ইয়াবার ভয়াবহতা আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা বলাই বাহুল্য। আর এমনটিও যখন সামনে আসে, এই মরণ নেশা দেশের তরুণ সমাজকে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করছে, তখন স্বাভাবিতভাবেই এর ভয়াবহতা অনুমান করা যায়। এ ছাড়া চাহিদা এবং তরুণদের টার্গেট করে মাদক পাচারকারীরা ইয়াবাকে পুঁজি করে রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে এমন বিষয়ও আলোচিত। ফলে পরিস্থিতি যেন এমন হয়ে উঠেছে যে, ইয়াবার মরণ নেশায় ছেয়ে যাচ্ছে দেশ। আমরা মনে করি সামগ্রিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করার বিকল্প নেই।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশে ইয়াবার বিস্তারে রোববার দীর্ঘ এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সিএনএন। এতে বলা হয়েছে, গত বছর প্রায় তিন কোটি পিস ইয়াবা জব্দ করেছে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এ ছাড়া জাতিসংঘের মাদক এবং অপরাধবিষয়ক সংস্থার (ইউএনওডিসি) ২০১৫ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, মেকোং নদ দিয়ে এর আশপাশের এলাকা এবং পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় জব্দকৃত অধিকাংশ ইয়াবাই মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করছে। যখন এমন বিষয়ও উঠে এসেছে, ২০০০ সাল থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা আসতে শুরু করে। আর এখন এসব অঞ্চল ছাড়াও বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে ইয়াবা! তখন এই বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
আমরা মনে করি, সরকার সংশ্লিষ্টদের সুনির্দিষ্ট পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে ইয়াবার বিস্তার রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দিদারুল আল রাশেদ, যে কক্সবাজারে মিয়ানমার সীমান্তের কাছে একটি মাদক চিকিৎসাকেন্দ্র চালাচ্ছেন। তার ওই সংস্থাটি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যা ন্যাশনাল গোলস টু বি অবটেইনড অ্যান্ড রিটেইনডের (এনওএনজিওআর) অংশ হিসেবে কাজ করছে। বাংলাদেশে ইয়াবা ছড়িয়ে পড়া এবং ব্যাপকভাবে ইয়াবা আসক্তির বিষয়টির তিনি চাক্ষুষ প্রমাণ, এমন বিষয় উঠে এসেছে। তিনি বলেছেন, ২০০২ সালে অনানুষ্ঠানিক একটি জরিপ চালিয়ে তার মাধ্যমে শুধু কক্সবাজার জেলার প্রায় ২০ হাজার মানুষ মাদকাসক্ত বলে জানা গেলেও, সে সময় কেউই ইয়াবা সেবন করত না। তাদের নেশার প্রধান উপকরণ ছিল গাঁজা এবং হেরোইন। কিন্তু ২০০৭ সালে যেন দেশে ইয়াবার বন্যা বয়ে গেল! সবখানে সহজেই ইয়াবা পাওয়া যাচ্ছিল। ২০১৬ সালে তারা যখন আবারও একটি জরিপ চালায়, তখন ওই অঞ্চলের প্রায় ৮০ হাজার মানুষ মাদকাসক্ত এবং এদের মধ্যে প্রায় ৮০ ভাগই ইয়াবা সেবন করে!
আমরা বলতে চাই, শুধু সিএনএনেই নয়, বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের পত্রপত্রিকায়ও ইয়াবাসংক্রান্ত যে চিত্র উঠে এসেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতেও একটি ভয়ানক বাস্তবতাই স্পষ্ট হয়। মূলত ইয়াবা বাংলাদেশের তরুণ সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে এমন বিষয় বার বার আলোচনায় এসেছে। ফলে সংশ্লিষ্টদের এটা আমলে নেয়া কর্তব্য যে, একটি দেশের তরুণ সমাজ ধংসের দিকে ধাবিত হতে থাকলে তা পুরো দেশ ও জাতির জন্য কতটা উৎকণ্ঠাজনক হতে পারে।
আমরা মনে করি, ইয়াবার মরণ ছোবলে দেশের তরুণ সমাজ আজ যেভাবে অধপাতে যাচ্ছে তা এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সংগত কারণেই ইয়াবাসহ সব মাদকদ্রব্য পাচার বন্ধে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। এটাও আমলে নিতে হবে যে, ইয়াবার ভয়াল থাবায় অনেক পরিবার যেমন নিঃস্ব হয়ে গেছে, তেমনি বিশেষজ্ঞরা এমনটিও বলেছেন, অনেক উঠতি বয়সীদেরও বিপথে যাওয়ার পেছনে ইয়াবার ছোবল দায়ী। ফলে ইয়াবার বিস্তার রোধে সংশ্লিষ্টরা প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিশ্চিত করবেন এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।