ক্রীড়া ডেস্ক : শুরুতে সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেছিলেন লিওনেল মেসি। পরে দারুণভাবেই সেটা পুষিয়ে দিয়েছেন আর্জেন্টাইন ক্ষুদে জাদুকর। মেসির এমন জাদুকরী নৈপুণ্যে কোপা আমেরিকার সেমি-ফাইনালে উঠেছে আর্জেন্টিনা।
রোববার বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টায় শুরু হওয়া এই ম্যাচে ইউকুয়েডরকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে কোপা আমেরিকার সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে আর্জেন্টিনা। আলবিসেলেস্তেদের এই জয়টি ছিল মেসিময়। দুটি গোলে সহায়তার সঙ্গে নিজে করেছেন ১টি গোল। প্রথমার্ধের শেষ দিকে রদ্রিগো দে পল দলকে এগিয়ে নেওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধের শেষ দিকে ব্যবধান বাড়ান লাউতারো মার্তিনেস ও মেসি।
‘বি’ গ্রুপের চতুর্থ হয়ে শেষ আটে আসা ইকুয়েডরকে চেপে ধরে ‘এ’ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। গোলের জন্য প্রথম শট নেয় তারাই। তৃতীয় মিনিটে মার্তিনেসের শট ফিরিয়ে দেন গোলরক্ষক হেরমান ইসমায়েল গালিনদেস।
ষোড়শ মিনিটে এগিয়ে গিয়ে বাধা দিতে গিয়ে বল কিংবা মার্তিনেসের নাগাল পাননি ইকুয়েডর গোলরক্ষক। আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকারের শট হেড করে বিপদমুক্ত করেন রবের্ত আরবোলেদা। পরের মিনিটে কর্নার থেকে অরক্ষিত হেরমান পেস্সেইয়ার শট একটুর জন্য থাকেনি লক্ষ্যে। দারুণ দুটি সুযোগ হাতছাড়া হয় আর্জেন্টিনার।
শুরু থেকেই দুর্দান্ত খেলতে থাকা মেসির সামনে সহজতম সুযোগটি আসে ম্যাচের ২২ মিনিটে গিয়ে। ইকুয়েডরের কার্লোস গ্রুয়েজো ব্যাক পাস দিয়েছিলেন গোলরক্ষককে, মাঝপথে সেটি পেয়ে যান মেসি। শুধুমাত্র গোলরক্ষককে পরাস্ত করতে পারলেই মিলতো গোল। কিন্তু সবাইকে হতাশ করে ডানপাশের বারে মারেন মেসি।
এই গোল মিসের হতাশা নিয়েই প্রথমার্ধ শেষ করার পথে ছিল আর্জেন্টিনা। তবে বিরতির বাঁশি বাজার আগে মেসিই এনে দেন উদযাপনের উপলক্ষ্য। ইকুয়েডর রক্ষণকে পরাস্ত করে প্রথমে লাউতারোর উদ্দেশ্যে দুর্দান্ত এক পাস দিয়েছিলেন মেসি। কিন্তু ডি-বক্স থেকে বেরিয়ে সেই বলটি ক্লিয়ার করেন ইকুয়েডর গোলরক্ষক।
তবে ফিরতি বল পেয়ে যান মেসি। এবার ডি-বক্সের বাম পাশ থেকে নিচু ক্রস এগিয়ে দেন ফাঁকায় দাঁড়ানো রদ্রিগো ডি পলের উদ্দেশ্যে। গোল লাইনে দাঁড়ানো দুই ডিফেন্ডারকে পরাস্ত করে ম্যাচের প্রথম সাফল্য নিজের নামে করে নেন ডি পল। যা তার প্রথম আন্তর্জাতিক গোল।
দ্বিতীয়ার্ধে ফিরে নিজেদের খানিকটা গুছিয়ে নেয় ইকুয়েডর, মনোযোগ দেয় বল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার দিকে। প্রথমার্ধে তারা লক্ষ্য বরাবর কোনো শট নিতে না পারলেও, দ্বিতীয়ার্ধে দুইটি শট করে আর্জেন্টিনার জাল বরাবর। কিন্তু একবারও পারেনি কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পেতে।
অন্যদিকে আক্রমণের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখে আর্জেন্টিনা। কিন্তু নিকোলাস গনজালেজের আরও একবার ব্যর্থতার কারণে ম্যাচের ৫০ মিনিটের সময় দ্বিতীয় গোল পাওয়া হয়নি আর্জেন্টিনার। অবশ্য সুযোগ পেয়েছিলেন লাউতারো-মেসিরাও। তারাও কাজে লাগাতে পারেননি।
শেষ পর্যন্ত ম্যাচের ৮৪ মিনিটে গিয়ে ফুরোয় অপেক্ষা। ইকুয়েডরের রক্ষণভাগে দারুণ নৈপুণ্যে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারের কাছ থেকে বল কেড়ে নেন বদলি হিসেবে নামা অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া। তিনি বল এগিয়ে দেন মেসির উদ্দেশ্যে। সময় নষ্ট না করে ডি-বক্সে অপেক্ষায় থাকা লাউতারোকে পাস দেন মেসি। জোরালো শটে জাল কাঁপান লাউতারো।
প্রথম দুটি গোল এসেছে মেসির বাড়ানো বল থেকেই। এবার তার পালা। ডি মারিয়াকে ফাউল করেন হিনকাপি। সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। তবে ভিডিও এসিস্ট্যান্ট রেফারির সহায়তা নিয়ে জানা যায় ফাউলটি ছিল ডি-বক্সের ঠিক বাইরে। তাই পেনাল্টির সিদ্ধান্ত বদলে দেয়া হয় ফ্রি-কিক এবং হলুদের বদলে লাল কার্ড দেখেন হিনকাপি।
ডি-বক্সের ঠিক দাগের ওপর থেকে নেয়া বাঁকানো ফ্রি-কিকে ইকুয়েডরের গোলরক্ষককে কোনো সুযোগই দেননি মেসি। স্কোরলাইন হয়ে যায় ৩-০, নিশ্চিত হয় আর্জেন্টিনার জয়।
চলতি কোপা আমেরিকায় মেসির এটি চতুর্থ গোল। পাশাপাশি তিনি করেছেন চারটি এসিস্টও। দেশের হয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক শিরোপা জয়ের মিশনে দুর্বার গতিতেই ছুটছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা এ ফুটবলার। এখন সেরা চারের লড়াইয়ে তাদের সামনে কলম্বিয়া বাধা।