জামায়াতে ইসলামীসহ তাদের অঙ্গ সংগঠন নিষিদ্ধের গেজেট অতি দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাতিল হচ্ছে। এটি আগামীকাল মঙ্গলবারও হতে পারে।
সোমবার (২৬ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন জামায়াতের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার ঘটনায় জামায়াত ও এর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের জড়িত থাকার অভিযোগ করে আসছিলেন সরকারের মন্ত্রীরা। এমন পরিপ্রেক্ষিতে ২৯ জুলাই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় সভায় জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে একমত হন ওই জোটের শীর্ষ নেতারা। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সেই বৈঠক হয়।
পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গেজেটের মাধ্যমে ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে সরকার।
জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া কয়েকটি মামলার রায়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী (পূর্বনাম জামায়াত-ই-ইসলামী/জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ) এবং এর অঙ্গসংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘটিত গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে দায়ী হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এ ছাড়া এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের রায়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। আপিল বিভাগ ওই রায়কে বহাল রেখেছেন।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির সাম্প্রতিককালে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ, ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সরাসরি এবং উসকানির মাধ্যমে জড়িত ছিল বলে সরকারের কাছে যথেষ্ট তথ্য–প্রমাণ রয়েছে। সরকার বিশ্বাস করে যে জামায়াতে ইসলামী, শিবিরসহ এর সব অঙ্গসংগঠন সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত রয়েছে।
তাই জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ এর সব অঙ্গসংগঠনকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে এসব দল ও সংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্তা হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
আইনজীবী শিশির মনির জানান, ৫ আগস্ট তৎকালীন ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হয়। ওই দিনই সেনাপ্রধানের অফিস ও বঙ্গভবনে রাজনৈতিক দলের সভা অনুষ্ঠিত হয়। দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে সেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়। অতঃপর অন্তর্র্বতী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের ক্ষেত্রেও জামায়াত তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জামায়াত রাষ্ট্র সংস্কার প্রক্রিয়ায় ক্রমাগত অংশগ্রহণ করে যাচ্ছে। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি, মন্দির পাহারা, শহিদ পরিবার ও আহত-পঙ্গুদের পাশে দাঁড়ানো ও বন্যাদুর্গতের মানবিক সহায়তা প্রদান তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
তিনি আরও জানান, ১২ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার সাথে জামায়াতের আনুষ্ঠানিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের আলোচনা অনুযায়ী এই বিষয়ে আইনগত দিক খতিয়ে দেখা হয় এবং আশু সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সাথে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আইনি বিধানগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এরই প্রেক্ষিতে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে ১৯ ধারা অনুযায়ী আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এরপর আইন অনুযায়ী সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট প্যানেল গঠন করা হয়। তথ্য অনুযায়ী ইতোমধ্যে এই সংক্রান্তে যথাযথ প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিষিদ্ধের আদেশ বাতিল করে নতুন গেজেট প্রকাশিত হবে বলে জানান আইনজীবী শিশির মনির।