মাইকে প্রচার-প্রচারণা জাদু প্রদর্শনীর। কিন্তু ভেতরে কোনো জাদু শিল্পী নেই। তাই জাদু শিল্পীর হাতের নিপুণ কারসাজির পরিবর্তে ঝলমলে প্যান্ডেলজুড়ে চলছে অশ্লীল নাচ-গান। এ যেন এক অন্য রকম জাদুর আসর। এছাড়া পাশেই চলছে অবৈধ লটারি ও জমজমাট জুয়া। বগুড়া শেরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী রানীরহাটে গ্রামীণ মেলার চিত্র এটি।
বৃহস্পতিবার (২৫মে) সকাল থেকে শুরু হওয়া এই মেলা আয়োজক কমিটির প্রধান আয়ের উৎসই হচ্ছে নগ্ন নৃত্য প্রদর্শনী। শর্ত সাপেক্ষে মেলা একদিন চালানোর অনুমতি নিয়ে আয়োজন তিন দিনের। এমনকি কোনো শর্তই মানছেন না কর্তৃপক্ষ। অনুমতিপত্রে মেলায় জাদু প্রদর্শনী ও নাচ-গান বন্ধ থাকার কথা থাকলেও চলছে প্রকাশ্য। জাদু খেলা দেখানোর কথা বলে টিকিট বিক্রি করে ভেতরে চালানো হচ্ছে অশালীন নৃত্য। স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এলাকার চিহিৃত একটি সংঘবদ্ধ চক্র এসব কার্যক্রম চালিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় ওই চক্রটি টোল বা খাজনা আদায়ের নামে চাঁদাবাজির মহোৎসব চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার বিশালপুর ইউনিয়নের উল্লেখ যোগ্য একটি বাজার রানীরহাট। আর এই বাজারকে ঘিরেই বিগত চার-পাঁচ বছর ধরে গ্রামীণ মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। তাই প্রতিবছরের ন্যায় এবারো বৃহষ্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে ওই গ্রামীণ মেলা। মেলায় বেশকিছু খাবার ও শিশুদের খেলনা সামগ্রীর দোকান বসেছে। এছাড়া গ্রামীণ হস্তশিল্প ও পণ্যেও কোনো অস্তিত্বই নেই। তবে জাদু প্রদর্শনীসহ পাঁচটি ঝলমলে প্যান্ডেল চোখে পড়ে। যেখানে রাত-দিন সমান তালে চালানো হচ্ছে অশ্লীল নাচ-গান। সেইসঙ্গে চলছে অবৈধ লটারি।
মেলায় আসা গোলাম হোসেন, হাবিবুর রহমান, জাহঙ্গীর আলম সহ একাধিক ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মেলায় উচ্চশব্দে গান-বাজনা ও উলঙ্গ নৃত্য প্রদর্শনীর কারণে পরিবেশটাই নষ্ট হয়ে গেছে। এমনকি এসব প্রদর্শনীর দর্শকসারিতে উঠতি বয়সের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের উপচে পড়া ভিড় দেখে অবাক বনে গেছি। নাম প্রাকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, ছোট ছেলে মেয়েদের নিয়ে মেলায় গিয়েছিলাম। মাইকে জাদু প্রদর্শনীর প্রচার শোনে দেখার জন্য বায়না ধরে তারা। একপর্যায়ে তাদের নিয়ে টিকিট কেটে ভেতরে যাই। এরপর দেখি নিষিদ্ধ পল্লীর মেয়েরা অশালীন পোশাক পড়ে গানের তালে তালে নৃত্য করছেন। দশ থেকে পনের মিনিট এরকম নৃত্য দেখে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে সেখান থেকে বের হয়ে আসি। মেলা কমিটির নেতারা কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সদস্য বলেন, `সব মহলকে ম্যানেজ করেই এসব চালানো হচ্ছে। তাই পত্রিকায় লিখে কোনো লাভ হবে না ভাই।`
শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবু কুমার সাহা সাংবাদিকদের বলেন, `মেলার অনুমতি রয়েছে। তবে অশ্লীল কিছু হলে অবশ্যই সেটি বন্ধ করা হবে। এজন্য সেখানে দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।` উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা সুলতানা এ প্রসঙ্গে বলেন, `মেলার অনুমতিপত্রে কিছু শর্ত রয়েছে। এরমধ্যে জাদু প্রদর্শনী ও বিচিত্রা চালানো যাবে না।
এরপরও এসব করা হলে তাদেও বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে দাবি করে তিনি।
