রসিক নির্বাচন: শর্তের বেড়াজালে সাংবাদিকরা, মোটরসাইকেল ব্যবহার নিষিদ্ধ
23, December, 2022, 11:53:38:PM
রবিউল ইসলাম লাভলু, রংপুর:
রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহে ইচ্ছুক গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য ১৩টি নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এসব নির্দেশনা অনুসারে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের পর প্রিসাইডিং অফিসারকে অবহিত করে তথ্য সংগ্রহ, ছবি তোলা এবং ভিডিও ধারণ করতে পারবেন সাংবাদিকরা। তবে ভোটকেন্দ্রে ১০ মিনিটের বেশি অবস্থান করা যাবে না বলে নির্দেশনায় উল্লেখ রয়েছে।
একইসঙ্গে এবার সংবাদ সংগ্রহের কাজে সাংবাদিকদের মোটরসাইকেল ব্যবহারের জন্য কোনো স্টিকার ইস্যু করা হবে না বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
এদিকে নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহে ১৩টি নির্দেশনার মধ্যে কয়েকটি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ বলে মনে করছেন সাংবাদিক নেতারা। এমন কড়াকড়ি নির্দেশনার মাধ্যমে গণমাধ্যমের শক্তিশালী ভূমিকাকে আড়াল করার চেষ্টা বলেও সন্দেহ করছেন অনেক প্রার্থী। তাদের আশঙ্কা গণমাধ্যমের ওপর এমন হস্তক্ষেপের সুযোগ নিতে পারে অশুভ শক্তি।
তবে নির্বাচন কমিশনের দাবি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করাসহ নির্বাচন অনুষ্ঠানে যাতে সাংবাদিকরা সহজে নির্বিঘ্নে নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহ করতে পারেন সেজন্য কিছু বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে।
বিধিনিষেধগুলো নিম্নরূপ: ১. নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে প্রদত্ত বৈধ কার্ডধারী সাংবাদিক সরাসরি ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন। ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের পর প্রিসাইডিং অফিসারকে অবহিত করে ভোটগ্রহণ কার্যক্রমের তথ্য সংগ্রহ, ছবি তোলা এবং ভিডিও ধারণ করতে পারবেন। তবে কোনোক্রমেই গোপন কক্ষের ছবি সংগ্রহ কিংবা ধারণ করতে পারবেন না। ২. একইসঙ্গে একাধিক মিডিয়ার সাংবাদিক একই ভোটকক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন না এবং ১০ মিনিটের বেশি ভোটকেন্দ্রে অবস্থান করতে পারবেন না। ৩. ভোটকক্ষে নির্বাচনী কর্মকর্তা, নির্বাচনী এজেন্ট বা ভোটারদের সাক্ষাৎকার নিতে পারবেন না। ৪. ভোটকক্ষের ভেতর থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা যাবে না। ৫. ভোটকেন্দ্রের ভেতর থেকে সরাসরি সম্প্রচার করতে হলে ভোটকক্ষ থেকে নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে তা করতে হবে, কোনোক্রমেই ভোটগ্রহণ কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করা যাবে না। ৬. সাংবাদিকরা ভোট গণনা কক্ষে ভোট গণনা দেখতে পারবেন, তবে সরাসরি সম্প্রচার করতে পারবেন না। ৭. ভোটকক্ষ থেকে ফেসবুকসহ কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা যাবে না। ৮. কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ কার্যক্রম ব্যাহত হয় এমন সকল প্রকার কাজ থেকে বিরত থাকবেন। ৯. ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকরা প্রিসাইডিং অফিসারের আইনানুগ নির্দেশ মেনে চলবেন। ১০. নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাজে কোনোরূপ হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। ১১. কোনো প্রকার নির্বাচনী উপকরণ স্পর্শ বা অপসারণ করতে পারবেন না। ১২. নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহের সময় প্রার্থী বা কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে যেকোনো ধরনের প্রচারণা বা বিদ্বেষমূলক প্রচারণা থেকে বিরত থাকবেন। ১৩. নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়তার জন্য নির্বাচনী আইন ও বিধিবিধান মেনে চলবেন।
উল্লেখিত নির্দেশনা পালন না করলে বা তার ব্যতয় ঘটালে নির্বাচনী আইন, বিধি ও কোড অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের পরিচালক (জনসংযোগ) ও যুগ্মসচিব এস এম আসাদুজ্জামান।
রংপুর সিটি করপোরেশন সাধারণ নির্বাচন-২০২২ উপলক্ষে সাংবাদিকতা বিষয়ক নীতিমালা সংক্রান্ত একটি পরিপত্র গত ১৮ ডিসেম্বর জারি করা হয়েছে। এ পরিপত্রটি রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবদুল বাতেনকে পাঠিয়েছেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের পরিচালক (জনসংযোগ) ও যুগ্মসচিব এস এম আসাদুজ্জামান।
নির্বাচন কমিশনের এসব নির্দেশনা স্বাধীন সাংবাদিকতায় এক ধরনের বাধা বলে মনে করছেন অনেকেই। সাংবাদিকদের মোটরসাইকেল ব্যবহারের অনুমতিও দেওয়া হচ্ছে না, এটা দুঃখজনক।
এ ব্যাপারে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব আবদুল বাতেন বলেন, সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ভোটগ্রহণের দিনসহ বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকরা যাতে সহজে নির্বিঘ্নে নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহ করতে পারেন সেজন্য সহযোগিতা প্রদান করার প্রয়োজন রয়েছে। তবে তা অবশ্যই নির্বাচনের সময়, ভোটগ্রহণ ও ভোট গণনার সময় প্রযোজ্য বিধি-নিষেধ মেনে করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের অনুমোদিত ব্যক্তি ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারেন। এজন্য ভোটকেন্দ্রের সংবাদ সংগ্রহের জন্য নির্বাচন কমিশন থেকে সাংবাদিকদের কার্ড সরবরাহ করা হবে। তিনি আরও বলেন, বিগত বিভিন্ন নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকেই এবার সাংবাদিকদের মোটরসাইকেল ব্যবহারের অনুমতি বা কমিশন প্রদত্ত স্টিকার দেওয়া হচ্ছে না। কারণ অনেক প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থক সাংবাদিকদের মোটরসাইকেল ব্যবহার করে দ্রুত অপরাধ করে সটকে পড়েন। যা নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ব্যঘাত সৃষ্টি করে। তাছাড়া একটা সুষ্ঠু, সুন্দর, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে যা যা করা প্রয়োজন কমিশন সেই আলোকে নীতিমালা করেছে।