ক্রীড়া প্রতিবেদক : র্যাঙ্কিংয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ব্যবধান পাহাড়সম। তবে গত কয়েক বছরের মুখোমুখি লড়াইয়ে দৃষ্টি ফেরালে অন্যরকম এক চিত্রই ফুটে ওঠে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রতিবেশী দুই দেশের মুখোমুখি লড়াইয়ে আরেকটি রোমাঞ্চকর ম্যাচের অপেক্ষায় ক্রিকেটপ্রেমীরা। ভারত নিঃসন্দেহে টপ ফেভারিটদের একটি, সেখানে এই সংস্করণে এখনও বাংলাদেশের পায়ের নিচে মাটিই শক্ত হয়নি।
তবে বিশ্বকাপের ফরম্যাট এমন যে একটি মাত্র ভুলই পাল্টে দিতে পারে সব সমীকরণ। তাইতো, প্রতিবেশী দুই দেশের লড়াইয়ে পরাজিত দলের সেমি-ফাইনালে যাওয়া আশা অনেকটাই ফিকে হয়ে যেতে পারে। আবার যারা জিতবে; এগিয়ে যাবে শেষ চারের পথে। অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডে আগামীকাল বুধবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায় মাঠে গড়াবে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচটি।
এই অ্যাডিলেডই বাংলাদেশের জন্য শুধুই সুখ স্মৃতির ময়দান। যারা টাইগার ক্রিকেটের খবর রাখেন তাদের নিশ্চয়ই মনে আছে ২০১৫ সালের সেই ম্যাচটির কথা। ঐতিহাসিক সেই লড়াইটির কথা! যেখানে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে পা রেখেছিল বাংলাদেশ। তাইতো টাইগার ক্রিকেটপ্রেমীরা ভারত বধের স্বপ্ন দেখছেন। এরই মধ্যে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুপার টুয়েলভে দুটি জয় তুলে নিয়ে এরই মধ্যে এই সংস্করণে নিজেদের সেরা বিশ্বকাপের দেখা পেয়ে গেছে বাংলাদেশ।
তবে ইংল্যান্ডকে হারানোর নায়করা এবারের বিশ্বকাপে নেই। দল জিতেছিল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের শতরান, মুশফিকুর রহিমের ৮৯ আর রুবেল হোসেনের আগুন ঝরা বোলিংয়ে (৪/৫৩)। সেই সাফল্য ফের জাগিয়ে তুলছে বাংলাদেশ দলকে। এবার টি-টোয়েন্টি। আগের সেই দলটার মূল কারিগর মুশফিক, রিয়াদ কিংবা মাশরাফি বিন মুর্তজা কেউ অবশ্য দলে নেই। তারপরও এই অ্যাডিলেডেই যখন ম্যাচটা তখন হাসিমুখেই মাঠে নামতে তৈরি সাকিব।
ম্যাচের আগের দিন মঙ্গলবার প্রিভিউ ডে-তে দারুণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে সেই স্মৃতির বারান্দা ধরে হাঁটলেন সাকিব। বাংলাদেশ অধিনায়ক বলছিলেন, ‘জয়ী সেই টিমের থেকে বোধহয় আমি আর তাসকিন আছি। অবশ্যই ভালো স্মৃতি। ভালো মেমোরিজ গুলো সবসময় অনুপ্রেরণা যোগায়। আশা করি সেই স্মৃতি মানসিকভাবেও একটু সাহায্য করবে।’
ভারত ম্যাচের আগেরদিন সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অধিনায়ক বললেন, ‘পরবর্তী লক্ষ্য হলো, দুটো ম্যাচ খুব ভালোভাবে খেলা। দুটো ম্যাচের কোনো ম্যাচও যদি জিততে পারি, সেটা আপসেট (অঘটন) হিসেবে গণ্য হবে। সেই আপসেটটা করতে পারলে আমরা খুশি হব। না করতে পারলে বেশি কিছু বলার নেই। দুই দলই কাগজে-কলমে আমাদের চেয়ে অবশ্যই ভালো। তবে আমরা যদি ভালো খেলি, আমাদের যদি দিন থাকে, তাহলে কেন পারব না। এই বিশ্বকাপেই আমরা দেখেছি, আয়ারল্যান্ড ইংল্যান্ডকে, জিম্বাবুয়ে পাকিস্তানকে হারিয়েছে।’
আইসিসি টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ দল ভারতের বিপক্ষে জিতলে সেটিকে ‘আপসেট’ বলেই মনে করেন সাকিব। তিনি বলেন, ভারত ফেবারিট দল। তারা এখানে বিশ্বকাপ জিততে এসেছে। আমরা ফেবারিট নই, বিশ্বকাপ জিততে এখানে আসিনি। আমরা ভালো করেই জানি, ভারতের বিপক্ষে জিতলে এটি আপসেট হবে। আমরা চেষ্টা করব সেরা খেলাটি খেলতে এবং আপসেট ঘটাতে।
অ্যাডিলেডে খেলার অভিজ্ঞতায় বাংলাদেশের চেয়ে বিস্তর ব্যবধানে এগিয়ে ভারত। সাকিব তাই মনে করেন, দুই দল সাম্যাবস্থানে আছে বলা ঠিক হবে না।
অ্যাডিলেডের কন্ডিশনও বেশ ঠান্ডা। এর মধ্যে বাংলাদেশের বিপক্ষে ব্যাটে উত্তাপ ছড়াতে পারেন ভারতের সূর্যকুমার যাদব। রোহিত, কোহলি ও রাহুলরা থাকতেও গত এক বছরে টি-টোয়েন্টিতে সূর্য নিজের জাতটা ভালোই চিনিয়েছেন।
সাকিব মনে করেন, ম্যাচটা জিততে হলে ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং অর্ডারকে আগে সামলাতে হবে। সে পরিকল্পনা টিম মিটিংয়ে ঠিক করার কথা জানালেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। তিনি বলেন, ‘গত এক বছরের রেকর্ড চিন্তা করলে সূর্যকুমার যাদব ভারতের ১ নম্বর ব্যাটসম্যান। তাদের বেশ কয়েকজন বিশ্বমানের খেলোয়াড় রয়েছে, যাদের দিকে নজর রাখতে হবে। আমরা এখনো টিম মিটিং করিনি। মিটিংয়ে আমরা সবকিছু নিয়েই আলোচনা করব। হ্যাঁ, তাদের দুর্দান্ত ব্যাটিং অর্ডার রয়েছে। ভালো কিছু করতে বা জিততে এটি সামলাতে হবে।
নেদারল্যান্ডস আর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বিশ্বকাপে দুটো জয় নিশ্চিত করেই আত্মবিশ্বাসী করেছে বাংলাদেশ দলকে। তবে সাকিব মনে করেন না এখনই দল সব শিখে গেছে, ম্যাচ জিতলে তো অবশ্যই ভালো লাগে, আর আলাদা করে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে হয় যে লাস্ট ওভার কিংবা সেকেন্ড লাস্ট ওভারে ম্যাচ ডিসাইড যায়। টি-টোয়েন্টি খেলা যেহেতু অল্প সময়ের খেলা প্রতিযোগিতা বেশি থাকে। এখানে ক্লোজ ম্যাচগুলোই বেশি হবে। এই নার্ভগুলো ধরে রাখতে পারাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আগে যেটা হচ্ছিল যে আমরা ক্লোজ ম্যাচগুলো হেরে যাচ্ছিলাম। সেখান থেকে আমরা এখন ঘুরে দাঁড়ানো শিখছি, আমি বলবো না যে শিখে গিয়েছি। একটু তো উন্নতি আছেই যেখানে আমরা, আগে যে ক্লোজ ম্যাচ গুলোতে গেলেই হেরে যেতাম, ওখানে জেতা শুরু হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে একাদশ প্রসঙ্গ উঠতেই সাকিব বললেন, ‘দেখুন, একাদশ নিয়ে আসলে চিন্তা করা হয়নি, কিন্তু কম্বিনেশন তো চাইলেই অনেক রকম বানানো যায়। এমন না যে একটা কম্বিনেশন নিয়েই আছে কিংবা থাকবে। আর কম্বিনেশন আসলে অনেক রকম বানানো যায়। তারপরেও আমাদের যে রিসোর্স আছে, তা দিয়ে কিভাবে বেস্ট ইউজ করতে পারি সেটা আমাদের চিন্তা করতে হবে।’