কাওছার আহমদ, সিলেট :
সীমান্তবর্তী দু’টি উপজেলা কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ নিয়ে সংসদীয় আসন সিলেট-৫ গঠিত। এই আসনটির বিএনপির অভিভাবক ছিলেন দলের সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মরহুম আবুল হারিছ চৌধুরী। তিনি প্রায় ১৬ বছর আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় গত বছরের ৩রা সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। হারিছ চৌধুরীর এই মৃত্যু ও দীর্ঘ সময় আত্মগোপনে থাকায় স্থানীয় বিএনপিতে যে শুণ্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা পূরণ করার মতো তেমন কোন শক্তিশালী নেতৃত্ব গড়ে ওঠেনি এমনটাই জানালেন তৃণমূলের কর্মীরা। সরকার বিরোধী আন্দোলন জোরদার ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এসবকিছু সামনে রেখে মাঠপর্যায়ে দলকে পুরোপুরি প্রস্তুত করতে কান্ডারীর ভ’মিকায় কে এগিয়ে আসবে এমন প্রশ্ন স্থানীয় নেতাকর্মীর মাঝে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় বছরখানেক পূর্বে কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ বিএনপির উপজেলা ও পৌর শাখার কমিটি গুলোর কাউন্সিল সম্পন্ন হয়। কাউন্সিলে কানাইঘাট উপজেলায় সিলেট জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মামুন রশিদ (চেয়ারম্যান )সভাপতি , কমিশনার শরীফুল হক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রদলনেতা খসরুজ্জামান পারভেজ সাংগঠনিক সম্পাদক এবং পৌর শাখায় নুরুল হোসেন বুলবুল সভাপতি, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক ও দেলোয়ার হোসেন সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন।

একইভাবে জকিগঞ্জে উপজেলা কমিটিতে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান সভাপতি,সাবেক জেলা ছাত্রদলনেতা ইসমাঈল হোসেন সেলিম সাধারণ সম্পাদক ও হাসান আহমদ সাংগঠনিক সম্পাদক এবং পৌর শাখায় মাসুক আহমদ সভাপতি,রনি আহমদ সাধারণ সম্পাদক ও সালেহ আহমদ সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। এই দু’উপজেলার পূর্ণাঙ্গ চার কমিটিকে ইতিমধ্যে জেলা বিএনপি অনুমোদন দিয়েছে। উপজেলা ও পৌর শাখার অন্তর্ভূক্ত ইউনিটগুলোর অধিকাংশ পূর্ণাঙ্গ কমিটিও গঠন করা হয়েছে। সাংগঠনিকভাবে বিএনপি অনেকটা গোছানো হলেও অভিভাবক হিসেবে দলের অগ্রভাগে থেকে সাহস ও শক্তিযোগাবে এমন একজন নেতা খুজছে স্থানীয় বিএনপি।

গত চারদলীয় জোট সরকারের ক্ষমতাধর ব্যক্তি ছিলেন বিএনপি নেতা আবুল হারিছ চৌধুরী । পট পরিবর্তনের পর তত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে তিনি আত্মগোপনে চলে গেলে নেতৃত্বে শুন্যতা দেখা দেয়। এদু:সময়ে নেতাকর্মীদের পাশে দাড়ান জেলা বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি মামুনুর রশীদ মামুন (চাকসু)। তিনি নেতাকর্মীদের উজ্জ্বীবিত রাখার চেষ্টা করেন। গত বছরের ৩রা সেপ্টেম্বর প্রায় ১৬ বছর আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় হারিছ চৌধুরীর মারা যান।এছাড়া এ অঞ্চলের বিএনপির আরেক নেতা সাবেক এমপি আব্দুল কাহির চৌধুরী বার্ধক্যজনিত কারণে দীর্ঘদিন ধরে দলীয় কর্মকান্ডে নিষ্ক্রিয় রয়েছেন। এ অবস্থায় স্থানীয় বিএনপি অনেকটা অভিাভবহীন রয়েছে। গত ১৩ জুন কানাইঘাট বাজারে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে স্থানীয় আওয়ামীলীগের হামলার শিকার হয় বিএনপি। ওইদিন বিএনপির নেতাকর্মীরা পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তলুলে আ’লীগ পিছু হটে। তবে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার সময় ছুড়া পাথরের আঘাতে মারাত্মক আহত হন উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক খসরুজ্জামান পারভেজ সহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী। এ ঘটনায় বিএনপির ৬১জন নেতাকর্মীর নামে কানাইঘাট থানায়একটি মামলা হয়।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, হারিছ চৌধূরীর শূণ্যতা পূরণের লক্ষ্যে মাঠে কাজ করছেন তার চাচাতো ভাই কানাইঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জেলা বিএনপি নেতা আশিক চৌধুরী,সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি মামুনুর রশীদ (চাকসু মামুন),কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহ সভাপতি মাহবুবুল হক চৌধুরী (ভিপি মাহবুব) ও কানাইঘাট উপজেলা বিএনপির সভাপতি মামুন রশিদ। এদিকে হারিছ চৌধুরীর মেয়ে ব্যারিস্টার সামিরা চৌধুরী মুন্নো বাবার অসমাপ্ত কাজ পূরণের জন্য এলাকার মানুষের পাশে থাকতে চান এমন আগ্রহ প্রকাশ করেন।

এ ব্যাপারে কানাইঘাট উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাধারন সম্পাদক মামুন রশিদ বলেন, কানাইঘাট বিএনপি এখন যথেষ্ট শক্তিশালী । শুধুমাত্র নেতাকর্মীদের সাহস যোগানোর জন্য হারিছ চৌধুরীর মতো বড় মাপের একজন নেতার দরকার। কানাইঘাট পৌর বিএনপির সভাপতি নুরুল হোসেন বুলবুল বলেন,দলের যেকোন কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য নেতাকর্মীরা প্রস্তত রয়েছে। জকিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইসমাঈল হোসেন সেলিম বলেন, অভিভাবকহীন জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট বিএনপির নেতাকর্মীর পাশে থেকে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন জেলা বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি মামুনুর রশীদ (চাকসু) । তবে হারিছ চৌধূরীর শূণ্যতা পূরণ হবার নয়।