জুড়ী (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের উঁচু নিচু টিলা ভূমি বেষ্টিত কয়েকটি গ্রামে রয়েছে ছোট বড় প্রায় শতাধিক বাতাবিলেবুর (জাম্বুরা) বাগান। প্রতিটা বাগানে জুুম পড়েছে গাছ থেকে বাতাবিলেবু পাড়ার বা হার্বেস্টিং করার। প্রতি বছরের মতো এবার ও বাতাবিলেবু যাচ্ছে সিলেট, ঢাকা ও চট্টগ্রামে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর ৬৬ হেক্টর জমিতে বাতাবি লেবুর চাষ হয়েছে। ফলনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭২০ টন।
সরজমিনে দেখা যায়, জুড়ী লাঠিটিলা সড়কের কালামাটিতে বাতাবিলেবু গুলো বস্তাবন্দি করে একটি বড় ট্রাকে তোলা হচ্ছে। এছাড়াো বিভিন্ন এলাকা থেকে ছোট পিকাপ যোগে কালামাটিতে নিয়ে আসছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এখান থেকে বড় ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কাঁচা বাজারে।
এক সময় সিলেটের বাজারে অবহেলিত ছিল জুড়ীর বাতাবিলেবু। বিক্রি নিয়ে ছিল শঙ্কা। কালের বিবর্তনে এখন ঢাকা, চট্টগ্রামসহ প্রায় সারাদেশে বিখ্যাত হয়ে উঠেছে জুড়ীর অবহেলিত ফল। টক, মিষ্টি ও কিছুটা তিতা আছে এই ফলে একে স্থানীয়রা নাম রেখেছেন (মাতু জামির) আবার কেউ কেউ (জাম্বুরা) নামে চিনে ।সারাদেশব্যাপী চাহিদা থাকায় এখন মৌলভীবাজারের অন্যতম মূল্যবান হয়ে উঠেছে বাতাবিলেবু।
মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলা ও সিলেটের জৈন্তা এলাকায় আবাদ হয়। জুড়ীতে এসবের বাম্পার ফলন হয় বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়িরা। স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্য অনুসারে বছরে আনুমানিক শতাধিক ট্রাক জাম্বুরা জুড়িতে আবাদ হয়। এক সময়ের অবহেলিত ফল এখন জুড়ীর সম্ভাবনাময়। স্থানীয় বাজারে মৌসুমে এই ফলের তেমন চাহিদা না থাকলেও রয়েছে শহরে।
জুড়ীতে ২০২১ সালে গবেষণা করে বাতাবিলেবুর আরো দুটি জাত উদ্ভাবন হয়েছে, জুড়ী ১ ও জুড়ী ২ নামে। এই জাতের জাম্বুরা সাইজে অনেক বড় হয় এবং খেতে খুব সুস্বাদু।
শুকনাছড়া, লালছড়া ও জড়িছড়া এলাকার কৃষকরা জানান, এক সময় বাতাবিলেবুর তেমন চাহিদা ছিল না শুধু সিলেট বিভাগে বিক্রি করা হতো। চাহিদা না থাকায় আমরা বিক্রি নিয়ে চিন্তিত থাকতাম। এখন সরাসরি রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় শহরে বিক্রি করা হয়। এখন এই ফলের অনেক মূল্যায়ন বেড়েছে, মানুষের চাহিদা বেড়েছে, তাই বিক্রি নিয়ে এখন কোন অসুবিধা হয়না। তবে চাষীরা বিভিন্ন রোগবালাই ও কাঠবিড়ালির উপদ্রবের কারণে অতিষ্ঠ।
স্থানীয় বাতাবিলেবু ব্যবসায়ী কালা মিয়া ও হেলাল উদ্দিন জানান, এই এলাকায় তাদের বেশ কয়েকটা বাগান বছর চুক্তি অগ্রিম কেনা। সে সব বাগান থেকে সময় মতো লেবার দিয়ে জাম্বুরা হার্বেস্টিং করে মেইন সড়কের সাইটে নিয়ে আসেন। এর পরে জাম্বুরার আকারভেদে বাছাই করে বস্তাবন্দী করে বড় ট্রাক যোগে রাজধানী যাত্রাবাড়ীর কাচা বাজারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আড়তদার বস্তা আকারে পাইকারি বিক্রি করেন।
ঢাকা যাত্রাবাড়ীর ফল ব্যাবসায়ি মারুফ আহমদ জানান, এখানে জুড়ীর উপজেলার বাতাবিলেবু ‘অমৃত’ খুব বেশি চাহিদা। ক্রেতারা অনেক বেশি পচন্দ করে তাই দ্রুত বিক্রি করতে পারি। এগুলোর স্বাদ বেশি এবং কোন কেমিক্যাল না থাকায় ক্রেতাদের চাহিদা বেশি।
জুড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকতা মো: মাহমুদুল আলম খান বলেন, সারাদেশে বাতাবি লেবুর চাহিদা থাকলেও সঠিক জাতের বাতাবি লেবু বাজারে পাওয়া যায়না। দিন দিন বাতাবি লেবুর চাহিদা বৃদ্ধির কারণে জুড়ী কৃষি অফিস বাতাবি লেবু-১ ও ২ এবং বারি বাতাবি লেবু ৫ এর চারা বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এছাড়া চারা গাছ পরিচর্চার জন্য ৬ ধরণের সার, চুন, দুই ধরণের কীটনাশক, এক ধরণের ছত্রাক নাশক, স্প্রে মেশিন, সিকেচার, গ্রাফটিং নাইফ এবং মালচিং পেপার বিতরণ করা হয়েছে।