ক্রীড়া ডেস্ক : লেভার কাপই হবে শেষ টুর্নামেন্ট। বহুদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী রাফায়েল নাদালকে সঙ্গে নিয়ে নামবেন কোর্টে, তারপর র্যাকেটটা তুলে রাখবেন—এই ঘোষণা আগেই দিয়েছিলেন রজার ফেদেরার। টেনিস বিশ্বও তাই প্রস্তুত ছিলো।
শুক্রবার রাতে লন্ডনের ও`টু এরিনার মঞ্চ যেন ছিলো শুধু ফেদেরারের জন্য। যতো আগ্রহ ওই একটা ম্যাচ ঘিরেই। সঙ্গে ছিলো আবেগ। পেশাদার টেনিস জীবনের শেষ ম্যাচ খেলতে যখন নাদালের সঙ্গে কোর্টে আসেন ফেদেরার, তখন পুরো পৃথিবীর চোখই যেন চলে গিয়েছিলো লন্ডনে।
সুইস টেনিস কিংবদন্তির ২৪ বছরের পেশাদার ক্যারিয়ার যে শেষ হলো এদিন, রাফায়েল নাদালের সঙ্গে দ্বৈত ম্যাচ দিয়ে। সেই নাদাল, যিনি ফেদেরারের ২০টি গ্র্যান্ড স্লাম ছাড়িয়ে ২২টি গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের রেকর্ডের মালিক এখন।
তবে পেশাদার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটা জিতে নিজের সাম্রাজ্যকে বিদায় জানাতে পারেননি ২০ বারের গ্র্যান্ডস্ল্যাম চ্যাম্পিয়ন ফেদেরার। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর টিম ওয়ার্ল্ডের ফ্রান্সেস টিয়াফো এবং জ্যাক সকের বিপক্ষে ৪-৬, ৭-৬ (৭/২), ১১-৯ ব্যবধানে হেরে গেছেন ফেদেরার-নাদাল।তাতে টেনিসভক্তদের অতৃপ্তি থাকার কথা নয়।
অতৃপ্তি বলে যদি কিছু থেকে থাকে, সেটি ২০টি গ্র্যান্ড স্ল্যামজয়ী সুইস কিংবদন্তিকে আর কখনো কোর্টে দেখতে না পাওয়ার অনুভূতিটুকু। হারের পর বিদায়ী ভাষণে তা মনে হতেই সম্ভবত চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি ফেদেরার। কেঁদেছেন শিশুর মতো। পাশে বসে থাকা রাফায়েল নাদালের চোখও ভিজে এসেছে। পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা নোভাক জোকোভিচের মুখেও তাকানো যাচ্ছিলো না। টেনিসের ‘বিগ ফোর’ এর আরেকজন অ্যান্ডি মারেও উপস্থিত ছিলেন সেখানে।
নাদালের সঙ্গে জীবনের শেষ ম্যাচের পর অঝোরে কাঁদতে-কাঁদতে ফেদারার বলছিলেন, রাফার সঙ্গে একই দলে খেলতে পেরে, সবার সামনে, সব কিংবদন্তিরা..ধন্যবাদ।
ফেদেরার থামলেন। হাততালি শুরু হলো। সমর্থকদের হাততালি, চিৎকারে থামতে বাধ্য হলেন সুইস কিংবদন্তি। সেই চিৎকারের উপরে নিজের গলা নিয়ে গিয়ে (মাইকের সাহায্যে) তিনি বলেন, ‘আমার জন্য এত মানুষ চিৎকার করছে। এ এক অদ্ভুত পাওয়া। আশা করছি আমি ভালোই করেছি। অন্তত কথা তো বলতে পারছি (ফোঁপাতে ফোঁপাতে)। সকলে এখানে রয়েছে। খুব ভালো লাগছে। আমার মেয়েরা, ছেলেরা, স্ত্রী, সকলে রয়েছে।’
থেমে গেলেন। পারলেন না কান্না আটকাতে। কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘ও (স্ত্রী মিরকা ফেদেরার) অনেক আগেই আমাকে থামিয়ে দিতে পারতো। কিন্তু ও সেটা করেনি। আমাকে খেলার জন্য অনুপ্রেরণা দিয়েছে।’
এরপর আর পারলেন না কথা বলতে। কান্না বাঁধ ভাঙলো। কোনও মতে পরিবারকে আরও একবার ধন্যবাদ জানিয়ে বলা শেষ করলেন। টেনিসে একটি যুগের সমাপ্তি হলো।
পেশাদার টেনিস ছাড়লেও ফেদেরারকে হয়তো মাঝেমধ্যে প্রদর্শনী ম্যাচ খেলতে দেখা যাবে। বাংলাদেশ সময় গতকাল শুক্রবার রাতে পেশাদার ক্যারিয়ারে নিজের শেষ ম্যাচটা ফেদেরার খেলে ফেলার পর নাদালও টের পাচ্ছেন, তাঁর জীবন থেকে কী মুছে গেল!
২০০৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত টেনিসের কোর্টে ৪০ বার মুখোমুখি হয়েছেন দুজন। তাঁদের যেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা, তেমনি একে অপরের প্রতি সম্মানও কম নয়। ২০১৭ সালে প্রাগের পর এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো একসঙ্গে খেললেন দুই কিংবদন্তি। এবারই শেষ, আর এই শেষের ব্যথা বাজছে নাদালের বুকেও।
ফেদেরারের শেষ ম্যাচকে টেনিস ইতিহাসেরই অনন্য এক মুহূর্ত মনে করে নাদাল বলেছেন, ‘আমাদের এই খেলার ইতিহাসে অনন্য এ মুহূর্তের সঙ্গী হতে পারাটা আমার জন্য বিশেষ সম্মানের। দুজনে একসঙ্গে কত বছর ধরে কত কিছু ভাগ করে নিয়েছি। ফেদেরারের চলে যাওয়া মানে আমার জীবন থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়েরও অবসান ঘটা।’