কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশ আজ অগ্নিগর্ভ। ফুসে ওঠেছে ছাত্র-জনতা। পরিস্থিতিতে এ পর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য অনেকেই সরকারকে দায়ি করছেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে কথা বলছেন- শিক্ষক, চিকিৎসক, সাংস্কৃতিক কর্মী, বুদ্ধিজীবিসহ বিশাল একটি অংশ। তবে, সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো- আন্দোলনকে সমর্থন দিয়ে মতামত জানাতে গিয়ে সরকারকে নিষ্ঠুরতম স্বৈরাচার বলে আখ্যা দিয়েছেন পুলিশের এক অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক। সারাদেশে ছড়িয়ে পড়া আন্দোলন দমানোর জন্য পুলিশ বাহিনীকে গণমানুষের দুশমনে পরিণত করা হয়েছে বলে মন্তব্যও করেছেন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক মোঃ মনিরুজ্জামান টুকু।
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক বিরাট স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি। মুহুর্তের মধ্যে তার এ পোস্ট ভাইরাল হয়ে পড়ে। দেশজুড়ে শুরু হয় ব্যাপক সমালোচনা।
গত বৃহস্পতিবার উর্ধতন এ পুলিশ কর্মকর্তা তার ফেসবুক আইডিতে কোটা আন্দোলন কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে নিহতদের নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে একটি পোস্ট দেন। আলোচিত এ অতিরিক্ত ডিআইজি মনিরুজ্জামান ট্যুরিস্ট বিভাগের খুলনা ও বরিশালের দায়িত্ব পালন করছেন।
মনিরুজ্জামান তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, বিবেকের তাড়নায় ক্ষতবিক্ষত হচ্ছি। শিশু-কিশোর, যুবক-যুবতীসহ ২ শতাধিক মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকারীরা হলো বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। যাদের জীবিকা চলে জনগণের ট্যাক্সের টাকায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন সদস্য হিসেবে নিজেকে বড় অপরাধী মনে হচ্ছে। লজ্জিত ও অপমাণিতবোধ করছি।
পুলিশের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক মনিরুজ্জামান টুকু আরো বলেন, শত বছরের ইতিহাসে পৃথিবীর কোনো নিষ্ঠুরতম স্বৈরাচারী শাসকের আদেশে মাত্র দুই-তিন দিনের মধ্যে এতো শিক্ষার্থী হত্যার নজির নেই। কী অমানবিক আর বিবেকহীনদের দেশে বসবাস করছি। এতো পড় নৃশংস হত্যাকাণ্ডের দায় নিয়ে এখন পর্যন্ত সরকারের কোনো মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো পদস্ত কর্মকর্তা পদত্যাগ করেননি। অথচ এরা নিজেদের ক্ষমতা আর সীমাহীন দুর্নীতির স্বার্থে পুলিশকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।
এই প্রক্রিয়ায় পুলিশ বাহিনীকে গণমানুষের দুশমণে পরিণত করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, মানুষের পুঞ্জিতভূত ক্ষোভ এতোটাই প্রবল হয়ে ওঠেছে যে, পুলিশের শত শত যান, পুলিশের স্থাপনা সমূহ জ¦ালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেওয়া হচ্ছে। পুলিশকে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। ঘরে বাইরে সব জায়গায় আজ পুলিশ ঘৃণার পাত্র।
পুলিশের এতো বড় পদে থেকেও সরকারের বিরুদ্ধে এমন তীব্র সমালোচনায় হতবাক হয়েছেন সবাই। তবে, এ নিয়ে কোনো অস্বস্তিতে ভোগছেন না পুলিশের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিচালক মনিরুজ্জামন বলেও জানান তিনি। একটি গণমাধ্যমের কাছে অকপটে স্বীকার করেছেন তার এ স্ট্যাটাসের কথা। একজন উর্ধ্বতন পুলিশ কর্তকর্তার এমন স্ট্যাটাসে বেজায় ক্ষেপেছেন আওয়ামী লীগে উর্ধতন নেতারা। তারা এ কর্মকর্তাকে পথভ্রষ্ট হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।