জসিমউদ্দিন খান তুহিন বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো এ ইঙ্গিতও দিচ্ছে, যথেষ্ট সক্ষম ও শক্তিশালী বিকল্প উৎস তৈরি না করা পর্যন্ত বর্তমান জ্বালানি ব্যবস্থাকে বিচ্যুত করাটা অর্থনীতি ও জলবায়ু উভয় অগ্রগতিকে বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে এবং আমরা সবার জন্য একটি ন্যায়সংগত ও ন্যায্য পরিবর্তন নিশ্চিত করতে পারি কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন রাখছে।
অর্থনীতি ও জলবায়ুবিষয়ক অগ্রগতি অর্জনে জ্বালানির সফল রূপান্তর জরুরি। তবে তা অবশ্যই বিজ্ঞানসম্মত, অর্থনৈতিক এবং প্রকৌশল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে হতে হবে। পাশাপাশি বিবিধ দ্বিধা ও চ্যালেঞ্জগুলোকে আমলে নিয়ে ব্যবহারিক সমাধানের দিকেও জোর দিতে হবে। সেজন্য আমাদের প্রয়োজন অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতি, যা সমাজের সব ক্ষেত্রের অভিজ্ঞতাগুলো কাজে লাগাবে, আর অবশ্যই জ্বালানি খাতকে বাদ দেবে না।
কভিড-১৯ মহামারী-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার ফলে বিশ্বজুড়ে জ্বালানি সংকট শুরু হয়েছে। এর মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ জ্বালানি বাজারকে আরো সংকটের দিকে ঠেলে দেয়। রাষ্ট্রগুলো এখন তাদের নিকটবর্তী জরুরি কৌশলগত চাহিদার পুনরায় মূল্যায়ন করতে বাধ্য হচ্ছে। এ অবস্থায় সরকারগুলোর জন্য পরিষ্কার বার্তাটি হচ্ছে, পর্যাপ্ত বিকল্প উৎস তৈরি ব্যতীত তাড়াহুড়ো করে হাইড্রোকার্বন থেকে সরে আসার সিদ্ধান্তটি মোটেও ভালো কিছু হবে না, বরং যথেষ্ট প্রস্তুতি ছাড়া এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে তা জ্বালানি নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট এবং জ্বালানির রূপান্তর কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করতে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করবে। এখানে যা প্রয়োজন তা হচ্ছে বাস্তবসম্মত নতুন কৌশল গ্রহণ—যা হবে ব্যবহারিক, প্রবৃদ্ধির পক্ষে ও জলবায়ু সমর্থক।
গৃহীত কৌশলে জ্বালানি ও শিল্প ব্যবস্থার জটিলতাগুলোকেও ধারণ করতে হবে। প্রয়োজনীয় রূপান্তর প্রক্রিয়ার জন্য মূলধন বরাদ্দ থেকে শুরু করে পণ্যের নকশা, জননীতি এবং আচরণগত পরিবর্তন সবকিছুতেই বৃহত্তর প্রান্তিকরণ ও সহযোগিতা প্রয়োজন হবে। এর মানে জ্বালানি ব্যবস্থার চাহিদার দিকটি পরীক্ষা করা। বায়ু ও সৌরশক্তিতে বড় ধরনের অগ্রগতি হয়েছে কিন্তু বেশির ভাগ শক্তিই ব্যবহূত হচ্ছে ভারী শিল্প, উৎপাদন কার্যক্রম, নির্মাণকাজ, পরিবহন ও কৃষিতে। এ ধরনের হালকা থেকে ভারী শিল্প খাতও জলবায়ুর ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে। তাই এখন থেকেই এ খাতগুলোতে আরো বেশি বিনিয়োগ করা প্রয়োজন।
গত বছর নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বৈশ্বিক বিনিয়োগের পরিমাণ ৩৬৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেলেও শক্তি সঞ্চায়ন, কার্বন ক্যাপচার এবং হাইড্রোজেন ভ্যালু চেইনে সম্মিলিত বিনিয়োগ ছিল মাত্র ১২ বিলিয়ন ডলার, যা যথেষ্ট নয়। মনে করা হচ্ছে, জ্বালানি রূপান্তরের জন্য আগামী ৩০ বছরে ২৫০ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে। আর অবশ্যই একক কোনো কোম্পানি ও একক কোনো রাষ্ট্রের পক্ষে এ পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ সম্ভব হবে না।
তাছাড়া অর্থায়নই এখানে একমাত্র বিষয় নয়। জ্বালানির রূপান্তর প্রক্রিয়ার জন্য সময় প্রয়োজন। ২০২১ সালে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের বেশির ভাগই এসেছে বায়ু ও সৌরশক্তি থেকে। তবে এটি এখনো জ্বালানির প্রত্যক্ষ ব্যবহারের (এনার্জি মিক্স) মাত্র ৪ শতাংশ। এদিকে বিশ্বে বিদ্যুতের চাহিদা যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে বৈশ্বিক জ্বালানি নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য আগামী কয়েক বছর তেল ও গ্যাসকে এনার্জি মিক্সের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হিসেবে থাকতে হবে।