ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে অষ্টম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীকে শ্রেণী কক্ষে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে এক স্কুল শিক্ষকের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ওই শিক্ষক হলেন আশেকুজ্জামান ডালিম। তিনি পাশ্ববর্তী হাকিমপুর উপজেলার বাসিন্দা এবং ঘোড়াঘাট পৌর এলাকার নুরজাহানপুর অবঃ সামরিক কলোনী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।

গত ৪ সেপ্টেম্বর সোমবার স্কুল শেষে অষ্টম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীকে শ্রেণী কক্ষে শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটায় ওই শিক্ষক। ঘটনার ৫ দিন পর ১০ সেপ্টেম্বর রবিবার ভূক্তভোগী শিক্ষার্থীর পরিবার বিচার চেয়ে প্রধান শিক্ষক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন। এ ঘটনায় ১১ সেপ্টেম্বর সোমবার বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভা শেষে অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক আশেকুজ্জামান ডালিমকে কারণ দর্শানোর চিঠি পাঠান বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কারণ দর্শানোর চিঠিতে তাকে আগামী ৭ দিনের ভিতর জবাব দিতে বলা হয়েছে।

অভিযোগ দেওয়ার পর ১০ সেপ্টেম্বর রবিবার সন্ধায় অভিযুক্ত শিক্ষক ডালিমের লোকজন ওই শিক্ষার্থীর বাড়িতে গিয়ে বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি দেখায় এবং পারিবারিক ভাবে মিমাংসা করার জন্য চাপ প্রয়োগ করছেন বলে অভিযোগ ভূক্তভোগী শিক্ষার্থীর মায়ের।

ওই শিক্ষার্থীর পরিবারের সাথে কথা বললে তারা জানান, তাদের মেয়ে স্কুল শেষে একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আশেকুজ্জামান ডালিমের কাছে প্রাইভেট পড়তেন। পারিবারিক অভাব অনটনের কারণে মাঝে মধ্যে কিছু সময় প্রাইভেট পড়া বাদ দিয়েছিলো ওই শিক্ষার্থী। গত ২ সেপ্টেম্বও শনিবার ভূক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবাকে ফোন করে তার মেয়ে প্রাইভেটে না আসার কারণ জানতে চায় শিক্ষক ডালিম। পর দিন থেকে তার মেয়েকে প্রাইভেটে পাঠাতে বলেন ওই শিক্ষক।

এর দুদিন পর গত ৪ সেপ্টেম্বর সোমবার স্কুল শেষে বিদ্যালয়ের শ্রেণীক্ষকে ওই শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়তে যায় ভূক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী। প্রাইভেট শেষে দুই সহপাঠীর সাথে বাড়ি যাবার উদ্দেশ্যে স্কুল ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল ওই শিক্ষার্থী। তখন অভিযুক্ত ওই শিক্ষক তার নাম ধরে ডাকলে দুই সহপাঠীকে সেখানে দাঁড়িয়ে রেখেই আবারো শ্রেণীক্ষকে যায় ওই শিক্ষার্থী। তখন ওই শিক্ষক তার হাত চেপে ধরে। ভয়ে মেয়েটি তার সহপাঠীদেরকে ডাকতে শুরু করলে ওই শিক্ষার্থীর গলা চেপে ধরে অভিযুক্ত শিক্ষক ডালিম। চিৎকার শুনে বাইরে থাকা সহপাঠীরা শ্রেণীকক্ষে গেলে ওই শিক্ষক রুম থেকে বের হয়ে চলে যায়।

ভূক্তভোগী শিক্ষার্থীর মা বলেন, ‘আমার মেয়ে কান্না করতে করতে বাড়িতে এসেছে। এখন ভয়ে সে স্কুলে যেতে চাইছে না। ১০ সেপ্টেম্বর রবিবার আমি মেয়ের সাথে গিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষককের কাছে অভিযোগ দিয়েছি এবং আমি সাথে গিয়ে মেয়েকে স্কুলে রেখে এসেছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘গত সেপ্টেম্বর রবিবার ওই শিক্ষককের পক্ষ থেকে কয়েকজন লোক বাড়িতে এসেছিল। তারা বলেছে এ সব জানাজানি হলে আমার মেয়ের বিয়ে হবে না। তাই নিজেদের ভিতরে মিমাংসা করে নিতে বলেছে। তবে আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই। স্কুলে বিচার না পেলে আমরা উপর মহলে বিচার দিব।’

ঘটনার সত্যতা জানতে অভিযুক্ত শিক্ষক আশেকুজ্জামান ডালিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি শ্রেণীক্ষকে আছেন বলে অজুহাত দিতে থাকেন। পরে তিনি বলেন, ‘আমাকে শোকজের কাগজ হাতে পেয়েছি। এ সব ঘটনা মিথ্যা।’

নুরজাহানপুর অবঃ সামরিক কলোনী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কমল কুমার কন্ঠ বলেন, ১০ সেপ্টেম্বর ‘রবিবার আমার কাছে অভিযোগ এসেছে। ১১ সেপ্টম্বর (সোমবার) আমরা ওই শিক্ষককে শোকজ করেছি। এ ঘটনায় ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। কমিটিতে গর্ভনিং বডির দুজন এবং শিক্ষকদের একজন সদস্য থাকবে। তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে ওই শিক্ষককে চাকুরিচ্যুত করা সহ সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এদিকে ঘোড়াঘাট উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস সাত্তার জানান, ‘তিনি বিষয়টি জানেন না। অভিযোগ পেলে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।