ক্রমেই নির্বাচনের দাবি জোরালে হচ্ছে রাজনৈতিক ময়দানে। বিএনপি সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতো এবার ২০২৫ সালের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন চায় খেলাফত মজলিস।
শনিবার খেলাফত মজলিসের সাধারণ পরিষদের দ্বাদশ অধিবেশনে এ দাবি জানান দলটির আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ।
এদিন সকাল সাড়ে ৯টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত অধিবেশন উদ্বোধন করেন খেলাফত মজলিসের সাবেক আমির ও বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ বলেন, চূড়ান্ত বিজয় এখনো আসেনি। সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠিত করতে আমাদেরকে আরও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। সব প্রকার দুর্নীতি, জুলুম ও অবিচার মূলোৎপাটনে আমূল সংস্কার প্রয়োজন।
তিনি বলেন, এই মুহূর্তে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রতি আমরা জোর দাবি জানাতে চাই- যে সংস্কার কমিশনগুলো গঠন করা হয়েছে, তার কার্যকারিতা আরও দৃশ্যমান করুন। প্রশাসনিক সংস্কারসহ সব সংস্কারে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের মতামত প্রাধান্য দিন। বিশেষ করে শিক্ষা ও সংবিধান সংস্কার কমিশনে ইসলামী মূল্যবোধকে প্রাধান্য দিন। এখানে ইসলামবিরোধী কোনো অপতৎপরতা মেনে নেওয়া হবে না। আগুন সন্ত্রাসসহ সব নাশকতা রুখে দিতে রাষ্ট্রীয় স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করুন। শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে অবিলম্বে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করান। বিডিআর হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বর গণহত্যাসহ সব মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ত্বরান্বিত করুন। দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাজার মনিটরিং জোরদারের উদ্যোগ নিন। পাচারকৃত সব অর্থ ফিরিয়ে আনুন। ডলারের তুলনায় টাকার অবমূল্যায়ন কমিয়ে আনুন।
খেলাফত মজলিসের আমির বলেন, বৃহৎ প্রতিবেশী রাষ্ট্রের (ভারত) অব্যাহত আধিপত্যবাদি আচরণে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব আজও হুমকির সম্মুখীন। হাজার হাজার শহিদের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ আজ চতুর্মুখী ষড়যন্ত্রের শিকার। এই মুহূর্তে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য দল-মত নির্বিশেষে সবার ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। আজকের এই অধিবেশন থেকে দেশপ্রেমিক সব দলের প্রতি আমরা ঐক্যের আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, এদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে হলে দেশের সর্বস্তরে সংস্কার প্রয়োজন। আমূল সংস্কারের জন্য খেলাফতভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। জগতগুলোর প্রতিপালক মহান আল্লাহ একমাত্র মানুষকে তার খলিফা বা প্রতিনিধি হিসেবে পাঠিয়েছেন। একটি সত্যিকার কল্যাণ রাষ্ট্র গড়তে হলে রাষ্ট্রে আল্লাহর রবুবিয়্যাত প্রতিষ্ঠা আবশ্যক।স্রষ্টার দেওয়া ম্যানুয়ালই সৃষ্টিকে স্বাচ্ছন্দ্যে চালিত করে। মানুষকে জানতে হবে আল্লাহর হুকুম মানার মধ্যে কত শান্তি। ইসলামের আলোকে রাষ্ট্র ও সমাজ পরিচালিত হলে বৈষম্য থাকবে না, দারিদ্র্য থাকবে না, জুলুম থাকবে না, অবিচার থাকবে না, রাষ্ট্রীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হবে। এই জন্য খলিফার মর্যাদাপূর্ণ মানুষগুলোকে যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে হবে। কুরআন ও সুন্নাহ আঁকড়ে ধরতে হবে।
খেলাফত মজলিসের আমির আরও বলেন, খেলাফত মজলিস ঈমান ও আমলে সালেহর অধিকারী একদল যোগ্য নেতৃত্ব তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। খেলাফতের দায়িত্ব পালনে সদা তৎপর একদল যোগ্য জনগোষ্ঠী বিনির্মাণে আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত। সাধারণ পরিষদের অধিবেশন হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে বড় গঠনতান্ত্রিক অনুষ্ঠান, যা একদল যোগ্য লোকের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। আজকের এই অধিবেশনের মধ্যদিয়ে ইসলামী আদর্শের আলোকে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের আন্দোলন আরও জোরদার হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।