পাইকারীতে বাজারে কম দামে বিক্রি হলেও খুচরা দ্বিগুন
আলু নিয়ে বিপাকে জয়পুরহাটের কৃষক ও ব্যবসায়ীরা
29, August, 2022, 4:28:5:PM
রাকিবুল হাসান রাকিব, জয়পুরহাট আলু উৎপাদনে দেশের বৃহতম জেলা জয়পুরহাট। পাইকারীতে বাজারে কম দামে বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে দ্বিগুন দামে বিক্রি হচ্ছে আলু। জেলার হিমাগারগুলোতে প্রকারভেদে বর্তমান আলু প্রতি কেজি আলু ১৬ থেকে ১৭ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে তা প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। আর সাধারন ক্রেতারা বেশি দামে আলু কিনে ক্ষতিগ্রস্থ হলেও একশ্রেণির মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেট ভারি হলেও আলু রেখে মোটা অংকের লোকসানে পড়েছে আলু ব্যবসায়ী, হিমাগার মালিক ও চাষীরা। পাইকারি বাজারে আলুর দাম ও চাহিদা না থাকায় তাদের বিশাল অংকের লোকসান গুণতে হচ্ছে।
মৌসুমের শুরুর দিকে বেশি দাম পেয়েও আলু বিক্রি না করে অধিক লাভের আশায় হিমাগারে মজুত করে এবার কৃষক ও ব্যবসায়ীরা বেকায়দায় পড়েছেন। এমন দর পতনের কারণে হিমাগারগুলোতে বর্তমানে ভরা মৌসুমে কৃষক ও ব্যবসায়ীর উপস্থিতি নেই বললেই চলে। গত বছরের এই সময়ে যে পরিমাণ আলু হিমাগারে সংরক্ষণ ছিল, এবার তার চেয়ে কয়েক গুন বেশি আলু সংরক্ষণ করেছে। এদিকে বাজারে বর্তমানে সবছিুরই দাম হু হু করে বাড়লেও বাড়েনি আলুর দাম। এ পরিস্থিতিতে আলু সংরক্ষণের ভাড়া আর আলু কেনার সময়ে ব্যবসায়ীকে ঋণ দেওয়ার টাকা আদায় করতে না পেয়ে বিপদে পড়েছেন হিমাগার মালিকরা।
চাষী, ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত মৌসুমে আবওহাওয়া অনুকুলে থাকায় জেলায় আলুর উৎপাদন ভালো হয়েছিল। উৎপাদন ভাল হওয়ায় এবং গত বছর দামও ভাল পাওয়ায় মৌসুমের শুরুতে বিক্রি না করে এবার হিমাগারে আলু মজুদ বেশি করেছে। তাতে হিমাগারের খরচসহ প্রতি বস্তা (৬৫ কেজি) প্রকারভেদে আলুর খরচ পড়েছে ১ হাজার ২শ’৫০ থেকে ১ হাজার ৩শ’ টাকা। বর্তমান বাজারে আলু প্রতি বস্তা ১ হাজার ২০ থেকে ১ হাজার ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। গড়ে বস্তা প্রতি লোকসান গুণতে হচ্ছে ২শ’৫০ টাকা। বাজারে আলুর যে দাম তাতে আরও মোটা অংকের লোকসান গুণতে হবে। সাথে আলু কিনতে ব্যবসায়ীদের দেওয়া ঋণের টাকা এবং আলু রাখার ভাড়ার টাকা ওঠাতে বড় বেকায়দায় পড়েছে হিমাগার মালিকরা। লোকসান ঠেকাতে আলু রপ্তানির দাবি জানিয়েছেন সংশ্নিষ্টরা।
হাট-বাজার ও হিমাগারগুলোতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ৬৫ কেজি ওজনের কার্ডিনাল (লাল) জাতের আলু প্রতি বস্তা ১ হাজার ১০ টাকায়, ডাইমন্ড (সাদা) জাতের আলু প্রতি বস্তা ১ হাজার ৬০ টাকায়, দেশি পাকরি (লাল) জাতের আলু প্রতি বস্তা ১ হাজার ১শ’৫০ টাকায় এবং রুমানা (পাকরি) জাতের আলু প্রতি বস্তা ১ হাজার ১শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এম ইসরাত হিমাগারের ম্যানেজার বিপ্লব কুমার জানান, জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধির কারনে সারা দেশে সবকিছুর দাম বৃদ্ধি হলেও আলুর দাম দিনদিন কমেই যাচ্ছে। এ কারনে চাষী ও ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি লোকসান গুণতে হচ্ছে হিমাগার মালিকদের। এ অবস্থা চলতে থাকলে হিমাগার মালিকদের আরো বেশি লোকসান গুনতে হবে।
জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বিগত বছর আলুর ভালো দাম পেয়ে চাষিরা আলু চাষে ঝুঁকে পড়েন। শুধু চাষীরাই নয় ব্যবসায়ীরাও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আলুর চাষ করেন। পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা মৌসুমের শুরুতে হিমাগার মালিকদের কাছ থেকে গত বছরের মত লাভের আশায় ঋণের টাকা নিয়ে জেলার ২০টি হিমাগারে আলু রাখেন। মৌসুমের শুরুতে এসব হিমাগারে আলু সংরক্ষণ হয় (৬৫ কেজি ওজনে) ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ২৫৩ বস্তা। সংরক্ষিত আলু উত্তোলনের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ১৫ নভেম্বর। এসব হিমাগারে ১৭ লাখ ৫১ হাজার ১৫৩ বস্তা আলু আজও মজুত রয়েছে। গত বছর এই সময়ের মধ্যে মজুতের প্রায় ৪০ ভাগ আলু বিক্রি হলেও বর্তমানে ২০ ভাগ আলু বিক্রি হয়েছে।
ক্ষেতলাল উপজেলার গুনীমঙ্গল বাজারের ব্যবসায়ী মোজাফফর হোসেন স্বাধীন বাংলাকে বলেন, গত বছর আলুর দাম বেশি পাওয়ায় লাভের মুখ দেখেছিলাম। তাই এ বছর ঋণ নিয়ে দেশি পাকড়ী লাল জাতের সাড়ে ৩ হাজার বস্তা, ষ্টিক লাল জাতের ১১ হাজার বস্তা এলাকার কয়েকটি হিমাগারে রেখেছি। বর্তমানে বাজারের যে অবস্থা তাতে এই মহূর্তে আলুগুলো বিক্রি প্রায় ৩৮ লাখ টাকা লোকসান হবে।
কালাই উপজেলার সড়াইল গ্রামের কৃষক মজিবর রহমান স্বাধীন বাংলাকে বলেন, এবার আলু নিয়ে বড় বিপদে আছি। মৌসুমের শুরুতে আলু বিক্রি না করে কেন হিমাগারে রাখলাম। নিজের ভুলের খেসারত বড় করেই গুণতে হচ্ছে। জেলা মার্কেটিং কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন স্বাধীন বাংলাকে বলেন, আলুর দরপতন নিয়ে এবার সবাই চিন্তিত। যেসব কোম্পানিগুলো আলু বিদেশে রপ্তানি করে তাদের সাথে আমরা দফায় দফায় আলোচনা অব্যাহত রেখেছি এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আলু প্রক্রিয়া করন ও বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে আলুর দরপতন ঠেকানো সম্ভব।