কেন্দ্রঘোষিত গণসমাবেশকে ‘স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সমাবেশ’ করার টার্গেট নিয়ে মাঠে নেমেছে সিলেট বিএনপি। এ সমাবেশ সফল করতে জেলা ও মহানগরের পাশপাশি দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দও প্রায় এক মাস থেকে সিলেটে অবস্থান করছেন। বিভিন্ন প্রস্তুতি সভার মাধ্যমে দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। সমাবেশে সিলেট বিভাগের চার জেলা থেকে ব্যাপক লোকের সমাগম ঘটাতে নানা কৌশল ও প্রস্তুতি অনেকটা সম্পন্নের পথে।
সিলেট নগরীর আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আগামী ১৯ নভেম্বর সিলেট বিএনপির গণসমাবেশ হবে। চাল, ডাল, জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ, সারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এবং বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানে বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা’ মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে হচ্ছে এ গণসমাবেশ। এ সমাবেশের মাধ্যমে তারা সরকারকে কড়া বার্তা দিতে চায়।
বিএনপি সূত্র জানায়, গণসমাবেশকে ঘিরে সিলেটজুড়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। বিভাগের চারটি জেলাতেই সমাবেশের প্রচারণা চালাচ্ছেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। সিলেট মহানগর, বিভাগের চারটি জেলা শহর ছাড়াও প্রতিটি উপজেলা ও পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পর্যায়েও এই গণসমাবেশের গণসংযোগ করছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। বিভাগের প্রত্যেক জেলা বিএনপি নিজেদের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক ছাড়াও ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবকদল, মহিলা দলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সাথেও বৈঠক করেছে, নির্দেশনা দিয়েছে। এর বাইরে বিএনপির প্রতিটি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন নিজেদের মধ্যে পৃথক বৈঠক করে প্রস্তুতি নিয়েছে।
বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা বলছেন, কেন্দ্রের সরাসরি তত্ত্বাবধান ও নির্দেশে চলছে সব কাজ। ইতোমধ্যে দুই দফায় সিলেট সফর করেছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান এবং দলটির যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। এ ছাড়া বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদীর লুনা, ড. এনামুল হক চৌধুরী ও খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন সার্বক্ষণিক তদারকিতে আছেন। গত মঙ্গলবারও কেন্দ্রীয় নেতারা সিলেটে এসে প্রস্তুতি সভা করে গেছেন। এদিকে, গণসমাবেশের প্রচারণা সিলেট নগরীতে ভিন্ন রূপ পেয়েছে। নগরীজুড়ে সমাবেশকেন্দ্রিক বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। বিশেষ করে চৌহাট্টা এলাকায় শত শত ব্যানার, বিলবোর্ড টানানো হয়েছে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনে যেসব নেতা বিএনপি থেকে মনোনয়ন চান, তারাও জোরেশোরে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন জানান, সব কার্যক্রমের মূলে রয়েছে ব্যাপক লোকসমাগমের লক্ষ্য। বিভাগের প্রত্যেকটি জেলা থেকে দলীয় নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি সমাবেশে নিশ্চিত করা হবে। বিশেষ করে সিলেট থেকে উপস্থিতি থাকবে সবচেয়ে বেশি। সমাবেশস্থল চৌহাট্টা এলাকা ছাড়িয়ে লোকসমাগম দক্ষিণ দিকে জিন্দাবাজার হয়ে বন্দরবাজার, উত্তর দিকে দরগাহ গেইট হয়ে আম্বরখানা, পূর্ব দিকে হাওয়াপাড়া ছাড়িয়ে মীরবক্সটুলা এবং পশ্চিম দিকে রিকাবিবাজার যাতে ছাড়িয়ে যায়, তা নিশ্চিত করতে কাজ চলছে।
এ দিকে, সমাবেশ ঘিরে পরিবহন ধর্মঘট, হামলা ও বাধার বিষয়টি মাথায় রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা। এজন্য নির্ধারিত দিনের দু-একদিন আগে থেকেই নেতা-কর্মীদের সমাবেশস্থলে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন তারা। আগেভাগেই যেসব নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থলে উপস্থিত হবেন, তাদের জন্য খাওয়ার ব্যবস্থাও করবেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা।
জানতে চাইলে সিলেট জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী বলেন, কোন বাধা মুক্তিকামী মানুষকে আটকাতে পারবে না। সব বাধা পেরিয়ে সমাবেশ সফল হবে। ১৯ তারিখ সিলেট হবে মিছিল ও সমাবেশের নগরী।
সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি মামুনুর রশীদ মামুন বলেন, বাধার পাহাড় ডিঙ্গিয়ে যেকোন মূল্যে সমাবেশ সফল করতে সিলেট বিএনপি প্রস্তুত রয়েছে। মুক্তিকামী লাখ লাখ মানুষের অংশগ্রহণে গোটা নগরী কানায় কানায় ভরে যাবে।