আল্লাহ তায়ালা সামর্থ্যবানদের জন্য কোরবানী ফরজ করেছেন। পবিত্র ইদুল আজহাও আসন্ন। সামর্থ্যবান ব্যক্তিরা ইতিমধ্যেই কোরবানীর পশু ক্রয় করা শুরু করেছেন। তবে বিদ্যমান করোনা সংকটের কারনে অর্থনৈতিক দূরবস্থার ফলে গতবারও যারা কোরবানী দিয়েছেন তাদের অনেকেই এবার কোরবানী দেবেন না এবং দিবেন কি দেবেন না, এমন দ্বিধাদ্বন্ধেও আছেন অনেকে। আবার অনেকেই হয়তো সামাজিক মর্যাদা অক্ষুণœ রাখার জন্য যেভাবেই হোক কোরবানী করবেন। কিন্তু যারা একেবারেই অপারগ, তারা কোরবানী করা থেকে বিরত থাকবেন। অর্থনৈতিক সমস্যার মাঝে কোরবানী করা আবশ্যকও নয়।
বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ বাংলাদেশে হানা দেওয়ার পর থেকেই মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা ব্যাহত হয়েছে। দীর্ঘদিনের লকডাউনের সময় মানুষ কর্মহীন হয়ে ঘরে অবস্থান করেছে। চলতি জুলাই মাসের শুরু থেকে সরকার লকডাউন তোলে দিলে মানুষ স্বাভাবিক কাজকর্ম চালু করলেও অর্থনৈতিক যে সংকট তৈরী হয়েছে তা থেকে মুক্তি পেতে দীর্ঘ সময় লাগবে। করোনাকালীন সময়ে পবিত্র ইদুল ফিতর অনেকটা নিরবেই উদযাপিত হয়েছে। ইদুল ফিতরে নতুন জামা কেনার হিড়িক পরলেও এবার ছিলো ব্যতিক্রম। পবিত্র ইদুল আজহায় নতুন জামা কেনার তাগাদা না থাকলেও কোরবানী করতে হয়, যেখানে শরীকে কোরবানী দিলেও ন্যুনতমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার প্রয়োজন, বর্তমান দূরবস্থায় যা অনেকের নিকট অসাধ্য ব্যাপার।
আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় একটি অত্যন্ত ভালো বিষয় যে, প্রতি বছর কোরবানী করার পর স্ব স্ব গোত্র ও প্রতিবেশীদের মাঝে কোরবানীর মাংস বিতরণ করা হয়। যদিও এটি শুধুমাত্র সামাজিক নয়, ধর্মীয় বিধানও বটে। অন্যান্যবার যেসকল মানুষজন কোরবানী দিতে পারতো না, তারা এবারও হয়তো দিতে পারবে না। আবার বিদ্যমান সংকটের কারনে গত বছর কোরবানী দেওয়া অনেকেই এবার কোরবানী দিতে পারবে না। যাদেরকে আমরা মধ্যবিত্ত বা নি¤œমধ্যবিত্ত বলি, তাদের মধ্যে যারা এবার কোরবানী দিতে পারবে না। তাদের সাথে স্বেচ্ছায় নিজ উদ্যোগে কোরবানীর আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়া এবার বেশি জরুরী।
প্রতিবেশীর হক সম্পর্কে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে সুস্পষ্ট ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। হযরত ইবনে আববাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল (সঃ) বলেছেন, ঐ ব্যক্তি মুমিন নয় যে পেটপুরে খায় অথচ তার পাশের প্রতিবেশী না খেয়ে থাকে। (মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস ২৬৯৯; আল আদাবুল মুফরাদ, হাদীস ১১২)। রাসুল (সঃ) বলেছেন, জিব্রাইল (আ.) আমাকে প্রতিবেশীর হকের ব্যাপারে এত বেশি তাকিদ করেছেন যে, আমার কাছে মনে হয়েছে প্রতিবেশীকে মিরাছের অংশিদার বানিয়ে দেয়া হবে। (সহীহ বুখারী ৬০১৪;সহীহ মুসলিম ২৫২৪)। করোনা মহামারির সময়ে অন্যান্য সময়ের চেয়েও বেশি সুদৃষ্টি দিতে হবে দরিদ্র প্রতিবেশীদের দিকে।
আগামী ১লা আগষ্ট বাংলাদেশে পবিত্র ঈদুল আজহা (কোরবানী ইদ) উদযাপিত হবে। কোরবানীর পশু যবাই করা হবে ইদের দিন থেকেই। আমরা যেন আমাদের অসামর্থ্যবান প্রতিবেশীদের হক তাদেরকে পুংখানুপুঙ্খ ভাবে বুঝিয়ে দেই। তাদেরকে নিয়ে আনন্দের সাথে ইদ উদযাপন করতে যেনো কার্পণ্য না করি। করোনা সংকটকালীন সময়ে অসামর্থ্যবান প্রতিবেশীদের নিয়ে পবিত্র ইদুল আজহা উদযাপনের মাধ্যমে দেশব্যাপী মানবতার উৎকৃষ্ঠ উদাহরণ তৈরী হোক আরো একবার।
শিক্ষার্থী ডিপ্লোমা ইন জার্নালিজম বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব জার্নালিজম অ্যান্ড ইলেকট্রনিক মিডিয়া (বিজেম) কাটাবন, ঢাকা।