শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল 2024 বাংলার জন্য ক্লিক করুন
  
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|

   উপসম্পাদকীয়
  বৃদ্ধাশ্রম নয় বরং প্রয়োজন সন্তানের ভালোবাসার
  11, August, 2022, 2:14:9:AM

সাফা আক্তার নোলক
জীবনের শেষ অধ্যায়ে; বৃদ্ধ বয়সে খারাপের ভালো হিসেবে বেশ পরিচিত বৃদ্ধাশ্রম। বৃদ্ধাশ্রম হলো বৃদ্ধ মানুষের আশ্রয়স্থল; সেসব বৃদ্ধদের যারা তথাকথিত সন্তান হতে চ্যুত হয়ে আজ একা।

মানবতার বিপরীতে বাস্তব জীবনের কলঙ্কময় দিকের দিকে আঙুল তুলে দাড়িয়ে আছে প্রতিটি বৃদ্ধাশ্রম। মানবতা পদদলিত এই বৃদ্ধাশ্রম গুলো মনে করিয়ে দেয় ক্রন্দনরত মায়ের মুখ ও বুক ভরা আশা নিয়ে করুণ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকা বাবার চোখের লুকানো অশ্রু। সারাটা জীবন সন্তানের জন্য উজার করে দিলেও, জীবনের শেষ অধ্যায়ে এসে তাদের নিয়ে বেঁচে থাকার বৃথা চেষ্টা। সারা জীবন যে বাবা-মা এর অবদান ছাড়া বেঁচে থাকা দায় ছিল, আজ যেন সন্তানদের বেঁচে থাকার পথে তারা এক বিশাল বোঝার সমান।

বৃদ্ধাশ্রম এর একটি প্রাণ ও ভালো নেই। তাদের মনে গাঁথা একরাশ দুঃখ, যা হয়তো কোনো একদিন আর থাকবে না এ আশা নিয়ে কেউ, আবার কেউ হয়তো সকল আশা ভুলে এক করুণ জীবনের শেষ প্রান্তে দাড়িয়ে আছে। সারা বৃদ্ধাশ্রম জুড়ে আছে জীবনের শেষ প্রান্তে আসা অতৃপ্ত বৃদ্ধদের হাহাকার। সেখানে কেউ চেয়ে আছে নিজ সন্তানের করুণা করা এক দিনের আশায়, আবার কেউ হাফ ছাড়ছে রুদ্ধশ্বাসে বন্দি পরিস্থিতি থেকে আজ কিছুটা স্বস্তিতে এই ভেবে। কিন্তু ভেতরে তাদের আজ ও হাহাকার।

আমাদের সমাজের তথাকথিত শিক্ষিত ব্যক্তিরাও আজ এ কাজে পিছিয়ে নেই। তাদের কাছেও তাদের বাবা-মা আজ তাদের বোঝার সমান। কি অমানবিক আচরণ! শিক্ষা তাদের শিক্ষিত করতে পারেনি। বৃদ্ধাশ্রম এর প্রতিটি বৃদ্ধের কান্না মনে করিয়ে দেয় আমরা মানবিকতার কতটা শেষ পর্যায়ে আছি। তাদেরকে তাদের কথা জিজ্ঞাসা করা হলে তারা তাদের কান্না আর থামাতে পারে না। এ দৃশ্যটি যেন সমাজের এক করুণ ও অঘটনীয় দৃশ্য। আমরা আমাদের বাবা-মা এর করুণ চাহনির সমাধান দিতে পারিনি। তাদের অমলিন হাসি রক্ষা করতে আজ আমরা ব্যর্থ। এ কথা গুলো হয়তো আমাদের অনেকের মনে নাড়া দিলে ও কিছুক্ষণ পর ঘোর কেটে গেলে আমরা আবারো ব্যস্ত তাদের প্রতি এই নির্মমতার পরিচয় দিতে।

বর্তমান চিন্তাধারার প্রেক্ষিতে বাবা-মা এর চিন্তা-ভাবনা কেবল অন্তরায় সৃষ্টি করছে - বর্তমান প্রজন্মের এই অসুস্থ চিন্তাভাবনার ফল হলো বৃদ্ধাশ্রম। এসব অস্বস্তিকর চিন্তা মানুষকে ঠেলে দিচ্ছে এরকম অমানবিক কার্যকলাপে। ছোটবেলা থেকে অসীম ভালোবাসা দিয়ে আমাদের একটু একটু করে বড় করে তুলেছে বাবা-মা। কিন্তু আমরা কি তার পরিচয় দিচ্ছি নাকি এর বিনিময়ে তাদের পাওনা হিসেবে তাদেরকে উপহার দিচ্ছি বৃদ্ধাশ্রম।

এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ১৯৯০ সালে বিশ্বে প্রবীণদের সংখ্যা ছিল ৫০ কোটি। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১১০ কোটিতে। ২০৩০ সালে এর সংখ্যা হবে ১৫০ কোটি এবং ২০৫০ সালে প্রবীণদের সংখ্যা ২০০ কোটিকে ও ছাড়িয়ে যাবে। বাংলাদেশে বর্তমান প্রবীণদের সংখ্যা প্রায় ১.৫ কোটি। ২০২৫ সালে প্রবীণদের সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ২ কোটি। ২০৫০ সালে এই প্রবীণ সংখ্যা হবে প্রায় ৪.৫ কোটি এবং ২০৬১ সালে এ সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে প্রায় ৬ কোটিতে। জনসংখ্যার প্রায় ৬ শতাংশ প্রবীণ। এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে আজ আমরা অচিরেই দূরে ফেলে দিয়েছি। প্রায় ৮৮ ভাগ প্রবীণদের তাদের সন্তানদের সাথে কোনো যোগাযোগ নেই। চোখ ও মুখে তাদের শুধু হতাশা যা কখনোই কাম্য নয়।

পৃথিবীর প্রথম বৃদ্ধাশ্রম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল প্রাচীন চীনে। শান রাজবংশের উদ্যোগ এ ঘরছাড়া অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছিল। খ্রিষ্টপূর্ব ২২০০ শতকে পরিবার থেকে বিতারিত বৃদ্ধদের জন্য আলাদা এই আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করে ইতিহাসে আলাদা জায়গাই দখল করে নিয়েছিল এই শান রাজবংশ।

বাংলাদেশে বর্তমানে বৃদ্ধাশ্রম এর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু এর সাথে মানুষের মানসিকতার কোনো উন্নতি হচ্ছে না। যার ফলে বৃদ্ধাশ্রম কমানোর দরকার হলেও তা হচ্ছে না। বাংলাদেশের একটি সরকারি বৃদ্ধাশ্রম রয়েছে যা, গাজীপুরে অবস্থিত । অন্য দিকে বেসরকারি পর্যায়ে অনেক গুলো বৃদ্ধাশ্রম রয়েছে। সরকারি বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রটি সমাজ সেবা অধিদপ্তর এর অধীনে পরিচালিত হয়, আর বেসরকারি গুলো ব্যক্তিমালিকানা বা বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত হয়। বাংলাদেশের বৃদ্ধাশ্রম এর পরিমাণ এতো বৃদ্ধি পাবে তা আগে কখনো চিন্তা করা হয়নি।

প্রতিবছর ১ অক্টোবর বিশ্ব প্রবীণ দিবস পালন করা হয়। যা বৃদ্ধের বিভিন্ন অধিকার জাগরণের উদ্দেশ্যে পালন করা হয়।

বৃদ্ধারা কোনো বোঝা কিংবা ফেলনার জিনিস নয়। বরং তারা সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই তাদের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। বৃদ্ধাশ্রমে বৃদ্ধারা নিজের মধ্যে ভীষণ একা। প্রতিটি সন্তানের উচিত তার বাবা-মা এর প্রতি তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা। তাদের সর্বোচ্চ স্বাধীনতা ও শান্তি নিশ্চিত করা। এই অমানবিক আচরণ থেকে আমরা যেদিন মুক্তি পাবো সেদিন সমাজে শান্তি ফিরে আসবে। কোনো বৃদ্ধের চোখে থাকবে না করুণ চাওয়া, মনে থাকবে না অতৃপ্ত আশা। বরং তারাও হাসবে তাদের প্রাণখুলে। আশ্রয়স্থল নিয়ে তাদের মধ্যে থাকবে না আর অধীর চিন্তা ও অনিশ্চয়তা।

দর্শন বিভাগ,
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।



   শেয়ার করুন
   আপনার মতামত দিন
     উপসম্পাদকীয়
শৃঙ্খলার নিগূঢ় থেকে মুক্তিই প্রত্যাশা
.............................................................................................
প্রসঙ্গ স্বশিক্ষিত ও স্বল্প শিক্ষিত প্রার্থী
.............................................................................................
অপার সম্ভাবনাময় নদীপথকে যেকোন মূল্যে বাঁচাতে হবে
.............................................................................................
বাংলাদেশে রেলপথ বিকাশের ইতিহাস
.............................................................................................
কেন বাংলা টাইপিংয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না
.............................................................................................
আত্মহত্যা উদ্বেগ করণীয়
.............................................................................................
বিপণনের অভাবে ক্ষতির সম্মুখীন কৃষিখাত
.............................................................................................
দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্রঋণ: তৃণমূল পর্যায়ে সুদের বিস্তৃতি
.............................................................................................
কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পরিবারের দায়িত্বশীলতা দরকার
.............................................................................................
প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা
.............................................................................................
পুঁজিবাদী পশ্চিমা বিশ্ব বনাম সমাজতান্ত্রিক রাশিয়ার দ্বন্দ্ব
.............................................................................................
১৫ আগস্টের ধারাবাহিকতায় জেল হত্যা ও গ্রেনেড হামলা
.............................................................................................
সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ে উঠুক
.............................................................................................
মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু শারদীয় দুর্গোৎসব
.............................................................................................
জিপিএ ফাইভ, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আর বিসিএসের নামই কি সফলতা!
.............................................................................................
আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে মৃৎশিল্প
.............................................................................................
কেন ভর্তি হবেন ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগে
.............................................................................................
বাংলাদেশ ও জ্বালানি তেল
.............................................................................................
বিদ্রোহী কাজী নজরুল
.............................................................................................
চা শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি ও মানবাধিকার প্রদান করতে হবে
.............................................................................................
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় : প্রজন্মে প্রজন্মের যাত্রা
.............................................................................................
২১ আগস্ট ১৫ আগস্টেরই ধারাবাহিকতা
.............................................................................................
পারিবারিক ব্যবস্থা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে: নেপথ্যে কারণ...
.............................................................................................
ভয়াবহ একটি দিবস ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট
.............................................................................................
১২ আগস্ট আন্তর্জাতিক যুব দিবস : বাংলাদেশ উন্নত বিনির্মাণের প্রকৃত কারিগর যুবকেরা
.............................................................................................
বৃদ্ধাশ্রম নয় বরং প্রয়োজন সন্তানের ভালোবাসার
.............................................................................................
শত বাঁধা পেরিয়েও এগিয়ে যাচ্ছে জবি
.............................................................................................
নিরাপদ মাছে ভরবো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ
.............................................................................................
গৌরব, আত্মমর্যাদা ও আত্মবিশ্বাসের পদ্মা সেতু
.............................................................................................
আত্মহত্যাকে না বলি জীবনকে উপভোগ করতে শিখি
.............................................................................................
আত্মহত্যা নয়, বেঁচে থাকায় জীবন
.............................................................................................
আপোষহীন আবুল মাল মুহিত
.............................................................................................
প্রস্তাবিত গণমাধ্যমকর্মী আইন ‘কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা’
.............................................................................................
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু
.............................................................................................
জগন্নাথের গর্ব ভাষা শহীদ রফিক
.............................................................................................
ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ এবং সম্ভাব্য প্রস্তুতি
.............................................................................................
দেশকে এগিয়ে নিতে ছিন্নমূল পথশিশুদের পুনর্বাসন করতে হবে
.............................................................................................
বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু ও ছাত্রলীগ একটি অপরটির পরিপূরক
.............................................................................................
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পূর্বশর্ত স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহন
.............................................................................................
ইউপি নির্বাচন : দলীয় প্রতীক তৃণমূলে দলের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে!
.............................................................................................
টিকটক এবং সামাজিক অবক্ষয়
.............................................................................................
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প
.............................................................................................
করোনায় বেকারদের অবস্থা শোচনীয়
.............................................................................................
অবক্ষয়ের নতুন ফাঁদ ‌টিকটক
.............................................................................................
রাষ্ট্র, আইন এবং রোজিনারা
.............................................................................................
পথশিশুরাও মানুষ
.............................................................................................
অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও চর উন্নয়ন
.............................................................................................
নির্ভীক পদচারণার ৫০ বছর
.............................................................................................
সর্বত্র জয় হোক বাংলা ভাষার
.............................................................................................
বাঙালির চেতনা ও প্রেরণার প্রতীক একুশে ফেব্রুয়ারি
.............................................................................................

|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
    2015 @ All Right Reserved By dailyswadhinbangla.com

Developed By: Dynamic Solution IT