নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকায় নিযুক্ত কূটনীতিকদের কাছে মিয়ানমার সীমান্তের ঘটনা তুলে ধরেছে বাংলাদেশ। রাখাইন রাজ্যে চলমান গোলাগুলির ঘটনায় বাংলাদেশে উদ্ভূত পরিস্থিতি এবং এখন অবদি এ ইস্যুতে ঢাকার অবস্থান কূটনীতিকদের জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় কূটনীতিকদের বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতির বিষয়ে ব্রিফ করা হয়। এরপর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রিয়ার এডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম এসব তথ্য জানান।
মিয়ানমার ইস্যুতে ঢাকায় দায়িত্বরত বিদেশি মিশন, দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের ব্রিফের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে প্রায় সব আমন্ত্রিতরা উপস্থিত থাকলেও চীনের কেউ উপস্থিত ছিলেন না।
ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব বলেন, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে যে উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং প্রাণহানি হচ্ছে, এ পরিস্থিতির জন্য আমরা মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে আগে বলেছি। প্রথমে ওনাকে বলেছি, আপনারা অ্যাকশন নেন, যেন মিয়ানমার থেকে কোনো গোলা আমাদের এ পাশে না আসে। পরে আমরা আসিয়ান দেশগুলোকে একইভাবে অনুরোধ করেছি। আপনারা আপনাদের যতটুকু প্রভাব খাটিয়ে মিয়ানমারের ওপর চেষ্টা করেন যেন তাদের গোলা বাংলাদেশে না আসে। বাংলাদেশের জনগণের ওপরে যেন একটা চাপ সৃষ্টি না হয়।
খুরশেদ আলম বলেন, আজকে যারা এসেছেন অন্যান্য রাষ্ট্রদূতরা তাদেরও একই কথা বলেছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, আমরা ধৈর্যের সঙ্গে কাজ করছি। আসলেই আমরা ধৈর্যের সঙ্গে কাজ করছি। কিন্তু আমরা এমন কিছু করি নাই, যার জন্য মিয়ানমারের গোলা এসে আমাদের জনগণ যারা সীমান্তের ভেতরে আছে তাদের জান-মালেরর নিরাপত্তা ব্যাহত করবে। তারা গরু-বাছুর নিয়ে বাইরে যেতে পারবে না, তারা ধানক্ষেতে যেতে পারবে না, তাদের ঘরবাড়িতে থাকতে পারবে না; এটাতো হতে দেওয়া যায় না।
ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব বলেন, এ কারণে আমরা তাদের (দূতদের) বলেছি, আমরা আপনাদের সাহায্য চাই। যাতে করে মিয়ানমার এ অঞ্চলে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ভবিষ্যতে ফায়দা লুটতে না পারে, যাতে করে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে না হয়। এটাও বলে দিয়েছি, আমরা চরম ধৈর্ষ্যের সঙ্গে পরিস্থিতি অবলোকন করতেছি এবং আমরা কোনোভাবেই চাই না এখানে জড়িত হতে।
তিনি বলেন, এখানে জড়িত হলে মিয়ানমার একটা সুযোগ পাবে। রোহিঙ্গাদের না নেওয়ার বিষয়ে একটা অজুহাত পাবে। সে রকম কোনো অজুহাত আমরা মিয়ানমারকে এ মুহূর্তে দিতে চাই না।
মিয়ানমার ইস্যুতে ঢাকার অবস্থানে দূতরা প্রশংসা করেছে জানিয়ে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব বলেন, আমরা সবাইকে (দূতরা) বলেছি। মোটামুটি সবাই (দূতরা) এসেছিল। তারা আমাদের অবস্থানের প্রশংসা করেছেন খুবই। আমরা যে চরম ধৈর্য দেখাচ্ছি এবং যে কোনো উসকানিতে পা দিচ্ছি না মিয়ানমারের, এটাকে তারা প্রশংসা করেছেন। বলেছেন, তাদের ক্যাপিটালে তারা জানাবেন। যাতে ভবিষ্যতে তাদের যদি করণীয় কিছু থাকে; বিশেষ করে জাতিসংঘে কিছু করার থাকলে তারা আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন।
মিয়ানমার ইচ্ছে করে এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে কি না, জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ইচ্ছে করে করুক বা না করুক এটা এ অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে ফেলবে। কাজেই মিয়ানমার সরকারকে এটা বুঝতে হবে। তাদের বুঝতে হবে বাংলাদেশ হলো পশ্চিমে, দক্ষিণে আরাকান আর্মি। তাদের গোলা কোনোভাবেই বাংলাদেশে আসার কথা না। তিনি বলেন, গোলা তো পশ্চিমে আসার কথা না। কাজেই এটা জিয়োগ্রাফিক্যালি হয় না, যদি কেউ ইচ্ছে করে না করে। ইচ্ছাপূর্বক আমাদের এ কনফ্লিকটে (দ্বন্দ্বে) জড়ানোর যে প্রচেষ্টা সেটা আমরা বলেছি, আমরা এটাতে জড়িত হবো না।আমরা তাদের (দূতদের) অবহিত করলাম। রাষ্ট্রদূতদের বলেছি, আপনারা যে অ্যাকশন নেওয়া উচিত বলে মনে করবেন, সেটার যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মিয়ানমার সেনা বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে খুরশেদ আলম বলেন, আমরা সর্বস্তরেই মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। যাতে মিয়ানমার বুঝতে পারে এ রকম একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তাদের জন্যও বিপজ্জনক। বাংলাদেশ এটা কোনোভাবেই গ্রহণ করবে না।
মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বাংলাদেশের আশ্রয়ে রয়েছে দেশটির এমন অভিযোগ নাকচ করে দেন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব। তিনি জানান, এই অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। অন্য কোনো দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে বাংলাদেশ কখনও তাদের ভূখণ্ড কোনো গোষ্ঠীকে ব্যবহার করতে দেয় না।
এর আগে সোমবার বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের চলমান উত্তেজনা পরিস্থিতি সম্পর্কে ঢাকায় অবস্থিত আসিয়ানের মিশন প্রধানদের জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব। সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের ভেতরে মর্টার শেল নিক্ষেপ ও বিস্ফোরণের ঘটনায় ঢাকার গভীর উদ্বেগের কথা তিনি আসিয়ান দূতদের জানান।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তে গত শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা থেকে নতুন করে গোলাগুলি শুরু হয়। রাত ৮টার দিকে একটি মর্টার শেল এসে তুমব্রু সীমান্তের বিপরীতে শূন্য রেখায় পড়ে। এতে এক রোহিঙ্গা যুবকের মৃত্যু হয়।
ওই ঘটনায় এক শিশুসহ পাঁচ রোহিঙ্গা নাগরিক আহত হন। তারা এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েকে ডেকে কড়া প্রতিবাদ জানায় ঢাকা। রাষ্ট্রদূতকে একটি প্রতিবাদলিপি দেওয়া হয়।
এর আগে কয়েক দফায় মিয়ানমার থেকে মর্টার শেল ও গোলা এসে পড়ে বাংলাদেশের ভেতরে। ওইসব ঘটনায়ও মিয়ানমার রাষ্ট্রদূতকে ডেকে প্রতিবাদ জানানো হয়।
|