শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি : সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার যমুনা তীরবর্তী সৈয়দপুর গ্রাম। এ গ্রামের অন্যান্য সাধারণ নারীদের মতই কৃষাণী মরিয়ম খাতুনের রয়েছে স্বামী-সন্তান ও সংসার। সংসারের সব সামলে নিয়ে তিনি এখন সমাজের মডেল নারীতে পরিণত হয়েছেন।
জানা গেছে, সিরাজগঞ্জ জেলার মধ্যে ২য় শ্রেষ্ট এসএমই বীজ উৎপাদনকারী নারী মরিয়ম। ইতোমধ্যেই তিনি এলাকায় বীজের কারিগর হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করেছেন। সিরাজগঞ্জের গন্ডি পেরিয়ে সারাদেশে তার উৎপাদিত বীজ পৌঁছে যাচ্ছে। বীজ উৎপাদন করে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবেও অনেক চাষির কাছে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছেন। পাশাপাশি বীজ উৎপাদন করে তিনি এখন স্বাবলম্বী। গত ৪ বছর যাবত তার উৎপাদিত উৎকৃষ্ট মানের ‘রবি সিড’ বীজ এখন দেশজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে কৃষণী মরিয়ম খাতুন জানান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রথমে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কৃষক পর্যায়ে উন্নত মানের ডাল, তেল ও মসলা বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্পের আওতায় তাকে বারি সরিষা-১৪, খেসারী এবং তিলের বীজ উৎপাদন প্রদর্শনী দেয়। এর পরের বছর পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন প্রদর্শনী পায়। সেখান থেকে যে পরিমাণ বীজ পাই তাতে ব্যাপক লাভবান হই। সেই থেকে বীজ ব্যবসার হাতেখড়ি। সেই ধারাবাহিকতায় ব্যাপক উৎসাহ নিয়েই নিয়মিতভাবে বারি সরিষা-১৪ ও ১৭, তাহেরপুরি পেঁয়াজ বীজ, খেসারী, মসুর, তিল ও ধানের বীজ উৎপাদন করছেন বলে জানান তিনি।
এবছর তার উৎপাদিত বীজের মধ্যে রয়েছে- সরিষা ৫৫ মন, ডাল জাতীয় ৮০০ কেজি, তিল ৩০০ কেজি, পেঁয়াজ বীজ ৫৪ কেজি, ধানের বীজ ২৫০ মন, ও ব্রি-ধান-১০০ (বঙ্গবন্ধু ধান নামে পরিচিত) ৫০ মন। তার এসব উৎপাদিত বীজ দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করা হয়। চাষিরা তার বীজ কিনে চাষে আশানুরুপ ফল পান।
এখন প্রায় সারাদেশেই ‘রবি সিড’ বীজ পৌছে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন- ‘ভালো মানের বীজ সরবরাহে আমি সফল হয়েছি। তিনি বলেন, বীজ উৎপাদনে প্রায় আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা ব্যয় হলেও উৎপাদিত বীজ ছয় থেকে সাড়ে ছয় লাখ টাকা বিক্রি করেন।
তিনি জানান, উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান ও সুবর্না ইয়াসমিন সর্বক্ষণিকভাবে মাঠে এসে পরামর্শ দিচ্ছেন। তারা বীজ উৎপাদনে গুনগত মান নিশ্চিত করণে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।
তিনি আরো বলেস, উৎপাদিত বীজের গুনগত মান ভালো থাকায় প্রতি বছরই চাহিদা বাড়ছে কিন্তু পর্যাপ্ত জমি না থাকার ফলে ব্যবসা বাড়াতে পারছি না। তাই সরকারি সহযোগিতা পেলে আরো বেশি লাভবান হতে পারবে বলেও কৃষাণী জানিয়েছেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার কৃষিবিদ মো. এহসানুল হক বলেন, এ এলাকার মানুষ নিজেরা বীজ রাখতে অভ্যস্ত নয়। সেজন্য এ এলাকায় ভালো বীজের পর্যাপ্ত চাহিদা রয়েছে। উন্নতমানের বীজ উৎপাদনের লক্ষে ওই ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি র্ককর্তারা কৃষকদের সর্বক্ষণিক মাঠে গিয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন। এতে কৃষাণী মরিয়মের বীজ উৎপাদনে গুনগত মান নিশ্চিত করণে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
শাহজাদপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুস ছালাম বলেন, কৃষাণী মরিয়ম সিরজাগঞ্জ জেলার মধ্যে ২য় শ্রেষ্ট এসএমই বীজ উৎপাদন কারী। তিনি একজন উদ্যোমী কর্মট এবং আধুনিক কৃষাণী। কৃষক পর্যায়ে উন্নত মানের ডাল, তেল ও মসলা বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্পের আওতায় কৃষাণী মরিয়ম একটি প্রদর্শনী নিয়ে কয়েক বছর ধরে বীজ উৎপাদন করে আসছেন। দেশে ভালো বীজের চাহিদা মেটাতেই সরকারের এ উদ্যোগ। আর সরকারের এই উদ্যোগের সাথে একাত্ম হয়ে তিনি ভালো মানের বীজ উৎপাদন করে শতভাগ সফলতা অর্জন করেছেন। আমি তার সাফল্য কামনা করি।