শীতকালীন আগাম সবজি চাষে উৎপাদন খচর বেশি; আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষক
6, November, 2022, 5:36:7:PM
আকরামুজ্জামান আরিফ:
অধিক লাভের আশায় জাত ভেদে ফসলের মৌসুমকে অগ্রাহ্য করে সময়ের ফসল অসময়ে চাষে একদিকে যেমন খচর বাড়ছে লাফিয়ে অন্যদিকে ফলন কমছে মারাত্মকভাবে এতে করে লোকসানের মুখে পড়ে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের আর্থিক নিরাপত্তাও দিন দিন ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। ক্রমাগত বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সময়ের ফসল অসময়ে চাষে কৃষকের পাশাপাশি কৃষিতে সরকারের ভর্তুকিরও সঠিকভাবে ব্যবহার না হওয়ায় ক্ষুদ্র আয়তনের দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও পুষ্টির নিরাপত্তা অনেকটাই অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়তে পারে। একটা সময় কৃষকেরা মৌসুমকে গুরুত্ব দিয়েই ফসলের চাষাবাদ করে আসতেন এতে ফসল চাষে ঝুঁকি ও খরচ অনেকাংশে কম হতো সাথে ফলনও পেতেন আশানুরুপ।
সূত্রে জানা যায়, কৃষিতে আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার যুক্ত হওয়ায় কৃষকেরা সময়ের ফসল অসময়ে চাষ করে একটা সময় বেশ লাভবান হওয়ায় ফসলের মৌসুমকে গুরুত্ব না দিয়েই আগাম চাষে ঝুঁকে পড়েন। সময়ের আগেই বাজারে আসা ঐসকল সবজির চাহিদাও ভোক্তাদের কাছে বেশ কদর পেতে শুরু করেন।
মাঠপর্যায়ে কৃষকদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, বছর পাঁচেক আগেও শীতকালিন ফুলকপি বাঁধাকপির ফলন বেশ ভালো হতো সাথে খরচও কম হতো। কিন্তু কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে শীতকালিন এসব সবজি গ্রীষ্মকালে আগাম চাষে খরচ বাড়ছে সাথে ফলন কমছে আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিও বেড়ে চলেছে।
এক সবজি চাষী বলেন, আমি অনেক বছর ধরেই শীতকালিন সবজি বাঁধাকপি আগাম গ্রীষ্মকালে চাষ করে আসছি, এতে বেশ লাভবানও হয়েছি। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরেই বিগত বছরের তুলনায় অনেক বেশিই গরম পড়ছে সাথে সূর্যের তাপও খুব বেশি হওয়ায় এবছর আমার ফসলের ফলন তেমন একটা ভালো হয়নি। আমি এবছর এক বিঘা জমিতে ৬ হাজার বাঁধাকপির চারা রোপণ করেছিলাম। বাঁধাকপির গড় ফলন হয়েছে ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রাম। প্রচন্ড গমর সাথে বৃষ্টি হওয়ায় জমির প্রায় ৩০ থেকে ৪০ ভাগ কপি পঁচে নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো। যদি পঁচে নষ্ট না হতো তাহলে আমি প্রায় ৪২০০ কেজি কপি পেতাম। কিন্ত পঁচে নষ্ট হওয়ায় সেখানে ২ হাজার কেজির মত কপি সংগ্রহ করতে পেরেছি এতে করে কোনমতে আমার খরচটা ফিরে পেয়েছি। এক বিঘা আগাম এই বাঁধাকপির চাষ করতে আমার প্রায় ৩৫ হাজার টাকার মত খরচ হয়েছে।
অপর এক কৃষকের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এ বছর আমি তিন বিঘা জমিতে আগাম বাঁধাকপির চাষ করেছিলাম। এতে আমার প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকার মত খরচ হয়েছিলো। প্রচন্ড গরম আর বৃষ্টিতে আমার প্রায় অর্ধেকেরও বেশি কপি পঁচে নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো যা ছিলো তারও ওজন তেমন একটা না হওয়ায় লাভ তো দুরের কথা আমার লোকসান হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আগামিতে আমি আর আগাম কপির চাষ করবো না। কারন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগাম চাষে খরচ অনেক বেশি আর প্রাকৃতিক দূর্যোগেরও ঝুঁকি বাড়ছে। শীতকালে যদি বাঁধাকপির চাষ করা হয় তাহলে বিঘা প্রতি খুব বেশি হলেও ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকার মত খরচ হয় সাথে এক একটি বাঁধাকপির ওজন হয়ে থাকে প্রায় ২ হাজার ৫ শ গ্রামের মত। আর প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি না থাকায় গাছ পঁচে মরে যাওয়ার কোন ভয় থাকে না। চাষের হিসেবের সূত্র ধরে এক বিঘা জমিতে ৬ হাজার চারায় গ্রীষ্মকালে যেখানে প্রায় ৪০ হাজার টাকা ব্যয়ে ২ হাজার কেজি বাঁধাকপির ফলন পাওয়া যায় সেখানে মৌসুমকে গুরুত্ব দিয়ে যদি শীতকালে বাঁধাকপির চাষ করা হয় তাহলে মাত্র ১৪ হাজার টাকা খরচে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি ছাড়াই নিরাপদে প্রায় ১৫ হাজার কেজি বাঁধাকপির ফলন পাওয়া সম্ভব। গরমের সময় বাঁধাকপিতে পোকার ও পঁচন রোগে তীব্র আক্রান্ত হয় আবার সার সেচও লাগে বেশি কিন্তু শীতকালে বাঁধাকপিতে তেমন একটা রোগবালাই হয় না বললেই চলে, তাই খরচ খুবই কম হয় সাথে ফলনও পাওয়া যায় অনেক বেশি।
অন্য এক কৃষকের সথে কথা হলে তিনি জানান, আামর গত কয়েক বছর ধরে আগাম কপি চাষে লোকসান হওয়ায় এবছর থেকে আগাম কপির চাষ ছেড়ে দিয়েছি। এলাকার সচেতন মহলের দাবী কৃষিতে যদি সরকারের নজরদারী না বাড়ে তাহলে সময়ের ফসল অসময়ে চাষে কৃষকেরা পড়বে আর্থিক ক্ষতির মুখে আর দেশ পড়তে পারে খাদ্য সংকটে। অন্যদিকে কৃষিতে ভর্তুকির হার বাড়বে লাগামহীন। তারা আশার করেন কৃষিতে সরকারের ভর্তুকির যেন সঠিক ব্যবহার হয়।