জীবনশৈলী ডেস্ক : জীবনে ছোট-বড় নানান কাজে আমরা ব্যর্থ হই। কখনো স্কুল-কলেজের পরীক্ষায়, কখনো কর্মক্ষেত্রে আবার কখনো বা জীবনের দায়িত্ব পালনে। একটি-দুটি কাজে ব্যর্থ হয়ে জীবনটাই বরবাদ হলো- এমন ভাবার কোন কারণ নেই। যেমন ইংরেজি প্রবাদ যার ভাবার্থ ব্যর্থতাই সফলতার চাবি কাটি। সুতরাং ছোট খাটো ব্যর্থতার কথা ভুলে ভাবুন যে আপনি মানুষ এবং আপনাকে দিয়ে সব কিছুই সম্ভব! নেতিবাচক চিন্তা থেকে দূরে থাকার এর চেয়ে ভালো উপায় আর হয় না! জীবনে চলার পথে ছোট-খাট দুর্ঘটনা ঘটবেই। কখনো আমরা হেরে যাব, কখনো সফল হবো। কোনো কাজে ব্যর্থ হওয়া মানে এই নয় যে আর কোনো কাজেই আপনি সফল হবেন না। আর যদি ব্যর্থতায় মন ভেঙেও যায়, এই বোঁধ কাটিয়ে উঠুন ৬টি উপায়ে।
ভালো দিক খুঁজুন : কোনো কাজে ব্যর্থ হলে মানুষ নিজেকে অনবরত দোষারোপ করতে থাকে। আপনি একটি কাজে ব্যর্থ হয়ে গেলেন বলেই কি নিজে মন্দ হয়ে গেলেন? বরং ভেঙে না পড়ে নিজের ভালো দিকগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। আপনি কোন বিষয়ে ভালো, কী কী ভালো কাজ করেন, কোন কাজগুলো ভালো পারেন - এসব ব্যাপার খুঁজে বের করুন এবং নিজেকে অটোসাজেশন দিতে থাকুন, আপনি একটা বিষয়ে মন্দ তো কী হয়েছে? অন্য বিষয়গুলোতে তো ভালো! আপনার কোন ব্যাপারগুলো নিজের কাছে ভালো লাগে সেগুলো নিয়ে ভাবুন।
আত্মোন্নয়ন করার চেষ্টা করুন : নিজের আত্মিক উন্নতির চেষ্টা করুন। আপনার কেন ব্যর্থ হলেন, আপনার কী ভুল ছিল ভেবে বের করুন, সেগুলো শোধরানোর চেষ্টা করুন। আপনার কর্মজীবন ও ব্যক্তিজীবনে পরিবর্তন আনুন। কর্মক্ষেত্রে আরো কৌঁসুলি ও পরিশ্রমী হোন। ক্যারিয়ারে উন্নতি করার জন্য নিজের স্কিল বাড়ানোর চেষ্টা করুন। যদি নিজের ব্যক্তিগত কিছু আপনার নিজেরই অপছন্দের হয়, তাহলে সেগুলো শোধরানোর চেষ্টা করুন। যদি চেহারা নিয়ে আপনার মধ্যে হীনমন্যতা থাকে তাহলে অন্যান্য বাহ্যিক বিষয়গুলোর দিকে নজর দিন। যেমন পোশাক-আশাক, কথা বলার ভঙ্গি, নিজেকে উপস্থাপনের ঢং ইত্যাদি। মোটকথা নিজের ব্যক্তিত্বকে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করুন। দেখবেন, ব্যর্থতার গ্লানি মুছে গেছে অনেকখানি।
সুন্দর ব্যবহারের অধিকারী হোন : সুন্দর ব্যবহার দিয়ে জয় করা যায় সকলের মন। কেউ যদি আপনার শত্রুও হয়, আপনার ভালো ব্যবহারের কাছে পরাস্ত হয়ে যাবে সেও। সকলের সাথে ভালো ব্যবহার করুন। ভালো ব্যবহারের অধিকারী হলে আপনার ব্যর্থতার কথা কেউ মনেও রাখবে না। ধৈর্য ধরে সকলের কথা শুনুন এবং জবাব দিন। চট করে রেগে যাবেন না। তাহলে অনবরত খোটা দেবার লোক বেড়ে যাবে। আর যদি আপনি শান্ত থেকে ভালো ব্যবহার করেন তাহলে এই মানুষগুলোই আপনার ব্যর্থতায় সান্ত¡না দেবে। আপনি ব্যর্থতার ধকল কাটিয়ে উঠতে পারবেন খুব দ্রুত।
তুলনা নয় : যে আপনার চেয়ে সফল তার সাথে নিজের তুলনা করতে যাবেন না। এতে আপনার মনোকষ্ট বাড়বে বই কমবে না। অন্যের সাথে নিজের তুলনা বার বার নিজের ব্যর্থতার কথাই মনে করিয়ে দেবে। তাই অন্যের সাথে নিজের তুলনা না করে নিজের সাফল্যর সাথেই নিজের ব্যর্থতার তুলনা করুন। এতে যেমন নিজের ভুলগুলো বুঝতে পারবেন, তেমনি নিজের ব্যর্থতার কষ্টও কমে যাবে।
নিন্দুক নিকটজন পরিত্যাগ করুন : আমাদের আশপাশে কিছু মানুষজন থাকে যাদের কাজই হলো অপরের নিন্দা করা! আপনি ব্যর্থ হলে বা মন্দ কাজ করলে নিন্দা তো করবেই, ভালো কিছু করলেও কথা শোনাতে ছাড়বে না! আত্মীয়দের মাঝে যেমন এরকম মানুষ থাকতে পারে, তেমনি থাকতে পারে বন্ধুদের মাঝেও। এমন মানুষদের সঙ্গ ত্যাগ করাই শ্রেয়। এ ধরনের মানুষদের কাছ থেকে যতটা দূরে থাকা যায় ততটাই মঙ্গল। কারণ এরা বারবার মনে করিয়ে দিতে থাকবে আপনার ব্যর্থতার কথা। এদের কথায় কান না দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। নিন্দুকের কটু কথায় কান দিলে আপনি এগোতে পারবেন না, ভবিষ্যতের সাফল্যও আপনার হাতছাড়া হয়ে যাবে। তাই নিন্দুক নিকটজনকে ত্যাগ করুন।
সৃজনশীল প্রতিভার চর্চা করুন : প্রত্যেক মানুষই কোনো না কোনো কাজ ভালো পারে। বিশেষ করে তা যদি হয় সৃজনশীল কিছু, তাহলে ব্যর্থতার গ্লানি কাটিয়ে তা খুবই সাহায্য করে। আপনি গান, নাচ, ছবি আঁকা, আবৃত্তি, লেখালিখি - যাই ভালো পারেন না কেন, সেটার চর্চা করুন। এতে যেমন মন ভালো থাকবে তেমনি যখন অন্যরা এটার প্রশংসা করবে তখন আপনার মন ভরে উঠবে আত্মপ্রশান্তিতে। আর দূরে পালিয়ে যাবে ব্যর্থতার কষ্ট।