ক্রীড়া ডেস্ক : বিশ্ব ফুটবলের মহাতারকা লিওনেল মেসি আগেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন এটা তাঁর শেষ বিশ্বকাপ। আর শেষ বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল থেকে ফিরে যাওয়ার যে কোনো ইচ্ছে নেই সেটা মেসি আগেও বুঝিয়েছেন, বুঝালেন আজও। তাই শেষ বিশ্বকাপটা রাঙিয়ে তুললেন।
পেনাল্টি থেকে নিজে গোল করলেন মেসি, হুলিয়ান আলভারেজকে দিয়ে করালেন আরও একটি। কম যাননি আলভারেজও। মেসির পাস থেকে দ্বিতীয় গোলটা করার আগে প্রায় একক প্রচেষ্টায় তিনিও অবিশ্বাস্য একটা গোল করেছেন।
আলভারেজের দুই ও মেসির এক গোল মিলিয়ে ক্রোয়েশিাকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে আর্জেন্টিনা। ২০১৪ সালের পর আরও একবার উঠে গেছে বিশ্বকাপের ফাইনালে। অন্যদিকে গতবারের ফাইনালিস্ট ক্রোয়েশিয়ার পথচলা এবার থেমে গেছে শেষ চারেই, শেষ হয়ে গেছে বিশ্বকাপে মদরিচ অধ্যায়ও।
দুই পরিবর্তন নিয়ে এদিন একাদশ সাজান আর্জেন্টাইন কোচ স্কালোনি। কিন্তু ম্যাচ যত গড়িয়েছে ততই মিডফিল্ডে আধিপত্য দেখিয়েছে ক্রোয়েশিয়া।
ম্যাচের শুরু থেকে ক্রোয়েশিয়া বল দখলে রাখলেও ম্যাচের সুযোগ তৈরি করতে পারতেছিল না ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে আর্জেন্টিনা।
ম্যাচের ২৬ মিনিটে প্রথম সুযোগ পায় আর্জেন্টিনা। ডি বক্সের বাইরে থেকে এনজো ফার্নান্দেজের দূরপাল্লার শট রুখে দেন লিভাকোভিচ। ম্যাচের ৩৩ মিনিটেই এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। ম্যাচের ৩২ মিনিটে এনজো ফার্নান্দেজের দারুণ এক পাস থেকে ডি বক্সের ভেতর বল পান আলভারেজ। আলভারেজকে ফাউল করে বসেন ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক লিভাকোভিচ। রেফারি সাথে সাথে পেনাল্টির বাঁশি বাজান।
স্পট কিক থেকে গোল করে আর্জেন্টিনাকে ৩৩ মিনিটে ১-০ গোলের ব্যবধানে এগিয়ে দেন লিওনেল মেসি। এই বিশ্বকাপে এটি তার ৫ম গোল। তাছাড়া সব মিলিয়ে বিশ্বকাপে ১১টি গোল করলেন মেসি।কিংবদন্তি বাতিস্তুতাকে ছাড়িয়ে মেসিই এখন বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার সর্বোচ্চ
এই গোলের রেশ কাটতে না কাটতে আবার আর্জেন্টিনার গোল। এবারর হুলিয়ান আলভারেজের দারুণ গোলে ৩৯ মিনিটেই ২-০ এগিয়ে গেল আর্জেন্টিনা। কিক অফ জোন থেকে বল একাই টেনে নিয়ে গেছেন। দুই ডিফেন্ডারকে পরাস্ত করে গোল করেছেন। অ্যালভারেজের এই গোল আর্জেন্টাইন সমর্থকদের ১৯৮৬ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গোলকেও যেন স্মরণ করিয়ে দিলো একটু করে। বিশ্বকাপে এটি তার ৩য় গোল।
৪৩ মিনিটে মেসির কর্নার থেকে তাগলিয়াফিকোর হেড দুর্দান্তভাবে রুখে দেন লিভাকোভিচ। প্রথমার্ধে ২-০ গোলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় আর্জেন্টিনা। বিরতি থেকে ফিরে আবারো মাঝমাঠের দখল নেয় ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু দলে যে একজন মেসি আছেন সেটা ভুলেই গিয়েছিল ক্রোয়েশিয়া।
৫৯ মিনিটে এনজোর সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ান অয়াসে ডি বক্সের ভেতরে ঢুকে মেসি বা পায়ের শট নিলে দারুণভাবে রুখে দেন লিভাকোভিচ। বল নিজেদের দখলে রাখলেও গোলের সুযোগই তৈরি করতে পারেনি ক্রোয়েশিয়া। উলটো ৭০ মিনিটে আর্জেন্টিনা আবারো গোল দিয়ে ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
ম্যাচের ৭০ মিনিটে দারুণভাবে মাঝমাঠ থেকে একা বল নিয়ে ডিবক্সের ভেতরে ডিফেন্ডার ভার্ডিওলকে কাটিয়ে ডিবক্সের ভেতর আলভারেজকে পাস দিলে দারুণ ফিনিশিংয়ে আর্জেন্টিনাকে ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে দিলেন মেসি। বিশ্বকাপে এটি আলভারেজের ৪র্থ গোল। এবং মেসির ৮ম এসিস্ট।
৩ গোলে পিছিয়ে থেকে গোল শোধের চেষ্টা করে ক্রোয়েশিয়া। ৭৬ মিনিটে পেরেসিচের দূরপাল্লার দারুণ শট সেভ করেন এমি মার্টিনেজ। ৭৮ নিনিটে আবারো ওরসিচের শট চলে যায় গোলবারের উপর দিয়ে।
৮৪ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে ফ্রি কিক পেলে দ্রুত কিক নিয়ে বল ডি বক্সের ভেতরে পান ম্যাকএলিস্টার। তার ডান পায়ের শট বাম গোল বারের সামান্য বাইরে দিয়ে চলে যায়। শেষ দিকে ক্রোয়েটরা চেষ্টা করলেও সুযোগ তৈরি করতে পারেনি তারা। ফলে ৩-০ গোলের জয়ে আবারো বিশ্বকাপের ফাইনালে আর্জেন্টিনা।