বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরেছেন হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী: রাষ্ট্রপতি
11, November, 2021, 11:16:10:PM
স্টাফ রিপোর্টার: জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৪১তম অধিবেশনের সভাপতি ও সাবেক স্পীকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেছেন, ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ ও তৎপরবর্তী সময়ে বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরেছেন সাবেক স্পীকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী। হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ছিলেন একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বরেণ্য কূটনীতিক ও বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী। প্রয়াত স্পীকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর ৯৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির ভাষণ দানকালে তিনি এসব কথা বলেন। বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় রাজধানীর বিজয়নগরস্থ শ্রম ভবনের সভাকক্ষে ‘স্পীকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী স্মৃতি পরিষদ’ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর স্মৃতিচারণ করে প্রধান অতিথির ভাষণে রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় নয়াদিল্লীতে পাকিস্তান দূতাবাসে কর্মরত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের মিশন প্রধান হিসেবে বলিষ্ঠ কূটনৈতিক তৎপরতা চালান। তার সফল কূটনৈতিক তৎপরতায় ভারত, ভূটানসহ বিশ্বের প্রায় ৪০টিরও অধিক দেশের কাছ থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে স্বীকৃতি আদায় করতে সক্ষম হন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর ছিল অপরিসীম শ্রদ্ধা। তিনি জার্মানিতে রাষ্ট্রদূত থাকাকালে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকচক্রের নৃশংসতায় বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্য শাহাদত বরণ করেন। জাতির পিতা ও তাঁর পরিবারের নৃশংস-নির্মম হত্যাকান্ডের সংবাদ পেয়ে তিনি পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থানরত বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানাকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাঁর বাসভবনে নিরাপদে রাখেন এবং তাঁদের জীবনের নিরাপত্তা বিধানের উদ্যোগ নেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীকে সপ্তম জাতীয় সংসদের স্পীকার নির্বাচিত করেন। হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী জাতীয় সংসদে স্পীকার নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁর সাহসী পদক্ষেপে কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করা হয়। ফলে ৭৫- এর ঘাতকদের বিচারের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়। তিনি সংসদ সদস্যের জন্য প্রশিক্ষণ আয়োজন, আই.পি.ইউ এবং সি.পি.এ. এর মতো মর্যাদাশীল প্রতিষ্ঠানে সার্বিক ভূমিকা তথা আন্ত পার্লামেন্টারি সম্পর্ক স্থাপন, জাতীয় সংসদের কর্মকর্তা/কর্মচারীগণের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ আয়োজন, বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি, সংসদের কার্যক্রমকে গতিশীল করার লক্ষ্যে আধুনিক ডিজিটাল ব্যবস্থার প্রবর্তন, সংসদে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তরপর্ব পদ্ধতি চালুর মাধ্যমে আমাদের জাতীয় সংসদকে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, স্পীকার হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী ছিলেন একজন সফল কূটনীতিক। দেশ ও জাতির প্রতিটি ক্রান্তিকালে অবিভাবকের মতো হাল ধরেছেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তিনি পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নেন। এতে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সাড়া পড়ে। তৎকালীন অনিশ্চয়তার মুহুর্তে তার মত সিনিয়র কূটনীতিকের বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ছিলো। হুমায়ুন রশীদের সাহসী পদক্ষেপে মুক্তিযুদ্ধাদের মনোবল বৃদ্ধি পায়। একইভাবে ৭৫- এর নারকীয় হত্যাকান্ডের পর তিনি সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে নিজ বাসায় আশ্রয় দিয়েছিলেন। শুধু তার বাসায়ই রাখেননি, ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয়েও তিনি সহযোগিতা করেছেন। প্রতিকূল পরিবেশে নিজের ক্যারিয়ারের তোয়াক্কা না করে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের পাশে ইস্পাত কঠিন মনোবল নিয়ে পাশে ছিলেন। যাবতীয় প্রতিকূলতার বাধ ভেঙে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে থাকার নজির স্থাপন করে গেছেন হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তার ত্যাগের মূল্যায়ন করেছেন। ৯৬ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতার আসার পর প্রধানমন্ত্রী তাকে স্পীকার বানিয়ে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করেছেন।
মোজাম্মেল হক বলেন, ঝানু কূটনীতিক হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর শূন্যতা আজও বাংলাদেশ অনুভব করছে। তার মতো সৎ, দেশপ্রেমিক ও ঝানু কূটনীতিক বাংলাদেশে আর সৃষ্টি হবে বলে মনে হয় না। তার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখার ছিলো এবং আছে। তিনি সংসদীয় রাজনীতিতে যে নজীর স্থাপন করে গেছেন তা চর্চা করলে তার প্রতি প্রকৃত সম্মান দেখানো হবে বলে আমার বিশ্বাস।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ও ‘স্পীকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী স্মৃতি পরিষ’ এর সভাপতি মোঃ নজিবুর রহমান তার বক্তব্যের শুরুতে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং একাত্তরের বীর মুক্তিযুদ্ধাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর। বাংলাদেশের মহান জাতীয় সংসদে তিনিই বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতার স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। জাতির পিতার হত্যাকান্ডের বিচারের পথ প্রশস্ত করতে তিনি ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করেছিলেন। তার অসাধারণ কূটনৈতিক তৎপরতায় ৪০টির মতো দেশের কাছ থেকে বাংলাদেশের স্বীকৃতি আদায় করা সম্ভব হয়েছিলো।
কুরআন তেলাওয়াতের মধ্যদিয়ে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ এহছানে এলাহী। এছাড়া আরও বক্তব্য রাখেন, প্রবাসী কমিউনিটি নেতা ইয়ামিন আব্দুল্লাহ, এইচআরসিএমসির সহ সভাপতি মাহসুন নোমান রশীদ চৌধুরী, সিলেট মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোঃ জাকির, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভার্চুয়ালি বক্তব্য প্রদান করেন কমিউনিটি নেতা নিজাম উদ্দিন। এছাড়া ‘হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী : একজন নায়কের স্মৃতি’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাবেক পররাষ্ট্র উপদেষ্টা, কূটনীতিবিদ ও রাষ্ট্রদূত ডঃ ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী।
এ সময় স্পীকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর জীবন ও কর্মের উপর একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে পরিচালনা করেন এইচআরসিএমসির পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক মোঃ শামসুল ইসলাম এবং ডাঃ নুজহাত চৌধুরী।