“আমি রূপে তোমায় ভোলাব না, ভালোবাসায় ভোলাব। আমি হাত দিয়ে দ্বার খুলব না গো, গান দিয়ে দ্বার খোলাব” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর গানটিতে রূপের থেকে ভালোবাসাকেই বড় করে দেখেছেন। সেই সাথে দৈহিক শক্তির থেকে গুণ টিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। কবি প্রাধান্য দিয়ে থাকলেও একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে কি আমরা সত্যি রূপকে পিছনে ফেলে গুণের দাঁড় বেয়ে জীবন নৌকাতে কি এগিয়ে যেতে পারছি নারীরা! পারছি কি আমাদের মেধাকে নিয়ে এগিয়ে যেতে। আমাদের সুস্থ সুন্দর মানসিকতা এবং সৃজনশীল চিন্তা ভাবনা কি মিলিয়ে দিয়েছে নারীর মুক্তি! আমরা নারীরা আমাদের মেধা শক্তি, পরিশীলিত মন এবং সৃজনশীল চিন্তা ভাবনা দিয়ে পারছি জায়গা করে নিতে! না কি এখনও আমরা আটকে আছি “মেয়েটা ভালো কিন্তু গায়ের রং বেশ চাপা, একটু মোটা আর খাটো”-এই বাক্যের মধ্যেই। গোটা বিশ্ব এগিয়ে গেছে, আর্টিফিসিয়াল ইন্ট্যালিজেন্স এর যুগে প্রবেশ করে আমরা আমাদের চিন্তা ভাবনাকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারলেও নারীকে কখনোই তার মেধা, পরিশ্রম, সৃজনশীলতা দিয়ে বিচার করতে পারি না। নারীর কথা আসলেই একটা বিষয় মাথায় চলে আসে তা হলো তার রূপ। নারীর রূপটাকে আমরা এমনভাবে কদর করি যেন রূপ ছাড়া নারী কপর্দকশূন্য। চাকরির বাজার থেকে শুরু করে বিয়ের বাজার সর্বত্রই নারীর রূপ যেন নারীকে বিচারের মানদণ্ড। যে নারীর রূপ নেই, তার সকল গুনাবলি মেধা সবকিছুই আমাদের কাছে নিষ্প্রয়োজনীয়। আমরা মস্তিষ্কহীন রূপবতীকে মাথায় তুলতে পারলেও যোগ্যতাসম্পন্ন তুলনামূলক কম রূপসী নারীকে মূল্যহীনই মনে করি। প্রকৃতপক্ষে যদি আমরা নারীকে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করেই থাকি তবে কি আমাদের উচিত তার রূপের উপর নির্ভর করে তার মূল্য যাচাই করা! এক্ষেত্রে কি আমরা নারীকে সামগ্রী হিসেবে মিলিয়ে ফেলছি না! একজন মানুষ গণ্য হবে তার মানবতা, মানসিকতা, মেধা, সৃজনশীলতা দিয়ে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষের ক্ষেত্রে মেধা-মননের স্বার্থকতা থাকলেও নারীর সেই দাম পেতে হলে চড়া মূল্য দিতে হয়। কারণ আমরা নারীদের বিবেচনাই করি কিছু বিশেষণে। আমাদের কল্পনার জগতের রমণীরা সবসময়ই হয় লম্বা-ছিপছিপে, লাউয়ের ডগার মতো দেহ, দুধে আলতা গায়ের রং নিয়ে খিলখিল করে বাঁকা চোখে তাকিয়ে থাকা চঞ্চলা। আমাদের চিন্তা ভাবনাতেই সৌন্দর্যের জয়জয়কার। কিন্তু যখন একজন স্থুলকায় বিশেষ বিশেষণ ব্যবহার করার মতো যার সেরকম রূপ নেই সেই নারীকে আমরা কখনো তার প্রাপ্য সম্মানটুকুম এবং তাঁর মেধার-মননের প্রেমেও মুগ্ধ হতে পারি না। আর কতদিন! আর কত! আমরা নারীকে কবে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে মূল্য দিতে শিখবো। কবে নারীকে তার কর্মে, মেধায় বিচার করতে পারব। সেদিন নারীর শারীরিক সৌন্দর্য হবে গৌণ, তার মেধা, মানসিকতা সর্বোপরি মানুষ হিসেবে নারী কেমন সেটাই হয়ে উঠবে মুখ্য। আমরা মানুষ হিসেবে বিচার করব তাদের। নারীর সম্মান দিব তার মানসিকতা, পরিশীলিত মন ও মেধা দিয়ে সেদিনই তো সমাজে রূপের শৃঙ্খল ভেঙে মুক্তি ঘটবে নারীর।
লেখক: রায়হাতুল জান্নাত প্রত্যাশা লোক প্রশাসন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক উত্তরা মডেল স্কুল এন্ড কলেজ