মিরপুর পৌরসভার ৫ কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নিল বিতর্কিত টেন্ডারবাজ
16, August, 2022, 2:43:26:PM
আকরামুজ্জামান আরিফ, কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ার মিরপুর পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ নগর উন্নয়ন প্রকল্পের (আইইউআইডিপি) প্রায় ৫কোটি টাকার কাজ অবৈধভাবে তিনটি লাইসেন্সের মাধ্যমে আব্দুল জলিল বাগিয়ে নিয়ে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ শুরু করেছে। এতে স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হলেও ঠিকাদার প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে বিগত এক যুগেরও অধিক সময় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স তামান্না এন্টারপ্রাইজ এর মালিক আব্দুল জলিল মিরপুর পৌরসভার সকল টেন্ডারে এককভাবে কাজ ভাগ বাটোয়ারা করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। গত ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে এডিপি’র ৪৪টি গ্রুপের কাজের মধ্যে ১৫টি কাজই তার (জলিল) নিজস্ব লাইসেন্সে নিয়ে নেয়।
বিলম্বপ্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারী মিরপুর পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে গুরুত্বপূর্ণ নগর উন্নয়ন প্রকল্পের (আইইউআইডিপি) ৬টি গ্রুপে প্রায় ৫কোটি টাকার টেন্ডার ওটিএম পদ্ধতিতে ড্রপিং হয়। এর মধ্যে অংশগ্রহণকারী তিনটি লাইসেন্স মেসার্স তামান্না এন্টারপ্রাইজ ৩টি, মেসার্স এসএসবি এন্টারপ্রাইজ ২টি এবং মেসার্স তাসিন এন্টারপ্রাইজ’র নামে ১টি কাজ বন্টন করে বিজয়ী দেখানো হয়। যা পিপিআর-২০০৮ এবং সংশোধনী ২০০৯ এর বিধি মোতাবেক বিজয়ী ৩টি লাইসেন্সের কোনটিই ওটিএম টেন্ডারে কাজ পাওয়াতো দুরের কথা অংশগ্রহণেরও নুন্যতম যোগ্যতা রাখেনা।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে মেসার্স তামান্না এন্টারপ্রাইজ এর লাইসেন্সে প্রাপ্ত টেন্ডারবাজ জলিলের নিজস্ব গ্রাম মিরপুর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের খন্দকবাড়ীয়া মহিলা ডিগ্রী কলেজ গেট হতে অডিটরিয়াম গেট পর্যন্ত রাস্তা পাকা করণের কাজ ৩/৪ নম্বরের ব্যাডস দিয়ে ডাব্লিউবিএম শেষ করেছে এজিংএ ব্যবহার করেছে ৩ নম্বর ইট।
অন্যদিকে ঐ লাইসেন্সেরই ১১নং প্যাকেজে মিরপুরের কুষ্টিয়া-মেহেরেপুর সড়ক হতে মহিলা কলেজপাড়া রোডে তোতার বাড়ী হতে রেল গেট পর্য়ন্ত রাস্তা পাকা করণে অতি নিম্নমানের ৩ নম্বর ব্যাডস এবং এজিং এর জন্য ৩ নম্বর ইট নিয়ে এসে কাজ চালাচ্ছেন মহাউৎসবে। এছাড়াও আব্দুল জলিলের নিয়ন্ত্রণাধীন মেসার্স তাসিন এন্টারপ্রাইজ এর লাইসেন্সে ৯নম্বর ওয়ার্ডের মিরপুর পশুহাট উন্নয়নে আরসিসি রাস্তার কাজ নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ১২মি.লি রডের পরিবর্তে ১০মি.লি রড ১০/১২ ইঞ্চি ফাঁকা করে নিম্নমানের খোয়া দিয়ে ঢালাই দিচ্ছে।
এসব ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ হলেও ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এসব নিয়ে মুঠোফেনে আইইউআইডিপি’র প্রকল্প পরিচালক কাজী মিজানুর রহমান এর সাথে আলাপ করলে তিনি জানান, বর্তমান সরকারের টেকসই উন্নয়নে কেউ দূর্নীতি করলে কোন ছাড় হবে না। এব্যাপারে কুষ্টিয়া এলজিইডি’র তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম এর সাথে আলাপ হলে তিনি বলেন, বিষয়টি অবগত হলাম প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এছাড়াও ড্রয়িং ডিজাইনের বাইরে মালামাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে নিম্নমানের জিনিস দিয়ে কাজ করলে সেটিতো দৃশ্যমানই থাকবে দূর্নীতি প্রমাণিত হলে কঠোর শাস্তি পেতে হবে। এসব ব্যাপারে বিতর্কিত ঠিকাদার আব্দুল জলিলের সাথে মুঠোফোনে আলাপ করলে মালামাল নিম্নমানের হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি জানান, নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেশী তাই একটু এদিক-সেদিক হয়েছে। তবে জোড়ালো আপত্তি থাকলে কাজ বন্ধ করে দেব। এলাকাবাসীর দাবী টেকশই উন্ন্য়নে সরকার যখন বদ্ধপরিকর সে সময়ে এই ধরনের টেন্ডারবাজ কর্তৃক নিম্নমানের কাজ সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও দুদক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।