ক্রীড়া প্রতিবেদক : মেয়েদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের গত পাঁচ আসরে একক আধিপত্য ছিল ভারতের। সবগুলোতেই চ্যাম্পিয়ন তারা; ফাইনালে চারবার ভারতের প্রতিপক্ষ ছিল নেপাল এবং একবার বাংলাদেশ। এই প্রতিযোগিতার ইতিহাসে এই প্রথম শিরোপা নির্ধারণী মঞ্চে নেই ভারত। তাদের কাছে অতীতের ফাইনালে হারা নেপাল ও বাংলাদেশ সোমবার মাঠে নামছে। মানে সাফ পেতে যাচ্ছে নতুন চ্যাম্পিয়ন।
আজ বাংলাদেশ সময় বিকাল সোয়া পাঁচটায় কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও নেপাল। স্বাগতিকরা খেলছে পঞ্চম ফাইনাল আর বাংলাদেশ দ্বিতীয়।
টুর্নামেন্ট জুড়ে দাপট দেখিয়েছেন বাংলাদেশের মেয়েরা। কখনও দূরপাল্লার চোখ ধাঁধানো শটে লক্ষ্যভেদ করেছেন সাবিনা খাতুন। কখনও গতির তোড়ে ডিফেন্ডারদের ছিটকে দিয়ে জাল খুঁজে নিয়েছেন সিরাত জাহান স্বপ্না। কৃষ্ণা রানী সরকারের নিখুঁত শট খুঁজে পাচ্ছে ঠিকানা। ঋতুপর্ণা চাকমা, তহুরা খাতুনরাও কম যাবেন কেন! বদলি নেমে তারাও আলো ছড়িয়েছেন আক্রমণভাগে।
গত চার ম্যাচে এমন দৃশ্যের দেখা মিলেছে হরহামেশাই। বাংলাদেশের আক্রমণভাগ যেন প্রতিপক্ষের জন্য আতঙ্ক! পরিসংখ্যানও স্বাক্ষ্য দিছে সেটির। এবার মেয়েদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি গোলের সৌরভ ছড়ানো (২০টি) দল বাংলাদেশ। এই উত্তুঙ্গ আত্মবিশ্বাস সঙ্গী করে শিরোপা লড়াইয়ে মাঠে নামবে বাংলাদেশ।
২০১৬ সালে নিজেদের প্রথম ফাইনালে ভারতের কাছে ৩-১ গোলে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয় বাংলাদেশের। সেবারের মতো এবারও ফাইনাল খেলতে হচ্ছে স্বাগতিকদের মাঠে।
এবার আর খালি হাতে ফিরতে চায় না বাংলাদেশ। নেপালের বিপক্ষে সাফে কখনও জিততে না পারার পরিসংখ্যানের চোখ রাঙানিতেও ভীত নয় দল। তাদের মতো নেপালও গত তিন ম্যাচের পথচলায় কোনো গোল হজম করেনি। গীতা রানা, পুনম জারগা মাগাররা প্রতিটি ম্যাচে গড়ে তুলেছেন জমাট রক্ষণ দেয়াল। পোস্টের নিচে অধিনায়ক আঞ্জিলা থাম্বাপো সুব্বা ছিলেন বিশ্বস্ত।
গীতা-পুনমদের সঙ্গে লড়াইয়ে সাবিনা-স্বপ্নারা জিতলেই লেখা হয়ে যাবে শিরোপা জয়ের দারুণ গল্পটা। পায়ের চোটের অনিশ্চয়তার মেঘ সরিয়ে ফাইনাল খেলতে মুখিয়ে আছেন স্বপ্না। পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ভারতের জালে এবার দুটি এবং সেমি-ফাইনালে ভুটানের বিপক্ষে ১ মিনিট ৩৪ সেকেন্ডে গোল করা এই গতিময় ফরোয়ার্ড আশাবাদী নিজেদের আক্রমণভাগ নিয়ে।
তিনি বলেন, আমাদের মতো ওরাও এ পর্যন্ত কোনো গোল খায়নি। মানে ওদের ডিফেন্স ভালো। তবে ওদের ডিফেন্স ভেদ করার মতো গতি আমাদের ফরোয়ার্ডদের সবার আছে। গতির সঙ্গে আত্মবিশ্বাসও আছে।
শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে গোলের খাতা খুলেছিলেন কৃষ্ণা। সেমি-ফাইনালে দলের ৮-০ ব্যবধানে জেতা ম্যাচে লক্ষ্যভেদ করেছিলেন তিনি হেডে। ২১ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ডের কণ্ঠেও আত্মবিশ্বাসের স্ফুরণ। তিনি বলেন, এর আগেও নেপালের বিপক্ষে আমি খেলেছি, সেখানে পারফরম্যান্স ভালো ছিল। এটা যেহেতু ফাইনাল, ওরাও ভালো করতে চাইবে, আমাদেরও ভালো করতে হবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ একটা ম্যাচ হবে। যেহেতু অ্যাটাকিং পজিশনে খেলি, আমিও চাইব সর্বোচ্চটা দিয়ে গোল করতে।
ভুটানের বিপক্ষে সেমি-ফাইনালে জালের দেখা পেয়েছিলেন তহুরা। ফাইনালে খেলার সুযোগ পেলে তা কাজে লাগাতে উন্মুখ হয়ে আছেন তিনি। আক্রমণভাগের সতীর্থদের আত্মবিশ্বাসের পারদ কতটা উঁচুতে, তা বোঝাতে তহুরা টানলেন ভারত ম্যাচের প্রসঙ্গও। তিনি বলেন, যদি ফাইনালে খেলার সুযোগ পাই, তাহলে অবশ্যই চেষ্টা করব গোল করার। আমাদের খেলায় অনেক উন্নতি হয়েছে। দেখুন, এর আগে আমরা যদি ভারতের বিপক্ষে খেলতাম, তাহলে ভাবতাম গোল যত কম খাওয়া যায়; এখন আমরা চাই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করতে। ওদেরকে হারানোর চেষ্টা করি। (ফাইনালর ব্যক্তিগত লক্ষ্য) এটা বলব না, মাঠেই দেখা যাবে....(হাসি)।
দুটি হ্যাটট্রিকসহ ৮ গোল করে এবারের আসরের গোলদাতার তালিকায় শীর্ষে আছেন সাবিনা। বাংলাদেশের আক্রমণভাগের এই প্রাণভোমরার কাঁধে আবার অধিনায়কত্বের ভার। দলনেতা বলেই হয়তো তিনি নিজের চেয়ে সতীর্থদের নিয়ে কথা বলতে বেশি আগ্রহী।
তিনি বলেন, আপনারাও দেখেছেন, স্বপ্না ওর সর্বোচ্চটা দিচ্ছে। আশা করি ফাইনালেও নেপালের রক্ষণে ও একটা চাপ সৃষ্টি করবে। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচেও আপনারা দেখেছেন, কৃষ্ণা, সানজিদাও কতবার বল নিয়ে ওদের রক্ষণে ঢুকে পড়েছে। আমাদের ফরোয়ার্ডদের সামর্থ্য আছে ভালো করার।
তবে সাবিনারা যতোই রোমাঞ্চিত হন কেন, কোচ গোলাম রব্বানী একটু বেশি সতর্ক। গোলাম রব্বানী ছোটন বলেন, ‘স্বাগতিক দলের বিপক্ষে খেলা সবসময় কঠিন। কিন্তু আমরা ফাইনালের জন্য আত্মবিশ্বাসী।’ বয়সভিত্তিক দলের সঙ্গে পাঁচটি ট্রফি জেতা এই কোচ কখনও সিনিয়র দলের হয়ে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেননি। এবার সেই আক্ষেপ ঘুচানোর দ্বারপ্রান্তে তিনি। ফাইনাল খেলার জন্য বাংলাদেশ প্রস্তুত বললেন ছোটন, ‘আমাদের খেলোয়াড়রা ফাইনাল খেলতে প্রস্তুত। আমরা মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুত। ফাইনালের জন্য আমাদের পরিকল্পনা আছে এবং সেই অনুযায়ী খেলবো।’