বুধবার, ২৪ এপ্রিল 2024 বাংলার জন্য ক্লিক করুন
  
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|

   এক্সক্লুসিভ
  রাহু গ্রাসে সাংবাদিক সমাজ, বানানো হচ্ছে শ্রমদাস
  7, August, 2022, 10:45:49:AM


লিখছি বটে, পড়ার নিশ্চয়তায়  আশহুত।তারপরও চেষ্টা অব্যহত ও অবারিত করছি। ধৈর্য ধরে লেখাটি পডার অনুরোধ রাখছি। নিজেদের রক্ষা করার স্বার্থে বিষয়টি জানার ও সহয়তার অনুরোধ রাখছি। দাবি করছি প্রতিবাদ করার, না হলে সকলকে চরম মূল্য দিয়েও বর্তমানকে ফিরিয়ে আনা হবে সুদুর পরাহত। সকল সক্ষমতা হবে পরাজিত। সাংবাদিকদের পরিণতি দড়িবিহীন বন্দিদশায় অপেক্ষমান। ঘর্মাক্ত ও ক্ষতবিক্ষত শরীরে অট্টহাসির সাথে লবণ মাখার প্রস্তুতি সম্পন্ন।কাজটি হচ্ছে নিজস্ব জাতপাত দিয়েই; এটা করতে যাদের যোগ্যতার ঘাটতি নেই। গরম কথামালা, মুখে জীবন দান, ভোটের হালখাতা ঠিক রাখতে সর্বস্ব দানের কপট প্রতিশ্রুতি; অবশেষে ফসল ঘরে তুলতে জী হুজুর জী হুজুর অবস্থান।
গত ২১ জুলাই বৃহস্পতিবার রাতে সময় টিভির সংবাদে বিএফইউজেসহ অন্যান্য সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ গণমাধ্যম আইনের সংশোধনী মাননীয় তথ্য মন্ত্রীর হাতে অর্পণ করেছে। নিউজটি দেখে বিচলিত হলাম। নিউজে দেখানো ছবিতে ২/১জন নেতার সঙ্গে আলাপচারিতায় রীতিমত হতভম্ভ, হতবিহবল, কিংকর্তব্যবিমূঢ়।
গত ২১ জুলাই বিকালে বিএফইজের নেতৃবৃন্দ ডিআরইউতে গণমাধ্যম আইনের সংশোধনী সভায় ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক আইনের সংশোধনী দিতে আরো সময়ের প্রয়োজন উল্লেখ করায় এক শীর্ষ নেতা রাগান্বিত হয়ে সভা ছেড়ে চলে যান। অপর শীর্ষ নেতা আরও দুইদিন পর সময় নির্ধারণ করেন। সবাই একত্রে মাননীয তথ্য মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সংশোধনী দেওয়ার সময় বাড়িয়ে নিয়ে আসার প্রস্তাবে সকল নেতৃবৃন্দসহ সচিবালয়ে মাননীয় তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান। এসময় নেতৃবৃন্দ জানতে পারেন মন্ত্রী রবিবার ঢাকায় থাকবেন না। তখন শীর্ষ নেতার কথামত পরবর্তী রোববার সংশোধনী দেওয়া ও সংবাদ প্রচারের সিদ্ধান্তে সেদিনই মন্ত্রীর হাতে সংশোধনী দেওয়ার একটি ডেমি ছবি তুলে রাখার প্রস্তাবে নেতৃবৃন্দ মন্ত্রীর সঙ্গে আইনের সংশোধনীটি হস্তান্তর করার ছবি তোলেন। উক্ত ডেমি ছবি দিয়ে ২১ জুলাই রাতেই মন্ত্রীর হতে নেতৃবৃন্দ সংশোধনী দিয়েছে শিরোনামে সংবাদ প্রচার করা হয় যা এক নিকৃষ্ট প্রতারণা।
প্রস্তাবিত গণমাধ্যম আইনটি সারা দেশের সাংবাদিক সমাজের ভবিষ্যত, নীতি নির্ধারণ, রুটি,রুজি ও সাংবিধানিক প্রশ্ন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এই প্রতারণামূলক কাজটি সম্পূর্ণ সংগঠনের গঠনতন্ত্র বিরোধী। সাধারণ সাংবাদিকদের প্রশ্ন কেন ২/৩ জন শীর্ষ নেতার এই ব্যস্ততা, কেন এই চতুরতা, কেন এই হটকারিতা? এটা কি কোন দায় বা দেনা পরিশোধ বা প্রাপ্তির নিশ্চয়তার বিষয়?
গত ২২ জুলাই বিএফইউজের গণমাধ্যম আইনের সংশোধনটি পড়ে হাসবো না চিল্লায়ে কান্না করবো; নাকি উন্মাদ হয়ে দৌড় দিব- তাই ভাবছি। তবে সাধারণ সাংবাদিকদের মানষপটে জন্ম দিয়েছে একাধিক প্রশ্নের। ভোটে নির্বাচিত নেতৃবৃন্দের কেন এমন আচারণ? কেন এই আইনটি নিয়ে এত লুকোচুরি, গোপনীয়তা, হঠকারিতা, ব্যস্ততা? কেন এই আইন নিয়ে নেতৃবৃন্দ অপপ্রচার ও ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছেন? কেন এই আইনের সঠিক ব্যাখ্যা বুঝতে সাধারণ সাংবাদিকদের দ্বিধাদ্বন্দ্বে ফেলছেন? কেন এই আইনের বর্তমান ভবিষ্যত বা সঠিক ব্যাখ্যা সাধারণ সাংবাদিকদের সামনে নেতৃবৃন্দ দিচ্ছেন না? কেন আইনগত উত্তর দিচ্ছেন না? সাধারন সদস্য বা সাংবাদিকদের উন্মুক্ত মতামত না নিয়ে বা চুলচেরা বিশ্লেষণ না করে সবাইকে আড়ালে রেখে এই আইন পাশ করার জন্য এত তৎপর হয়েছেন। সাংবাদিক সমাজের স্বার্থে প্রস্তাবিত এই আইন প্রত্যাহার দাবীতে আন্দোলন করলে কেন উনারা তাদের ভয়ভীতি দেওয়াসহ আন্দোলন থামানো বা ব্যাক্তিগত শত্রুতে পরিণত করছেন? কেন আন্দোলনকারীদের সাংগঠনিক প্রোগ্রামসহ সকল কিছু থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত হচ্ছেন? কেন উনারা বুঝতে চেষ্টা করছেন না যে বিরোধীতাকারীরা শত্রু নয় বরং পরম বন্ধু। উনারা কি জেগে ঘুমাচ্ছেন নাকি আমাদের বিক্রি করে দিচ্ছেন? কেন সাধারণ সাংবাদিকদের সর্বহারা করছেন? কেন সাধারণ সাংবাদিক ও সদস্যদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে স্থায়ী শ্রমদাস বানাচ্ছেন?
 জাতীয় সংসদে উপাস্থাপিত গণমাধ্যম চাকুরী বিধিমালা যেমন সংবাদিক বিরোধী কালা আইন, তেমনি এই আইনের উপর বিএফইজের সংশোধনী মালিকদের স্বার্থ রক্ষার ঐতিহাসিক সনদে পরিণত হয়েছে। তুলনামূলক উপাস্থাপিত গণমাধ্যম চাকরি বিধিমালা আইন-২০২২ যদি কালো আইন হয় তাহলে এই আইনে উপর বিএফইউজের সংশোধনী সংবাদিক ও সংবাদমাধ্যম কর্মী (চাকরির শর্তাবলি) আইন-২০২২ নিকৃষ্ট কালা আইনে পরিণত হয়েছে। হয়েছে মালিকের স্বার্থ রক্ষার সনদ ও সাংবাদিকদের আত্মহত্যার দলিল। বিএফইজের ২/৩ জন নেতার হাতে এই আইনের সংশোধনী কেন মালিকের স্বার্থ রক্ষার সনদ ও সাংবাদিকদের আত্মহত্যার দলিল সেটা বুঝতে প্রথমে আমরা স্বাধীনতা পরবর্তী এবং বর্তমানে সাংবাদিকদের জন্য বিদ্যমান আইনের প্রেক্ষাপট জানাসহ কেন এই আইনটি সংশোধনযোগ্য নয়, বরং বাতিলযোগ্য  সেটা নির্ধারিত  আইনের ব্যাখ্যায়  জানানোর চেষ্টা করবো।  
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রের শ্রমিকদের ভবিষ্যত নিরাপত্তার জন্য ১৯৭২ সালের ২২ জুন আমাদের সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশকে  আন্তর্জাতিক শ্রম  সংস্থা-আইএলও`তে সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে অন্তভুক্ত করেন। ১৯৭৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর `দি প্রিন্টিং প্রেস (ডিক্লারেশন এন্ড রেজিষ্ট্রেশন) অ্যাক্ট প্রণয়ন করে স্বাধীন বাংলাদেশে আইনগতভাবে সংবাদপত্র নামের প্রতিষ্ঠানের জন্ম দেন এবং সাংবাদিকদের কর্মক্ষেত্র নির্ধারণ করাসহ কর্মরতদের পদ পদবী পরিচয় সৃজন করেন। অতঃপর সংবাদপত্রের মান উন্নয়নের জন্য সাংবাদিক এবং তাদের সম্মান ও স্টাটাস এবং কর্মপরিধি নির্ধারণ করে ১৪ ফেব্রুয়ারী ১৯৭৪ প্রেস কাউন্সিল আইন প্রণয়ন করেন। একই সাথে সংবাদপত্রে কর্মরত সাংবাদিক এবং সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের চাকরির শর্ত আইনীভাবে নির্ধারিত করতে ১৯৭৪ সালে ১৯ ফ্রেব্রুয়ারী "দি নিউজপেপার এমপ্লয়ীজ (কন্ডিশন অব সার্ভিস) বা সাংবাদপত্র কর্মচারী (চাকরি শর্তাবলী) আইন প্রনয়ন করেন। ১৯৭৪ সালে "দি নিউজপেপার এমপ্লয়ীজ (কন্ডিশন অব সার্ভিস) বা চাকরি বিধিমালা আইনের ১৫ ধারায় সংবাদিকদের নিয়োগের বিধানে স্পষ্ট করেই লিপিবব্ধ হয় সাংবাদিকরা শ্রমিক। এই আইনে `১৯৬৫ সালের শ্রমিক নিয়োগ (স্থায়ী আদেশ) আইনের বিধান অনুযায়ী একজন শ্রমিক হিসেবে সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেকটি নিয়োগ গণ্য হবে।` বঙ্গবন্ধুর সময়ে প্রণয়ন করা সেই দি নিউজপেপার এমপ্লয়ীজ (কন্ডিশন অব সার্ভিস) চাকরির বিধিমালার আইনে ৩ নং ধারায় সাংবাদিকদের ইউনিয়ন করার অধিকার দিয়ে লিপিবব্ধ হয় যে, `১৯৬৯ সালের শিল্প সম্পর্ক অধ্যাদেশ অন্যান্য শ্রমিকদের ক্ষেত্রে যেভাবে প্রযোজ্য সংবাদপত্রের কর্মচারীদের জন্যও শ্রমিক হিসেবে তা একইভাবে প্রযোজ্য হবে।`
লক্ষ্য করুন, বঙ্গবন্ধু প্রথমে শ্রমিক ও সাংবাদিকদের প্রটেকশনের জন্য আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থায় রাষ্ট্রকে সদস্য করেন। দ্বিতীয়ত, আইন সম্মতভাবে সাংবাদিকদের কর্মক্ষেত্র তথা প্রতিষ্ঠান জন্ম দেন। তৃত্বীয়ত, সাংবাদিকদের  কর্মপরিধি সৃজনেও আইন করেন। চতুর্থত পূর্বের কৃত আইনের ধারাবাহিকতায় সাংবাদিকদের জন্য চাকরির শর্তাবলী প্রণয়ন করেন।  অথচ এখন `গণমাধ্যম কর্মী (চাকরির শর্তাবলী) আইন` যখন সংসদে উপাস্থাপন করা হয়েছে তখন দেশে "গণমাধ্যম" নামে প্রতিষ্ঠানেরই আইনী জন্ম বা অস্তিত্ব নাই। গণমাধ্যম শব্দটির অর্থ করতে গেলে বলতে হয় অনেকগুলো শ্রেণী পেশার মানুষ যেমন চলচ্চিত্রকার, নাট্যকার, অভিনেতা, অভিনেত্রী, গায়ক, বাওুল, বাদ্যকর, ঠুলি, কবি, লেখক, অনলাইন, টিভি, বেসরকারি রেডিও, সাংবাদিক ইত্যদি। অর্থাৎ কিভাবে, কোথা হতে, কারা গণমাধ্যমকর্মী তার কোন আইন বা প্রতিষ্ঠান, পদ,পদবীর জন্ম বা অস্তিত্ব নাই। তার উপর বেওয়ারিশ নাম সম্বলিত গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য আইনানূগভাবে কর্ম তথা পদসমূহ সৃজন না করেই তাদের চাকরির শর্তাবলী নির্ধারণ করা হচ্ছে। আপনারা ভাবুন কতটা বিকৃত মস্তিস্কের বা প্রতিহিংসা, লোভ এবং জিঘাংসার বশবর্তী হলে বা দায়-দেনা পরিশোধের গরজ বা প্রাপ্তির প্রত্যাশা থাকলে বা রাষ্ট্র ও সরকারকে বিপদে ফেলতে বা রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ যাদের আইন সম্মতভাবে প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিক পরিচয় আছে, সেই পরিচয় মুছে দিয়ে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে "গণমাধ্যম কর্মী" বানানো হছে। উপাস্থাপিত এই "গণমাধ্যম কর্মী (চাকরির শর্তাবলী) আইন" এর মাধ্যমে সাংবাদিকেরা তাদের বিশ্বজনীন স্বীকৃত সাংবাদিক পরিচয় হারাছে। হারাচ্ছে শ্রম ও শিল্প, সেহেতু আপনা আপনি বের হচ্ছে আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থা (আইএলও) এর আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বলয় হতে।
১৯৭৫ এর ১৫ই আগষ্টের পর সাংবাদিকদের ১৯৭৪ সালে "দি নিউজপেপার এমপ্লয়ীজ (কন্ডিশন অব সার্ভিস) বা চাকরি বিধিমালা আইন নিয়ে দেশে আর কোন অগ্রগতি না হলেও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)র ছায়ায় শ্রমিকদের নিরাপত্তা, উন্নতি সুযোগ সুবিধা প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯০ টি ঘোষণার মাধ্যমে স্ব-স্ব দেশে সমন্বিত শ্রম আইনের মাধ্যমে সারা বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাদের ১৮৭টি সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহবান জানায়। উল্লেখ্য বাংলাদেশে ৫০টি শ্রম আইনের মাধ্যমে শ্রম, শিল্প পরিচালিত করতে নানাবিধ অসুবিধায় পতিত  হতো যার কারণে  বাংলাদেশ (আইএলওর) সদস্য দেশ হওয়ায় বাংলাদেশও সমন্বিত শ্রম আইন করার অঙ্গীকারে এরশাদ শাসনামল থেকে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)সহ অনান্য শ্রমিক সংগঠন সমন্বিত শ্রম আইন প্রণয়নের দাবীতে আন্দোলন শুরু করে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চাপে পড়ে ২০০১ সালে বিএনপি সরকার জাতীয় সংসদে এই সমন্বিত শ্রম আইন প্রণয়নে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে সমম্বিত শ্রম আইন বস্তবায়নে কমিটি গঠন করে।উক্ত কমিটি শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)কে খসড়া প্রস্তুত ও প্রস্তাব করার দায়িত্ব দেয়।  শ্রম ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সকল আইন একত্রিত করে (স্কপ) এর প্রধান সমন্বয়ক তৎকালিন খুলনার ১ আসনের সংসদ সদস্য ও হুইপ ,খুলনা জেলা আওযামী লীগের সভাপতি জনাব হারুনর রশিদের ১৫ সদস্যের কমিটি দীর্ঘ তিন বছরের প্রচেষ্টায় পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে ২০০৩ সাল পর্যন্ত প্রচলিত সকল আইন ও বিভিন্ন আদালতের সিদ্ধান্ত, নজির, রেফারেন্স সমূহের ভিত্তিতে ২০০৫ সালে সমন্বিত শ্রম আইনের খসড়া তৈরী করে কমিটির কাছে জমা দেয়। বিএনপি সরকার আইনের এই খসড়া দীর্ঘদিন ফেলে রাখে। ২০০৬ সালে সরকারের মেয়াদ শেষ হবার আগে তাদের বিরুদ্ধে বিরোধীদলের আন্দোলন যখন তীব্র সেই সময় স্কপ নেতৃবৃন্দ তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করে সমন্বিত শ্রম আইন পাস করে দেয়ার দাবি জানান। অন্যথায় বিরোধীদল সমূহের শ্রমিক সংগঠনের সাথে (স্কপও) এই সময় আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে বলে জানিয়ে দেয়। এমন পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে বিএনপি সরকার সমন্বিত শ্রম আইন পাস করে দিয়ে যেতে বাধ্য হয়।  যেহেতু শ্রম ক্ষেত্রের জন্য প্রচলিত উল্লেখযোগ্য ২৫টি আইন একীভূত করে শ্রম আইনে অন্তর্ভূক্তি করে, সেহেতু সেগুলোর পৃথক অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়। উল্লেখ্য যেহেতু সাংবাদিকদের নিয়োগ ১৯৬৫ সালের শ্রমিক নিয়োগ (স্থায়ী আদেশ) আইন অনুযায়ী হয় এবং ১৯৭৪ এর `দি নিউজপেপার এমপ্লয়ীজ (কন্ডিশন অব সার্ভিস) আইন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা প্রদত্ত অধিকার সমূহ ভোগের অধিকার রাখার জন্য অতীতে আইনগুলোতে যেমন ছিল; ২০০৬ এর সমন্বিত শ্রম আইনে ১৯৬৫`র এবং বঙ্গবন্ধুর করা  ১৯৭৪ সালের "দি নিউজপেপার এমপ্লয়ীজ (কন্ডিশন অব সার্ভিস) বা চাকরি বিধিমালা আইনের হুবহু সেই বিধানগুলো সংরক্ষিত করা হয়। এরফলে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা ঘোষিত ১৯০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক ঘোষণার বিশাল নিরাপত্তা বলয়ের ভিতর আইনী ভাবেই সাংবাদিকরা সংরক্ষিত হয়েছেন। সাংবাদিক সমাজের পূর্ব পুরুষেরা সংবাদপত্রকে শিল্প হিসাবে ঘোষণা করার দীর্ঘদিনের দাবিটিও পূরণ হয়।
সমন্বিত ২০০৬ এর শ্রম আইনে  সাংবাদিকদের যে সকল উল্লেখযোগ্য সুফল প্রাপ্তি হচ্ছে তাহলো-  (১) পাওনা আদায়ের ক্ষেত্রে লেবার কোর্টের মামলা বা রায় মালিকপক্ষ হাইকোর্টে রিট করে বছরের পর বছর ফেলে রাখতো। ২০০৬ সালের পর থেকে আর মালিকপক্ষ হাইকোর্টে রিট করে সাংবাদিকদের পাওনা আদায়ের মামলা ফেলে রাখার সুযোগ পাচ্ছে না। (২) কর্ম-পরিবেশ রক্ষায়, নারীদের বাড়তি সুবিধাদি, ডিউটিরত অবস্থায় দূর্ঘটনায় মৃত্যুজনিত কারণে পরিবারের প্রাপ্যতা নির্ধারণেসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থা ঘোষিত সুবিধা ভোগের আইনি অধিকার পেয়েছেন সাংবাদিকরা। (৩) ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নে আইনি সহয়তা, (৪) ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দের প্রতি বেআইনী পদক্ষেপ নেওয়া বন্ধ (৫) ছাটাই, অব্যহতি, ছুটিসহ সকল ক্ষেত্রে আইনি সহয়তা (৬)  মালিক পক্ষ সাংবাদিকদের মামলায় বরাবর লেবার কোর্টে দাবি করে আসছে, সাংবাদিকরা শ্রমিক নয়; তারা শ্রমিকের সুবিধা পেতে পারে না। শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্তির পর তাদের এই দাবি একেবারেই অসাড়, অচল হয়েছে। (৭) যেহেতু এই আইন ২৫টি আইনের সমন্বয়ে গঠিত সেহেতু এই আইন একে অপরের সম্পূরকও বটে। এছাড়া শ্রম আইনে নতুন কিছু বাধ্যবাধকতা মানতে বাধ্য হবার কারণে মূলতঃ শ্রম আইন থেকে সংবাদ প্রতিষ্ঠান ও সাংবাদিকদের বের করার সুপ্ত জোরালো আশা দীর্ঘদিন পোষণ করে আসছে সংবাদপত্র মালিকরা।সুদুর প্রসারি সূক্ষ্ণ ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে মালিকদের সাথে কতিপয় নেতা যুক্ত হয়ে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে সাংবাদিকদের এই আইনের সুবিধা পেতে, জানতে ও ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করেছে।  ২/৪ জন অতি লোভী নেতা আইনটির প্রতি বিরুপ ধারণা প্রতিষ্ঠিত করতে এই দীর্ঘ সময় অপপ্রচার করেছেন; যেমন (১) বঙ্গবন্ধুর ৭৪ এর আইন বাতিল করেছে বিএনপি। (২) বিএনপি সাংবাদিকদের শ্রমিক বানিয়েছে (৩) এই আইনে তেমন সুযোগ সুবিধা নাই (৪) সাংবাদিকদের কোন ষ্ট্যাটাস নাই ইত্যাদি। এই সব অপপ্রচারের মাধ্যমে সাংবাদিকদের নিরুৎসাহিত করাসহ বিরুপ ধারণা প্রতিষ্ঠিত করেছে। মূলত সাংবাদিকদের শ্রম, শিল্প ও আইএলওর নিরাপত্তা বলয় হতে বের করার জন্য এসব অপপ্রচার করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, তথ্য মন্ত্রী ও স্বাধীনতার পক্ষের সাংবাদিকদের ভিতর বিরুপ ধারণার জন্ম দিয়ে মর্যাদা ও ইমোশনে আঘাত করে নতুন আইন তৈরির ক্ষেত্র এরাই তৈরি করেছে।
বর্তমান প্রেক্ষাপট শুরু হয় বিগত ২০১২ সালে। তৎকালীন বিএফইজে নেতা মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল ২০১২ সালে নতুন আইনের দরখাস্ত তথ্য মন্ত্রণলয় প্রদান করেন। দীর্ঘ ৫ বছর সুযোগের আপেক্ষায় চুপ করে থেকে আইনটি পাশ করার উপযুক্ত ক্ষেত্র তৈরীতে কৌশলী পন্থায় কাজ করতে থাকে। ২০১৭ সালে তথ্য মন্ত্রণালয় এই নতুন আইন পাশ করার জন্য সংশোধনী চেয়ে ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দদের চিঠি দেন।তৎকালীন নেতৃবৃন্দ এই আইন সংবাদিক সমাজের প্রতি ষড়যন্ত্র বুঝতে পেরে চুপচাপ থাকেন। ২০১৮ সালে তৎকালীন তথ্য মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এই নতুন আইন পাশের জন্য খসড়া তৈরী করলেও আইন পাশের আগেই মন্ত্রীত্ব ছেড়ে চলে যান। ২০২১ সালে সকারের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা স্বাধীনতা বিরোধী কিছু আমলা ও কিছু অতি লোভী সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের তোড়জোড়ে সাংবাদিক বিরোধী এই কালো আইন পাশের জন্য নতুন ভাবে খসড়া তৈরী করেন। একদিকে সাংবাদিকদের শ্রম, শিল্প ও আইএলওর আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বলয় হতে বের করা; অন্যদিকে ১৯৭৪ সালে ৪টি পত্রিকা খোলা রাখার সিদ্ধান্তকে গণতন্ত্র হত্যার অপবাদের তিলক লাগানোর মত আরেকটি অপবাদের তিলক লাগানোসহ সাংবাদিক সমাজের সাথে সরকারের বিরোধ বাধানোর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে এই গণমাধ্যম কর্মী (চাকরি বিধিমালা) আইন-২০২২ নামে এই কালো আইন তৈরির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে, যার ৫৭টি ধারার মধ্যে ৩২টি ধারাই সাংবাদিক বিরোধী হিসেবে সংযোজিত হয়েছে।
প্রিয় সাংবাদিক সমাজ এবার আমরা দেখি কেন এই আইন সংশোধনযোগ্য নয়? কেন বাতিলযোগ্য।
(১) জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত গণমাধ্যম কর্মি (চাকরি বিধিমালা) আইন-২০২২ তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন করা হচ্ছে। তথ্য মন্ত্রণালয় কোম্পানী আইন দ্বারা পরিচালিত। যখনই সাংবাদিকদের অন্তর্ভূক্তি করে এই আইন পাশ করা হবে তখনি সংবাদিকরা শ্রম, শিল্প হতে বের হয়ে যাবে এবং এই হেতু আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলওর নিরাপত্তা বলয় হতে আপনা আপনি সাংবাদিকরা বের হয়ে যাবে। প্রতিটি আইনের জন্ম, পরিধি, বিণ্যাস, কার্যক্রম, শ্রেণী, ধরণ আলাদা আলাদা; যেমন খুন, হত্যা, গুম, প্রতারণা, মারামারি, যখম, লাঠালাঠি, ইত্যাদির জন্য ফৌজদারী আইন ও ফৌজদারী আদালতের সৃষ্টি। জমি-জমা, দাবী-দাওয়া, অধিকারের জন্য দেওয়ানী আইন ও দেওয়ানী আদালতের সৃষ্টি। কোম্পানীর জন্য কোম্পানী আইন, চাকরিজীবীদের জন্য চাকুরি বিধিমালা আইন ও আদালত সৃষ্টি, শ্রম ও শিল্পের জন্য শ্রম আইন এবং শ্রম আদালত ইত্যাদি। খুন, গুম হলে আমরা শ্রম আইনে ও আদালতে যেমন প্রতিকার পাই না তেমনি তথ্য মন্ত্রণালয়ের আধীন কোম্পানী আইনে শ্রম, শিল্প বিষয়ের প্রতিকার নাই। সেহেতু তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন গণমাধ্যম কর্মী (চাকরি বিধিমালা) আইন-২০২২ বা বিএফইউজের সংশোধিত আকারে সংবাদিক ও সংবাদমাধ্যম (চাকরি বিধিমালা) আইন-২০২২ জোর করে শ্রম আদালতে বিচার ব্যবস্থা বা শ্রম আইনে মজুরি, ওয়েজবোড ইত্যাদি লিখে দিলেও তা আইনগত কোন বৈধতা পাবে না; যা কাঠালের আমসত্ত্বে পরিণত হবে।
(২) জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত গণমাধ্যম কর্মী (চাকরি বিধিমালা) আইন-২০২২ বা বিএফইউজের সংশোধিত ধারাগুলোর বিষয়ে পরে বলি। এই আইন বা সংশোধনী আকারে যাই থাকুক তা পাশ হওয়ার সাথে সাথে সাংবাদিকরা যেহেতু শ্রম, শিল্প হতে বের হয়ে যাবে সেহেতু ট্রেড ইউনিয়ন আর সাংবাদিকরা করতে পারবে না। জোর করে এই আইনে ট্রেড ইউনিয়ন করার কথা লিখে দিলেও ট্রেড ইউনিয়ন সাংবাদিকরা করতে পারবে না বা করলেও আইনে তা বৈধতা পাবে না। তবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীদের জন্য সকল প্রতিষ্ঠানে ট্রেড ইউনিয়ন করার বৈধতা আছে যেমনটি রাষ্ট্রয়াত্ব ব্যাংক গুলোতে পিয়ন চাপরাশি অর্থাৎ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীগণ ট্রেড ইউনিয়ন করে সেইরুপ সাংবাদিকদের পিয়ন ও চাপরাশিগণ টেড ইউনিয়ণ করতে পারবে কোন কর্মকর্তা বা সাংবাদিক এর সদস্য হতে পারবে না। তথ্য মন্ত্রনালয়ের অধীন গণমাধ্যমকর্মী আইন বা সংশোধীত আকারে পাশ হলেও এবং এই আইনে শ্রম, শিল্প ট্রেড ইউনিয়ন শ্রম আদালত লিখে দিলেও তা কোন কাজে আসবে না। কাকের বাসায় কোকিলের ডিম ফুটে বাচ্চা হলেও সেটা কেকিল হওয়ার মত বিষয়। তবে সাংবাদিকরা এই আইন অনুযায়ী সমবায় সমিতি করতে পারবে। বুঝতে সহজতর করার জন্য একটি ঘটনা ও আদালতের রায়ের রেফারেন্স সন্নিবেশিত করা হল। ১৯৮১ সালে বিভিন্ন ব্যাংকের ১৮ হাজার ট্রেড ইউনিয়ন নেতাকর্মীর চাকরি হারানোর ঘটনা। ব্যাংকের ক্ষেত্রে শিল্প সম্পর্ক অধ্যাদেশ কার্যকর না থাকায় ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রম পরিচালনায় যুক্ত থাকা প্রতিষ্ঠানের শৃংঙ্খলা ভংগ বলে বিবেচিত হয়। যে কারণে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান ট্রেড ইউনিয়নের সাথে যুক্ত থাকা ১৮ হাজার কর্মকর্তা, কর্মচারীদের এক চিঠিতে চাকরিচ্যুত করেছিল। পরবর্তীতে তাদের চাকুরী ফিরে পাবার কোন মামলা কোন আদালত গ্রহন করেনি এবং উচ আদালত পর্যন্ত তাদের রক্ষা করতে পারেননি।
(৩)  উপাস্থাপিত গণমাধ্যম কর্মী (চাকরি বিধিমালা) আইন-২০২২ এর আলোকে বিএফইউজে সংশোধন করে সংবাদিক ও সংবাদমাধ্যম কর্মী (চাকরির শর্তাবলি) আইন-২০২২ নামে একটি সংশোধনী প্রস্তুত করেছেন। এই আইনের সকল ধারাই ২০০৬ এর শ্রম আইনের ধারা হতে নিয়ে কাটশাট করে বসানো হয়েছে। শ্রম আইনের ধারাগুলো কাটশাট করে বসাতে গিয়ে উনারা স্ববিরোধী,আইন বর্হিভূত ও মালিকদের আইন তৈরী করে ফেলেছেন। তাহলে এই উপমহাদেশে সাংবাদিকদের উৎকৃষ্ট আইন হিসেবে খ্যাত চলমান ২০০৬ এর শ্রম আইন থাকতে অসুবিধা কোথায়? উনারা সংশোধন আইনের ২.৩/২.৭/২.৯ ও ২৭,২৮ শ্রম আইনের ধারা উল্লেখ করে ৩ ধারায় বিশেষায়িত ধারা উল্লেখ করে বলেছেন অন্য যাহা কিছু থাকুক না কেন এই সংবাদমাধ্যম কর্মী (চাকরির শর্তাবলি) আইন-২০২২ এর ধারা প্রাধান্য পাইবে। তাহলে ৩ ধারার উপরোক্ত কথায় উল্লেখিত শ্রম আইনের ধারাগুলো অকার্যকর হয়ে যায়। এমনিতেই কোম্পানী আইনে শ্রম আইনের ধারা অন্তভুক্ত আইন বর্হিভূত ও অকার্যকর তারপরও ৩ ধারায় বিশেষায়িত উল্লেখ করে সেগুলো পরিস্কার ভাবে অকার্যকর করেছেন অর্থাৎ শ্রম আইনের ধারাগুলো মজুরী, ওয়েজবোর্ড, বিরোধ নিস্পত্তি, শ্রম আদালতে, ট্রেড ইউনিয়ন ইত্যাদি আইনে লেখার জন্য লেখা হয়েই থাকবে। অর্থাৎ বলদের কাছে অচল পয়সা চালানোর চেষ্টা।
(৪) জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত গণমাধ্যম চাকরি বিধিমালা আইন ও এই আইনের বিএফইউজের সংশোধনীতে টিভি, রেডিও ও আনলাইনের কথা লেখা হলে এটা শুভংকরের ফাঁকি ছাড়া আর কিছুই নয়। টিভি, অনলাইন রেডিওর নাকের ডগায় মূলা ঝুলানো ছাড়া আর কিছু নয়। না বুঝে বা গায়ের জোরে আইনে টিডি, রেডিও, অনলাইন লিখে দিলেই তারা বেতন ভাতা মজুরী, আদালত বা ওয়েজবোর্ড ট্রেড ইউনিয়ন আইনিভাবে প্রাপ্ত হবে না বা গ্রহনযোগ্য হবে না। বিদ্যমান একটি উদাহরণ এখানে উল্লেখ করা হল।বর্তমানে ২০০৬ সালে সংবাদিকদের জন্য বিদ্যমান শ্রম অইনে টিভি অনলাইন উল্লেখ করা আছে তৎসত্ত্বেও টিভি অনলাইনে কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচারীগণ আইনে বিদ্যমান কোন সুযোগ সুবিধা ও ওয়েজবোর্ড পায় না।  টিভি, অনলাইন, রেডিওর আইনিসহ সার্বিকভাবে সুবিধার আওয়তায় আনতে হলে যেমন বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠানের আইনিভাবে জন্ম দিয়েছিলেন তেমনি ব্রডকাষ্ট বা অন্য যে কোন নামে টিভি আনলাইন ও রেডিওর প্রতিষ্ঠানের জন্ম দিতে হবে এবং উক্ত আইনে শ্রম, শিল্প না কোম্পানী শ্রেনী নির্ধারন করে পদ পদবী সৃষ্টি করতে হবে। এরপর টিভি রেডিও ও অনলাইনে কর্মরত সংবাদিক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারীদের চাকরি বিধিমালা আইন করতে হবে। যদি টিভি রেডিও আনলাইন কর্মকর্তা কর্মচারীগণ শিল্প, শ্রম ও ট্রেড ইউনিয়ন এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএলওভুক্ত থাকতে চায় তাহলে তাদের প্রতিষ্ঠানের জন্ম আইনে শ্রম শিল্প উল্লেখ করে তাদের চাকরি বিধিমালা আইন সংবাদিকদের বিদ্যমান সংবাদপত্র চাকরি বিধি আইন ২০০৬ সালের শ্রম আইন সংশোধনের মাধ্যমে যুক্ত হতে হবে। আর যদি তারা ট্রেড ইউনিয়ন ও আইএলওতে যুক্ত থাকতে না চায় তাহলে তারা অন্যকোন আইনে যুক্ত হতে পারে।
(৫) সাংবাদিকদের বিদ্যমান ২০০৬ সালের আইন যেহেতু ১৯৭৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর `দি প্রিন্টিং প্রেস (ডিক্লারেশন এন্ড রেজিষ্ট্রেশন) অ্যাক্ট ও ১৯৭৪ সালে "দি নিউজপেপার এমপ্লয়ীজ (কন্ডিশন অব সার্ভিস) বা চাকরি বিধিমালা আইনের ধারাবাহিকতায় করা হয়েছে সেকারনে আইনে সম্পাদকগণ সংবাদপত্রে প্রকাশিত বিষয় নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করিবেন বলিয়া বিদ্যমান রহিয়াছে। অন্যদিকে মালিক সুধুমাত্র প্রকাশক থাকিবেন। এখানে ক্ষমতা বিকেন্দ্রিকরণ করা আছে। অন্যদিকে জাতীয় সংসদে উপাস্থাপিত গণমাধ্যম চাকরি বিধিমালা আইন ও এই আইনের বিএফইউজের সংশোধনীতে কোন ভূমিকা নেই অর্থাৎ কোথা হতে বা কোন আইন হতে কিভাবে এই চাকরি বিধিমালা আইন সেহেতু এই আইনে মালিকই সর্বস্ব। সম্পাদকগণ নামে মাত্র সম্পাদক হবেন, যেমনটি দন্তবিহিন বাঘ হয়? সম্পাদকগণও শ্রমদাসে পরিনত হবেন। উল্লেখ্য পূর্বে যেমন পত্রিকার মালিক রাষ্ট্র বা সরকার বা কোন গোষ্টিকে বিপদে ফেলতে চাইলেও সংবাদ প্রকাশ ও নিয়ন্ত্রনের দায়িত্ব সম্পাদকগণের হাতে থাকায় সফলকাম হতে পারেনা তেমনী উপরোক্ত কর্ম সম্পাদকগণও সফলকাম হয় না। গণমাধ্যম আইনে যেহেতু মালিকই সর্বস্ব সেহেতু রাষ্ট্র,সরকার বা কোন গোষ্টিকে সহজে বিপদে ফেলার অশংকা থেকেই য়ায়।
          প্রিয় সাংবাদিক সমাজ উপরোক্ত  বিষয় আইনের বিষেøশনে প্রমানিত যে সাংবাদিক সমাজ শ্রম,শিল্প আইএলওর সুযোগ সুবিধা নিতে চাইলে এবং ট্রেড ইউনিয়ন করতে চাইলে শ্রম আইন হতে পরিবর্তিত হয়ে কোন ভাবেই তথ্য মন্ত্রনালয়ের অধীন কোম্পানী আইনে উপাস্থাপিত গণমাধ্যম কর্মি(চাকরি বিধিমালা) আইন,২০২২ বা এই আইন সংশোধীত আকারে করা সম্ভব নয়। সাংবাদিক সমাজকে বাচতে হলে এই আইন অবশ্যই বাতিল  বা প্রত্যাহার করতে হবে। যেহেতু ২৫টি আইনের সমন্বয়ে শ্রম আইন সেহেতু টিভি,রেডিও,অনলাইন সকলের চাকরি বিধিমালা সংযোজন সহ পেনশন,রেশনিং,ঝুঁকি ভাতা,চিত্রসাংবাদিকসহ সত্যিকারের যেসব প্রয়োজনে আইন দরকার তা সমন্বিত শ্রম আইন ২০০৬ সংশোধন করেই সমাধানের রাস্তা করা আছে। গণমাধ্যম কর্মি(চাকরি বিধিমালা) আইন,২০২২  সাংবাদিকদের জন্য একটি (মৃত্যু সনদ) এর পিছনে সময় না দিয়ে সাংবাদিকদের জন্য বঙ্গবন্ধুর করা আইনের কার্বন কপি সমন্বিত শ্রম আইন ২০০৬ সংশোধন করে টিভি,অনলাইন,রেডিওতে কর্মরত সাংবাদিক ও কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য আইন করাসহ সাংবাদিকদের জন্য বয়স্কভাতা,রেশনিং,আবাসন,পেনশনের জন্য আইন সংশোধন করত সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃত্বে উপরোক্ত সহজ  উদ্যোগ নেওয়া জরুরী।
সাধারনত সরকার তার ইচ্ছামাফিক বা প্রয়োজনে জাতীয় সংসদে আইন উপাস্থাপন করেন এবং পাশ করেন। আইন প্রযোগ করেন বিচার বিভাগ হেতু একবার আইন পাশ হলে তা ফেরত আনা দুরুহ কোন আন্দোলনে কাজ হবে না। গণমাধ্যম কর্মি(চাকরি বিধিমালা) আইন,২০২২  বা সংশোধীত আকারে যদি জাতীয় সংসদে পাশ হয় তাহলে কি হবে ফলাফল? এই আইন পাশ হলে শিল্প শ্রম ও আইএলওর প্রটেকশন থেকে বের হয়ে সাংবাদিকরা চরম অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে,সাংবাদিকরা ট্রেড ইউনিয়ন হারাবে,সাংবাদিকরা তাদের পরিচিতি হারাবে,বঞ্চিত ও লাঞ্চিত হবে পদে পদে,পরিনত হবে শ্রমদাসে। সাংবাদিকরা এর থেকে বাচঁতে এবং পূর্বের অবস্থায় ফিরতে যাবে আদালতে। মামালা চলবে যুগের পর যুগ। মামলা হওয়ার পর চলমান ২০০৬ এর শ্রম আইন ও বর্তমান গণমাধ্যম বা সংশোধীত আইন দুটোই অকার্যকর হয়ে যাবে। সাংবাদিকরা আদালতের দরজায় আর রাস্তায় রাস্তায় ঘুরবে। এটাই মালিক,আমলা আর অতি লোভী দালাল নেতাদের কাঙ্খিত চাওয়া। পূর্ন হবে তাদের ষোল কলা। মালিকরা এই সুযোগে তাদের পরিপূর্ন স্বার্থ চরিতার্থ করবে ইচ্ছা মাফিক। অন্যদিকে স্বাধীনতা বিরোধীরা রক্তাক্ত দাত বের করে খিলখিল করে হাসবে আর সরকারের কপালে কালিমার তিলক লেপন করবে, যা যুগে যুগে উচ্ছারিত হবে। সংবাদ প্রতিষ্ঠান মালিক সর্বস্ব হওয়ায় রাষ্ট্র,সরকার,গোষ্টিকে সহজে বিপদে ফেলতে পারবে,রাষ্ট্র নিরাপত্তহীনতার আংশঙ্খা থাকবে এবং সংবাদিক সমাজের সাথে সরকারের বিরোধ বাধিয়ে তাদেরও পূর্ণ হবে ষোল কলা যা একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও জন্মগত ভাবে স্বাধীনতার স্বপক্ষের আদর্শের হয়ে কোন ভাবেই মানতে পারছি না।

মুড়ি-মুড়কি এক হিসাব
এতক্ষণ সুদীর্ঘ বয়ানে সাংবাদিকদের জন্য বিদ্যমান আইন, এর উৎসকথা এবং প্রস্তাবিত নতুন ও সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য চালাকিপূর্ণ আইনের পোস্টমর্টেম উপস্থাপন করলাম। এই বিষয়টি আরেক দিক থেকেও দেখা যেতে পারে। এই জগতে মাত্র তিনটি মহৎ পেশা- নোবেল প্রফেশনের অন্যতম হলো সাংবাদিকতা। সাংবাদিকতা পেশাধারীগণ- সাংবাদিক (Journalist); আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এই পরিচয়। এখন সরকার আইন করে তাদের গণমাধ্যমকর্মী বানাতে চান। কেন?
গণমাধ্যমকর্মী (Media Worker); মিডিয়াতে নানা পদের কর্মী (Worker) থাকেন- কেউ প্রেসের জন্য প্লেট বানান, কেউ মেশিন চালান, কেউ পত্রিকা প্যাকেট করেন, কেউ ক্যামেরা বা লাইট ধরেন ইত্যাদি। কিন্তু মিডিয়ার প্রাণ যে রিপোর্ট; তা লেখেন, সম্পাদনা করেন এবং সেই রিপোর্টগুলোর সূত্র সন্ধানে জীবনের ঝুঁকি নেন, জেল খাটেন সাংবাদিক; কোন কর্মী নন। সাংবাদিকের মেধা-পরিশ্রমে পত্রিকা এবং টিভি অনুষ্ঠান, কর্মীর যোগ্যতায় নয়। কর্মী এতে সহায়ক মাত্র।
এখন, সরকার সাংবাদিক খেদিয়ে সবাইকে কর্মী পরিচয়ে এক খেদায় ভরতে চান? অর্থাৎ মুড়ি-মুড়কি এক হিসাব? এর নাম কি মর্যাদা বাড়ানো? কি অদ্ভূত!
এখন সাংবাদিক যদি গণমাধ্যমকর্মী হন তাতে মর্যাদা বাড়বে না কারো; না সাংবাদিকের, না দেশের। বরং গোটা বিশ্ব বলবে, সাংবাদিকবিহীন একটা দেশ, সেটা বাংলাদেশ। এটা যদি হয় মর্যাদা বাড়ানোর ফন্দি, তাহলে বলতেই হবে- এই দেশ বোকারামে ভরে গেছে।
আমাদের অগ্রজ ও বরেণ্য শহীদ সাংবাদিক সিরাজ উদ্দিন হোসেন, শহীদ সাবের, নিজাম উদ্দীন প্রমুখ এবং প্রয়াত তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, আব্দুল গনি হাজারী, জহুর আহমেদ চৌধুরী, আব্দুস সালাম, নুরুল ইসলাম পাটয়ারী, ওবায়দুল হক, নির্মল সেন, আহমেদ হুমায়ুন, আতাউস সামাদ, কামাল লোহানী, এবিএম মুসাসহ আরও অনেকে একদা সাংবাদিক পরিচয়েই দেশ কাঁপিয়ে প্রাতঃস্মরণীয় হয়েছেন। এখন তাদেরকেও গণমাধ্যমকর্মী পরিচয়ে তবে কি নতুন করে পরিচিতি পেতে হবে তাদের উত্তরসূরী এবং দেশবাসীর কাছে?
সুতরাং যে গণমাধ্যমকর্মী আইন তৈরীর তোড়জোর চলছে তা সাংবাদিক সমাজ তো বটেই, দেশ ও জাতির কোন কাজে লাগবার সুদূরতম সম্ভাবনা নেই, অযথা বিতর্ক বাড়ানোরই হলো এই আইনটির মূল উদ্দেশ্য। তবে সেটা যে কার স্বার্থে; কে জানে!



   শেয়ার করুন
   আপনার মতামত দিন
     এক্সক্লুসিভ
সিলেটে আওয়ামী লীগের প্রমিথিউস সুলতান মনসুর
.............................................................................................
চাকরি না পেয়ে হতাশায় আত্মহত্যা জাবি শিক্ষার্থীর!
.............................................................................................
শোকের নদী ‘বিত্তিপাড়া’, এখনও নাম ওঠেনি বধ্যভূমির তালিকায়
.............................................................................................
রাহু গ্রাসে সাংবাদিক সমাজ, বানানো হচ্ছে শ্রমদাস
.............................................................................................
মধু সর্ব রোগের শেফা
.............................................................................................
পিছিয়ে পড়া নারী সমাজকে নিয়ে ‌`ভয়েস অব ওমেন`
.............................................................................................
যুক্তরাজ্যের অবৈধ নাগরিকদের ঠাঁই হবে রুয়ান্ডায়
.............................................................................................
করোনাকালে ভোলায় ২২ হাজার শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার
.............................................................................................
নিরাপত্তা ঝুঁকিতে অস্ট্রেলিয়া
.............................................................................................
যুদ্ধের প্রভাব: লন্ডনে ডিজেলের লিটার ২০০ টাকা
.............................................................................................
তনু হত্যার ৬ বছর: চোরাবালিতে আটকে আছে তদন্ত, শনাক্ত হয়নি আসামি
.............................................................................................
সৌন্দর্যের লীলাভূমি ‘আশুরার বিল’
.............................................................................................
আতঙ্ক বাড়াচ্ছে করোনা
.............................................................................................
বাংলাদেশে কী ধরণের সমরাস্ত্র বিক্রি করতে চায় তুরস্ক
.............................................................................................
কুষ্টিয়ার যতীন্দ্রনাথ যেভাবে হলেন ‘বাঘা যতীন’
.............................................................................................
বেকার যুবকদের ভাগ্য বদলে বিশেষ ঋণ
.............................................................................................
খাদ্য নিরাপত্তায় এখনও অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশ
.............................................................................................
খুলনায় মাদক সম্রাট শাহজাহান আটক
.............................................................................................
স্থানীয় নির্বাচন: ক্ষমতাসীন দলে তীব্র অভ্যন্তরীণ কোন্দলের আশঙ্কা
.............................................................................................
নাশকতার আশঙ্কায় দেশে সর্বোচ্চ সতর্কতা
.............................................................................................
গম উঠাচ্ছে না মিলাররা
.............................................................................................
বর্জ্য পরিশোধনের নামে বিদেশী প্রতিষ্ঠানের প্রতারণা
.............................................................................................
নিষিদ্ধ ঘোষিত ওষুধ অবাধে বিক্রি হচ্ছে বাজারে
.............................................................................................
কোরবানির গরু ফুলানো হচ্ছে ভিটামিন দিয়ে
.............................................................................................
‘ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে স্ত্রীর উদ্দেশে যা বলেছিলেন এরশাদ শিকদার’
.............................................................................................

|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
    2015 @ All Right Reserved By dailyswadhinbangla.com

Developed By: Dynamic Solution IT