বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের ফুটবলই সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা এতে কারো কোন দ্বিমত নেই। তাই ফুটবলের উন্নয়নের বিকল্প নেই। বাংলাদেশের ফুটবল বিশ্ব অথবা এশিয় মানের না হলেও দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ায় (সাফে) ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে। যদিও ভারতের সাথে বাংলাদেশের লড়াইটা বরাবরই হাড্ডাহাড্ডি। নেপাল আর ভুটানকে হারাতে এক বালটি ঘাম ঝড়াতে হয় বিশেষ করে জামাল ভুঁইয়াদের। তবে সাবিনা-আখিঁদের পারফরমেন্স প্রসংশিত। সম্প্রতি সাফেনতুন ইতিহাস গড়ে শিরোপা জিতে দেশবাসির মন জয় করেছেন তারা। বিশ্ব দরবারে সম্মানিত করেছে বাংলাদেশকেসাবিনারা।
বিনিময়ে পুরস্কারের বন্যায়ও ভেসে যাচ্ছে মারিয়া-সানজিদারা। সুখের খবর হলো, এ সাফল্যে পর বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা এখন বিশ্বের বিভিন্ন লীগে খেলার অফার পাচ্ছেন এবং খেলছেনও। একসময় এই মেয়েদের ফুটবল, ব্যাডমিন্টন, ক্রিকেট, হকি, ভারোত্তোলনের মতো খেলাগুলো সামাজিক সমর্থন ছিলো না। কিন্তু এখন এগিয়ে যাওয়া বিশ্বে নারী ফুটবলারদের সাফ পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা ছিলো নিঃসন্দেহে দেশবাসির জন্য গৌরবময় ও তাৎপর্যপূর্ণ। তাই ফুটবলপ্রেমীদের আগামী প্রত্যাশা সাবিনারা আরো ভালো করুক। আগামী মার্চ-এপ্রিলে তাদের সামনে অগ্নিপরীক্ষা। মানে, আরো ভালো করার সুযোগ। ফিফা র্যাকিংয়ে নিজেদের গ্রাফটা উচুঁতে নিয়ে যাওয়ার আরেকটি পরীক্ষা।
এদিকে, প্রথমবারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশ নেবে ইউরোপের কোনো দেশ। আগামী ২০ থেকে ৩১ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য সাফ অনূর্ধ্ব-১৭ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে খেলতে দেখা যাবে ইউরোপের একটি দেশকে। সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের (সাফ) সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক হেলাল বলেছেন, ইউরোপের একটি দেশ খেলবে, সেটা নিশ্চিত। তবে কোন দেশ খেলবে। সাফ অনূর্ধ্ব-১৭ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের এবারের আসর বসতে যাচ্ছে উয়েফার সহায়তায়। উয়েফা অ্যাসিসট্যান্সের অংশ হিসেবে তারা বিভিন্ন দেশের টুর্নামেন্টে পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকে। সৌদি আরবে অল জেনারেল সেক্রেটারিস সম্মেলনে উয়েফার এক কর্মকর্তার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়। পাঁচ দেশ রাউন্ড লিগ ভিত্তিতে টুর্নামেন্ট খেলবে। পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ দল চ্যাম্পিয়ন হবে। আর এখানের পরীক্ষায় পাশ করাটা সহজ নাকি কঠিন হবে সেটাই দেখার।
অপরদিকে, ফিফা উইন্ডোতে নারী ফুটবল দলের ম্যাচ আয়োজন করতে বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গেই যোগাযোগ করে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। বেশ কয়েকটি থেকে এখন দল দাঁড়িয়েছে দুটি দল-সিঙ্গাপুর ও কম্বোডিয়া। সিঙ্গাপুর সম্মত হলে সাবিনারা খেলতে যাবে সেখানে। সিঙ্গাপুরের সঙ্গে খেলা না হলেমার্চে বাংলাদেশে আসবে কম্বোডিয়া দুটি ম্যাচ খেলতে। বাফুফে নারী উইংয়ের চেয়ারপার্সন মাহফুজা আক্তার কিরণ বলেছেন, সিঙ্গাপুরের বিষয়টি দোদুল্যমান। তাই বিকল্প কম্বোডিয়া। মার্চে ফিফার কোন উইন্ডো নেই। কম্বোডিয়ার সঙ্গে আলোচনা করেই আমরা দুটি ম্যাচের আয়োজন করতে চাচ্ছি।এপ্রিলে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল অনুষ্ঠিতব্য প্যারিস অলিম্পিক গেমসের বাছাইয়ে অংশ নেবে। বাছাইয়ে বাংলাদেশ পড়েছে ‘বি’ গ্রুপে আছে ইরান, মিয়ানমার ও মালদ্বীপ।
এদিকে, ৩-৯ ফেব্রুয়ারি পযন্ত ঢাকার কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের আসর। এই টুর্নামেন্টের জন্য প্রধান থাকছেন কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনই, সেই দলে আছেন সাফজয়ী এই ৬ ফুটবলার। নেপালে সাফজয়ী নারী ফুটবল দলের সদস্য ছিলেন শামসুন্নাহার, রূপনা চাকমা, স্বপ্না রানী,সাথী বিশ্বাস, ইতি রানীও সোহাগী কিসকু। সম্প্রতি নেপালে দক্ষিণ এশীয় ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে মুকুট পরা এ নারীদের সামনে এবার আরেকটি চ্যালেঞ্জ ও অগ্নিপরীক্ষা। কারন এবার আছে ভারতের মতো শক্তিশালী দল।
অনূর্ধ্ব-২০ দলের খেলোয়াড়রাই একদিন জাতীয় দলের হয়ে লড়বেন। তাই আগামী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা ধরে রাখতে ভালো ফলাফলের বিকল্প নেই। চার দেশীয় এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ ফেবারিট হিসেবেই নামবে। বাংলাদেশ দলের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন আশা প্রকাশ করে বলেন, তার দল টুর্নামেন্টে ভালো খেলবে এবং শিরোপা জয়ের চেষ্টা করবে। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের মেয়েরা টুর্নামেন্ট খেলবে রাউন্ড রবিন লিগ ভিত্তিতে। পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ দুই দলের মধ্যে ফাইনাল হবে ৯ ফেব্রুয়ারি। কোচ ছোটন বলেন, এই টুর্নামেন্টের প্রতিটি দলই শক্তিশালী। তাই ভালো প্রতিযোগিতা হবে। আমরা ম্যাচ বাই ম্যাচ খেলে প্রথমে ফাইনাল নিশ্চিত করতে চাই। তারপর চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য।
অনূর্ধ্ব-২০ দলের অধিনায়ক সামসুন্নাহার বলেন, আমাদের মধ্যে খুব ভালো একটা আন্ডাসটেডিং আছে। তাই আমাদের লক্ষা ফাইনাল খেলা। দেশবাসির দোয়া চায়।