গ্রামীণ আবহে জন্ম নেয়া একজন সফল কৃষক সাকিনুর ইসলাম। পড়াশুনা করেছেন স্কুল পর্যন্ত। পরিবারের বড় সন্তান হওয়ায় লেখাপড়ায় বেশি দূর এগুতে পারেননি। বড় ছেলে হওয়ায় সংসারের হাল ধরতে হয়েছে সাকিনুরকে। মাধ্যমিক পাশ করার পর বসে নানা থেকে পৈত্রিক জমি আঁকড়েই সাবলম্বী হতে চেয়েছিলেন তিনি। এমন প্রত্যাশা থেকেই কৃষি কাজে মনোনিবেশ করেন। বিভিন্ন সময় জমিতে বিভিন্ন ফসল ফলিয়ে ভাগ্যের চাকা সচল করার চেষ্টা করেন তিনি।
এরই ধারাবাহিকতায় বিরামপুর পৌর শহরের মিরপুর গ্রামের সেকেন্দারের ছেলে সাকিনুর ইসলাম পৈত্রিক জমিতে শুরু করেন হাইব্রিড জাতের পেঁপে চাষ। প্রথম দিকে স্বল্প পরিসরে এ চাষ শুরু করলেও এবছর বাণিজ্যিকভাবে ২ বিঘা জমিতে প্রায় ১ হাজার ৫ শত পেঁপের চারা রোপন করেন তিনি। আর তাতেই পেয়ে যান সাফল্য। পেঁপের বাম্পার ফলনে উঠতে থাকে তার আর্থিক অবস্থা।
চারা রোপনের ৬ থেকে ৭ মাসের মধ্যেই ফলন পেতে শুরু করেন তিনি। একেকটি পেঁপে ২ থেকে ৪ কেজি ওজনের। বিশাল আকৃতির এই পেঁপে চাষ করে এলাকার সবার দৃষ্টি কেড়েছেন সাকিনুর। প্রতিদিন লোকজন আসছেন তাঁর পেঁপে বাগান দেখতে। অনেকেই এখন তাঁর সাথে কথা বলে পেঁপে চাষ করার পরিকল্পনা করছেন। অনেকে বাগান করা শুরুও করেছেন।
এ ব্যাপারে সাকিনুর ইসলাম বলেন, যে কেউ পেঁপে চাষ করে স্বল্প সময়ে স্বল্প পরিশ্রমে বেকারত্ব দুর করার পাশাপাশি সাবলম্বীও হতে পারবেন। জমি তৈরী, চারা রোপন, সার, বালাইনাশক, আগাছা পরিস্কার ও শ্রমিকের টাকাসহ প্রায় ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে তার। এখন গাছ থেকে প্রায় প্রতিদিন ৭ থেকে ১০ মন কাঁচা-পাকা পেঁপে সংগ্রহ করা যাচ্ছে। তবে লাভের অংক বেশি হওয়ায় তিনি পাকা পেঁপেই বেশি বিক্রি করছেন। প্রতিমন পাকা পেঁপে বাগান থেকে ১ হাজার থেকে ১১শ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বাগান থেকে পাকা পেঁপে সংগ্রহ করে এ জেলা ছাড়াও রংপুর-বগুড়াসহ বিভিন্ন হাটে বিক্রি করছেন। বাগান করার পর থেকে এ পর্যন্ত ৭০ হাজার টাকার পেঁপে বিক্রি করে ইতোমধ্যে হাজার টাকার লাভের মুখ দেখেছেন তিনি। তাঁর মুখেও সেই ছাপ স্পষ্ট। বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে এ বছরে আরো ১ থেকে ২ লাখ টাকার পেঁপে বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে পারলে আগামী বছরেও প্রায় এমন ফলনই আশা করছেন তিনি। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তিনি তেমন কোন সুযোগ সুবিধা পাননি। তবে তাদের সার্বিক সহযোগিতা পেলে আরো বেশি ফলন ঘরে তুলতে পারতেন বলে সাকিনুর জানান।
পেঁপে বাগান দেখতে আসা স্থানীয় মহিলা ডিগ্রী কলেজের সহকারি অধ্যাপন মশিহুর রহমান বলেন, পরিশ্রম ও লক্ষ্য অটুট থাকলে কৃষি কাজে সফল হওয়া সম্ভব। তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো সাকিনুর ইসলাম। তিনি পেঁপে বাগান করে বাজিমাত করেছেন। তার বাগান দেখে এলাকার অনেকেই উৎসাহ পাচ্ছেন পেঁপে চাষে। বিরামপুর উপজেলার অনেক গ্রামেই এখন সবুজ-হলুদ পেঁপের সারিবদ্ধ গাছের দৃষ্টি নন্দন দৃশ্য সকলের চোখ টানছে। কৃষকরাও পাচ্ছেন লাভের পরশ। সেইসাথে অভাব নামক শব্দটি উধাও হচ্ছে গ্রামীণ জনপথ থেকে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নিকছন চন্দ্র পাল বলেন, এ উপজেলায় অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় বর্তমান প্রচুর পরিমাণে হাইব্রিড জাতের পেঁপের চাষ বেড়েছে। উন্নত জাতের পেঁপে চাষ করে স্বল্পসময়ে লাভের মুখ দেখছেন চাষিরা।