স্থানীয় নির্বাচন: ক্ষমতাসীন দলে তীব্র অভ্যন্তরীণ কোন্দলের আশঙ্কা
5, November, 2015, 5:29:29:AM
বিশেষ প্রতিবেদক: দেশে প্রথমবারের মতো দলীয় পরিচয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সঙ্কট তীব্র হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দলের পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে ঐক্য আছে দাবি করা হলেও আওয়ামী লীগের প্রায় ৩০ সাংগঠনিক জেলাপর্যায়েই দ্বন্দ্ব রয়েছে। আর স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ওই অন্তর্দ্বন্দ্বের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। কারণ দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক পাওয়া বা না পাওয়া নিয়ে মতবিরোধ আরো তীব্র হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট তৃণমূল পর্যায়ের একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের বেশ কিছু জেলা-উপজেলায় এমপি বনাম উপজেলা চেয়ারম্যানের মধ্যে চরম বিরোধ বিরাজ করছে। তাছাড়া দলের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতাকর্মীদের অনেকেই অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার রাজনীতিতে আগ্রহী। কিন্তু দল তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। বরং তাতে বাধা দিচ্ছেন দলেরই কয়েকজন সিনিয়র নেতা-মন্ত্রী। অথচ দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে হলে চিহ্নিত খারাপ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে। আর তা করতে হবে স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগেই। চলতি নভেম্বর মাসেই যদি তৃণমূলের ওসব সমস্যা কার্যকর সমাধান করা যায় তাহলে পৌরসভা নির্বাচন ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সুফল পাওয়া যাবে। কারণ সাধারণ ভেটাররা দলের আশ্রয়ে থাকা এমপির আশীর্বাদপুষ্ট ‘খারাপ’ লোকদের অপছন্দ করে। আওয়ামী লীগে এমনও সিনিয়র নেতা রয়েছেনÑ যার নির্দেশ-আদেশের বাইরে গিয়ে সত্য প্রকাশে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারাও অসহায়। এমপিদের কাছে তারা জিম্মি। সূত্র জানায়, চলতি বছরের ডিসেম্বরেই প্রথমবারের মতো দলীয় মনোনয়নের ভিত্তিতে দেশে পৌরসভা নির্বাচন দিয়ে শুরু হবে স্থানীয় নির্বাচন। এক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আওয়ামী লীগের পক্ষে দলীয় পরিচয়ে ওই নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছে। কারণ দলের নেতাদের একটি অংশের মতে, সব জায়গায় প্রার্থী হতে আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে যে প্রতিযোগিতা হবে, তা অনেক ক্ষেত্রে সামাল দেয়া কঠিন হবে। কারণ এদেশের রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিত ও প্রেক্ষাপট বিশে¬ষণ করে দেখা যায়Ñ স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে সরকারবিরোধী একটা নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়ে থাকে। এজন্যই স্থানীয় নির্বাচনে প্রার্থীর ইমেজ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে সরকারদলীয় প্রার্থীর ব্যক্তিগত আচরণ ও বৈশিষ্ট্য স্থানীয় নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সূত্র আরো জানায়, তৃণমূলে অনুষ্ঠিত হওয়া সব ধরনের নির্বাচন সব সরকারের জন্যই চ্যালেঞ্জ। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই বিএনপি, জামায়াত ও সমমনা সমর্থিত প্রায় আড়াইশ প্রার্থী জয়লাভ করেছে। বিশেষ করে সব সময়ই দেখা গেছে স্থানীয় সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সরকার দলের প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে। এই ধারণা আওয়ামী লীগের নেতাদের বড় একটি অংশের। এদিকে বর্তমান সরকারের ২০১৩ এর ১৫ জুন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রতিটি প্রার্থী হেরেছেন। সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির আরিফুর রহমান, খুলনায় মনিরুজ্জামান মনি, রাজশাহীতে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, বরিশালে মো. আহসান হাবিব কামাল মেয়র নির্বাচিত হন। তাছাড়া দ্বিতীয় গোপালগঞ্জ বলে লোকমুখে পরিচিত গাজীপুরেও ২০১৩ এর ৬ জুলাই অনুষ্ঠিত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী এমএ মান্নান মেয়র নির্বাচিত হন। আর ১৯৯৪ সালে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মির্জা আব্বাস ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ হানিফ ছিলেন। তখন সরকারে ছিল বিএনপি। কিন্তু ওই নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন মোহাম্মদ হানিফ। ২০০৫-এ বিএনপি-জামায়াত জোটের সরকার হলেও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী মেয়র নির্বাচিত হন। তাছাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও এরকমই রেজাল্ট দেখা গেছে। বিপুল সংখ্যক বিএনপি দলীয় সমর্থিত প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। অন্যদিকে সময় কম থাকায় আইনের বদলে অধ্যাদেশ করে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। আর জাতীয় সংসদের আগামী অধিবেশনে ওই অধ্যাদেশ আইনে পরিণত করা হবে। একই সাথে স্থানীয় সরকারের অন্য ৪টি আইনও ওই অধিবেশনে পাস হবে। আইনগুলো পাস হওয়ার পর নির্বাচন কমিশন এ সংক্রান্ত নীতিমালা তৈরি করবে। ইতিমধ্যে স্থানীয় সরকারের পাঁচটি স্তরেই দলীয় পরিচয় ও প্রতীকে নির্বাচন করতে আইনের সংশোধন অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। সংশোধনী অনুযায়ী, পাঁচ বছরের নির্দিষ্ট মেয়াদ পূরণের পর কোনো কারণে নির্বাচন না হলে প্রশাসকের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে হবে। স্থানীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্রপ্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ রাখা হলেও তাদের জন্য বিধি ঠিক করবে নির্বাচন কমিশন। স্থানীয় নির্বাচনে মেয়র, চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য পদে প্রতিন্দ্বদ্বী প্রার্থীদের দলীয় মনোনয়ন ও দলীয় প্রতীক থাকতে হবে। আর নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪০টি দলের পক্ষ থেকে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ থাকবে। দলীয় পরিচয়ে স্থানীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সৎ উদ্দেশ্য থেকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তৃণমূলে গণতন্ত্র পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।