তাঁতের খট খট শব্দে এক সময় মুখরিত থাকত হরিনাকুন্ডুর তাঁতপল্লীগুলো। বিরামহীন কাজ করে যেতেন তাঁতীরা। কিন্তু এই এলাকার তাঁত শিল্পের এখন আর সেই দিন নেই। নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়ে তাঁত শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত মানুষগুলো পেশা বদলে চলে গেছেন অন্য পেশায়।
ঝিনাইদহের হরিনাকুণ্ডু অনেক আগে থেকেই তাঁত শিল্পের জন্য বেশ প্রসিদ্ধ ছিল। উপজেলার তাহেরহুদার নারায়নকান্দী,ভবানীপুর, রায়পাড়া ভাতুড়ে,ভুইয়াপাড়া, বৈঠাপাড়া বাকচুয়া গ্রামগুলো এক সময় তাঁতসমৃদ্ধ এলাকা হিসেবে বেশ পরিচিত ছিল। এখানকার তাঁতীদের উৎপাদিত বিভিন্ন বাহারী ডিজাইনের গামছা পার্শ্ববর্তী চুয়াডাঙ্গা, আলমডাঙ্গা,কুষ্টিয়া ও পোড়াদাহ বাজারে নিয়ে বিক্রি করা হত। গামছাগুলো ছিলো উন্নতমানের।
কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় এসব এলাকা থেকে তাঁতশিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে। তাঁত বস্ত্র উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও রাসায়নিক দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি এবং সরকারী পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এই উপজেলার তাঁত শিল্পের অস্তিত্ব বর্তমানে হুমকির মুখে পড়েছে।
তাঁতীদের মধ্যেও বিরাজ করছে চরম হতাশা। নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে কারিগররা। লাভজনক এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে প্রয়োজন সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা।
সর্বশেষ তাঁত শুমারির তথ্যমতে,বর্তমানে উপজেলাতে প্রায় ২ শত তাঁত পরিবার রয়েছে। তাঁতের সাথে সম্পৃক্ত পরিবারগুলো বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছে। কাঁচামালের দাম বাড়ার কারনে ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে অনেক তাঁত শিল্প। অবিরাম লোকসানে পড়ে পেশা বদলেছেন অনেকেই। তাঁতীদেও অভিযোগ, সূতা, রং, কেমিক্যাল সহ তাঁত বস্ত্র উৎপাদনের সকল উপকরনের মূল্য অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি উৎপাদন ব্যয় যেভাবে বৃদ্ধি পেলেও সে অনুযায়ী উৎপাদিত কাপড়ের মূল্য বৃদ্ধি পায়নি।
হরিনাকুন্ডুর এলাকার তাত মালিক আলতাফ হোসেন জানান, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাপড় তৈরির সুতা, শ্রমিকের পারিশ্রমিক এবং যানবাহনসহ অন্যান্য দ্রব্যাদির ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে দ্রুত গতিতে। তবে বাড়েনি কাপড়ের দাম ও চাহিদা। যে কারণে দিনের পর দিন বাপ-দাদার এ পেশা ছেড়ে ভিন্ন পেশায় চলে যাচ্ছে তাঁত মালিক ও শ্রমিকরা। এ বিষয়ে তাহেরহুদা ইউপি চেয়ারম্যান মনজুর রাশেদ বলেন, তাঁত শিল্পের সাথে জড়িত মানুষগুলো বা এর উদ্যোক্তারা খুবই অস্বচ্ছল। প্রয়োজনীয় পুঁজি ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে হয়তো এই কুঠির শিল্প ঘুরে দাড়াতে পারত।
হরিণাকুণ্ডু উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুস্মিতা সাহা বলেন, উপজেলাতে বেশকিছু তাঁতশিল্প আছে বলে আমি জানতে পেরেছি। উপজেলা প্রশাসন থেকে তাদের জন্য সার্বিক সহযোগীতা থাকবে। খুব শিঘ্রই আমরা তাঁত শিল্পের সাথে জড়িত মানুষদের সাথে সরাসরি কথা বলব।