কানাইঘাটে এসএসসি’র হলে পরীক্ষার্থীকে হেনস্তার অভিযোগ
28, September, 2022, 6:10:59:PM
বিশেষ সংবাদদাতা: সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার দুর্গাপুর হাই স্কুল কেন্দ্রে পরীক্ষারত শারীরিক প্রতিবন্ধী এক ছাত্রীকে হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল মঙ্গলবার(২৭-০৯-২২) দুর্গাপুর হাই স্কুল কেন্দ্রের বড়চতুল হাই স্কুল ভ্যানুতে ভূগোল ও পরিবেশ বিষয়ের পরীক্ষা চলাকালে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ওই শিক্ষার্থীর পরীক্ষায় ব্যাঘাত সৃষ্টি ও হেনস্তা করা হয়। কেন্দ্র সচিব বরাবরে অভিযোগটি দাখিল করেন ওই প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর বাবা মোঃ নিজাম উদ্দিন। সম্মিলিত এ হেনস্থাকান্ডে খোদ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাও জড়িত বলে অভিযোগে বলা হয়।
জানা যায়, নাদিরা তাবাস্সুম নামে শারীরিক প্রতিবন্ধী এক ছাত্রী দুর্গাপুর হাই স্কুল থেকে চলতি ২০২২ইং এর এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে পরীক্ষা দিচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার (২৭-০৯-২২ ইং) ভূগোল ও পরিবেশ বিষয়ের পরীক্ষার জন্য বড়চতুল হাই স্কুলের হলে দায়িত্বরত এক শিক্ষক তাকে ওএমআর শিট দিয়ে নাম, রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর লিখে বৃত্ত ভরাট করতে বলেন। এরপর প্রশ্নপত্র প্রদানের পূর্বে ‘ক’ সেট বৃত্ত ভরাট করতে বললে উনার নির্দেশনা অনুযায়ী সে তা-ই করে। পরোক্ষণে তিনি ‘গ’ সেট প্রশ্ন তার হাতে দেন। এ সময় নাদিরা তাবাস্সুম তার কাছে জানতে চায়- ‘আপনি ‘ক’ সেট এর বৃত্ত ভরাট করালেন কিন্তু ‘গ’ সেট প্রশ্ন দিলেন কেন? এর জবাব না দিয়ে তিনি হলে আগত উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম সহ অন্যান্যদের নিয়ে পরীক্ষার হলে তার কাছে আসেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম এসে ‘গ’ সেটের ৫টি প্রশ্নের উত্তর ভরাট করতে নির্দেশ দিলে নাদিরা তাবাস্সুম ৫টি উত্তর ভরাট করে। তারপর তিনি উত্তরপত্রটি নিয়ে যান এবং নতুন করে আরেকটি সেট দেন। একই সাথে ২২ তারিখে পরীক্ষার হলে যে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছিল সেই বিষয় নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন করে পরিকল্পিতভাবে তার পরীক্ষার সময় নষ্ট করেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। এমনকি জিজ্ঞাসাবাদকালে ওই শিক্ষার্থীর বক্তব্য ভিডিও ধারণ করা হয়।
নাদিরা তাবাস্সুমের বাবা নিজাম উদ্দিন বলেন, পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আমার শারীরিক প্রতিবন্ধী মেয়েকে ডিস্টার্ব করা হয়েছে। প্রশ্নপত্র নিয়ে উনারা ইচ্ছাকৃতভাবে নাটক করেছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এসে সুন্দর সমাধান না করে তিনি আমার প্রতিবন্ধী মেয়েকে দিয়ে ৫টি প্রশ্নের উত্তর ভরাট করালেন কেন, আবার এই সেট ফেরত নিয়ে নতুন করে আরেক সেট প্রশ্ন দিলেন কেন ? তাছাড়া, ২২ তারিখে আমি যে অভিযোগ করেছি সেই অভিযোগের জন্য পরীক্ষার হলে সময় নষ্ট করে আমার মেয়েকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে কেন? ২২ তারিখের ঘটনার জন্য আমি অভিযোগ করেছি। এ বিষয় নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকলে তারা আমাকে তলব করতে পারতেন। মূলত, ইচ্ছাকৃতভাবে অদৃশ্য কোন কারণে এসব নাটক করা হয়েছে। আামার প্রতিবন্ধী মেয়েকে বলির পাঠা বানানো হয়েছে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম তার উপর আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ওই শিক্ষার্থী ভুল করে ওএমআর শীটে ‘ক’ সেট বৃত্ত ভরাট করেছে। তার সম্মতিতেই নতুন করে আরেক সেট প্রদান করি এবং তাকে অতিরিক্ত সময় প্রদান করি। তবে, পরীক্ষার হলে ২২ তারিখের ঘটনা নিয়ে ওই শিক্ষার্থীকে জেরা করা, ভিডিওধারণ ও সময় ক্ষেপণের অভিযোগটি তিনি এড়িয়ে যান।
কেন্দ্র সচিব এবং দুর্গাপুর হাই স্কুল এন্ড কলেজের প্রিন্সিপাল নূর মোহাম্মদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসএসপি পরীক্ষার মূল কেন্দ্র হলো দুর্গাপুর হাই স্কুল আর বড়চতুল হাই স্কুল হলো ভ্যানু কেন্দ্র। প্রধান কেন্দ্র থেকে ভ্যানু কেন্দ্রের দুরত্ব ৭ কিলোমিটার হওয়ায় সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা সম্ভব হয়নি। তবে এরকম একটি অভিযোগ পেয়ে আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। ‘ক’ আর ‘গ’ প্রশ্নপত্রের এরকম ভুল বুঝাবুঝির বিষয় নিয়ে হলরুমে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা না গেলেও পারতেন। বিষয়টি সমাধানের জন্য হল গার্ডাই যথেষ্ট ছিলেন। পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে পরীক্ষার্থীকে পূর্বের বিষয় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ বা ভিডিওধারণ করার বিষয়ে জানতে চাইলে নূর মোহাম্মদ বলেন, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা যদি এমনটি করে থাকেন, তাহলে ঠিক করেননি।