শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল 2024 বাংলার জন্য ক্লিক করুন
  
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|

   উপসম্পাদকীয়
  বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু ও ছাত্রলীগ একটি অপরটির পরিপূরক
  3, January, 2022, 9:50:57:AM

নূরে আলম সিদ্দিকী  


১৯৪৭ সালে বৃটিশ শাসন থেকে অবমুক্তির পরপরই আমার পূর্বপুরুষদের একটি বেদনাদায়ক ও বিশ্বকে অবাক করা একটি নতুন সংগ্রামের পথপরিক্রমণে নামতে হয়। বোধ করি পৃথিবীর কোন দেশের কোন বর্ণ-গোত্রের কোন ভাষার মানুষকে নিজের ভাষায় নিজের মাকে ডাকার অধিকার আদায় করতে গিয়ে বুকনিঃসৃত তাজা তপ্ত রক্ত ঢালতে হয়নি। সেই রক্তদান এতটাই গৌরবের ও আত্মমর্যাদার ছিল যে, দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে অর্জিত পাকিস্তানের উষালগ্নেই বাঙালি জাতীয় সত্তার বিকাশ, ব্যাপ্তি ও সফলতার- একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের সুদৃঢ় বিনির্মাণের উপাত্ত তৈরি করে। বাঙালির আত্মপরিচয় সগৌরবে তুলে ধরার লক্ষ্যেই ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি নাঈমউদ্দিন আহমেদকে আহ্বায়ক করে ছাত্রলীগের জন্ম হয়। এই ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠার মহান ব্রতে ব্রতী হয়ে যারা এই অসাধ্য সাধন করেন, সেই স্থপতিরা শুধু বাংলা ভাষার রাষ্ট্রীয় অধিকারেই তাদের চিন্তাকে সীমাবদ্ধ রাখেননি। বরং ভাষা আন্দোলনে বাংলা ভাষার স্বীকৃতি আদায়ের পরও সেইসব উচ্চকিত, উচ্ছ্বসিত, উদ্গত উদ্ধত প্রাণগুলো ভাষা আন্দোলনের অববাহিকায় দেশের প্রথম বিরোধী শক্তির সংগঠন হিসেবেই একটি স্বর্ণোজ্জ্বল সংগঠন ছাত্রলীগের আত্মপ্রকাশ ঘটায়। শুধু আমাদের কেন, সারাবিশ্বকে বিস্ময়াভিভূত করে ৫২, ৬২, ৬৬, ৬৯ সালে আন্দোলনের একেকটি সোপান তৈরি ও তা অতিক্রমণের মধ্য দিয়ে ৭০-এর নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ৭০-এর নির্বাচনকে প্রশান্ত চিত্তে আলিঙ্গন করে। প্রতিটি আন্দোলনের স্রোতধারায় দোল খাইয়ে বাঙালি জাতীয় চেতনাকে তখনকার জনগোষ্ঠীর বিস্তীর্ণ হৃদয়ে এমনভাবে প্রতিস্থাপিত করে যে, বঙ্গবন্ধুকে আন্দোলনের প্রতীক বানিয়ে ছাত্রলীগ আন্দোলনটিকে স্বায়ত্বশাসন থেকে স্বাধিকার এবং স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতায় শুধু রূপান্তরিতই করেনি, ছাত্রলীগ তখনকার বাংলার জাগ্রত জনতার চিত্তকে এতটাই শানিত করে যে, নিরস্ত্র জাতি পৃথিবীর সবচাইতে হিংস্র ও পৈশাচিক সেনাশক্তিকে শুধু মোকাবেলাই করেনি, পর্যুদস্ত করার মাধ্যমে পরাধীনতার বক্ষ বিদীর্ণ করে স্বাধীনতার প্রদীপ্ত সূর্যকে ছিনিয়ে আনে। একটি নিরস্ত্র জাতির এই ঐতিহাসিক বিজয় ও স্বাধীনতা বিশ্বকে শুধু বিমুগ্ধই করেনি, বিস্ময়াভিভূত ও আশ্চর্যান্বিত করেছিল। এই মহান বিজয়ের পথপরিক্রমণের একজন পথিক হিসেবে আমার মনে হয়, একটি জাতির মুক্তির লক্ষ্যে ৯০ ভাগ জনগোষ্ঠীর এমন মহামিলন বোধ করি পৃথিবীর আর কোথাও ঘটেনি।
ষাট দশকের প্রথমার্ধে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় এনএসএফ দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে একটি অংশ ছাত্রশক্তির একটি অংশের সাথে মিলে সরকার সমর্থিত এনএসএফ নামে আত্মপ্রকাশ করে। রব সাহেব বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ও প্রতিভাপ্রদীপ্ত ছাত্র হিসেবে খ্যাত ছিলেন। তাকেই সভাপতি এবং মাহবুবুল হক দোলনকে সাধারণ সম্পাদক করে এনএসএফ-এর যাত্রা শুরু হলেও পরবর্তী সম্মেলনে নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক জমির আলীর প্রযত্নে এনএসএফ প্রকৃতভাবেই বিকশিত হয় এবং অনেকগুলো হল ছাত্র সংসদে নেতৃত্ব নির্বাচিত করতে সক্ষম হয়। ডাকসুতেও তাদের নেতৃত্বের অংশীদারিত্ব ছিল। দাঙ্গা-হাঙ্গামা, মারপিট ও নানাবিধ ইস্যুতে তুলকালাম সৃষ্টির মাধ্যমে তাদের জৌলুস  ও আধিপত্য বিস্তারের দুর্দমনীয় লালসার পরিস্ফূটন ঘটলেও দলটির মধ্যে কাকতালীয়ভাবে অনেক প্রতিভাবান ছাত্রের সমাহার ঘটে। নেতৃত্বের মধ্যেও প্রতিভাপ্রদীপ্ত ছাত্রদের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়। সেই সময় সমাজতন্ত্রের স্লোগান সমন্বিত ছাত্র ইউনিয়নের প্রচন্ড প্রতাপ ছিল। ছাত্র ইউনিয়ন তখনও দ্বিধা-বিভক্ত হয়নি। বদরুল আলম, ফরহাদ ভাই, কাজী জাফর ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্বের অগ্রভাগে থেকে ছাত্র ইউনিয়নের ব্যাপ্তি ও বিকাশ সমুজ্জ্বল করে তোলেন। ছাত্রলীগ সামরিক জান্তা আইয়ুবের সামরিক শাসনের জগদ্দল পাথরচাপা অবস্থান থেকেও অত্যন্ত দৃপ্ত পদক্ষেপে হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশন বাতিলের অধ্যায় বিনির্মাণ করে মূলতঃ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মুক্তি, মৌলিক গণতন্ত্র-ব্যবস্থা বাতিল এবং সামরিক শাসনের কূটিল চক্র ও হিংস্র থাবা থেকে জাতিকে বিমুক্ত করার প্রচেষ্টাকে ব্যাপকতর করে তোলে। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় সর্বজনাব রফিকুল্ল্হা চৌধুরী, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, শেখ ফজলুল হক মনি, এনায়েতুর রহমান, কে এম ওবায়দুর রহমান, সিরাজুল আলম খান- এরাই প্রত্যয়দৃঢ় মননশীলতায় ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে প্রবল গণআন্দোলন তৈরি করতে সক্ষম হন। তখনকার সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদে ছাত্রলীগের সুদৃঢ় ভূমিকা থাকলেও অগ্রভাগকে আলোকিত করে রাখত ছাত্র ইউনিয়ন। তৎকালীন ঘটনাপ্রবাহের বাস্তবতায় এই নিরেট সত্যটিকে অস্বীকার করা যাবে না। তবে সবচেয়ে গৌরব, অহংকার ও আত্মবিশ্বাসের কথা হলো- শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, শেখ ফজলুল হক মনি, এনায়েতুর রহমান, কে এম ওবায়দুর রহমান, সিরাজুল আলম খান এবং পরবর্তীতে সৈয়দ মযহারুল হক বাকী, ও আব্দুর রাজ্জাক ছাত্রলীগের মাধ্যমে আন্দোলনের হাল ধরে সমগ্র বাংলাদেশকে ভিসুভিয়াসের মতো জ্বালিয়ে তোলেন। বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলনের প্রচন্ড তোড়ে হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট চিরতরে বাতিল হয়ে যায়। গণতন্ত্রের প্রতিশব্দ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কারারুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তিলাভ করেন। এখানে একটি কথা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক যে, ছাত্র আন্দোলনকে গণআন্দোলনে রূপদান করার এবং অভীষ্ট সৈকতে নোঙ্গর করার লক্ষ্যে একটি জাতীয় রাজনৈতিক ফ্রন্ট গঠনের প্রয়োজনীয়তা ও প্রেক্ষিত গড়ে ওঠে অনিবার্যভাবেই। এবং সেই লক্ষ্যমাত্রায় নূরুল আমিন সাহেবের নেতৃত্বে এনডিএফ নামে একটি রাজনৈতিক ঐক্যফ্রন্ট গড়ে ওঠে। এখানেও ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়।
৬২’র আন্দোলনে শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, শেখ ফজলুল হক মনি, এনায়েতুর রহমান, কেএম ওবায়দুর রহমান- এরা ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্বের মূর্ত প্রতীক ছিলেন। আন্দোলনের বেদীমূল সৃষ্টি তো বটেই, তাঁদের ব্যক্তিগত জীবনের কথোপকথন, চালচলন, ওঠাবসা- এমন নিখুঁত আদলে পরিমন্ডিত হতো যে, সবমিলিয়ে তারা ছাত্র আন্দোলনের আদর্শ পুরুষ ও অনুকরণীয় হয়ে উঠতে পেরেছিলেন। ৬ দফা প্রদানের পর সৈয়দ মাযহারুল হক বাকী, আব্দুর রাজ্জাক- এরাও ছাত্র-রাজনীতির ক্ষেত্রে বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠেন। পরিমার্জিত চিন্তার ও বুদ্ধির সৌকর্যে বাম রাজনীতির ধারাকে ছাপিয়ে ৬ দফার দাবিকে উচ্চকিত করতে তাঁরা সক্ষম হন। এই আন্দোলনের স্রোতধারায় ছাত্রজনতার আরও উচ্ছ্বসিত ও প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে গড়ে ওঠে ১১ দফার আন্দোলন। তাঁদের অকুতোভয় সাহস ও প্রত্যয়দৃঢ় দৃপ্ত চেতনায় পরবর্তীতে ৬৯-এর গণ-আন্দোলনের প্রচন্ড চাপে লৌহমানব খ্যাত আইয়ুব খানের পতনকে নিশ্চিত করে। তা সত্ত্বেও ইয়াহিয়া খানের নেতৃত্বে সামরিক শাসনের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসতে পারে নাই। তবুও ইয়াহিয়া খানের সামরিক শাসন ছিল অনেকটা ভোঁতা এবং মানুষের চেতনাটাও ছিল তীব্র এবং তীক্ষè। সামরিক শাসনের ভ্রুকুটিকে উপেক্ষা ও অগ্রাহ্য করার মতোই শানিত। সম্ভবত পাকিস্তানের সামরিক জান্তা মানুষের এই শানিত চেতনাটি উপলদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছিল। যার ফলে সামরিক শাসন জারি করার পরপরই ইয়াহিয়া খান ৭০-এর সাধারণ নির্বাচন ঘোষণা এবং জনসংখ্যার ভিত্তিতেই সাধারণ নির্বাচনের সুষ্পষ্ট রূপরেখা প্রদান করতে বাধ্য হন। ফলে গণ-আন্দোলন একটুখানি হোঁচট খেলেও মূলত পাকিস্তানের রাজনীতিতে একটা বিস্ময়কর বিজয় এনে দেয়। এই বিজয়ের আরেকটি বৈর্বক্তিক দিক হল, জনসংখ্যার ভিত্তিতে সংসদীয় আসন নির্ধারনের মাধ্যমে নির্বাচনটি অনুষ্ঠানের ঘোষণা। ফলে পূর্ব পাকিস্তানের সৌভাগ্যে জুটল ৩০০ আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসন।
১১ দফা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সমগ্র বাংলাদেশ গণসমুদ্রের ফেনিল চূড়ায় ভিসুভিয়াসের মতো জ্বলে ওঠে। আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিলেন ছাত্রনেতা আব্দুর রউফ, খালেদ মোহাম্মদ আলী ও তোফায়েল আহমেদ। তখনকার ছাত্র রাজনীতিতে ছাত্রলীগের একাধিপত্যের শুরু এখান থেকে।
আমরা পরবর্তীকালে যারা স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা বা ৪ খলিফা হিসেবে আন্দোলনের জ্বাজ্জল্যমান প্রতীকরূপে রাজনীতিতে প্রতিভাত হয়েছিলাম, আমাদের চিত্তের অনুরণন, নাড়ীর স্পন্দন, রক্তের শিরায় শিরায় যে ছন্দ সৃষ্টি হতো- তা বাঙালি জাতীয় চেতনারই বহিঃপ্রকাশ। এদেশের সকল আন্দোলনের বিশ্লেষণে এটি মরুভূমির নিষ্কলুষ সূর্যোদয়ের মতো ফুটে ওঠে যে, ছাত্রলীগই সকল আন্দোলনের অগ্রযাত্রী, উদ্ভাবক ও সারথি। বঙ্গবন্ধুকে তারা আন্দোলনে শুধু প্রণোদনাই প্রদান করেনি, বরং মূল শক্তি হিসেবে তার সমস্ত অগ্রযাত্রায় মূখ্য ভূমিকা পালন করেছে। ইতিহাসের অলঙ্ঘ্যনীয় বিচারে বাংলাদেশ, শেখ মুজিব এবং ছাত্রলীগ একটি অপরটির প্রতিশব্দ বা পরিপূরক হিসেবে প্রতিস্থাপিত হয়েছে।
১৯৪৮ সালের ৪ঠা জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের আনুষ্ঠানিক জন্মদিন। বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বেলিত ও উজ্জীবিত স্বাধীনতার ভ্রুণটির সৃষ্টি হয় ছাত্রলীগের গর্ভে। এ বাংলার রূপ-রস-গন্ধ ও মননের নির্যাস নিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদের যে ভ্রুণটি সেদিন জন্মলাভ করেছিল, তাই বাংলাভাষাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবির স্বর্ণালী চন্দন মেখে অস্তিত্বের আবীর মাখে। “এ মাটি আমার সোনা, আমি করি তার জন্মবৃত্তান্ত ঘোষণা”- এটি ছাত্রলীগের অযুত-নিযুত কর্মীর জন্য শুধু একটি স্লোগান ছিল না, বরং অস্তিত্বের স্বর্ণসৈকত ছিল। দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানেও বাঙালি চেতনার উন্মেষ ঘটানোর দুঃসাহসিকতা একটি অকল্পনীয় ব্যাপারই ছিল। অস্বীকার করার উপায় নেই, সমগ্র পাকিস্তানেই মুকুটহীন সম্রাট হিসেবে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ অধিষ্ঠিত ছিলেন। পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে নয়, বরং জিন্নাহ সাহেবের মধ্যাহ্নের সূর্যরশ্মির মতো প্রদীপ্ত ব্যক্তিত্বের আলোকরশ্মির প্রখরতা হৃদয়ঙ্গম করেই মহাত্মা গান্ধী তাঁকে কায়েদে আযম উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। ভারতকে অবিভক্ত রাখার অভিলাষ ও অভিপ্রায় করমচাঁদ গান্ধীর এতটাই প্রবল ও তীব্র ছিল যে, জিন্নাহ সাহেবকে তিনি অবিভক্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু জিন্নাহ সাহেব তার চিন্তা-চেতনা, মনন ও মননশীলতায় আপসহীন, অকুতোভয় ও এতটাই প্রত্যয়দৃঢ় ছিলেন যে, এ ধরনের প্রস্তাবনা জিন্নাহ সাহেবকে সামান্যতম দুর্বল করতে পারেনি, আকর্ষণও করতে পারেনি। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় তার এই প্রত্যয়দৃঢ় চেতনাবোধ নীল নভোনীলের প্রদীপ্ত সূর্যের মতোই উদ্ভাষিত ও প্রজ্জ্বলিত করে তোলে তার নেতৃত্বকে। তিনি নেতৃত্বের এমন শিখরচূড়ায় অবতীর্ণ হন যে, তার প্রতিটি আহ্বান এই উপমহাদেশের মুসলমানদের কাছে অলঙ্ঘ্যনীয় হয়ে দাঁড়ায়। জিন্নাহ সাহেব সত্যিকার অর্থে কায়েদে আযম বা মহান নেতায় পরিগণিত ও প্রতিষ্ঠিত হয়ে যান। মনে রাখতে হবে, মুসলিম লীগের রাজনীতিটাই ছিল প্রাসাদকেন্দ্রিক। নবাবদের সুরম্য প্রাসাদ আহসান মঞ্জিলের মতো নবাবী প্রাসাদে জন্মলাভ করা সংগঠনটি আভিজাত্যের দাম্ভিকতায় বুদ্ হয়ে থাকবে, এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু বাস্তব অর্থে তিনি তো পাকিস্তানের উভয় অংশের মানুষের হৃদয়ের সিংহাসনের অধিপতি ছিলেন। কিন্তু প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের কূটিল প্রয়াসে একটি নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করা এবং রাজনৈতিক জীবনে আলী ভ্রাতৃদ্বয়ের (শওকত আলী, মোহাম্মদ আলী) প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় গড়েওঠা ওই নেতৃত্ব কীভাবে পশ্চিম পাকিস্তানের পক্ষে একপেশে হয়ে গেলেন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অতি সাধারণ ছাত্র হিসেবে আজও তা আমার বোধগম্য হয় না। তবুও আমি বিদগ্ধ চিত্তে ও পরিতৃপ্ত হৃদয়ে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাবো এই কারণে যে, সেদিন তিনি ক্ষমতার নেশায় বুদ্ হয়ে বাঙালির অস্তিত্বকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা বানানোর অভিলাষ ব্যক্ত না করলে বাঙালি জাতীয় চেতনায় উজ্জীবিত আন্দোলনের পথপরিক্রমণের উন্মত্ততায় ছাত্রলীগের জন্ম হতো না। বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি এবং বাঙালি জাতীয় চেতনার উন্মেষ ব্যাপ্তি ও বিকাশ হতো না।
উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা বানানোর জিন্নাহ সাহেবের এই উক্তি তাৎক্ষণিক বা ক্ষণিকের চিন্তার ফসল ছিল না। তখন ক্ষমতায় টিকে থাকার অভিলাষকে চরিতার্থ করার জন্য মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দের প্রায় সকলেই এই নির্লজ্জ অভিলাষ ব্যক্ত করেন। আর ক্রমাগত জনসম্পৃক্ততা তৈরি করে তখনকার ছাত্রলীগ বাঙালি জাতীয়তাবাদের মনন তৈরির সাধনায় লিপ্ত হয়। তাইতো ভাষা আন্দোলনের বিশ্লেষকরা একমত হয়ে বলতে পেরেছিলেন, বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মেনে নাও, নয়তো আন্দোলনের মোকাবেলা কর। বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা না করলে রাজপথের বিদগ্ধ গণআন্দোলনের মাধ্যমে এ দাবি আদায় করে নেওয়া হবে। হয়েছেও তাই। সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারের বুকের রক্তে বাংলার মাটি রঞ্জিত হয়েছে। কিন্তু বুকের তাজা রক্তের মাধ্যমে এই ভাষার দাবি অর্জিতও হয়েছে। ছাত্রলীগের একটি অতি ক্ষুদ্র কর্মী হিসেবে এ অর্জন আমার কাছে প্রচন্ড অহংকারের। এ অর্জনের বিচ্ছুরিত আলোকরশ্মিতেই পথ দেখে আমরা সায়ত্বশাসন থেকে স্বাধিকার, স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতার অগ্নিঝরা পথে হাঁটতে পেরেছিলাম। এ পথে ছোটখাটো দ্বন্দ্ব ও মতানৈক্য আমাদের মধ্যে লেগেই থাকত। তার মধ্যে ৭০-এর নির্বাচনের পূর্বে কোন ম্যান্ডেট ছাড়াই স্বাধীনতার আহ্বান জানানোর রোমান্টিক অভিলাষটি প্রচন্ড চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। এমনিতেই সমগ্র বিশ্বব্যাপী তখন সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ঝড়ো হাওয়া বইছিল। তার প্রচন্ড উত্তাপের প্রভাব তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র আন্দোলনে পড়াটাও স্বাভাবিক। আমি ছাত্রলীগের একজন কর্মী। সৌভাগ্যক্রমে তখন ছাত্রলীগের সভাপতি পদে অধিষ্ঠিত ছিলাম। স্বাধীনতার অববাহিকায় একজন চারণ কবির মতো গান গেয়ে ফেরার বিস্তৃত সুযোগ আমার ভাগ্যে এসেছিল। আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এ প্রজন্মকে আমি অবহিত করতে চাই, সেদিনের সেই অগ্নিঝরা সময়ে আবেগাপ্লুত হৃদয়কে সযত্নে নিয়ন্ত্রণে এনে সম্পূর্ণ সঠিক ধারায় পরিচালিত করতে পেরেছিলাম বলেই আন্দোলনের সোনারতরী সফলতার তীর খুঁজে পেয়েছে। ৭০-এর নির্বাচনের গণম্যান্ডেটের রায় আন্দোলনের মূর্ত প্রতীক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের দুর্দমনীয় ব্যক্তিত্ব এবং ছাত্রলীগের সূক্ষ্ম ও ত্রুটিবিমুক্ত অসংখ্য রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রতিপালনের মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীনতার প্রদীপ্ত সূর্যটিকে আলিঙ্গন করতে পেরেছি। অনেক তপ্ত-তাজা প্রাণের রক্ত ঝরেছে, অনেক সতী-সাধ্বী রমনীর সতীত্ব বিসর্জিত হয়েছে। স্বাধীনতার সূর্যের বিকীর্ণ অগ্নিকণায় বাঙালির সব ক্ষতচিহ্নগুলো মুছে দিয়ে স্বাধীনতার বিমূর্ত অস্তিত্বকে মূর্ত করেছে। অবস্থার প্রেক্ষাপটে নতুন প্রজন্মকে আমার বারবার বলতে ইচ্ছে করে, এই সুদীর্ঘ স্বাধীনতা আন্দোলনের মূর্ত প্রতীক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আর তার সূক্ষ্ম কারিগর ছিল ছাত্রলীগ। রাতের সব তারা যেমন লুকিয়ে থাকে দিনের আলোর গভীরে, তেমনি স্বাধীনতার চেতনাটি লুকিয়ে ছিল ছাত্রলীগের মননে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনকালে যখন ছাত্রলীগ বা স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নামটি উচ্চারিত হয় না, তখন আমার হৃদয়টি দুমড়ে-মুচড়ে যায়Ñ কুঁকড়ে কেঁদে ওঠে। বঙ্গবন্ধুকে ছোট করার জন্য নয়, বরং তাঁর কর্মময় জীবনটিকে শিল্পীর আঁচড়ে প্রতিভাত করার জন্যই ছাত্রলীগের সমস্ত রাজনৈতিক কর্মকা-কে নিবিড়ভাবে তুলে আনতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, ইতিহাস একদিন কথা বলেই। আমি চোখ বুজে হৃদয়ের ধড়কানিতে শুনতে পাই, বঙ্গবন্ধুর সেই অমোঘ উচ্চারণ, “ছাত্রলীগের ইতিহাসÑ বাংলার স্বাধীনতার ইতিহাস”।  
বঙ্গবন্ধুর এই কথার সূত্র ধরেই আমার হৃদয়ের অনুরণনকে আমি ব্যক্ত করতে চাই। বঙ্গবন্ধুকে বটবৃক্ষের সাথে তুলনা করলে, তার মাটিতে প্রোথিত শিকড় হলো ছাত্রলীগ। তাকে বিশাল সাগরের সাথে তুলনা করলে, তার উচ্ছ্বসিত উর্মিমালা হলো ছাত্রলীগ। তিনি বাংলা, বাংলাই তাঁর- এই ছন্দে কোন কবি যদি শেখ মুজিবকে অভিহিত করেন, তবে তার অস্তিত্বের সমস্ত শরীর থেকে বেরিয়ে আসবে দোঁআশ মাটির পূত-পবিত্র গন্ধ। মনে হবে সারাবাংলার শ্যামল-সুন্দর ছবিটি তার অবয়বে গাঁথা। এগুলোর নিপুণ শিল্পী এবং শৈল্পিক মনন হলো ছাত্রলীগ। এখানে সংগঠনের মতভেদের প্রশ্ন আসে না। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শ তো অবশ্যই থাকবে। এই ভিন্নতা বাংলাদেশের গণতন্ত্রেরই বিকাশ ঘটাবে। কিন্তু শেখ মুজিবের মহান অস্তিত্বকে কোনভাবেই খাটো করবে না। তবে বঙ্গবন্ধুর আন্দোলনের মহান পথপরিক্রমণে যারা সহযাত্রী ও সহকর্মী ছিলেন- তাদের অবস্থানকে নিশ্চিহ্ন করার যেকোন অভিলাষ তাঁকে খাটো করবে, স্বাধীনতা আন্দোলনের সূর্যস্নাত গৌরবকে ম্লান করে দেবে। ৪ঠা জানুয়ারি ছাত্রলীগের আনুষ্ঠানিক জন্মের উষালগ্নের দিনে নতুন প্রজন্মের কাছে আমার প্রত্যাশা, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সাফল্যকে তুতে ধরতে হলেই ছাত্রলীগের বিশাল কর্মযজ্ঞকে যথাযথভাবে তুলে ধরতে হবে। বঙ্গবন্ধু যে চেতনার মূর্ত প্রতীক, সেই চেতনার বাস্তবায়নের কারিগর ছাত্রলীগকে পাশ কাটিয়ে ইতিহাসের সঠিক বিশ্লেষণ ও বর্ণনা হয় না। বরং একটি বিকৃত মানসিকতার উদগ্র চেতনাই প্রতিভাত হয়।
বর্তমানে সরাসরি রাজনীতি না করলেও রাজনীতি আমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে, অনুভূতির পরতে পরতে। রাজনীতির চেতনায় উজ্জীবিত আমার সমগ্র সত্তা আমাকে একটি মুহুর্ত থেকেও রাজনৈতিক চেতনাবিমুক্ত হতে দেয় না। তাই এই প্রজন্মের কাছে আমার শাশ্বত দাবী রয়েই যায়, তোমাদের গৌরবদীপ্ত অতীতকে জানার চেষ্টা কর। সেদিনের সংগ্রাম ছিল ভাষা, স্বাধিকার ও স্বাধীনতার। আজকের সংগ্রাম হোক বিশ্বাসের, দেশপ্রেমের ও জ্ঞানচর্চার মাধ্যমে দেশকে সম্মুখের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। জীবনসায়াহ্নে আমার শেষ আশীর্বাণী, সেদিনের যে ছাত্রলীগ স্বাধীনতা এনেছে, বাঙালি জাতীয় চেতনার মূর্তপ্রতীক সেই ছাত্রলীগ স্বাধীনতার সুফলকে প্রান্তিক জনতার দুয়ারে পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে অগ্রদূতের ভূমিকা পালন করুক। মূল্যবোধের কোন অবক্ষয় তাদের উজ্জীবিত হৃদয়কে অন্ধকারে ঢেকে না দিক। প্রগতিশীল চেতনাকে বিবর্ণ না করুক। যার অতীত আছে, তার বর্তমান কলঙ্কিত হতে পারে না, ভবিষ্যত অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে পারে না।
    
 লেখক : স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ নেতা ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি।



   শেয়ার করুন
   আপনার মতামত দিন
     উপসম্পাদকীয়
শৃঙ্খলার নিগূঢ় থেকে মুক্তিই প্রত্যাশা
.............................................................................................
প্রসঙ্গ স্বশিক্ষিত ও স্বল্প শিক্ষিত প্রার্থী
.............................................................................................
অপার সম্ভাবনাময় নদীপথকে যেকোন মূল্যে বাঁচাতে হবে
.............................................................................................
বাংলাদেশে রেলপথ বিকাশের ইতিহাস
.............................................................................................
কেন বাংলা টাইপিংয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না
.............................................................................................
আত্মহত্যা উদ্বেগ করণীয়
.............................................................................................
বিপণনের অভাবে ক্ষতির সম্মুখীন কৃষিখাত
.............................................................................................
দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্রঋণ: তৃণমূল পর্যায়ে সুদের বিস্তৃতি
.............................................................................................
কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পরিবারের দায়িত্বশীলতা দরকার
.............................................................................................
প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা
.............................................................................................
পুঁজিবাদী পশ্চিমা বিশ্ব বনাম সমাজতান্ত্রিক রাশিয়ার দ্বন্দ্ব
.............................................................................................
১৫ আগস্টের ধারাবাহিকতায় জেল হত্যা ও গ্রেনেড হামলা
.............................................................................................
সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ে উঠুক
.............................................................................................
মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু শারদীয় দুর্গোৎসব
.............................................................................................
জিপিএ ফাইভ, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আর বিসিএসের নামই কি সফলতা!
.............................................................................................
আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে মৃৎশিল্প
.............................................................................................
কেন ভর্তি হবেন ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগে
.............................................................................................
বাংলাদেশ ও জ্বালানি তেল
.............................................................................................
বিদ্রোহী কাজী নজরুল
.............................................................................................
চা শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি ও মানবাধিকার প্রদান করতে হবে
.............................................................................................
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় : প্রজন্মে প্রজন্মের যাত্রা
.............................................................................................
২১ আগস্ট ১৫ আগস্টেরই ধারাবাহিকতা
.............................................................................................
পারিবারিক ব্যবস্থা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে: নেপথ্যে কারণ...
.............................................................................................
ভয়াবহ একটি দিবস ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট
.............................................................................................
১২ আগস্ট আন্তর্জাতিক যুব দিবস : বাংলাদেশ উন্নত বিনির্মাণের প্রকৃত কারিগর যুবকেরা
.............................................................................................
বৃদ্ধাশ্রম নয় বরং প্রয়োজন সন্তানের ভালোবাসার
.............................................................................................
শত বাঁধা পেরিয়েও এগিয়ে যাচ্ছে জবি
.............................................................................................
নিরাপদ মাছে ভরবো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ
.............................................................................................
গৌরব, আত্মমর্যাদা ও আত্মবিশ্বাসের পদ্মা সেতু
.............................................................................................
আত্মহত্যাকে না বলি জীবনকে উপভোগ করতে শিখি
.............................................................................................
আত্মহত্যা নয়, বেঁচে থাকায় জীবন
.............................................................................................
আপোষহীন আবুল মাল মুহিত
.............................................................................................
প্রস্তাবিত গণমাধ্যমকর্মী আইন ‘কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা’
.............................................................................................
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু
.............................................................................................
জগন্নাথের গর্ব ভাষা শহীদ রফিক
.............................................................................................
ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ এবং সম্ভাব্য প্রস্তুতি
.............................................................................................
দেশকে এগিয়ে নিতে ছিন্নমূল পথশিশুদের পুনর্বাসন করতে হবে
.............................................................................................
বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু ও ছাত্রলীগ একটি অপরটির পরিপূরক
.............................................................................................
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পূর্বশর্ত স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহন
.............................................................................................
ইউপি নির্বাচন : দলীয় প্রতীক তৃণমূলে দলের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে!
.............................................................................................
টিকটক এবং সামাজিক অবক্ষয়
.............................................................................................
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প
.............................................................................................
করোনায় বেকারদের অবস্থা শোচনীয়
.............................................................................................
অবক্ষয়ের নতুন ফাঁদ ‌টিকটক
.............................................................................................
রাষ্ট্র, আইন এবং রোজিনারা
.............................................................................................
পথশিশুরাও মানুষ
.............................................................................................
অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও চর উন্নয়ন
.............................................................................................
নির্ভীক পদচারণার ৫০ বছর
.............................................................................................
সর্বত্র জয় হোক বাংলা ভাষার
.............................................................................................
বাঙালির চেতনা ও প্রেরণার প্রতীক একুশে ফেব্রুয়ারি
.............................................................................................

|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
    2015 @ All Right Reserved By dailyswadhinbangla.com

Developed By: Dynamic Solution IT