সিলেট ব্যুরো : সিলেটে বিএনপি নেতা আ ফ ম কামাল হত্যাকাণ্ডের প্রায় ৪৯ ঘন্টা পর ১০ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করা হয়েছে। নিহতের ভাই মইনুল হক বাদী হয়ে মঙ্গলবার রাত ১০ টার দিকে নগরের বিমানবন্দর থানায় এ মামলা দায়ের করেন।
মামলা দায়েরের তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিলেট মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ।
তিনি বলেন, মামলায় আজিজুর রহমান সম্রাটকে প্রধান আসামি করে ১০ জনের নামোল্লেখ পূর্বক অজ্ঞাত আরো ৪-৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এজাহারে উল্লেখ অন্য আসামিদের নাম প্রকাশ করতে অপরাগতা প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে, হত্যা মামলা দায়েরের পর এজহারভুক্ত আসামি কুটিকে (২৪) মঙ্গলবার রাতে গ্রেপ্তার করেছে সিলেট বিমানবন্দর থানার পুলিশ। কুটি সিলেট নগরের বড়বাজার গোয়াইপাড়া এলাকার মৃত নূর মিয়ার ছেলে।
আজবাহার আলী শেখ গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও কুটিকে কোথা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা বিস্তারিত জানাননি। কুটি বিএনপি নেতা কামাল হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার এজাহারভুক্ত ৫ নম্বর আসামি।
গত রোববার রাত ৯টায় আফম কামাল প্রাইভেটকারে চালকের আসনে বসা ছিলেন। তাকে পেছন থেকে একটি মোটরসাইকেলে ৩ জন যুবক অনুসরণ করে আসছিল। ঘটনাস্থল সিলেট সিটি করপোরেশনের ৫নং ওয়ার্ডের বড়বাজার এলাকায় ১১৮ নং বাসার সামনে পৌছামাত্র সামন থেকে আসা দুই যুবক মোটরসাইকেলটি গাড়ির সামনে ফেলে দেয়। তাতে প্রাইভেট কারের গতিরোধ করলে পেছনের মোটরসাইকেলের দিন যুবক চালকের আসনে বসাঅবস্থায় কামালের বুকে ও হাতে ছুরিকাঘাত করে। দুর্বুত্তরা গাড়ির এক পাশ আটকিয়ে পেছনের সীটে বসেও তাকে ছুরিকাঘাত করে, এমনটি ধারণা পুলিশের।
এসময় দুর্ঘটনা ভেবে প্রাইভেট কারের সামনে পড়া মোটরসাইকেলটিও জনতার সহায়তায় তুলে নিয়ে দুর্বৃত্তরা ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়ে। প্রথমে লোকজন এটিকে দুর্ঘটনা মনে করলেও পরক্ষণে বুঝতে পারেন ঘটনাটি ছিল হত্যাকাণ্ড।
এ ঘটনার পর রাতে বিএনপি ও অংগসংগঠনের নেতাকর্মীরা ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি নগরের রিকাবিবাজারে এসে কবি নজরুল অডিটরিয়ামে মহানগর আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভাস্থলে ভাঙচুর চালায়। বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় এবং একটি প্রাইভেট কার ভাঙচুর করে।
সোমবার বেলা ২টার দিকে আফম কামালের ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়। এরপর মরদেহ স্বজনরা দাফনের জন্য গ্রামের বাড়ি সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ থানাধীন আলীনগর পালপুরে নিয়ে যান।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের অধ্যাপক ডা. সামসুল ইসলাম বলেন, নিহতের দেহে ২৫টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তার বাঁ হাতে ১৬টি, বাম বগলের নিচে ২টি, বুকের বামপাশে ১টি ও বাম পায়ে ৬টি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এরমধ্যে বুকের বাম পাশের ধারালো অস্ত্রের আঘাতটি ছিল গুরুতর। এই আঘাতটি হৃদপিন্ড ফুটো করে দেয়। এই একটি আঘাতই মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট। এছাড়া বাম হাতে ও পায়ে অধিক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়।