নিজামুল ইসলাম নিজাম মানুষকে পৃথিবীতে পাঠানোর প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর ইবাদত করা এবং এর মাধ্যমে পরকালের জীবন সমৃদ্ধ করা। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও সত্য, মানুষ আল্লাহ তায়ালার এই মহান উদ্দেশ্য ভুলে গিয়ে পার্থিব মোহে পড়ে নিজেদের খেয়াল-খুশিমতো চলছে। ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার সুখ-শান্তির পেছনে পড়ে মানুষ আখেরাতের চিরস্থায়ী সুখ-শান্তির কথা ভুলে যাচ্ছে। আখেরাতের চিরস্থায়ী সুখ-শান্তি পেতে হলে আল্লাহর ইবাদত- বন্দেগির কোনো বিকল্প নেই। আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি কতটুকু সময় করতে হবে সে ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা কোরআনুল কারিমে বলেছেন, ‘আপনার মৃত্যু আসা পর্যন্ত আপনি আপনার রবের ইবাদাত করুন’ (সুরা হিজর : ৯৯)। জীবন বাকি থাকতেই আল্লাহর ইবাদত করতে হবে। কেননা মৃত্যু এসে গেলে পুনরায় জীবন ফিরে পাওয়ার আশা এবং নেক আমল করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। নচেৎ ওই পাপিষ্ঠ ব্যক্তির ন্যায় মৃত্যুর সময় আফসোস করতে হবে আর বলতে হবে, ‘হে আমার রব! আমাকে আবার দুনিয়াতে ফেরত পাঠান, যাতে করে আমি সৎকাজ করতে পারি, যা আমি আগে করিনি।’ (সুরা মুমিনুন : ৯৯-১০০)
আখেরাতের চিরস্থায়ী সুখ-শান্তির তুলনায় দুনিয়ার সুখ-শান্তি কিছুই নয়। কিন্তু আমরা দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী ভোগ-বিলাসের ধোঁকায় পড়ে আখেরাতের চিরস্থায়ী সুখ-শান্তি, ভোগ-বিলাসের কথা ভুলে গেছি। আসলে দুনিয়াটা হলো চূড়ান্ত ধোঁকার জায়গা। দুনিয়ার এই চূড়ান্ত ধোঁকায় পড়ে কত মানুষ প্রতারিত হয়েছে। আবার কত মানুষ দুনিয়া নামক প্রতারণার মহাসমুদ্রে নিমজ্জিত হচ্ছে। তাই দুনিয়া নামক এই মহাসমুদ্রে টিকে থাকতে হলে অবশ্যই আমাদের তাকওয়া নামক নৌকা বানাতে হবে। নচেৎ আমরাও এক দিন পথভ্রষ্ট হয়ে এই দুনিয়া নামক মহাসমুদ্রের অতল গহ্বরে ডুবে যাব। এ জন্য দুনিয়ার এই ক্ষণস্থায়ী সুখ-শান্তির ধোঁকায় পড়ে কেউ যাতে পথভ্রষ্ট না হয়ে দুনিয়া নামক মহাসমুদ্রে ডুবে না যায়, সে জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা কোরআনুল কারিমে আগেই মানুষদের দুনিয়ার চূড়ান্ত ধোঁকার ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘হে মানুষ! নিশ্চয় আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য; কাজেই দুনিয়ার জীবন যেন তোমাদের কিছুতেই প্রতারিত না করে’ (সুরা ফাতির : ৫)।
ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি, স্ত্রী, পরিবার-পরিজন হলো ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার উপভোগের সামগ্রী। ক্ষণস্থায়ী দুনিয়াতে এগুলো কাজে এলেও আখেরাতের চিরস্থায়ী জীবনে এগুলো বিন্দু পরিমাণে কাজে আসবে না। আখেরাতের চিরস্থায়ী জীবনে কাজে আসবে একমাত্র নেক আমল। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা কোরআনুল কারিমে বলেছেন, ‘ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দুনিয়ার জীবনের শোভামাত্র; আর স্থায়ী হবে সৎকাজ, যা আপনার রবের কাছে পুরস্কারপ্রাপ্তির জন্য হবে শ্রেষ্ঠ এবং কাক্সিক্ষত হিসেবেও হবে উৎকৃষ্ট’ (সুরা কাহাফ : ৪৬)। এ ব্যাপারে অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কোনো কাজে আসবে না’ (সুরা শুয়ারা : ৮৮)।
মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখার পর কবর থেকে আপনজন এক-এক করে সবাই উঠে চলে গেলেও একমাত্র সঙ্গী হয়ে থাকবে মৃত ব্যক্তির নেক আমল। তাই ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি, স্ত্রী, পরিবার-পরিজন আমরা যা-ই বলি না কেন; মরণের পরে মৃত ব্যক্তির জন্য একমাত্র নেক আমল ছাড়া কোনো কিছুই কাজে আসবে না। এ সম্পর্কে রাসুল (সা.) চমৎকার একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘তিনটা জিনিস মৃত ব্যক্তিকে অনুসরণ করে কবর পর্যন্ত যায়- ১. তার পরিবার-পরিজন, ২. তার ধন-সম্পদ ও ৩. তার নেক আমল। দুইটা জিনিস মৃত ব্যক্তির কবর থেকে ফিরে আসে আর একটি জিনিস তার সঙ্গে চিরদিনের জন্য সঙ্গী হয়ে থাকে। মৃত ব্যক্তির পরিবার-পরিজন এবং তার ধন-সম্পদ কবর থেকে ফিরে আসে আর তার নেক আমল চিরদিনের জন্য তার সঙ্গী হয়ে থাকে’ (বুখারি : ৬৫১৪)। হাদিস থেকে স্পষ্ট বোঝা গেল, ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি, স্ত্রী, পরিবার-পরিজন কেউ আপন নয়, বরং সবাই পর। একমাত্র আপন হলো নেক আমল। সুতরাং, আখেরাতের চিরস্থায়ী জীবনে সুখ-শান্তি পেতে চাইলে নেক আমলের কোনোই বিকল্প নেই।
আসলে কবর হচ্ছে নেক আমলের সিন্দুক। সুতরাং, যে ব্যক্তি কবর নামক সিন্দুক নেক আমলের দ্বারা পূর্ণ করতে চায়, সে যেন মরণের আগে নেক আমলের পাশাপাশি তিনটি নেক আমলের অ্যাকাউন্ট খুলে যায়। কেননা মরণের পরে মানুষের সব নেক আমল চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে গেলেও তিনটি নেক আমলের অ্যাকাউন্টের সওয়াব কখনো বন্ধ হবে না। জীবিত থাকাকালে যে ব্যক্তি এই তিনটি নেক আমলের অ্যাকাউন্ট দুনিয়াতে খুলে যেতে পারবে, সে কবরে শুয়ে শুয়ে আমল না করেও অটোমেটিক তার সওয়াব পেতে থাকবে। এ সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন কোনো আদম সন্তান মৃত্যুবরণ করে তখন তার সকল কর্ম বন্ধ হয়ে যায়। শুধু তিনটি কর্মের সওয়াব সে অব্যাহতভাবে পেতে থাকে- ১. প্রবহমান দান তথা সদকায়ে জারিয়া। ২. উপকারী ইলম। ৩. নেককার সন্তান, যে তার জন্য দোয়া করতে থাকে’ (মুসলিম : ৩/১২৫৫)।
সুতরাং, আমাদের উচিত হলো মরণের আগে নেক আমলের পাশাপাশি কমপক্ষে তিনটি নেক আমলের যেকোনো একটি নেক আমলের অ্যাকাউন্ট খুলে যাওয়া। আল্লাহ আমাদেরকে বেশি বেশি নেক আমল করার তওফিক দান করুন।