ক্রীড়া প্রতিবেদক : অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড শহরের অ্যাডিলেড ওভালে মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারত। র্যাঙ্কিংয়ে দুই দলের মধ্যে ব্যবধান পাহাড়সম। তবে গত কয়েক বছরের মুখোমুখি লড়াইয়ে দৃষ্টি ফেরালে অন্যরকম এক চিত্রই ফুটে ওঠে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রতিবেশী দুই দেশের মুখোমুখি লড়াইয়ে আরেকটি রোমাঞ্চকর ম্যাচের অপেক্ষায় ক্রিকেটপ্রেমীরা।
পরিসংখ্যান, শক্তিমত্তা ও বর্তমান ফর্ম- সব দিক থেকে সাকিব আল হাসানরা পিছিয়ে। কিন্তু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ইতিহাসে নিজেদের সেরা সময় কাটাচ্ছে টাইগাররা। প্রথমবার কোনও আসরের মূল পর্বে এসেছে জয়, তাও আবার একটি নয়, দুটি।
নেদারল্যান্ডস ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জিতে বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাসের পারদ উঁচুতে। অন্যদিকে দারুণ ফর্মে থাকা ভারত প্রথম হার দেখেছে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে। দুই দলেরই সেমিফাইনাল ভাগ্য নির্ধারণ করছে এই ম্যাচের ওপর। হেরে গেলে সর্বনাশ, জিতলে টিকে থাকবে আশা। তাই জয়ের জন্য কোমর বেঁধে নামবে বাংলাদেশ ও ভারত। অ্যাডিলেডে আজ বুধবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায় মাঠে গড়াবে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচটি।
এই অ্যাডিলেডই বাংলাদেশের জন্য শুধুই সুখ স্মৃতির ময়দান। যারা টাইগার ক্রিকেটের খবর রাখেন তাদের নিশ্চয়ই মনে আছে ২০১৫ সালের সেই ম্যাচটির কথা। ঐতিহাসিক সেই লড়াইটির কথা! যেখানে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে পা রেখেছিল বাংলাদেশ।
অ্যাডিলেডের সংবাদ সম্মেলনে দারুণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে সেই স্মৃতির বারান্দা ধরে হাঁটলেন সাকিব। বাংলাদেশ অধিনায়ক বলছিলেন, জয়ী সেই টিমের থেকে বোধহয় আমি আর তাসকিন আছি। অবশ্যই ভালো স্মৃতি। ভালো মেমোরিজ গুলো সবসময় অনুপ্রেরণা যোগায়। আশা করি সেই স্মৃতি মানসিকভাবেও একটু সাহায্য করবে। তবে বাংলাদেশ অধিনায়ক ভারতকেই ফেভারিট বলছেন। তিনি বলেন, ভারত ফেভারিট দল। তারা এখানে বিশ্বকাপ জিততে এসেছে। আমরা ফেভারিট নই, বিশ্বকাপ জিততে এখানে আসিনি।
ভারত ম্যাচের আগেরদিন সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অধিনায়ক বললেন, পরবর্তী লক্ষ্য হলো, দুটো ম্যাচ খুব ভালোভাবে খেলা। দুটো ম্যাচের কোনো ম্যাচও যদি জিততে পারি, সেটা আপসেট (অঘটন) হিসেবে গণ্য হবে। সেই আপসেটটা করতে পারলে আমরা খুশি হব। না করতে পারলে বেশি কিছু বলার নেই। দুই দলই কাগজে-কলমে আমাদের চেয়ে অবশ্যই ভালো। তবে আমরা যদি ভালো খেলি, আমাদের যদি দিন থাকে, তাহলে কেন পারব না। এই বিশ্বকাপেই আমরা দেখেছি, আয়ারল্যান্ড ইংল্যান্ডকে, জিম্বাবুয়ে পাকিস্তানকে হারিয়েছে।
আইসিসি টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ দল ভারতের বিপক্ষে জিতলে সেটিকে ‘আপসেট’ বলেই মনে করেন সাকিব। তিনি বলেন, ভারত ফেবারিট দল। তারা এখানে বিশ্বকাপ জিততে এসেছে। আমরা ফেবারিট নই, বিশ্বকাপ জিততে এখানে আসিনি। আমরা ভালো করেই জানি, ভারতের বিপক্ষে জিতলে এটি আপসেট হবে। আমরা চেষ্টা করব সেরা খেলাটি খেলতে এবং আপসেট ঘটাতে। অ্যাডিলেডে খেলার অভিজ্ঞতায় বাংলাদেশের চেয়ে বিস্তর ব্যবধানে এগিয়ে ভারত। সাকিব তাই মনে করেন, দুই দল সাম্যাবস্থানে আছে বলা ঠিক হবে না।
অ্যাডিলেডের কন্ডিশনও বেশ ঠান্ডা। এর মধ্যে বাংলাদেশের বিপক্ষে ব্যাটে উত্তাপ ছড়াতে পারেন ভারতের সূর্যকুমার যাদব। রোহিত, কোহলি ও রাহুলরা থাকতেও গত এক বছরে টি-টোয়েন্টিতে সূর্য নিজের জাতটা ভালোই চিনিয়েছেন। সাকিব মনে করেন, ম্যাচটা জিততে হলে ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং অর্ডারকে আগে সামলাতে হবে। সে পরিকল্পনা টিম মিটিংয়ে ঠিক করার কথা জানালেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। তিনি বলেন, ‘গত এক বছরের রেকর্ড চিন্তা করলে সূর্যকুমার যাদব ভারতের ১ নম্বর ব্যাটসম্যান। তাদের বেশ কয়েকজন বিশ্বমানের খেলোয়াড় রয়েছে, যাদের দিকে নজর রাখতে হবে। আমরা এখনো টিম মিটিং করিনি। মিটিংয়ে আমরা সবকিছু নিয়েই আলোচনা করব। হ্যাঁ, তাদের দুর্দান্ত ব্যাটিং অর্ডার রয়েছে। ভালো কিছু করতে বা জিততে এটি সামলাতে হবে।
টি-টোয়েন্টিতে ১১ বার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত। এরমধ্যে ১০ বার জিতেছে ভারত। ১ বার জয় আছে বাংলাদেশের। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তিনবারের দেখায় সবগুলোই জিতেছে ভাত।
২০১৬ বিশ্বকাপে দুই দলের মধ্যকার শেষ ম্যাচটি ছিল ঘটনাবহুল। ব্যাঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত ম্যাচটিতে মাত্র ১ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ। শেষ মুর্হূতে সিনিয়র দুই ব্যাটার মুশফিকুর রহিম এবং মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বড় শট খেলায় বাংলাদেশের হাত থেকে ম্যাচটি ফসকে যায়।
এরপর ২০১৯ সালে ভারতের বিপক্ষে তাদেরই মাটিতে প্রথম জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। কিন্তু তার আগে বেশিরভাগ সময়ই ভারতের বিপক্ষে কোন ম্যাচে প্রতিদ্বন্দিতাই গড়তে পারেনি টাইগাররা।