দুলাল কৃষ্ণ নন্দী,পটুয়াখালী প্রতিনিধি:
পটুয়াখালী বরিশাল মহাসড়কের পায়রা নদীর উপর নির্মিত লেবুখালীতে কিছুদিনের মধ্যেই উদ্ধোধন হতে যাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের পায়রা সেতু। সেতুটি উদ্ধোধন হলে বাংলাদেশের সকল জায়গা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের সাথে সড়ক যোগাযোগ স্থাপন হবে খুলে যাবে যোগাযোগ, ব্যবসা-বানিজ্য ও অর্থনৈতিক চাকা। এগিয়ে যাবে মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ও পর্যটন। ভোগান্তি কমবে ঢাকা থেকে কুয়াকাটাগামী যাত্রী ও পর্যটকদের। সেতুর উপরে সব আলো যখন জ্বলে তখন রাতে নদীর উপরের নান্দনিক সৌন্দর্য এখন দৃশ্যমান। এ দৃশ্য দেখতে ভীড় জমাচ্ছে দুর দুরান্তে বহু মানুষ।  

কর্ণফুলী ৩য় সেতুর আদলে গড়া এই সেতুটি ২০০ মিটারের দুটি দীর্ঘ স্প্যানের ও লোড নিয়ন্ত্রণ করবে সেতুর মধ্যে থাকা ক্যাবল, সর্ব্বোচ্চ পানির উচ্চতা থেকে সেতুর দুরত্ব থাকবে ১৮.৩০ মিটার যা দেশের অভ্যন্তরীন কোনো যান চলাচলে অসুবিধা হবে না। পদ্মা সেতু ও পায়রা সেতু চালু হলে ঢাকা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত প্রায় ৩০০ কিঃ মিঃ পথ হবে ফেরীবিহীন। ৯৯.৯% কাজ শেষ হওয়া পায়রা সেতুর বাকী কাজ শেষ করার লক্ষ্যে দিনরাত ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ঢাকা-বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের (এন এইচ-৮) ১৯২ কিলোমিটার এবং বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের ২৭ কিলোমিটারে লেবুখালী পায়রা নদীর উপর সব শেষ সেতু নির্মানের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের ২৪ শে জুলাই। কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট (কে এফ এ ই ডি) যৌথ অর্থায়নে ১ হাজার ৪৪৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা  ব্যয়ে সেতুটি নির্মানের দায়িত্ব পায় চীনা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান লংজিয়ান রোড এন্ড ব্রীজ কোম্পানী লিমিটেড। কার্যাদেশে সেতু নির্মানে ৩৩ মাস সময় বেঁধে দেয়া হলেও দুই দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০২২ সালের ৩০ শে জুন পর্যন্ত তবে তার আগেই আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যে সেতু চালু করতে তৎপরতা চালাচ্ছেন সেতু কর্তৃপক্ষ।

পায়রা সেতুর প্রকল্প পরিচালক মোঃ আবদুল হালীম জানান, ১ হাজার ৪৭০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৯.৭৬ মিটার প্রস্থ এই সেতুর আলাকসজ্জার ১৬৫ টি পোস্ট সেতুর উপরিভাগের পিচ ঢালাই, টোল প্লাজা, প্রশাসনিক ভবন, ১হাজার ২৬৮ মিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক, ইলেক্ট্রিফিকেশনসহ এই ফোর লেন বিশিষ্ট সেতুর ৯৯.৯ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। নদীর তলদেশে বসানো হয়েছে ১৩০ মিটার দীর্ঘ পাইল যা দেশের সর্ব বৃহৎ। সেতুর উপরে বসানো লাল আলো উপর থেকে স্থাপনার সিগনাল দিবে।

প্রকল্প পরিচালক আরও জানান পুর্ত কাজে ১১৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও এবং কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি পেলেও কোনো ব্যয় বৃদ্ধি পাবে না বরং সিভিল ওয়ার্কে প্রায় ১০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে নদী শাসনের কাজ কিছু বাকী থাকলেও সেতু উন্মুক্ত করায় কোনো বাঁধা সৃষ্টি হবে না। সেতুর টোল নির্ধারণের বিষয়ে যানবাহন চালকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকায় প্রকল্প পরিচালকের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন এ বিষয়টি সড়ক ও সেতু মন্ত্রনালয়ের ও উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের, এটি আমাদের বিষয় নয়। পদ্মা সেতু এবং পায়রা সেতু চালু হলে দেশের সর্ব দক্ষিণে কুয়াকাটা পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হবে যা বর্তমান সরকারের একটি নতুন মাইল ফলক স্পর্শ করবে এবং দক্ষিণাঞ্চলের রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করেন গবেষকরা। দক্ষিণাঞ্চলের জনগণ প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার এই উন্নয়নের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং এই উন্নয়ন অব্যহত রাখার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।