মৌলভীবাজার সদর উপজেলা ভূমি অফিসে চলছে তেলেসমাতি কাণ্ড
27, March, 2023, 5:27:27:PM
জিতু তালুকদার, মৌলভীবাজার :
মৌলভীবাজার সদর উপজেলা ভূমি অফিসে চলছে একের পর এক তেলেসমাতি কাণ্ড। গায়েব হয়ে যাচ্ছে সাধারণ নাগরিকদের দাখিলী আবেদন এবং জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিস আদেশপত্র। ফলে, কাঙ্খিত সেবা না পাওয়ায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ নাগরিকরা। অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান হয়, এ অফিসে কোন জবাবদিহিতা নেই।
জানা গেছে, মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর সদর উপজেলার ৩নং কামালপুর ইউনিয়নের ৫০ নাগরিক স্বাক্ষরিত একটি আবেদন দাখিল করা হয় বিগত ১১/১২/২০২২ইং তারিখে। এর প্রেক্ষিতে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের ২৯/০১/২০২৩ ইং তারিখের ৫৯নং স্মারকে একটি অফিস আদেশপত্র সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর প্রেরণ করা হয়। এরপর থেকে সদর উপজেলা ভূমি অফিসে কয়েকবার যোগাযোগ করলেও, উক্ত অফিস আদেশপত্রের কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছেনা। সদর উপজেলা ভূমি অফিস থেকে বলা হচ্ছে, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের ২৯/০১/২০২৩ইং তারিখের ৫৯নং স্মারকযুক্ত কোন অফিস আদেশপত্র তারা পায়নি। শেষমেষ গত ০০ইং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলের কাছে ২৯/০১/২০২৩ইং তারিখের ৫৯নং স্মারকযুক্ত পত্রের অফিসকপির ছায়ালিপি চাইলে তিনি বলেন, এসবের কোন অফিসকপি থাকেনা। তাৎক্ষণিক বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করলে, তিনি বিষয়টি পুরোপুরি না শুনেই বলেন- এটা এসিল্যান্ড অফিসে পাঠানো হয়েছে, স্মারক নম্বর আছে। কিন্তু, এসিল্যান্ড অফিসে এটি পাওয়া যাচ্ছেনা জানানোর পর তিনি বলেন- তারা না পেলে আমি কি করার আছে। তবু আমি দেখবো। পরবর্তীতে আবারও সদর উপজেলা ভূমি অফিসে যোগাযোগ করলে, আবারও জানানো হয় তারা এটা পায়নি।
উল্লেখ্য- এর আগে ১০০ নাগরিক স্বাক্ষরিত একই আবেদন জেলা প্রশাসক বরাবর দাখিল করা হয়েছিলো বিগত ২৩/০২/২০২০ইং তারিখে। এর প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ১২/০৩/২০২০ইং তারিখের ০৫.৪৬.৫৮০০.০১৫.০৪.০০১.১৭.৭৫৩নং স্মারকে “সরেজমিন তদন্তক্রমে রেকর্ডপত্র যাচাইঅন্তে সুষ্পষ্ট মতামতসহ বিস্তারিত তথ্য সম্বলিত প্রতিবেদন উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রেরণ করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধপত্র” সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর প্রেরণ করা হয়। এরপর থেকে বহুদিন যোগাযোগ করলেও, এর কোন হদিস পাওয়া যায়নি। সদর উপজেলা ভূমি থেকে জানানো হয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ১২/০৩/২০২০ইং তারিখের ০৫.৪৬.৫৮০০.০১৫.০৪.০০১.১৭.৭৫৩নং স্মারকযুক্ত কোন অফিস আদেশপত্র তারা পায়নি। সর্বশেষ দীর্ঘ ৩ বছরের মাথায় চলতি ২০২৩ সালের ১লা মার্চেও সদর উপজেলা ভূমি অফিস থেকে জানানো হয়েছে, জেলা প্রশাসকের উক্ত অফিস আদেশপত্র তারা পায়নি।
একইভাবে, গত নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে একটি প্রতিবেদন এ অফিসে পাঠানো হয়। সেইথেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারীর প্রথম সপ্তাহ পর্যন্তও ওই প্রতিবেদনটি এ অফিসে খুঁজে পাওয়া যায়নি। বাধ্য হয়ে ভূক্তভোগী সেই অফিসকর্তার স্মরণাপন্ন হন- যে অফিস থেকে প্রতিবেদনটি পাঠানো হয়েছিলো। এরপর সেই অফিসকর্তার হস্তক্ষেপে আধাঘন্টার মধ্যে এ অফিসের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মূদ্রাক্ষরিক এনামুল হকের কাছে ফাইলটি পাওয়া যায়।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে একটি সূত্রে জানিয়েছে- সাধারণত জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কোন অফিস আদেশপত্র বা ফাইল পাঠানো হলে, সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তি তা স্মারক রেজিষ্টারভূক্ত না করে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মূদ্রাক্ষরিক এনামুল হকের কাছে দিয়ে দেন। আর, স্মারক রেজিষ্টারভূক্ত না করার কারণেই ওই অফিস আদেশপত্র বা ফাইল খুঁজে পাওয়া যায়না। ফলে, ভূক্তভোগীকে বলা হয় ওই অফিস আদেশপত্র বা ফাইল এ অফিসে আসেনি। এভাবেই তেলেসমাতি কান্ড চলছে সদর উপজেলা ভূমি অফিসে।
এ বিষয়ে বক্তব্য নেয়ার জন্য একাধিক দিন সদর উপজেলা ভূমি অফিসে গিয়েও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাদিয়া জাহানকে পাওয়া যায়নি। তার সরকারী মোবাইল ফোনে একাধিক দিন বার বার কল দিলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা যায়নি। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে উল্লিখিত একই সূত্রে জানা গেছে- সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাদিয়া জাহান নিয়মিত অফিস করেননা। তিনি মাসে ২/৪ দিন অফিসে আসেন এবং কিছুক্ষণ পরই চলে যান। আর, সরকারী মোবাইল ফোনটিও তিনি সাথে রাখেননা।