রমজান এবং দুটি ঈদ পালন করছেন।
আগাম রোজা শুরু হওয়া গ্রামগুলোর মধ্যে রয়েছে- হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা, সমেশপুর, অলীপুর, বলাখাল, মনিহার, জাক্নি, প্রতাপপুর, বাসারা। ফরিদগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীপুর, কামতা, গল্লাক, ভূলাচোঁ, সোনাচোঁ, উভারামপুর, উটতলী, মুন্সিরহাঁট, মূলপাড়া, বদরপর, আইটপাড়া, সুরঙ্গচাইল, বালিথুবা, কাইতপাড়া, নূরপুর, সাচনমেঘ, শোল্লা, হাঁসা, গোবিন্দপুর। মতলব উত্তর উপজেলার দশানী, মোহনপুর, পাঁচানী এবং শাহরাস্তি ও কচুয়া উপজেলার কয়েকটি গ্রামের অংশবিশেষ।
|
|
|
|
আবুজার বাবলা, শ্রীমঙ্গল:
শ্রীমঙ্গলের নতুন বাজারের ‘কাজী ট্রাংক’ চেনেন না সিলেট অঞ্চলে এমন মানুষের সংখ্যা নেহায়েতই কম। ৮০-৯০ দশকে এ অঞ্চলের ঘরে ঘরে জনপ্রিয় এ কাজী ট্রাংক দেখা যেত। কাজী আশরাফ আলী ছিলেন কাজী ট্রাংক ফ্যক্টরীর সত্বাধিকারী। কাজী আশরাফ এর মৃত্যু আর প্লাস্টিক পণ্যের আধিপত্যে স্টীলের তৈরি ‘কাজী ট্রাংক’ এর সেই কদর না থাকলেও মরহুম কাজী সাহেবের সুযোগ্য সন্তানরা পৈতৃক সেই ব্যবসা এখনও আঁকড়ে ধরে আছেন। ছেলে মেয়েরা এখন দেশ বিদেশ প্রতিষ্ঠিত। বাবার মৃত্যুর পর সন্তানরা বাবা স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে পিছপা হননি। মূলতঃ বাবার স্মৃতি ধরে রাখতই কাজী আশরাফ আলী জামে মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা করেন তারা।
শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরত্বে সিঁন্দুরখান রোডের টিকরিয়া, বি-চক এলাকায় ১৩ শতাংশ জায়গাজুড়ে এর অবস্থান। ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী এ মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করা হলেও নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০২১ সালে। শেষ হয় চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি। টার্কিশ স্থাপত্য শৈলী অনুসরণে নির্মিত অনিন্দ্য সুন্দর এই মসজিদ নির্মাণ কাজে গম্বুজ তৈরিতে মসজিদে নববীর আদলে অলংকৃত করা হয়েছে। সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে এর নির্মাণ ব্যয় হয় প্রায় এক কোটি টাকা। আধুনিক ডিজাইনের টাইলস, বিদেশী পেইন্টের বৈচিত্র্য, রাতের আলোকসজ্জা, চোখ জুড়ানো খিলানে নিপুণ হাতের কারুকাজ সবমিলে এক অসাধারণ সৌন্দর্য দেখে যে কারোই প্রাণ জুড়াবে। এরই মধ্যে স্থানীয় ও আশেপাশের এলাকার মানুষের মধ্যে মসজিদটি নিয়ে আগ্রহের সৃষ্টি করেছে। অনেকে মসজিদটিতে একবারের জন্য নামাজ পড়ার আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন।
হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ মিয়া মসজিদ নির্মাণের নক্সা করেন। শ্রীমঙ্গলের সংবাদকর্মী আহমদ এহসান সুমন বলেন, মসজিদটার কথা অনেক শুনেছি। আশা আছে- নিজের চোখে একবার দেখার এবং জুমা’র নামাজ আদায় করে আসবো।
মরহুম কাজী আশরাফ আলীর লন্ডন প্রবাসী কন্যা কাজী আয়েশা জানান, বাবার স্মৃতি ধরে রাখতে আমরা কারো অমুদান ছাড়াই পারিবারিক উদ্যোগে মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেছি। মসজিদটি কেন্দ্র করে ভবিষ্যতে মাদ্রাসা ও এতিমখানা প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা আছে।
কাজী সাহেবের জৈষ্ঠ্য পুত্র কাজী ট্রাংক এর বর্তমান কর্ণধার কাজী জাহাঙ্গীর বলেন, কাজী ট্রাংক এর ব্যবসা পরিচালনার পাশাপাশি আব্বা একজন ধর্মপ্রাণ মানুষ ছিলেন। দরিদ্র মানুষের সাহায্য করতেন। অত্র অঞ্চলে তাঁর অনেক সুনাম ছিলো। বাবার মৃত্যুর পর আমরা ভাই-বোন মিলে বাবার নামে এই মসজিদ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেই। আল্লাহ তায়া’লার অশেষ মেহেরবানীতে এ বছর মসজিদটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। এখন প্রতিদিনই দূর দুরান্ত থেকে লোকজন এর সৌন্দর্য দেখতে আসছেন।
কাজী আশরাফ আলী জামে মসজিদের জন্য একটি পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। শ্রীমঙ্গলের বিশিষ্ট সমাজসেবক মো. ইউসুব আলী সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানা গেছে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার প্রত্যন্ত বি -চক টিকরিয়া গ্রামে অবস্থিত নান্দনিক সৌন্দর্যের এই মসজিটি এক নজর দেখার জন্য দুর দুরান্ত থেকে অনেক মানুষ আসতে দেখা গেছে।
|
|
|
|
আতিকুল ইসলাম, সিলেট: আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে সিলেট জেলার তিন দিনব্যাপী ইজতেমা। শনিবার বেলা সাড়ে ১১ টায় শুরু হয় মোনাজাত। ১৫ ব্যাপী স্থায়ী ওই মোনাজাতে হাজার মুসুল্লির কান্নার রব উঠে। আল্লাহ হুমা আমিন ধ্বনিতে পুরো ইজতেমা মাঠ প্রকম্পিত হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন সৈয়দ ওয়াসিফ।
মোনাজাতে বিশ্বের মুসলমানদের হেফাজত ও শান্তি কামনা করা হয়। শান্তি কামনা করা হয়েছে দেশের মানুষের। ইসলাম ধর্মের আক্কিদা মেনে চলার তওফিক দেয়ার জন্যে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা হয়। মুসলমান জাতিকে ক্ষমা করে দেয়ার জন্যে আল্লাহর রহমত কামনা করা হয়। সমস্ত কবরবাসীর জান্নাত কামনা করে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করা হয়।
মোনাজাতের আগে বয়ানে ইসলাম ধর্মের দ্বীন যথাযথ পালনের জন্যে মুসলিম জাতির প্রতি আহ্বান জানানো হয়। সময় মত ধর্মীয় বিধান মেনে চলাই পরকালে নাজাত পাওয়ার একমাত্র পথ বলে উল্লেখ করা হয়। সকল অন্যায় ও অবিচার থেকে নিজেদেরকে বাচিঁয়ে রাখার আহ্বান করা হয়। আমাদের প্রিয় নবীর পথ অনুসরণ করার জন্যে ইসলাম ধর্মের প্রতিটি মানুষের প্রতি অনুরোধ করা হয়।
গত বৃহস্পতিবার ফজরের নামাজের পরপরই আম বয়ানের মধ্য দিয়ে সিলেট জেলার তিনদিন ব্যাপী ইজতেমা শুরু হয় শহরতলির খাদিমপাড়া ইউনিয়নের কল্লগ্রামে। লক্ষাধিক ধর্মপ্রাণ মুসুল্লী ইজতেমার মাঠে ফজরের নামাজ আদায় করে আম বয়ানে অংশ গ্রহণ করেন।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন ইজতেমা মাঠে ১৫ টি জামাত বিভিন্ন সেক্টর নিয়ে কাজ করেছেন গত তিনদিন ধরে। এসব জামাত হচ্ছে বিদ্যুত জামাত, পানির জামাত, মাইকের জামাত, টয়লেটের জামাত, এস্তেকবালি জামাত, পাহাড়াদারি জামাত, মাসলাহালের জামাত, তাশকিলের জামাত, মিম্বরের জামাত, মুকব্বিরের জামাত, জুরনেয়ালী জামাত, মাঠের জামাত, নামাজের কাতের কাটার জামাত, পুকুরের ঘাট বাধার জামাত ও এত্তেসালের জামাত।
এই ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন মক্কা-মদীনার জামাত। এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জামাতও অংশ নিয়েছেন এই ইজতেমায়। মক্কা-মদীনা ও বিদেশি মেহমানরা ইজতেমার মাঠে সংরক্ষিত এলাকায় আছেন।
ইজেতমার ঘোষণা আসার পর এক মাস ধরে এই ইজতেমার মাঠ তৈরিতে সংশ্লিষ্ট প্রায় ১২০০ স্বেচ্ছাসেবী অবিরাম কাজ করেছেন। সিলেট জেলাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে ওইসব স্বেচ্ছাসেবী অংশ গ্রহণ করেছেন মাঠ তৈরিেেত। মাঠ তৈরির কাজ শেষ হয়েছে বুধবারে।
ইজতেমা শুরু প্রস্তুতি নেয়ার পর থেকে স্থানীয় বংশিধর গ্রামের গিয়াস কবিরাজ সার্বক্ষণিক অবস্থান করেছেন মাঠে। মাঠের মুসুল্লিদের সাথে নানান কাজে অংশ নিয়েছেন তিনি। গিয়াস কবিরাজ জানান, ইজতেমার মাঠে আল্লাহর নেয়ামত শান্তি বিরাজ করেছে সব সময়। এখান এলে আর ঘরে ফিরে যেতে মন চাইতো না। তাই পুরোটা সময় ইজতেমার মাঠে ব্যয় করার চেষ্টা করেছি। তিনি জানান তিনদিনব্যাপী ইজতেমার কারণে ওই এলাকায় ইসলাম ধর্মের শান্তি ব্যাপকভাবে প্রচার হয়েছে। স্থানীয়রা উপকৃত হয়েছেন ইজতেমার বয়ানে।
|
|
|
|
মহাবিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব রাসুল (সাঃ) এর আগমন উপলক্ষে আল্লাহর শুকরিয়ার্থে শরীয়ত সম্মতভাবে খুশি উদযাপন করাই হলো সুন্নি আক্বিদা। মিলাদুন্নবী মুসলমানদের জন্য এমন একটি আনন্দোৎসব, যার কোনো তুলনা হয় না। ‘ঈদ’ সম্পর্কে বিশ্বখ্যাত আরবি অভিধান আল-মুনজিদের ৫৩৯ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, কোন কোন মর্যাদাবান ব্যক্তি বা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সমবেত হওয়ার দিন বা স্মৃতিচারণের দিবসই ঈদ। কাওয়াইদুল ফিকহ্-এর ৩৯৬ পৃষ্ঠায় ঈদকে ‘ঈদ’ বলার কারণ হচ্ছে- প্রতিবছর আনন্দ নিয়ে তা ফিরে আসে। ‘মিলাদ’ সম্পর্কে আল-মুনজিদের ৯১৮ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, ‘মিলাদ’ অর্থ জন্ম সময়, যা কারো ঐ দিবসে পরবর্তীকালে শুকরিয়া হিসাবে পালন করা হয়। আল্লামা ইবনে মানযুর (রহঃ) তাঁর প্রসিদ্ধ অভিধান ‘লিসানুল আরব’ লিখেছেন, ‘মিলাদ’ মানে যে সময়ে সে জন্মগ্রহণ করেছে সে সময়ের নাম। স্বভাবতই ‘মিলাদ’ বা ‘মিলাদুন্নবী’ বলতে শুধুমাত্র রাসুল (সাঃ)-এর জন্মের সময়ের আলোচনা, জীবনী পাঠ, তাঁর বাণী, তাঁর শরিয়ত বা তাঁর হাদিস আলোচনা, তাঁর আকৃতি-প্রকৃতি আলোচনা, তাঁর উপর একাকী বা সম্মিলিতভাবে দরুদ শরীফ পাঠ, সালাম পাঠ, কিয়াম ইত্যাদি বুঝায়। কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে- হে মানবকুল, তোমাদের কাছে উপদেশ বাণী এসেছে তোমাদের পরওয়ার দিগারের পক্ষ থেকে এবং অন্তরের রোগের নিরাময় হেদায়েত ও রহমত মুসলমানদের জন্য। (হে রাসুল (সাঃ)) বলুন-আল্লাহর অনুগ্রহে এবং তাঁর দয়া, সুতরাং তাদের আনন্দিত হওয়া উচিত। (সুরা ইউনুছ-৫৭)। তাই স্রষ্টার সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসব রাসুল (সাঃ)-এর শুভাগমন। অন্যত্রে ইরশাদ হচ্ছে-“হে রাসুল (সাঃ) আপনি বলুন, আল্লাহ পাকের ফজল ও রহমত প্রাপ্তিতে তারা যেন আনন্দ প্রকাশ করে; তোমাদের পুঞ্জিভূত সম্পদ অপেক্ষা এটি কত উত্তম!” (সুরা ইউনুছ-৫৮)। “নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট হতে এক উজ্জ্বল জ্যোতি (নূর) ও সুস্পষ্ট কিতাব তোমাদের নিকট এসেছে (সুরা মায়েদা-১৫)। কোরআনের অমিয় বাণী নিয়ে যিনি এ ধরায় আগমনে আমাদের ধন্য করেছেন, তাঁর আগমনে আনন্দোৎসব করা উম্মতে মোহাম্মদীসহ সকল ধর্ম-বর্ণের, জাতির জন্য অবশ্য কর্তব্য।
ঈসা (আঃ)-এর পর দীর্ঘদিন পর্যন্ত এ ধরায় নবি রাসুলের আগমন ঘটেনি। এমতাবস্থায় বিশ্বের সর্বত্রই অত্যাচার-অনাচার, কুসংস্কার, নিষ্ঠুরতা ও সামাজিক দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মধ্যে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। এহেন চরমতম মানবিক অসাম্য ও মানবাধিকার বৈষম্যের ঘোর অন্ধকার যুগে আবির্ভূত হলেন মানবতার মুক্তির দিশারী রাসুল (সাঃ)। তারপর থেকে পৃথিবীর সমস্ত জমিনই মসজিদে পরিণত হল। যার ফলে আমরা মসজিদে ঘরে যানবাহনে পথে-ঘাটে সবখানেই নামাজ পড়তে পারছি। রাসুল (সাঃ)-এর আগমনে আকাশে-বাতাসে ধ্বনিত হল আহলান ছাহলান, মারহাবান-মারহাবান! মা আমেনা বলেন তাঁর জন্মলগ্নের পর মুহুর্তেই একটা নূর প্রকাশিত হল যার আলোতে পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের সবকিছু আলোকিত হয় এবং যার আলোতে সিরিয়ার শাহী মহল মা আমেনা দেখতে পান। (বায়হাকী দালায়েলুন নবুওত মুসনাদে আহমদ)। রাসুল (সাঃ) দুনিয়াতে তশরিফ আনার সাথে সাথে ক্বাবা শরীফ মাকামে ইব্রাহীমের দিকে ঝুঁকে পড়ে রাসুল (সাঃ)-এর বেলাদাতের তাজিম করেছিল (মাদারেজুন্নবুয়ত)।
সৈয়দ মুফতী আমীমুল এহসান (রহঃ)-এর বর্ণনা অনুযায়ী, বৃদ্ধ সর্দার আবদুল মোত্তালেব পৌত্রের জন্মের সুসংবাদ শ্রবণ করে গৃহে আগমন করেন এবং নবজাতক শিশুকে খানা-ই-কাবায় নিয়ে যান এবং দোয়া করেন। সপ্তম দিবসে আকীকা করে, ‘মোহাম্মদ’ (সাঃ) নাম রাখেন এবং সমগ্র কোরেশকে দাওয়াত করেন। তিনি বলেন, ‘আমার এই সন্তান সমগ্র বিশ্বে প্রশংসার অধিকারী হবে’। আবদুল হক মোহাদ্দেস দেহলবী (রহঃ)-এ সম্পর্কে তাঁর বিখ্যাত পুস্তক ‘মা সাবাতা বিসসুন্নাহ’তে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। ১২ রবিউল আউয়াল (সোমবার) রাসুল (সাঃ) জন্মগ্রহণ করেন বলে প্রসিদ্ধ বর্ণনায় বলা হয়েছে। এ দিন মক্কাবাসীরা রাসুল (সাঃ)-এর জন্মস্থান জিয়ারত করত। জন্মরাতের শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে আবদুল হক মোহাদ্দেস দেহলবী (রহঃ) বলেন, এই রাত শবে কদর হতে উত্তম। কেননা তাঁর শবে বেলাদত হচ্ছে তাঁর জন্মরাত এবং শবে কদর তাকে প্রদান করা হয়। যে রাত্রটিকে তাঁর আবির্ভাবে সম্মানিত করা হয়েছে এটি শবে কদর অপেক্ষা উত্তম, তাছাড়া শবে কদরে শুধু আসমান হতে ফেরেশতারা আগমন করে থাকেন, পক্ষান্তরে জন্মদিবসের রাতে রাসুল (সাঃ)-এর সুমহান সত্তার আবির্ভাব ঘটে। জন্মরজনীর শ্রেষ্ঠত্বের আরও একটি কারণ হচ্ছে, শবে কদরের শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ত্ব শুধু উম্মতে মোহাম্মদীর জন্য নির্ধারিত, পক্ষান্তরে রাসুল (সাঃ)-এর মহান সত্তাকে আল্লাহ সকল জাহানের জন্য রহমতস্বরূপ নির্ধারণ করেছেন এবং তাঁরই মহান জাতিসত্ত্বার গুণাবলির কারণে আসমান, জমিন ও সকল মাখলুকাতকে আল্লাহ সাধারণ নিয়ামত দ্বারা ধন্য করেছেন। কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে- -হে রাসুল (সাঃ) ‘আমি আপনাকে সমগ্র জাহানের জন্য একমাত্র রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি।’ (সুরা আম্বিয়া-১০৭)।
কোরআনের অসংখ্য আয়াতে আল্লাহর আনুগত্যের সাথে তাঁর রাসুলের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের নির্দেশ রয়েছে। তাঁর প্রতি ভালবাসা, আল্লাহর প্রতি ভালবাসা স্বরূপ। যাঁর মধ্যে উত্তম আদর্শ, কোরআন যাঁর মহান চরিত্র এবং যাঁর প্রতি খোদ আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ দরূদ পাঠ করে থাকেন, তাঁর জন্মোৎসব উদযাপন করার সৌভাগ্য আল্লাহর এক মহান অবদান। ইরশাদ হচ্ছে- ‘এবং আমি আপনার জন্য আপনার স্মরণকে সমুন্নত করেছি।’ (সুরা ইনশেরাহ-৪)। রাসুল (সাঃ)-এর রওজা শরীফে ৭০ হাজার ফেরেস্তা আকাশ হতে মিছিল সহকারে দৈনিক ২ বার ফজরে ও আছরে আসেন এবং সালাম পেশ করতে থাকে। কিয়ামত পর্যন্ত এ নিয়ম চলতে থাকবে। আদম (আঃ) হতে ঈসা (আঃ) পর্যন্ত সকল নবি ও রাসুলগণ মিলাদুন্নবী এর মজলিস পালন করতেন (মাদারেজুন্নবুয়ত)। ইরশাদ হচ্ছে-“নিশ্চয়ই আল্লাহ এবং তাঁর ফিরিস্তাগণ রাসুল (সাঃ)-এর উপর দরুদ পেশ করছেন।” “হে ঈমানদারগণ! তোমরা ও তাঁর উপর দরুদ ও সালাম পেশ কর আদবের সাথে। (সুরা আহযাব-৫৬)। আদম (আঃ) সৃষ্টির পরে দেখলেন আরশে আজিমে খোদিত রয়েছে- “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ।” তখন তিনি আল্লাহকে জিজ্ঞেস করলেন-হে পরওয়ার দেগার! আপনার নামের পাশে ওটা কার নাম শোভা পাচ্ছে। তখন আল্লাহপাক বললেন- ইনি হলেন আখেরী জমানার নবি আমার প্রিয় হাবীব রাসুল (সাঃ)। যার উছিলায় তোমাকে ও সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছি। যার উছিলায় সমগ্র পৃথিবীর, চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-তারা, কীট-পতঙ্গ, আসমান-জমিন, পশু-পাখি, গাছপালাসহ মানবমন্ডলী সৃষ্টি করা হয়েছে। সে জন্য আমাদের উচিত সাধারণ নেয়ামত পাওয়ার জন্য যদি ঈদ বা খুশি করতে পারি, তবে সবচেয়ে বড় অনুগ্রহ যিনি, তাঁর আগমনে খুশি করা কত যে উত্তম কাজ তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই।
হে উম্মতে মোহাম্মদীগণ! আসুন যেখানে স্বয়ং আল্লাহ তাঁর ফেরেস্তাদের নিয়ে এবং নবি-রাসুল, সাহাবী, ওলী-আউলিয়া সবাই নবির প্রতি যথাযথ দরুদ ও সালাম প্রদর্শনসহ মিলাদুন্নবী পালন করে আসছেন, সেখানে উম্মতে মোহাম্মদী হিসেবে সমগ্র বিশ্বের রহমত, সমগ্র জাতির আদর্শ রাসুল (সাঃ)-এর মিলাদুন্নবী পালনে কৃপনতা না করে আমরা সুদৃঢ় হই। মিলাদুন্নবী উপলক্ষে মিলাদ মাহফিলের অনুষ্ঠান করি, বেশি বেশি দান-খয়রাতসহ মিলাদুন্নবীর মাসে শরীয়তসম্মত আমল করি। জন্মদিবস পর্যন্ত তাঁর স্মরণ সীমাবদ্ধ না রেখে, আল্লাহর জিকিরের ন্যায় সার্বক্ষণিকভাবে বিশ্বনবির প্রতি দরুদ ও সালাম প্রেরণ করি। সমস্ত শহর-বন্দর, গ্রাম-গঞ্জে, মসজিদ-মাদ্রাসায়, খানকাসহ ঘরে ঘরে নবির আগমনি দিবসকে যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে পালন করি।
লেখক: মুহাম্মদ শামসুল ইসলাম সাদিক প্রাবন্ধিক ও মুদ্রণ ব্যবস্থাপক দৈনিক সিলেটের ডাক।
|
|
|
|
তরিকুল ইসলাম মুক্তার
সময় তার নিজের গতিতে বয়ে যায়। সব কিছু শুরু হয় এবং শেষ হয়ে যায়। দিন যায় রাত আসে, রাত যায় দিন আসে। এভাবে শেষ হয় সপ্তাহ, মাস ও বছর। এ সময় ও কালের প্রবাহ কখনও থামে না। আপন গতিতে চলে সম্মুখপানে অবিরাম। সদা সচল সময়ের স্রোতধারা। বর্তমান বিলীন হয়ে যায় অতীতের বুকে। ভবিষ্যৎ ঠাই পায় বর্তমান প্রাঙ্গণে। আগমন ঘটে নতুনের, প্রস্থান ঘটে পুরানের। জগতে এটা চরম সত্য।
জাগতিক এই নিয়মেই আমাদের সকলের জীবন থেকে চলে গেল একটি বছর। হিজরী বর্ষ ছিটকে পড়ল মহাকালের অসীম গর্ভে। মিশে গেল সময়ের আবর্তে। শুরু হল একটি নতুন বছর। তথা আরবী বা হিজরি বর্ষ। হিজরি বর্ষের প্রথম মাস মহররম। শব্দটি আরবী। যার আভিধানিক অর্থ সম্মানিত। বাস্তব বিচারেও এ মাস প্রতিটি মুমিনের দৃষ্টিতে সম্মানিত। প্রথমত পবিত্র ইসলামের আলোকিত বিশ্বাস ও বিধি বিধানকে আল্লাহর জমিনে পরিপূর্ণরুপে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে নিজের মাতৃভূমি পর্যন্ত ত্যাগ করেছিলেন, সহ্য করেছেন কত জুলুম নির্যাতন। পশ্চিমাকাশের এক ফালি মহররম চাঁদ চির জীবন্ত ত্যাগ ও আদর্শেও সেই বার্তায় আরেকবার স্মরণ করিয়ে দিয়ে যায় প্রতিটি মুমিনের হৃদয় অনুভবে।
অধিকন্তু পবিত্র এ মাস আলোকিত হয়েছে প্রিয় সরদারে দু’আলম রাসুলে আরাবি (সাঃ) এর বরকতপৃর্ণ - সিয়াম সাধনায়। হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) বর্ণনা করেন রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- রমজানের পর সর্বাধিক ফযিলতপৃর্ণ রোযা হল আল্লাহর মাস মহররমের। হাদিসে বর্ণিত মহররমের রোযাটি মূলত দশই মহররম তথা আশুরার রোযা। মহররমের মর্যাদা ও বরকতের উৎসও এ রোযাটি।
হযরত আবু কাতাদাহ (রাযি.) এর বর্ণনায় আছে আশুরার রোযা সম্পর্কে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেসা করা হলে তিনি বলেন- আশুরার রোযা বিগত বছরের পাপসমূহ মোচন করে দেয়। ইসলামে আশুরার রোযার সূচনা কিভাবে হল এ সম্পর্কে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ মত হল, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) বর্ণনা করেন, রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরত করে মদীনায় এসে ইহুদিদের দেখলেন, তারা আশুরার দিনে রোযা রাখে। তখন রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, এটা কিসের রোযা? তারা বললেন এটি একটি ভালো দিন। এ দিনে আল্লাহ তা’আলা বনী ইসরাঈলকে তাদের শত্রুর কবল থেকে পরিত্রাণ দিয়েছেন। তাই হযরত মূসা (আ.) এ দিনে রোযা রেখেছেন। তখন রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি তো মূসাকে অনুসরণের ক্ষেত্রে তোমাদের চাইতেও অধিক হকদার। এ সম্পর্কে আরো কিছু বর্ণনা রয়েছে যা একথা প্রমাণ করে যে, আশুরার রোযার প্রচলনটা এসেছে ইহুদি কিংবা হযরত মুসা (আ.) থেকে।
অথচ উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রাযি.) বলেছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, কুরাইশরা জাহেলী যুগে আশুরার দিনে রোযা রাখত এবং রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও রোযা রাখতেন। হিজরত করে মদীনায় আসার পরও তিনি এ রোযা রেখেছেন এবং মুসলমানদেরকেও রোযা রাখতে আদেশ দিয়েছেন। তারপর যখন রমযান মাসের রোযা ফরজ হল তখন তিনি ইরশাদ করলেন, যার খুশি আশুরার রোযা রাখবে আর যার খুশি ছেড়ে দিবে। বোঝা গেল, আশুরার রোযা রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় থাকতেই রাখতেন। তবে মদীনায় এসে যা হয়েছে তা হল সাহাবিদেরকেও রাখতে বলেছেন। তাই এটাকে পূর্ব আমলেরই নবায়ন বলা যায় সূচনা নয়।
এখন প্রশ্ন হলো আশুরার রোযা কয়টি? তার জবাব হল আশুরার সুন্নত রোযা দুটি। রোযা রাখার পদ্ধতি হল মহররমের নয় ও দশ তারিখ কিংবা দশ ও এগার তারিখ। আশুরার প্রকৃত ফজীলত ও গুরুত্ব বিশুদ্ধ হাদীসের আলোকে এতটুকুই যা আলোচিত হল। শিয়াদের শোক মিছিল ও মাতমের সঙ্গে এর কোনোই সম্পর্ক নেই। এমনিভাবে হালুয়া রুটি বিতরণেরও কোন ভিত্তি নেই। এসব গর্হিত কাজ পরিহার করে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাতানো পদ্ধতিতে রোযা পালনের মাধ্যমে বরকতময় এ দিনের সুফল লাভ করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। আল্লাহ তাআলা আমাদের সে তাওফীক দান করুন। আমীন
লেখকঃ শিক্ষার্থী জামিয়াতুন নূর আল কাসেমীয়া, উত্তরা ঢাকা।
|
|
|
|
স্বাধীন বাংলা ডেস্ক : ফ্রান্সে বাংলাদেশীদের হিফজ মাদরাসা থেকে প্রথম হাফেজকে পাগড়ী প্রদান করা হয়েছে। ২৩ মে দেশটিতে বসবাসরত বাংলাদেশী কমিউনিটির একমাত্র প্রতিষ্ঠান (সিসিআইবিএফ) স্টাইন্স পরিচালিত মাদরাসা থেকে হিফজুল কোরআন কোর্সের প্রথম হাফেজ আব্দুর রহমানকে পাগড়ী পরানো হয়।
অনুষ্ঠানে সেন্টার সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সালাউদ্দিনের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর ঘামগি, মসজিদের ইমাম ও মাদরাসার শিক্ষক আহমাদুল ইসলাম, হিফজ বিভাগের ইনচার্জ হাফেজ কারী বেলায়েত হোসাইন, শিক্ষক মাওলানা বেলাল উদ্দিন, পাগরী গ্রহণকারীর বাবা জনাব খান হাবীবুর রহমান, মাদরাসা কমিটির সদস্য জনাব কামরুল হাসান ও জনাব নুরুল ইসলাম।
মাদরাসা সূত্রে জানা গেছে, আরো দু’জন ২৯ পারা শেষ করেছে খুব শিগগিরই তাদেরকেও পাগড়ী প্রদান করবেন। এছাড়া ২০ পারা শেষ করেছেন পাঁচজন, ১৫ পারা শেষ করেছেন পাঁচজন, বাকীরা ৫ থেকে ১০ পারা শেষ করেছে।
মাদরাসা ও কমিউনিটি ব্যক্তিত্বরা আশা প্রকাশ করেন, এই প্রতিষ্ঠান জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সব শেষে মুনাজাতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষ হয়।
|
|
|
|
স্বাধীন বাংলা ডেস্ক : পবিত্র শবে মেরাজ আজ। ধর্মীয় ভাবগম্ভীর্যের সঙ্গে মুসলিম বিশ্বে এ রাত পালিত হচ্ছে। বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এই রাতে মহান আল্লাহর সঙ্গে দেখা করেছেন। তার মেরাজে গমনের ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত এ রজনী উপলক্ষে দেশব্যাপী আলোচনা সভা ও দোয়া-মোনাজাতের আয়োজন করা হয়ে থাকে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে আজ এ উপলক্ষে আলোচনা সভা, দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করবে বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে ।
মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি যিনি তাঁর বান্দাকে রাতের বেলা মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত যে জায়গার আশপাশে তিনি বরকত দান করেছেন-ভ্রমণ করালেন, যাতে তিনি তাকে তাঁর নিদর্শনগুলো দেখাতে পারেন, নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা’। (সূরা বনি ইসরাইল : ১)
আল্লাহপাক তাঁর হাবিব (সা.)কে বিশেষ অভ্যর্থনায় মেরাজে নিয়ে যে সম্মাননা দিয়েছেন তার বর্ণনা কালামে পাকে বিবৃত হয়েছে এভাবে : ‘তখন তিনি ঊর্ধ্ব জগতে। তারপর তিনি তাঁর কাছাকাছি হলেন, আরও অনেক কাছে। তখন তাদের মধ্যে দুই ধনুক পরিমাণ বা এর চেয়েও কম পরিমাণ ব্যবধান ছিল। তখন আল্লাহপাক তাঁর প্রতি যা প্রত্যাদেশ করার করলেন।
তিনি যা দেখেছেন তা বিশ্বাস করতে অস্বীকার করেননি। তিনি যা দেখেছেন, তোমরা কি তাঁর সঙ্গে এ বিষয়ে তর্ক করবে? নিশ্চয়ই তিনি তাঁকে আরেকবার দেখেছিলেন। প্রান্তবর্তী সিদরা গাছের কাছে। যার কাছে জান্নাতুল মাওয়া অবস্থিত। যখন গাছটি আচ্ছাদিত ছিল যা দিয়ে তা আচ্ছাদিত হওয়ার ছিল। তাঁর দৃষ্টিবিভ্রম হয়নি, তাঁর দৃষ্টি লক্ষ্যবিচ্যুত হয়নি। তিনি তাঁর রবের মহান নিদর্শনাবলি দেখেছেন। (সূরা আন নাজম)
বিভিন্ন বর্ণনা মতে, বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) নবুয়াত লাভের একাদশ বর্ষে ২৬ রজব দিবাগত রাতে চান্দ্র মাস বিবেচনায় ২৭ রজব মেরাজ সংঘটিত হয়েছিল। আরবি ভাষায় মেরাজ অর্থ হচ্ছে সিঁড়ি। আর ফারসি ভাষায় এর অর্থ ঊর্ধ্ব জগতে আরোহণ। পবিত্র কুরআনে আরবের মক্কা নগরী থেকে ফিলিস্তিনের বায়তুল মুকাদ্দাস (মসজিদে আকসা) পর্যন্ত ভ্রমণকে পবিত্র ‘ইসরা’ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। হাদিসে বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত উপনীত হওয়া ও আরশে আজিমে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের মহিমান্বিত ঘটনাকে মেরাজ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। একই সময়ে মেরাজে মহানবী (সা.) সৃষ্টিজগতের সব কিছুর রহস্য অবলোকন করেন। মেরাজ থেকে আল্লাহর রাসূল উম্মতে মোহাম্মদির জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের হুকুম নিয়ে ফিরে আসেন।
ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে পবিত্র এ রাতটি পালন করে থাকেন। কুরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার, নফল নামাজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, খানকা ও বাড়িতে মিলাদ এবং গুনাহ মাফের জন্য আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করে থাকেন।
ইসলামে মেরাজের বিশেষ গুরুত্ব আছে, কেননা এ মেরাজের মাধ্যমেই ইসলাম ধর্মের পঞ্চস্তম্ভের দ্বিতীয় স্তম্ভ অর্থাৎ নামাজ মুসলমানদের জন্য অত্যাবশ্যক (ফরজ) করা হয় এবং এ রাতেই দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ মুসলমানদের জন্য নিয়ে আসেন মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)।
স্বাধীন বাংলা/জ উ আহমাদ
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আখলাকুল আম্বিয়া নির্বাহী সম্পাদক: মাে: মাহবুবুল আম্বিয়া যুগ্ম সম্পাদক: প্রদ্যুৎ কুমার তালুকদার সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: স্বাধীনতা ভবন (৩য় তলা), ৮৮ মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০। Editorial & Commercial Office: Swadhinota Bhaban (2nd Floor), 88 Motijheel, Dhaka-1000. সম্পাদক কর্তৃক রঙতুলি প্রিন্টার্স ১৯৩/ডি, মমতাজ ম্যানশন, ফকিরাপুল কালভার্ট রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত । ফোন : ০২-৯৫৫২২৯১ মোবাইল: ০১৬৭০৬৬১৩৭৭ Phone: 02-9552291 Mobile: +8801670 661377 ই-মেইল : dailyswadhinbangla@gmail.com , editor@dailyswadhinbangla.com, news@dailyswadhinbangla.com
|
|
|
|