‘‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি; আমি কি ভুলিতে পারি/ছেলেহারা শত মায়ের আশ্রু গড়ায়ে ফেব্রুয়ারি; আমি কি ভুলিতে পারি’’ ভাষা সৈনিক ও বরেণ্য সুরকার আলতাফ মাহমুদের গাওয়া এই গানটি শুনলেই মনে পড়ে বাঙ্গালী জাতির অকুতোভয় শ্রেষ্ঠ সন্তানদের কথা। যারা মাতৃভাষা জন্য নীজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। যাদের মহান আত্যত্যাগের বিনিময়ে বাঙালি জাতি পেয়েছে তার মাতৃভাষা। জাতির সেই সব আত্যত্যাগী বীর শহীদদের স্মরণে দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্মিত হয়েছে স্মৃতিময় ভাস্কর্য। এমনই এক ভাস্কর্য ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকে বামে তাকালেই চোখে পড়ে ক্যাম্পাসভিত্তিক সর্বোচ্চ এই শহীদ মিনারট।
জানা যায়, শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ২০১২ সালে মিনারটির ভিত্তিপ্রস্তররে স্থাপন করেন তৎকালীন উপাচার্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. এম আলাউদ্দিন। প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই মিনারটির উদ্বোধন করেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অফিস সূত্রে, শহীদ মিনারটি মূল বেদি থেকে ১১৬ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৭৫ ফুট প্রস্থ। মাটির উপর থেকে মূল বেদি ৯ ফুট ওপরে। মিনারটির পিলারগুলো স্টিলের এসএস পাইপ দিয়ে যুক্ত করা। এতে তিন পাশ দিয়ে ওঠার জন্য সুন্দর কারুকার্য খচিত সিরামিক ইট দিয়ে তৈরি সিঁড়ি রয়েছে। শহীদ মিনারটির মূল আয়তন ৪০০/২০০ বর্গফুট। মূল এরিয়ার চতুর্দিক দিয়ে স্থায়ীভাবে বক্স লাইটিং ও সার্চ লাইটিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। মূল বেদিতে খুব সহজে পঙ্গু ও প্রতিবন্ধীরা যাতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করতে পারেন সেজন্য স্থাপন করা হয়েছে র্যাম্প (ঢালু সিড়ি)। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে তৈরি মিনারটিতে মোট পাঁচটি স্তম্ভ রয়েছে। মাঝখানের স্তম্ভটি সবচেয়ে উঁচু এবং উপরের অংশটি সামনের দিকে নোয়ানো। এই উঁচু স্তম্ভটির দুই পাশে সমান ছোটো-বড় আরও চারটি স্তম্ভ রয়েছে। স্তম্ভগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়টিকে মনে করা হয় অতন্দ্র প্রহরী মা চার সন্তানকে নিয়ে মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছেন। মাতৃভাষার অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে যেমন অকাতরে জীবন দিয়েছিল রফিক, সালাম, বরকত ও জব্বার। তেমনি মাতৃভূমির সার্বভৌমত্ব আর মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় মায়ের পাশে এখনও অতন্ত্র প্রহরায় তার সন্তানেরা। পেছনে উদীয়মান লাল টকটকে সূর্য যা স্বাধীনতার, নতুন দিনের, অন্ধকার দূর করে আলোর উৎসারণের প্রতীক। শহীদ মিনারটির সামনে বেদনাঘন শহীদ দিবসের প্রতীক হিসেবে রয়েছে সততা ফোয়ারা।
লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী নাজিফা তাসনিম বলেন, ‘ভাষা শহীদদের স্মরণে আমাদের ক্যাম্পাসে নির্মিত সুউচ্চ শহীদ মিনারটি যেন চেতনার বাতিঘর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা ভাষা আন্দোলন দেখিনি, কিন্তু ভাষা শহীদদের স্মরনে নির্মিত এই মিনারটি আমাদের জাতির আত্যত্যাগী শহীদদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয়। যা আমাদেরকে সকল অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়।’
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী রবিন হাসান বলেন, ’ভাষার জন্য জীবন দেওয়ার ইতিহাস পৃথিবীতে বিরল। বাঙ্গালী জাতির এই ইতিহাস আজ বিশ্বব্যাপি সমাদৃত। বাংলা ভাষা আজ দেশের গন্ডি পেরিয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে যা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে তরুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে দেশের সকল স্তরের শিক্ষা ব্যাবস্থায় ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস সংযুক্ত করা উচিৎ।