কামরুল হাসান নিরব, ফেনী:

২০১৮ সালে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ফেনীতে একটি মিটিংয়ে সাংবাদিকদের লালপোল ওভারক্রসিংয়ের স্থানে ওভারপাস নির্মাণের প্রশ্নের জবাবে দ্রুত নির্মাণের আশ্বাস দেন। কিন্তু বছরের পর বছর গড়লেও মন্ত্রীর কথার প্রতিফলন দেখেননি ফেনীবাসী। ফেনীর লালপোলে মহাসড়ক ক্রসিং করার জন্য নেই কোনো ওভারপাস। ফেনী সদর ও সোনাগাজী উপজেলাসহ জেলার দক্ষিণাঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ ফেনী শহরে ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছে সড়কটি। বাইপাস ওভারপাস ও সংযোগ না থাকায় মহাসড়ক পার হতে গিয়ে অহরহ দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে। দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে দ্রুত এর স্থায়ী সমাধান চান ফেনীবাসী।

ফেনীর সদর উপজেলাকে দুই ভাগ করেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। দ্রুত গাড়ি চলাচলের মধ্যেও মহাসড়ক অতিক্রম করে ফেনী শহরে প্রতিনিয়ত আসা-যাওয়া করছে রোগী, বয়োবৃদ্ধ, শিক্ষার্থী, চাকরিজীবীসহ ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লক্ষাধিক মানুষ।

এ সড়কে যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে সিএনজি অটোরিকশা, ইজিবাইক, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল ব্যবহৃত হচ্ছে। মহাসড়ক অতিক্রম করতে গিয়ে এসব যানবাহন হরহামেশা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে এতে প্রায়ই ঘটছে প্রাণহানি। অনেকেই ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়ক পারাপার হচ্ছেন। কোন সংযোগ না থাকায় রাস্তা পারাপার যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।

এদিকে অনেক সময় মহাসড়কে যানজট কিংবা যানবাহনের আধিক্যের কারণে এপার থেকে ওপারে যেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। শহরের মহিপাল থেকে প্রতিদিন সোনাগাজীর উদ্দেশ্যে প্রায় পঞ্চাশটির মতো বাস চলাচল করে। মহাসড়কে সংযোগ না রাখা, ওভারপাস ও বাইপাস এছাড়া ইমা, উপকূল আর সিএনজি মিলিয়ে প্রায় সাত হাজার আর মালবাহী প্রায় এক হাজার গাড়ি প্রতিদিন মহাসড়ক অতিক্রম করে সোনাগাজী উপজেলার দিকে প্রবেশ করে। সদরের ছয়টি ইউনিয়ন ও উপজেলার নয়টি ইউনিয়ন আর একটি পৌরসভার যানবাহনের একমাত্র ভরসা এ মহাসড়ক।

অন্যদিকে সড়কটিতে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। কিছুদিন আগেও দুই মোটরসাইকেল আরোহীকে চাপা দেয় দ্রুতগতির শ্যামলী পরিবহন। এ সময় দুজন ঘটনাস্থলে মারা যায়। এর আগে একই পরিবহনের বাসের নিচে চাপা পড়ে মারা যায় এক ট্রলিচালক। গত পাচ বছরে ছোট-বড় বিভিন্ন দুর্ঘটনায় এ এলাকায় প্রাণ হারিয়েছে শতাধিক মানুষ। মহাসড়ক সম্প্রসারণের পর এ অন্তত মৃত্যুর ঘটনা বেড়ে চলেছে বলে জানায় স্থানীয়রা।

বর্তমানে সোনাগাজী থেকে ফেনী, ঢাকা চট্টগ্রাম যেতে হলে লালপোলের মহাসড়ক পার হওয়া ছাড়া উপায় নেই। আবার এসব গাড়ি সোনাগাজীতে যেতে হলেও মহাসড়ক পার হওয়া ছাড়া বিকল্প ব্যবস্থা নেই। এতে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা আর প্রাণহানি। এর স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন বলে মনে করেন সচেতন মহল। তবে লালপোল ক্রসিংকে দুর্ঘটনা মূল উৎস উল্লেখ করে ইতিমধ্যে প্রশাসন দুই পাশে চার পাঁচজন গার্ড রেখেছেন। এতেও কমছে না দুর্ঘটনা।

মহিপাল হাইওয়ে থানার ওসি মো. জাকির হোসেন বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহসড়কের লালপুল ক্রসিংয়ে একটি ওভারপাস নির্মাণ হলে কিংবা কোনো বিকল্প ব্যবস্থায় যানবাহন মহাসড়ক পারাপার করলে দুর্ঘটনা কমে যাবে। এদিকে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শুসেন চন্দ্র শীল বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ফেনীবাসি একটি আবেদন করে যাচ্ছে। ফলে সরকার নীতিগতভাবে এই মহাসড়কে  (ফেনী-সোনাগাজী) ওভারপাস নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব ফেনী জেলা প্রশাসককে নিশ্চিত করেছেন। ফেনী সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদ হোসেন জানান, আপাতত মহাসড়ক পারাপার নিরাপদ করতে বর্তমান ইউটার্নের ১০০ মিটার উত্তরে ঢাকার দিকে আরেকটি ইউটার্ণ খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বিষয়টি পরিদর্শন করে গেছেন। ডিজাইন চূড়ান্ত হলে কাজ শুরু হয়।